বিবাহ
বিবাহ (ইংরেজি: Marriage, matrimony বা wedlock) হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়।[1] বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতিভেদে বিবাহের সংজ্ঞার তারতম্য থাকলেও সাধারণ ভাবে বিবাহ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও যৌন সম্পর্ক সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে। কিছু সংস্কৃতিতে, যে কোন প্রকারের যৌন কর্মকাণ্ডে প্রবৃত্ত হওয়ার পূর্বে বিবাহ সম্পন্ন করাকে বাধ্যতামূলক হিসেবে পরামর্শ দেওয়া হওয়া অথবা বিবেচনা করা হয়। বিশদ বিবৃত সংজ্ঞার ভাষায় বলতে গেলে, বিবাহ হল একটি বৈশ্বিক সার্বজনীন সংস্কৃতি। বিবাহ সাধারণত কোন রাষ্ট্র, কোন সংস্থা, কোন ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, কোন আদিবাসী গোষ্ঠী, কোন স্থানীয় সম্প্রদায় অথবা দলগত ব্যক্তিবর্গের দ্বারা স্বীকৃত হতে পারে। একে প্রায়শই একটি চুক্তি হিসেবে দেখা হয়। সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মীয় অথবা ধর্মনিরপেক্ষ আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করা হয়। বৈবাহিক কার্যক্রম সাধারণত দম্পতির মাঝে সমাজ-স্বীকৃত বা আইনগত দায়িত্ববোধ তৈরি করে, এবং এর মাধ্যমে তারা বৈধভাবে স্বেচ্ছায় সন্তানসন্তানাদির জন্ম দিতে পারে। বিশ্বের কিছু স্থানে, পরিবার-পরিকল্পিত বিবাহ, শিশু বিবাহ, বহুবিবাহ এবং জোরপূর্বক বিবাহ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে পালিত হয়। বলা বাহুল্য, আন্তর্জাতিক আইন ও নারী অধিকার বিষয়ক উদ্যোগের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখিত বিবাহরীতিগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনগত স্বীকৃতির ক্ষেত্রে, অধিকাংশ সার্বভৌম রাষ্ট্র ও অন্যান্য বিচারব্যবস্থা বিবাহকে দু'জন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে সীমিত করে এবং এদের মধ্যে হাতে গোনা কিছু রাষ্ট্র বহুবিবাহ, শিশুবিবাহ এবং জোরপূর্বক বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। বিগত বিংশ শতাব্দীতে এসে, ক্রমবর্ধমানভাবে বহুসংখ্যক রাষ্ট্র এবং অন্যান্য বিচারব্যবস্থা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিবাহ, আন্তঃধর্মীয় বিবাহ এবং অতি সাম্প্রতিকভাবে সমলিঙ্গীয় বিবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে এদেরকে আইনগত স্বীকৃতি নিয়েছে। কিছু সংস্কৃতি তালাকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দেয় এবং কিছু স্থানে রাষ্ট্রের আইনগত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও শিশুবিবাহ এবং বহুবিবাহ সংঘটিত হয়ে থাকে। বিবাহের মাধ্যমে পরিবারের সূত্রপাত হয়। এছাড়া বিবাহের মাধ্যমে বংশবিস্তার ও উত্তরাধিকারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিবাহের মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কিত পুরুষকে স্বামী (পতি) এবং নারীকে স্ত্রী (পত্নী) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। স্বামী ও স্ত্রীর যুক্ত জীবনকে "দাম্পত্য জীবন" হিসাবে অভিহিত করা হয়। বিভিন্ন ধর্মে বিবাহের বিভিন্ন রীতি প্রচলিত। একইভাবে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন প্রথায় বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বিবাহ মূলত একটি ধর্মীয় রীতি হলেও আধুনিক সভ্যতায় এটি একটি আইনী প্রথাও বটে। বিবাহবহির্ভুত যৌনসঙ্গম অবৈধ বলে স্বীকৃত এবং ব্যাভিচার হিসাবে অভিহিত একটি পাপ ও অপরাধ।

আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক |
---|
সম্পর্কের ধরন ছেলেবন্ধু · Casual · Cohabitation · Concubinage · Courtesan · Domestic partnership · পরিবার · বন্ধুত্ব · মেয়েবন্ধু · স্বামী · আত্মীয়তা · বিয়ে · Mistress (lover) · একক বিবাহ · Non-monogamy · পেডেরাস্টি · Polyamory · Polyfidelity · বহুবিবাহ · Romantic friendship · Significant other · Soulmate · বৈধব্য · স্ত্রী |
আবেগ ও অনুভূতি Affinity · Attachment · Compersion · Intimacy · ঈর্ষা · Limerence · ভালবাসা · Passion · প্লেটোনিক ভালোবাসা · Polyamory · যৌনতা |
সম্পর্ক হনন শিশু নিগ্রহ · বয়স্ক নিগ্রহ · Infidelity · স্ত্রী নিগ্রহ · Teen dating violence |
হিন্দু বিবাহরীতি
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, বিবাহে ছেলে মেয়েটির সমস্ত পালনপোষণের দ্বায়িত্ব নেয় এবং মেয়েটি তাদের সংসারের খেয়াল রাখার দ্বায়িত্ব গ্রহণ করে। এইভাবে তারা দুই আলাদা আলাদা মানুষ এক হয়ে নিজেদের বংশ এগিয়ে নিয়ে যায়। বিবাহের লক্ষ হল সংসার ও সন্তানের পালনপোষণ করে বংশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর এর জন্য একই সময়ে বাইরে থেকে দরকারী জিনিস উপার্জন করে আনা আর ঘরের ভেতরে সংসারের কাজ সামলাতে হয়। যেহেতু একজন মানুষ একই সময়ে এই দুটো কাজ করতে পারে না তাই দুটো কাজ দুজনের মধ্যে বন্টিত বয়ে যায়।যেহেতু পুরুষ বেশী বলবান হয় প্রাকৃতিকভাবেই আর মেয়েরা কোমল প্রকৃতির হয় এবং তাদের গর্ভে সন্তান জন্ম নেয় তাই বাইরে থেকে সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস উপার্জনের দ্বায়িত্ব পুরুষ নেয় আর ঘরে সংসারের দেখাশোনার দ্বায়িত্ব স্ত্রী নেয়। এইরকমভাবে হলেই সংসার সুস্হভাবে বেড়ে ওঠে ও সন্তানের সুন্দর দেখাশোনার মাধ্যমে বিবাহে বংশবিস্তারের উদ্দেশ্য সফল হয়। দুইজনের মধ্যে ভালবাসা থাকলেই এই কাজগুলো বাধাহীনভাবে সম্পন্ন হয় কিন্তু দুইজনের মাঝে তৃতীয় কিউ আসলে সেই দুইজনের ভালবাসায় ফাটল তৈরী হয়।আর তাতে আগের কাজগুলো করার দ্বায়িত্ববোধ মন থেকে মিটতে শুরু করে। কষ্ট-হিংসার সৃষ্টি হয়।তাতে সংসারের ক্ষতি হয় যার ফলে সন্তানেরও পালন ঠিকভাবে হতে পারে না। আর এখানেই বিবাহের উদ্দেশ্য বিফল হয়ে যায়। তাই বিয়ের উদ্দেশ্যকে রক্ষা করতেই বিয়ে শুধু দুইজনের মাঝেই হয়।
ইসলামী বিবাহরীতি
