ফ্লোরিন

ফ্লোরিন বা ফ্লুরিন একটি মৌলিক পদার্থ, যার রাসায়নিক প্রতীক Fস্বাভাবিক তাপমাত্রাচাপে এটি একটি বিষাক্ত ক্ষীণ হলুদ রঙের বায়বীয় পদার্থ (গ্যাস) হিসেবে অবস্থান করে।

ফ্লোরিন / ফ্লুরিন   F
অতিনিম্ন হিমশীতল তাপমাত্রায় তরল ফ্লোরিন
পরিচয়
নাম, প্রতীকফ্লোরিন / ফ্লুরিন, F
উচ্চারণ/ˈflʊərn/, /ˈflʊərɪn/, /ˈflɔːrn/
পর্যায় সারণীতে ফ্লোরিন / ফ্লুরিন
-

F

Cl
অক্সিজেনফ্লোরিননিয়ন
পারমাণবিক সংখ্যা9
আদর্শ পারমাণবিক ভর18.9984032(5)[1]
মৌলের শ্রেণীহ্যালোজেন
শ্রেণী, পর্যায়, ব্লকgroup 17 (halogens), পর্যায় 2, p-ব্লক
ইলেকট্রন বিন্যাস1s2 2s2 2p5[2]
per shell: 2, 7[2]
ভৌত বৈশিষ্ট্য
দশাগ্যাস
গলনাঙ্ক53.53 কে (219.62 °সে, 363.32[3] °ফা)
স্ফুটনাঙ্ক85.03 K (188.12 °সে, 306.62[3] °ফা)
ঘনত্ব1.696[4] গ্রা/লি (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa)
তরলের ঘনত্বb.p.: 1.505[5] g·cm−৩
পরম বিন্দু144.00 কে, 5.220[6] MPa
ফিউশনের এনথালপি0.51[7] kJ·mol−১
বাষ্পীভবনের এনথালপি3.27[7] kJ·mol−১
তাপ ধারকত্ব(Cp) (21.1 °C) 825[8] J·mol−1·K−1
(Cv) (21.1 °C) 610[8] J·mol−১·K−১
বাষ্প চাপ
P (Pa) ১০ ১০০  k ১০ k ১০ k
at T (K) 38 44 50 58 69 85
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
জারণ অবস্থা−1 oxidizes oxygen
তড়িৎ-চুম্বকত্ব3.98[9] (পলিং স্কেল)
আয়নীকরণ বিভব
(আরও)
সমযোজী ব্যাসার্ধ60[10] pm
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ147[11] pm
বিবিধ
কেলাসের গঠন cubic

the structure refers to solid fluorine, at boiling point, 1 atm[12]
তাপীয় পরিবাহিতা0.02591[13] W·m−১·K−১
চুম্বকত্বdiamagnetic[14]
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা7782-41-4[2]
সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ
iso NA অর্ধায়ু DM DE (MeV) DP
18F trace 109.77 min β+ (97%) 0.633 18O
ε (3%) 1.656 18O
19F 100% F 10টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
reference[15]

নামকরণ

ফ্লোরিন নামটি এর অন্যতম প্রধান খনিজ ফ্লোরোস্পার (Fluorospar) বা ফ্লোরাইট (Fluorite) থেকে এসেছে। ফ্লোরোস্পার শব্দটি আবার লাতিন "ফ্লুয়েরে" (Fluere) থেকে এসেছে যার অর্থ "প্রবাহিত হওয়া"। ফ্লোরাইট বা ফ্লোরোস্পার খনিজটিকে আকরিক থেকে বিভিন্ন ধাতুকে গলিয়ে নিষ্কাশন করার প্রক্রিয়াতে বিগালক (flux ফ্লাক্স) হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যাতে গলিত ধাতু সহজে প্রবাহিত হতে পারে। এখান থেকেই "ফ্লোরো" (Fluoro) কথাটি এসেছে।

