স্ত্রী

স্ত্রী হলেন বৈবাহিক সম্পর্কের নারী। স্ত্রীকে জায়াও বলা হয় যা একটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ শব্দ। এই শব্দটি সে সমস্ত নারীর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় যে তার সঙ্গী হতে আলাদা হয়ে গেছে এবং কেবলমাত্র সে নারীর ক্ষেত্রে যার আইনত স্বীকৃত বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বা তার স্বামী মারা গেছে। স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে বিধবা বলা হয়, বিবাহ বিচ্ছেদের পর নয় ।

সঙ্গীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব এবং সমাজে ও আইনে তার অবস্থান সংস্কৃতি ও সময়ের সাথে আলাদা হয়ে থাকে।

সারাংশ

অধিকাংশ সংস্কৃতিতে এটি সাধারণ প্রত্যাশা যে স্ত্রী তার স্বামীর পদবি গ্রহণ করবে যদিও তা সার্বজনীন না। একজন বিবাহিত নারী বিভিন্ন ভাবে তার বৈবাহিক অবস্থা প্রকাশ করতে পারেন। পশ্চিমা সংস্কতিতে বিবাহিত নারী বিয়ের আংটি পড়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট পরিভাষা

বিয়ের দিন এমনকি বিয়ের পরও একজন নারীকে বধূ বলা হয় যদিও বিয়ের বা মধুযামিনির পর তাকে স্ত্রী  বলাই যথাযথ । বিয়ের সময় তার ছেলে সঙ্গীকে বর ও বিয়ের পর তাকে তার স্বামী বলে।

স্ত্রীর অধিকার

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাই ইসলামে যেভাবে নারীর অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে, ঠিক তেমনি স্থান পেয়েছে স্বামীর অধিকারও। স্ত্রীর অধিকার ও মর্যাদা

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ হয়তো আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রুষ্ট হবে না। কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার জন্য সে তার ওপর সন্তুষ্ট হতে পারবে। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৯)

স্ত্রীর বাসস্থান

স্ত্রী যদি উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়, তাহলে সে যদি স্বামীর পরিবার থেকে আলাদা ভিন্ন ঘরের দাবি করে, তাহলে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে ভিন্ন ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। স্বামীর মা-বাবার সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রী বাধ্য নয়। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলে তাকে স্বামীর পরিবারের সঙ্গে এক ঘরে রাখা গেলেও তার পৃথক কক্ষ, টয়লেট, গোসলখানা, পাকের ঘরসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস করারও দাবি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রেও স্বামীর পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রীকে বাধ্য করা যাবে না। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের হলে টয়লেট, গোসলখানা, পাকের ঘর ইত্যাদি ভিন্ন দিতে বাধ্য না হলেও তার জন্য একটি পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে, যার হস্তক্ষেপ স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। ওই কক্ষে স্বামীর মা-বাবা, ভাইবোন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে না। স্ত্রীর এমন কক্ষ দাবি করার অধিকার ইসলাম স্বীকৃত। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২৩, রদ্দুল মুহতার : ৩/৬০১)

নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

শরিয়ত স্বামীর যে অধিকার স্ত্রীর ওপর সাব্যস্ত করেছে, তা হচ্ছে—(ক) স্বামীর অনুগত ও নিজেকে হেফাজতে রাখবে; (খ) স্বামীর ঘরের সম্পদ ও সন্তানসন্ততির রক্ষণাবেক্ষণ করবে; (গ) স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে থাকার অনুমতি দেবে না; (ঘ) বিশেষ জৈবিক চাহিদা পূরণে স্বামী যখন ডাকবে, শরীয় ওজর না থাকলে তাতে অবশ্যই সাড়া দেবে এবং (ঙ) স্বামীর গৃহেই অবস্থান করবে, তার অনুমতি ছাড়া কোথাও যাবে না ইত্যাদি। (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪, বুখারি হাদিস : ৫১৯৫, সুনানে তিরমিজি হাদিস : ৩০৮৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও। কেননা, তারা তোমাদের ঘরে অবস্থানরত থাকবে। এর বেশি তাদের ওপর তোমাদের অধিকার নেই। হ্যাঁ, যদি তারা অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়, তখন বিছানা আলাদা করতে পারো অথবা হালকা প্রহার করতে পারো। তবে তারা অনুগত হলে তাদের কষ্ট দিয়ো না। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার যেরূপ রয়েছে, তদ্রূপ তোমাদের ওপরও তাদের অধিকার রয়েছে। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, তারা তোমাদের অপছন্দ হয়—এমন লোককে তোমাদের বিছানায় আসতে দেবে না এবং অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাউকে ঘরে থাকার অনুমতি দেবে না। তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তাদের জন্য উত্তম খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করা। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬৩)

সুতরাং ওপরে উল্লিখিত বিষয়াদি ছাড়া স্ত্রীর কাছে স্বামী এর বেশি কিছুর দাবি করতে পারে না এবং এর অতিরিক্ত কিছুর জন্য তার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে না। বেশি কিছু করলে সেটা স্ত্রীর এখতিয়ার। তা স্ত্রীর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সেবা হিসেবেই গণ্য করতে হবে।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.