আব্দুল আলীম (সঙ্গীত শিল্পী)
আব্দুল আলীম (জুলাই ২৭, ১৯৩১, তালিবপুর গ্রাম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ - সেপ্টেম্বর ৫, ১৯৭৪) বাংলাদেশের লোক সঙ্গীতের একজন শিল্পী।[1] যিনি লোক সঙ্গীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে জীবন জগৎ এবং ভাববাদী চিন্তা একাকার হয়ে গিয়েছিল। আবদুল আলীমের জন্ম ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই। তিনি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই আলীম সঙ্গীতের প্রবল অনুরাগী ছিলেন। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। তিনি অন্যের গাওয়া গান শুনে গান শিখতেন; আর বিভিন্ন পালা পার্বণে সেগুলো গাইতেন। এভাবে পালা পার্বণে গান গেয়ে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
আব্দুল আলীম (সঙ্গীত শিল্পী) | |
---|---|
আরো যে নামে পরিচিত | আব্দুল আলীম |
উদ্ভব | তালিবপুর গ্রাম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ |
ধরন | লোক সঙ্গীত |
পেশা | গায়ক |
ছোটবেলা
বাবার নাম ছিল মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। প্রাইমারি স্কুলে পড়বার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে গান গাইবার জন্য আগ্রহ জন্মে। ছোটবেলায় তার সঙ্গীত গুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী। ঐ অল্প বয়স হতেই বাংলার লোক সঙ্গীতের এই অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেছিলেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তার গানের প্রথম রেকর্ড হয়। রেকর্ডকৃত গান দুটি হলো "তোর মোস্তফাকে দে না মাগো" এবং "আফতাব আলী বসলো পথে"। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। পরে তা আর বিস্ময় হয়ে থাকেনি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার লোক সঙ্গীতের এক অবিসংবাদিত-কিংবদন্তি পুরুষ।
সঙ্গীত শিক্ষা
পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় যান এবং সেখানে আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গান করেছেন। তিনি লোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর দীক্ষা নিয়েছেন বেদারউদ্দিন আহমদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান,[2] আব্দুল লতিফ, কানাইলাল শীল, আব্দুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে। লেটো দলে, যাত্রা দলে কাজ করেছেন।
কর্মজীবন
দেশ বিভাগের পরে আব্দুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। তিনি পরে টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। এছাড়াও তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আব্দুল আলীম গান করেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তার। আব্দুল আলীম তার আধ্যাত্মিক ও মরমী মুর্শিদী গানের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। কবি ও বাংলার লোক সঙ্গীতের গবেষক কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, "সমাজাটকে যাঁরা জাগিয়েছেন আব্দুল আলীম তাঁদের একজন"। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।
পুরস্কার ও সম্মাননা
আব্দুল আলীম বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার। পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স, লাহোরে সঙ্গীত পরিবেশন করে আব্দুল আলীম পাঁচটি স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন।বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করে।[3]
চলচ্চিত্র
তিনি প্রায় ৫০ টি ছবিতে নেপথ্যে কন্ঠশিল্পী ছিলেন। যেমন-
- এদেশ তোমার আমার
- জোয়ার এলো
- সুতরাং
- পরশমণি
- বেদের মেয়ে
- রূপবান
- সাত ভাই চম্পা
- পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি।[3]
বিখ্যাত কিছু গান
তার কিছু অবিস্মরণীয় গান হলো:
- নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা
- সর্বনাশা পদ্মা নদী
- হলুদিয়া পাখী
- মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম
- এই যে দুনিয়া
- দোল দোল দুলনি
- দুয়ারে আইসাছে পালকি
- কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ
- মনে বড় আশা ছিল যাবো মদীনায়
- বন্ধুর বাড়ি মধুপুর ইত্যাদি।[3]
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
- সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ; ভলিউম-৬, ইস্যূ-৩৪, বৃহস্পতিবার, আগস্ট ০৮, ২০০৬।
- বাংলাপিডিয়া
- দি ডেইলি ষ্টার
- Sadya Afreen Mallick (২০০৪-০৭-২৫)। "Abdul Alim: The king of folk songs"। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-২৯।
- Mallick, Sadya Afreen (৫ সেপ্টেম্বর ২০১২)। "Tribute to Abdul Alim"। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৬।
- সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২৭-২৮।