বৈশিষ্ট্য

ফ্লোরিন পর্যায় সারণির ২য় পর্যায়ে হ্যালোজেন শ্রেণীর (১৭নং শ্রেণী; প্রাক্তন VIIB শ্রেণী) একটি সদস্য। এটি শ্রেণীটির সবচেয়ে হালকা মৌল। এটির পরমাণুগুলির ক্ষুদ্র আকৃতি এবং সবচেয়ে বেশি তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌল হিসেবে ইলেকট্রন আকর্ষণ করতে অতি পারদর্শিতা এর রাসায়নিক সক্রিয়তার কারণ। ফ্লোরিন পরমাণুতে ৯টি প্রোটন, ৯টি ইলেকট্রন ও ১০টি নিউট্রন আছে। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৯; পারমাণবিক ওজন ১৮.৯৯; ঘনত্ব ১.৭ গ্রাম/ঘনডেসিমিটার; গলনাঙ্ক –২১৯.৬২°সে এবং স্ফুটনাঙ্ক –১৮৮.১°সে। ফ্লোরিন গ্যাসের অণু দুইটি পরমাণু নিয়ে গঠিত।

ফ্লোরিন পরমাণুর সর্ববহিস্থ ইলেকট্রন শক্তিস্তর বা খোলকে ৭টি ইলেকট্রন থাকে। স্থিতিশীলতার জন্য এর আরেকটি ইলেকট্রনের প্রয়োজন হয়। একারণে ফ্লোরিনের রাসায়নিক যোজ্যতা -১। নিষ্ক্রিয় গ্যাস ছাড়া আর সকল মৌলের সাথেই এটি বিক্রিয়া করে। ফ্লোরিনের যৌগ বা লবনকে ফ্লোরাইড বলা হয়।

রাসায়নিক বিক্রিয়া

ফ্লোরিন সর্বাধিক বিক্রিয়াশীল রাসায়নিক মৌল যা (হিলিয়ামনিয়ন ব্যতীত) প্রায় সমস্ত পদার্থকে দ্রুত আক্রমণ করে ক্ষয় করা শুরু করে। কক্ষ তাপমাত্রায় এটি যেকোনও জৈব পদার্থ ও বহু ধাতুর সাথে দহন প্রক্রিয়া শুরু করে। ফ্লোরিন ইট, কাচইস্পাতের সাথে বিক্রিয়া করে এগুলি জ্বলিয়ে ফুটো করে বেরিয়ে যায়। বিশুদ্ধ ফ্লোরিন অত্যন্ত বিষাক্ত একটি গ্যাস। বাতাসে অতিস্বল্প পরিমাণে ফ্লোরিন থাকলেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ফ্লোরিন গ্যাস জীবিত কলাকোষকে অতিদ্রুত জারিত করে ধ্বংস করে ফেলে, জীবকোষের পানির সাথে বিক্রিয়া করে অতিবিষাক্ত হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে এবং এসমস্ত বিক্রিয়াতে অত্যধিক তাপ উৎপাদিত হয়। ফলে ফ্লোরিনের সংস্পর্শে আসলে জীবদেহের রাসায়নিক বিক্রিয়া, বিষ ও উত্তাপজনিত যে তিন ধরনের ক্ষতি হয়, তার থেকে নিরাময় অত্যন্ত দুরূহ। ফ্লোরিন এত বিষাক্ত ও বিধ্বংসী বলে এটিকে সাধারণত নিকেলের সঙ্কর ধাতুর তৈরী পাত্রে আবদ্ধ করে রাখা হয়, কারণ নিকেল ফ্লোরিনের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পাত্রের ভেতরের দেওয়ালে একটি বিক্রিয়ারোধী ফ্লোরাইড স্তরের সৃষ্টি করে।

উৎস ও প্রস্তুতি

প্রকৃতিতে ফ্লোরিন প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান হলেও এটি পৃথক মৌল হিসেবে থাকে না। রাসায়নিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় বলে সবসময়ই এটি অন্যান্য মৌলিক পদার্থের সাথে মিলে যৌগ আকারে বিরাজ করে। সমুদ্র, নদী বা হ্রদের পানি, প্রাণীদের অস্থিতে ও দাঁতে এবং সকল উদ্ভিদে ফ্লোরিন পাওয়া যায়। ভূত্বকে ফ্লোরিনের পরিমাণ প্রায় ০.০৬৫%, অর্থাৎ এটি কোনও বিরল মৌল নয়।

