ক্ষত্রিয়

ক্ষত্রিয় হল হিন্দু সম্প্রদায়ের চতুর্বর্ণের দ্বিতীয় বর্ণ। ঋগ্বেদের পুরুষসূক্ত অনুসারে ক্ষত্রিয়ের উৎপত্তি স্রষ্টার বাহু থেকে। রাজ্যশাসন, রাজ্যরক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা তাদের দায়িত্ব। গীতায় শ্রীকৃষ্ণের উক্তি অনুসারে যারা এরূপ গুণ ও কর্মের অধিকারী তারাই ক্ষত্রিয়।

ক্ষত্রিয়রা আর্য বলে কথিত। প্রাচীনকালে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে ক্ষত্রিয়দের সামাজিক মেলামেশা ও বিবাহাদি প্রচলিত ছিল। ক্ষত্রিয়রা রাজ্যশাসনের পাশাপাশি বিদ্যাচর্চাও করত। এদের মধ্যে মুনি, ঋষি, ধ্যানী, জ্ঞানী, ব্রহ্মবিদ, শাস্ত্রবিদ, পুরোহিত অনেকেই ছিলেন। দৈহিক গঠনে তারা ব্রাহ্মণদের সন্নিকটস্থ। ব্রাহ্মণদের গায়ের রং ফর্সা, ক্ষত্রিয়দের লোহিত বর্ণ। জৈনধর্মে ব্রাহ্মণদের চেয়ে ক্ষত্রিয়দের প্রাধান্য বেশি। বৌদ্ধ জাতকের মতে ক্ষত্রিয় শ্রেষ্ঠ বর্ণ। জৈনধর্মে বহু শূদ্র ও বৈশ্য উন্নত হয়ে ক্ষত্রিয় শ্রেণীভুক্ত হয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অনেক জাতি ও উপজাতির ক্ষত্রিয় রয়েছে। এক হিসাবমতে ক্ষত্রিয়দের শাখা ৫৯০-এর অধিক। বাংলাদেশে ক্ষত্রিয় কোনকালেই শক্তিশালী ও সুনির্দিষ্ট বর্ণ হিসেবে স্বীকৃত হয় নি। বাংলার স্মৃতি-পুরাণ-ঐতিহ্যে ক্ষত্রিয় বর্ণের বিশেষ উল্লেখ নেই। তবে মহাভারত , মনুসংহিতা ও অন্যান্য গ্রন্থে বঙ্গ, পুণ্ড্র, কিরাত, শবর ও পুলিন্দদের ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে। বাংলায় ক্ষত্রিয়রা বৈশ্যা ও শূদ্রা নারী বিবাহ করায় যথাক্রমে মাহিষ্য ও উগ্র বর্ণের/গোত্রের সৃষ্টি হয়। বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় এক শ্রেণীর কৃষিজীবী মানুষ বাস করে, যারা নিজদের পুণ্ড্র ক্ষত্রিয় বলে দাবি করে। এদের কিছু অংশ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এলাকায় বসবাস করছে। ক্ষত্রিয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-আচরণ অন্যান্য হিন্দুদের মতোই।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.