ইসলাম ধর্মে বিবাহের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যকার যৌন সম্পর্কের অনুমতি রয়েছে। ইসলামী বিবাহরীতিতে পাত্র পাত্রী উভয়ের সম্মতি এবং বিবাহের সময় উভয়পক্ষের বৈধ অভিভাবক বা ওয়ালীর উপস্থিতি ও সম্মতির প্রয়োজন। ইসলামী বিবাহে যৌতুকের কোন স্থান নেই। বিয়ের পূর্বেই পাত্রের পক্ষ হতে পাত্রীকে পাত্রীর দাবি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বা অর্থসম্পদ বাধ্যতামূলক ও আবশ্যকভাবে দিতে হয়, একে দেনমোহর বলা হয়। এছাড়া বিয়ের পর তা পরিবার পরিজন ও পরিচিত ব্যক্তিবর্গকে জানিয়ে দেয়াও ইসলামী করনীয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত।[2][3][4][5] ইসলামী বিধান অনুযায়ী, একজন পুরুষ সকল স্ত্রীকে সমান অধিকার প্রদানের তার চাহিদা অনুসারে সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারে। আর সমান অধিকার দিতে অপারগ হলে শুধু একটি বিয়ে করার অনুমতি পাবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে একাধিক বিয়ের অনুমতি নেই। একজন মুসলিম পুরুষ মুসলিম নারীর পাশাপাশি ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান নারীকে বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু মুসলিম নারীরা শুধু মুসলিম পুরুষের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবে। ইসলামে বিবাহপূর্ব ও বিবাহবহির্ভূত যৌনতা নিষিদ্ধ।
খ্রিস্টীয় বিবাহরীতি
নির্বাচন : খ্রিস্টান সমাজে সাধারণত প্রথমে পাত্রী দেখা হয়। প্রথমত বরপক্ষই কনে নির্বাচন করে। বরপক্ষ কনে নির্বাচন করে কনের চরিত্র, দোষ-গুণ, বংশ পরিচয় জেনে নেয়।
প্রস্তাব : শুভদিন দেখে বরপক্ষ কনের বাড়ি যায়। সাধারণত পাশের কোনো আত্নীয়ের বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গে কনের বাড়ি যায় এবং তাদের উদ্দেশ্যের কথা জানায়।
বাগদান : বরপক্ষের প্রস্তাবে কনেপক্ষ রাজি হলে বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোথাও এ অনুষ্ঠানকে ‘পাকা দেখা’ও বলে। ভাওয়ালে এ অনুষ্ঠানকে ‘পানগাছ’ অনুষ্ঠান বলে। বাগদান উপলক্ষে পান, সুপারি, বিজোড় সংখ্যক মাছ নিয়ে যাওয়া হয়।
বাইয়র : এই অনুষ্ঠানে বরপক্ষের লোকজন কনের বাড়িতে যায়। যা আগেই কথা বলে ঠিক করে রাখা হয়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বর-কনে সবার আশির্বাদ গ্রহণ করে।
নাম লেখা : বিয়ের ৩ সপ্তাহ আগে কনের বাড়িতে পুরোহিতের কাছে বর-কনে নাম লেখান। অনেকে এ অনুষ্ঠানে আতসবাজি ও বাজনার আয়োজন করে।
বান প্রকাশ : এই অনুষ্ঠানে বর-কনে বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ডলীর বিধি অনুযায়ী এ সময় বিয়ের ক্লাস করতে হয়। এটি বিয়ে পূর্ব ব্যাধতামূলক ক্লাস ব্যবস্থা।
অপদেবতার নজর : নাম লেখা থেকে শুরু করে বিয়ের আগ পর্যন্ত বর-কনেকে অতি সংযমী জীবন করতে হয়। অনেকে এ সময় ভূত-প্রেত ও অপশক্তির নজর থেকে রক্ষার জন্য ‘রোজারি মালা’ বা ‘জপমালা’ গলায় পরেন।
কামানি বা গা-ধোয়ানী : বিয়ের আগের রাতের অনুষ্ঠানকে গা-ধোয়ানী বলে। অনেক খ্রিস্টান সমাজে এই দিন গায়ে হলুদ মাখিয়ে জাকজমকের সঙ্গে অনুষ্ঠান করা হয়।
কনে তোলা : বিয়ের দিন ভোরে বাদকদলসহ বরের আত্মীয়-স্বজন কনের বাড়ি গিয়ে কনেকে নিয়ে আসে। কনেকে ঘর থেকে আনার সময় তার হাতে পয়সা দেওয়া হয়। কনে বাড়ি থেকে আসার সময় সেই পয়সা ঘরের মধ্যে ছুড়ে ফেলে। এর অর্থ হল যদিও সে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে, তারপরও বাড়ির লক্ষী ঘর থেকে চলে যাচ্ছে না।