দক্ষিণ ফ্রান্সে প্রাপ্ত ফ্লোরাইট খনিজের কেলাস
গ্রিনল্যান্ডে প্রাপ্ত ক্রায়োলাইট খনিজ

প্রকৃতিতে ফ্লোরিনের যে খনিজটি সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য, সেটি হল ফ্লোরোস্পার বা ফ্লোরাইট (ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড CaF2)। বহু শতাব্দী ধরেই এই খনিজটিকে ধাতু নিষ্কাশন শিল্পের বিভিন্ন প্রয়োজনে বিগালক হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছে। ফ্লোরোস্পারের কেলাসগুলি বর্ণহীন ও স্বচ্ছ এবং এগুলির উপরে আলো ফেললে হালকা নীল আভা প্রদর্শন করে, যাকে প্রতিপ্রভা (Fluorescence ফ্লুওরেসেন্স) বলে। দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো ও চীনে সবচেয়ে বেশি ফ্লোরাইটের মজুদ আছে।

ফ্লোরিনের দ্বিতীয় উৎসটি হল নরম ও ভঙ্গুর ক্রায়োলাইট (সোডিয়াম অ্যালুমিনিয়াম ফ্লোরাইড Na3AlF6)। গ্রিনল্যান্ডআইসল্যান্ডে ক্রায়োলাইটের মজুদ আছে।

এছাড়া ফ্লোরোঅ্যাপাটাইট (Ca5[PO4]3[F,Cl]) নামের সুলভ খনিজ পদার্থেও ফ্লোরিন (ও ক্লোরিন) রয়েছে।

পোখরাজ নামের মূলবান রত্নপাথরটিতে প্রায় ২১% ফ্লোরিন আছে।

লেপিডোলাইট নামের এক ধরনের অভ্রেও ফ্লোরিন পাওয়া যায়।

ফ্লোরিনকে কোনও ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তার যৌগগুলি থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়। ফ্লোরিন পাবার জন্য তরল হাইড্রোজেন ফ্লোরাইডে দ্রবীভূত পটাসিয়াম হাইড্রোজেন ফ্লোরাইডের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়।

