বন্ধুত্ব

বন্ধুত্ব হলো মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক । আত্মার শক্তিশালী বন্ধন হল বন্ধুত্ব । সমাজবিদ্যা, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, এবং দর্শনে বন্ধুত্বের শিক্ষা দেয়া হয় । সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব, ইকুইটি তত্ত্ব, রিলেশনাল দ্বন্দ্ববাদ, এবং সংযুক্তি শৈলী সহ ইত্যাদিতে বন্ধুত্বের বিভিন্ন একাডেমিক তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে । ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ডেটাবেজ গবেষণায় দেখা গেছে যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারনে মানুষ সুখী হয় ।

যদিও সেখানে বন্ধুত্বের অনেক রূপ আছে কিছু অবস্থান অনুসারে ভিন্ন হয় কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অনেক বন্ধনের মধ্যে উপস্থিত থাকে । স্নেহ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, সততা, পরার্থপরতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া, এবং সমবেদনা, একে অপরের সঙ্গ, আস্থা, নিজের যোগ্যতা, অনুভূতি প্রকাশ, ভয় ছাড়াই বন্ধুর কাছে ভুল করা এই ধরনের বৈশিষ্ট্য বন্ধুত্বে অন্তর্ভুক্ত ।

কি ধরনের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব গঠন করতে পারেন তার কোন ব্যবহারিক সীমা নেই, তার ব্যাকগ্রাউন্ড, জীবিকা, ভাল লাগা, অনুরূপ জনমিতি আছে কিনা তা শেয়ার করা ।

বন্ধু এ শব্দের মাঝেই সব লুকায়িত এতে কোন বয়স বাধা নয়। সম বয়েসের বন্ধুত্বে সব কিছু আবিস্কার করার এক নব দিগন্ত। কিশোর বয়সের কোন ছেলে বা মেয়ের সাথে যদি তার চেয়ে বড় কারো সাথে বন্ধুত্ব হয় তবে তা তাকে জ্ঞানের পরিসীমা বাড়াতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তবে তার জন্য প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি বিশেষ যত্ন। অনেক বিষয় ছোট্ট বন্ধু বুঝতে বা মানতে দ্বিধা করবে সে জন্য তকে সব সমসাময়িক দিক থেকে বা বর্তমান সময় উপযোগী বিষয় দিয়ে বুঝানো। মনে যেন কোন ভয় না থাকে সে বিষয়ে খোলা মেলা আলোচনা করা। এ জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করা। ভালো মন্দ সব কিছু খোলামেলা আলোচনা করা। যাতে আগামীর দিন গুলো সুন্দর ও সুখের হয়। আমাদের দেশে দেখা যায় অনেক বিষয় খুব কাছের বন্ধুর সাথেও শেয়ার করি না। লজ্জা সারাক্ষণ নিজেকে আবদ্ধ করে রাখে। সবচে নিকট সবচেয়ে আপন বন্ধুটিকে বলতে কেন দ্বিধা করি। পিতা মাতা সর্বপ্রথম সব থেকে আপন বা কাছের মানুষ। কিন্তু অনেক বিষয় আমরা তাদের সাথে শেয়ার করতে পারিনা, এটা যত ফ্রি দেশ হোক সব দেশে সিংহভাগ একই। কিন্তু বন্ধুর সাথে অকপটে সব ভালো মন্দ যত খারপ হোক র্নিদ্বিধায় বলা যায় আর সব কিছু সব সময় গোপন অতি গোপন রাখার নামই প্রকৃত বন্ধু।

উন্নয়নমূলক মনোবিজ্ঞানে বন্ধুত্ব

ব্যক্তির মানসিক উন্নয়নের প্রতিনিধিত্বকারী, পিতামাতার বন্ধনে পর বন্ধুত্ব এবং যুগল বন্ধনে আগে হল বন্ধুত্ব । শৈশবের শেষ এবং পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বন্ধুত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বন্ধুত্ব কিশোর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়, পরবর্তী জীবনের সম্পর্কর চেয়ে বন্ধুত্ব আরো তীব্র হয় । বন্ধুদের অভাবে আবেগের ক্ষতি হতে পারে । ব্রিটিশ নৃতত্ববিদ রবিন ডানবার দ্বারা প্রস্তাবিত, মানব উন্নয়নের জন্য বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান পদ্ধতি ডানবারের সংখ্যা তত্ত্ব নেতৃত্বাধীন হয়েছে । তিনি অনুমান করছে একজন মানুষ প্রায় 150 জন মানুষের সাথে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন, যা সীমিত ।

শৈশব

ছেলেবেলার বন্ধু শৈশবে, বন্ধুত্ব প্রায়ই খেলনা শেয়ারিং উপর ভিত্তি করে হয়, একসঙ্গে কার্যক্রম সম্পাদন উপভোগ্য হয় । এই বন্ধুত্ব স্নেহ, ভাগ, এবং সৃজনশীল খেলাধুলার সময় পরিচালিত হয়। যদিও শেয়ারিং এই বয়সে শিশুদের জন্য কঠিন, তারা শেয়ার করতে পারে যদি কারো সাথে তারা বন্ধুত করে। শিশুদের পরিপক্ক হিসাবে, তারা কম সতন্ত্র হয়ে এবং অন্যদের থেকে আরো সচেতন হয় । তারা তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বন্ধুদের দেখে এবং দলের সাথে খেলতে উপভোগ করে । তারা অভিজ্ঞ সমকক্ষ ব্যক্তি প্রত্যাখ্যানে মধ্যম শৈশব ব্যবহার করে । একটি ভালো বন্ধুত্ব কিশোর বয়সে স্থাপন করলে পরবর্তী জীবনে সমাজকে ভালোর দিকে ধাবিত করে ।

১৯৭৫ সালে বিগেলো এবং লা গাপিয়া একটি গবেষণায় দেখান যে ভাল বন্ধু পাওয়ার জন্য সন্তান ক্রমবর্ধমান জটিল জীবন অতিবাহিত করে। গবেষণায় ছয় এবং চৌদ্দ বছর বয়সের ৪৮০ জন শিশুদের একটি নমুনা এ ধরনের মানদণ্ড প্রদান করে। তাদের তথ্য বন্ধুত্ব উন্নয়নের তিনটি পর্যায় প্রদর্শন করে। প্রথম পর্যায়ে শিশুদের শেয়ারিং কার্যক্রম এবং ভৌগলিক নৈকট্যের ওপর জোর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা জোর গুরুত্ব দিয়েছিলেন শেয়ার করা, আনুগত্য, এবং প্রতিশ্রুতি ওপর । চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষিত অনুরূপ মনোভাব, মূল্যবোধ ও স্বার্থ এর ওপর । বের্ন্ডটের মতে বন্ধুত্বের পুরস্কার শিশুরা সামাজিক আচরণ, অধিক অন্তরঙ্গতা, এবং অন্যান্য ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে প্রকাশ করে । তারা বন্ধুত্বে অস্থির হয় অধিকদ্বন্দ্ব, আধিপত্য, দ্বন্দ্ব, এবং অন্যান্য নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের কারনে ।

উচ্চ মানের বন্ধুত্ব সামাজিক উন্নয়নে অনেক ইতিবাচক প্রভাব পেলে । বন্ধুত্ব থেকে অনুভূত সুবিধা সামাজিক উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত শিশুদের  আত্মসম্মানের উপর কোন প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করবে না । 
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.