গির্জার অনুষ্ঠান : শুরুতে গির্জার প্রবেশ পথে যাজক বর-কনেকে বরণ করে নেয়। তারপর বর-কনে দুজনের মধ্যে মালা বদল করা হয়। এরপর কনের সিঁথিতে সিদুর পরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘরে তোলা : এই অনুষ্ঠানে উঠানের দিকে মুখ করে বড় পিঁড়ির উপরে বর-কনেকে দাঁড় করানো হয়। এরপর বর-কনে সাদা-লাল পেড়ে শাড়ির উপর দিয়ে হেঁটে ঘরে ওঠে। এ সময় বর ও কনে একে অপরের কনিষ্ঠ আঙুল ধরে থাকে।
আরো দেখুন
- মধুচন্দ্রিমা
- বাংলাদেশের বিয়ে
- ভারতে বিয়ে
- বিবাহযোগ্য বয়স
- বৈবাহিক সনদ
- বৌভাত
- গায়ে হলুদ
- আইবুড়ো ভাত
- রেজিট্রী
- আশির্বাদ
- সমলৈঙ্গিক বিবাহ
তথ্যসূত্র
- Haviland, William A.; Prins, Harald E. L.; McBride, Bunny; Walrath, Dana (২০১১)। Cultural Anthropology: The Human Challenge (13th সংস্করণ)। Cengage Learning। আইএসবিএন 978-0-495-81178-7। "A nonethnocentric definition of marriage is a culturally sanctioned union between two or more people that establishes certain rights and obligations between the people, between them and their children, and between them and their in-laws."
- The method of pronouncing the marriage formula sistani.org [ত্রুটি: আর্কাইভের ইউআরএল অজানা] আর্কাইভকৃত [তারিখ অনুপস্থিত] তারিখে
- Marriage formula. sistani.org
- Conditions of pronouncing Nikah. sistani.org
- Women with whom matrimony is Haraam sistani.org [ত্রুটি: আর্কাইভের ইউআরএল অজানা] আর্কাইভকৃত [তারিখ অনুপস্থিত] তারিখে
বহিঃসংযোগ
- African Marriage Rituals
- For Better, for Worse: British Marriages, 1600 to the Present John Gillis. 1985. Oxford University Press. আইএসবিএন ০-১৯-৫০৩৬১৪-X
- The Council of Trent on Marriage by the Catholic Church
- "Legal Regulation of Marital Relations: An Historical and Comparative Approach – Gautier 19 (1): 47 – International Journal of Law, Policy and the Family"।
- "Marriage – Its Various Forms and the Role of the State" on BBC Radio 4's In Our Time featuring Janet Soskice, Frederik Pedersen and Christina Hardyment
- Radical Principles and the Legal Institution of Marriage: Domestic Relations Law and Social Democracy in Sweden – Bradley 4 (2): 154 – International Journal of Law, Policy and the Family
- Recordings & Photos from a College Historical Society debate on the role of marriage, featuring Senator David Norris and Senator Ronan Mullen.
- Early Human Kinship Was Matrilineal by Chris Knight. (Scholarly debates on 'group marriage' and the history of the family).
- The Delights of Wisdom Concerning Marriage ("Conjugial") Love, After Which Follows the Pleasures of Insanity Concerning Scortatory Love. by Emanuel Swedenborg (Swedenborg Society 1953)
- Marriage and Staying Single for God – Discussed from the Biblical Point of View