ওঁ
ওঁ বা ওঁ-কার (অপর বানানে ওঙ্কার)[সংস্কৃত, অ + উ +ম্]। বা প্রণব বা ত্র্যক্ষর হিন্দুধর্মের পবিত্রতম ও সর্বজনীন প্রতীক। এটি হিন্দু দর্শনের সর্বোচ্চ ঈশ্বর ব্রহ্মের বাচক। [1] এই ধর্মের প্রতিটি সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিকটেই এটি পবিত্র বলে গণ্য। স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ওঁ-কার “সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক, ঈশ্বরেরও প্রতীক।” [2] রামকৃষ্ণ পরমহংসের মতে, “...ওঁ হইতে ‘ওঁ শিব’, ‘ওঁ কালী’, ‘ওঁ কৃষ্ণ হয়েছেন।” [3] ওঁ-কার বৌদ্ধ ও জৈনদেরও একটি পবিত্র প্রতীক। শিখ সম্প্রদায়ও এটিকে সম্মান করেন। এই প্রতীকের দেবনাগরী রূপ ॐ, চীনা রূপ 唵, এবং তিব্বতীয় রূপ ༀ। [4]
হিন্দুধর্ম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
![]() |
বিদ্যালয়
|
শাস্ত্র
|
উপাসনা
|
গুরু, সন্ত, দার্শনিক
|
অন্যান্য বিষয়
|
|

ব্যুৎপত্তি
ওঁ শব্দটি সংস্কৃত ‘অব’ ধাতু থেকে উৎপন্ন, যা একাধারে ১৯টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রযোজ্য। এই বুৎপত্তি অনুযায়ী ওঁ-কার এমন এক শক্তি যা সর্বজ্ঞ, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের শাসনকর্তা, অমঙ্গল থেকে রক্ষাকর্তা, ভক্তবাঞ্ছাপূর্ণকারী, অজ্ঞাননাশক ও জ্ঞানপ্রদাতা।[5] ওঁ-কারকে ত্র্যক্ষরও বলা হয়, কারণ ওঁ তিনটি মাত্রাযুক্ত – ‘অ-কার’, ‘উ-কার’ ও ‘ম-কার’। ‘অ-কার’ ‘আপ্তি’ বা ‘আদিমত্ত্ব’ অর্থাৎ প্রারম্ভের প্রতীক। ‘উ-কার’ ‘উৎকর্ষ’ বা ‘অভেদত্ব’-এর প্রতীক। ‘ম-কার’ ‘মিতি’ বা ‘অপীতি’ অর্থাৎ লয়ের প্রতীক। [6] অন্য ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় সংঘটনকারী ঈশ্বরের প্রতীক। [5]
‘প্রণব’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ, ‘যা উচ্চারণ করে স্তব করা হয়’। [7] এর অপর অর্থ, ‘যা চিরনূতন’। [4]
বিভিন্ন ভাষায়ওঁ | ||||||||||||||||||||||||||||
|
গুরুত্ব ও ব্যাখ্যা
ওঁ-কার ঈশ্বরের সকল নামের প্রতিনিধিস্বরূপ ও তার শ্রেষ্ঠ নাম। [27] বেদ, উপনিষদ, গীতা ও অন্যান্য হিন্দুশাস্ত্রে সর্বত্রই ওঁ-কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অথর্ববেদের গোপথব্রাহ্মণের একটি কাহিনি অনুসারে দেবরাজ ইন্দ্র ওঁ-কারের সহায়তায় দৈত্যদের পরাস্ত করেন। এই কাহিনির অন্তর্নিহিত অর্থ, ওঁ-কারের বারংবার উচ্চারণে মানুষ তার পাশব প্রবৃত্তি জয় করতে সমর্থ হয়। [5] কঠোপনিষদ মতে, ওঁ-কার পরব্রহ্ম। [28] মুণ্ডক উপনিষদে ওঁ-কার অবলম্বনে ঈশ্বরোপাসনার কথা বলা হয়েছে। [29] শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, তিনি সকল অক্ষরের মধ্যে ওঁ-কার। মৃত্যুকালে ওঁ-কারের উচ্চারণে পরম সত্য লাভ হয়। [30] পতঞ্জলির যোগসূত্র-এ ওঁ-কারকে ঈশ্বরের প্রতীক বলে বর্ণিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ওঁ-কারের স্মরণ ও উচ্চারণে সমাধি লাভ করা যায়।
ব্যবহার
ধর্মীয় চিহ্ন হলেও ব্যবহারিক জীবনে ওঁ-কারের প্রয়োগ আরও ব্যাপক। প্রত্যেকটি মন্ত্র ওঁ-কার দিয়ে শুরু হয়। চিঠিপত্রের শুরুতেও কেউ কেউ ওঁ-কার লিখে থাকেন। মন্দির, ঠাকুরঘর প্রভৃতি ধর্মীয় স্থানের প্রতীকচিহ্ন রূপেও ওঁ-কার ব্যবহৃত হয়। আজকাল ট্যাটু হিসাবেও এটি জনপ্রিয়।
পাদটীকা
- তৈত্তিরীয় উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়, অষ্টম অনুবাক, ১ সংখ্যক শ্লোক
- স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, চতুর্থ খণ্ড, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬৪, পৃ. ১১৪
- শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, অখণ্ড, শ্রীম-কথিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৮৬-৮৭, পৃ. ৩৫৯
- Hindu Symbols, Swami Harshananda, Ramakrishna Math, Bangalore, 2000, p.7
- Hindu Symbols, Swami Harshananda, Ramakrishna Math, Bangalore, 2000, p.8
- মাণ্ডুক্য উপনিষদ, ৮-১১ সংখ্যক শ্লোক
- বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস সংকলিত ও সম্পাদিত, দ্বিতীয় ভাগ, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা দ্রঃ
- ଓଁ (U+0B13 & U+0B01), ওঁ (U+0993 & U+0981)
- ଓଁ (U+0B13 & U+0B01), ওঁ (U+0993 & U+0981)
- ௐ (U+0BD0)
- ௐ (U+0BD0)
- ಓಂ (U+0C93 & U+0C82)
তেলেগু ఓం (U+0C13 & U+0C02) - ഓം (U+0D13 & U+0D02)
- ഓം (U+0D13 & U+0D02)
- "oo m"
- "oo m"
- 𑖍𑖼 (U+1158D & U+115BC)
- 𑖍𑖼 (U+1158D & U+115BC)
- 唵 (U+5535)
- 唵 (U+5535)
- ༀ (U+0F00)
- ༀ (U+0F00)
- টেমপ্লেট:Script/Bali (U+1B12 & U+1B01)
- টেমপ্লেট:Script/Bali (U+1B12 & U+1B01)
- ꦎꦴꦀ (U+A98E & U+A980 & U+A9B4)
- ꦎꦴꦀ (U+A98E & U+A980 & U+A9B4)
- Hindu Symbols, Swami Harshananda, Ramakrishna Math, Bangalore, 2000, p.11
- কঠোপনিষদ, প্রথম অধ্যায়, দ্বিতীয় বল্লী, ১৬ সংখ্যক শ্লোক
- মুণ্ডক উপনিষদ, দ্বিতীয় মুণ্ডক, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩ সংখ্যক শ্লোক
- শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা, অক্ষরব্রহ্মযোগ, ১-৩ সংখ্যক শ্লোকগুলি
আরও দেখুন
- হিন্দু ধর্ম
বহিঃসংযোগ
- ব্রহ্মমন্ত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত