বাল-গণপতি

বাল-গণপতি (সংস্কৃত: बाल-गणपति, bāla-gaṇapati, অর্থাৎ "শিশু গণেশ") হলেন হিন্দু প্রজ্ঞা ও সৌভাগ্য দেবতা গণেশের (গণপতি) একটি বিশেষ রূপ। বাল-গণপতি হলেন গণেশের শৈশবাবস্থার রূপ।[1]

শিবপার্বতী বাল-গণপতিকে স্নান করাচ্ছেন, কাংড়া চিত্রকলা, ১৮শ শতাব্দী
বাল-গণপতি, শ্রীতত্ত্বনিধি গ্রন্থের পুথিচিত্র, ১৯শ শতাব্দী

অল্প কয়েকটি প্রতিকৃতিতে দেখা যায়, শিশু গণেশকে তার পিতা শিব ও মাতা পার্বতী আদর করছেন।[1] কোনো কোনো বর্ণনায় বাল-গণপতিকে পার্বতীর কোলে বা কাঁধে ধৃত অবস্থাতেও দেখা যায়।[2]

বাল-গণপতির একক মূর্তিতে তাকে উপবিষ্ট অবস্থায় বা হামাগুড়ি দিতে দেখা যায়।[3] দক্ষিণ ভারত থেকে প্রাপ্ত একটি ব্রোঞ্জ মূর্তিতে তাকে এমনই উবু হয়ে হামাগুড়ি দিতে দেখা যায়। তিনি চতুর্ভূজ। দু’টি হাতে তিনি দু’টি মিষ্টান্ন ধরে রয়েছেন এবং শুঁড়ে করে তাঁর প্রিয় মিষ্টান্ন মোদক নিয়ে খেতে উদ্যত হয়েছেন।[4]

শ্রীতত্ত্বনিধি গ্রন্থে উল্লিখিত গণেশের ৩২টি রূপের প্রথমটি হলেন বাল-গণপতি।[5] গণেশের অন্যান্য রূপের মতো তিনিও গজানন। শুধু এই রূপে তাঁর শৈশবাবস্থা কল্পিত হয়েছে।[6] কোনো কোনো গ্রন্থে তাঁকে শিশু রূপে বর্ণনা না করে শুধুমাত্র তাঁর শিশুসুলভ মুখভঙ্গিমাটি বর্ণনা করা হয়েছে।[3] তাঁর গলায় সদ্য প্রস্ফুটিত পুষ্পের একটি মালা দোদুল্যমান।[7] তাঁর চার হাতে রয়েছে আম, আম্রশাখা, ইক্ষুদণ্ড ও একটি মিষ্টান্ন।[8] অন্য একটি বর্ণনা অনুসারে, তাঁর চার হাতে থাকে আম, কলা, কাঁঠাল ও ইক্ষুদণ্ড। এই বস্তুগুলি পৃথিবীর "অতিপ্রাচুর্য ও উর্বরতা"র প্রতীক।[9] কোনো কোনো বর্ণনায় আবার কাঁঠালের পরিবর্তে পুষ্পস্তবকের উল্লেখ পাওয়া যায়।[3] তাঁর শুঁড়ে থাকে একটি মোদক [9] অথবা কয়েতবেল[6] তাঁর গাত্রবর্ণ "বালসূর্য" বা নবোদিত সূর্যের মতো লাল।[10] অন্য বর্ণনা অনুসারে, তার গায়ের রং স্বর্ণাভ।[9]

গণেশের এই শিশুমূর্তিটি ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির সুযোগের প্রতীক।[11] শাস্ত্রে বলা হয়েছে, সদাচার শিক্ষার জন্য শিশুদের উচিত গণেশের এই রূপটি পূজা করা। আরও বলা হয়েছে যে, বাল-গণপতি তার ভক্তদের এক শিশুর আনন্দ ও সুস্বাস্থ্য প্রদান করেন।[3] দক্ষিণ ভারতে দ্বিভূজ বালকরূপী গণেশের কয়েকটি মন্দির আছে। এই মন্দিরগুলিতে তাকে পিল্লাইয়ার ("ছোটো শিশু") নামে পূজা করা হয়।[1]

পাদটীকা

  1. Saligrama Krishna Ramachandra Rao (১৯৯১)। Pratima Kosha: Descriptive Glossary of Indian Iconography। IBH Prakashana। পৃষ্ঠা 145।
  2. Nagar p. 18
  3. T.K.Jagannathan (২০ আগস্ট ২০০৯)। Sri Ganesha। Pustak Mahal। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 978-81-223-1054-2।
  4. Nagar p. 19
  5. Martin-Dubost p. 333
  6. T. A. Gopinatha Rao (১৯৯৩)। Elements of Hindu iconography। Motilal Banarsidass Publisher। পৃষ্ঠা 52। আইএসবিএন 978-81-208-0878-2।
  7. Chinmayananda, Swami (১৯৮৭)। Glory of Ganesha। Bombay: Central Chinmaya Mission Trust। পৃষ্ঠা 87।
  8. Martin-Dubost p. 120
  9. Subramuniyaswami p. 59
  10. Martin-Dubost p. 224
  11. Subramuniyaswami p. 159

তথ্যসূত্র

  • Martin-Dubost, Paul (১৯৯৭)। Gaņeśa: The Enchanter of the Three Worlds। Mumbai: Project for Indian Cultural Studies। আইএসবিএন 81-900184-3-4।
  • Satguru Sivaya Subramuniyaswami। Loving Ganesha। Himalayan Academy Publications। আইএসবিএন 978-1-934145-17-3।
  • Shanti Lal Nagar (১৯৯২)। The Cult of Vinayaka। Intellectual Pub. House। আইএসবিএন 978-81-7076-043-6।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.