আবিষ্কার

১৫২৯ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ও খনিজবিজ্ঞানী গেয়র্গিউস আগ্রিকোলা (গেয়র্গ বাউয়ার) ফ্লোরিন-সমৃদ্ধ খনিজ ফ্লোরাইট বা ফ্লোরোস্পারের বর্ণনা দেন। ১৬৭০ সালের দিকে জার্মান বিজ্ঞানী হাইনরিখ শ্ভা‌নহার্ড লক্ষ্য করেন যে ফ্লোরোস্পারের (সেসময় সেটি "বোহেমীয় পান্না" নামে পরিচিত ছিল) সাথে শক্তিশালী অ্যাসিড মেশালে উৎপন্ন তরল দিয়ে কাচের উপরে দাগ কাটা সম্ভব। সম্ভবত ১৭২০ সালে একজন বেনামী ইংরেজ কাচমিস্ত্রী সম্ভবত প্রথম অশোধিত হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুত করেন। ১৭৭১ সালে সুয়েডীয় রসায়নবিদ কার্ল ভিলহেল্ম শেলে কাঁচের বকযন্ত্রে ফ্লোরোস্পারকে ঘন সালফিউরিক অ্যাসিডের সাথে উত্তপ্ত করে অবিশুদ্ধ হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুত করতে সক্ষম হন, কিন্তু উৎপন্ন অ্যাসিডটি কাচের পাত্রের অনেক ক্ষয়সাধন করে। তাই পরবর্তী ফ্লোরাইট-সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলি ধাতব পাত্রে সম্পাদন করা হত। কিন্তু ১৯শ শতকের আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিডকে ফ্লোরোস্পারের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ ও ক্ষয়কারী তরল হিসেবেই গণ্য করতেন, ফ্লোরিনের অ্যাসিড বা অম্ল হিসেবে নয়। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে ফ্লোরোস্পার ও এই জাতীয় খনিজগুলিতে একটি অজানা মৌলিক পদার্থ বিদ্যমান। ১৮০৯ সালে প্রায় পানিমুক্ত শুষ্ক হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুত সম্ভব হয়, যদিও এটি কীসের অম্ল তা জানা ছিল না। ১৮১১ সালে ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী অঁদ্রে-মারি অঁপের প্রস্তাব করেন যে অ্যাসিডটি হাইড্রোজেনের সাথে অজানা একটি মৌলের সংযোগে গঠিত, যে মৌলটি ক্লোরিনের অনুরূপ। অঁপের এই অজানা মৌলটির নাম "ফ্লোরিন" রাখার প্রস্তাব করেন। ফ্লোরোস্পারকে ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড হিসেবে শনাক্ত করা হয়। কিন্তু ফ্লোরিনকে পৃথক করতে আরও প্রায় ৭০ বছর লেগে যায়। প্রথমে ফরাসি বিজ্ঞানী এদমোঁ ফ্রেমি ও ইংরেজ বিজ্ঞানী জর্জ গোর তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটি পৃথক করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। গোর সম্ভবত স্বল্প পরিমাণে ফ্লোরিন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু উৎপন্ন হবার সাথে সাথে ফ্লোরিন গ্যাসটি অপর ইলেকট্রোডের হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে বিস্ফোরণ ঘটায় ও গোরের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ফ্রেমির ছাত্র ফরাসি রসায়নিবিদ ফের্দিনঁ ফ্রেদেরিক অঁরি মোয়াসঁ (Henri Moissan) সর্বপ্রথম ১৮৮৬ সালে ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু বিপজ্জনক পরীক্ষা পরিচালনার মাধ্যমে ফ্লোরিন গ্যাসটিকে পৃথক করতে সক্ষম হন। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজেও একাধিকবার বিষক্রিয়ার শিকার হন। মোয়াসঁ তার পরীক্ষায় প্লাটিনাম ধাতুর তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। ১৯০৬ সালে তিনি ফ্লোরিন পৃথকীকরণ ও শনাক্তকরণের জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার সমিতি লেখে যে "আপনি যে অসাধারণ পরীক্ষা চালানোর দক্ষতার সাথে এই বন্যজন্তুসম মৌলিক পদার্থটির উপরে গবেষণা চালিয়েছেন, তা সারা বিশ্ব প্রশংসার চোখে দেখে।" [টীকা 1]

যৌগসমূহ ও ব্যবহার

পারমাণবিক শক্তি

২য় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত খুবই স্বল্প পরিমাণে ফ্লোরিন উৎপাদন করা হয়েছিল। যুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা প্রকল্পে ইউরেনিয়ামের সমস্থানিক পরমাণু বা আইসোটোপ আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড যৌগ তৈরির কাজে ফ্লোরিনের দরকার হয়। বর্তমান যুগেও বেশিরভাগ উৎপাদিত ফ্লোরিন একই ধরনের একটি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়, যা হল নিউক্লীয় শক্তিকেন্দ্রে ইউরেনিয়ামের আইসোটোপ বা সমস্থানিক পৃথকীকরণ।

কাচশিল্প

ফ্লোরোস্পারকে সালফিউরিক অ্যাসিডের সাথে উত্তপ্ত করলে হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড নামের একটি যৌগ উৎপন্ন হয়, যা একটি বিষাক্ত তরল পদার্থ এবং ত্বকের গভীরে বেদনাদায়ক ক্ষতের সৃষ্টি করে। হাইড্রোজেন ফ্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভূত করলে হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। এই অ্যাসিডটি বৈদ্যুতিক আলোর বালবের ভেতরে খোদাই করতে বা কাচের পাত্রে নকশাকরণ বা ফ্রস্টিংয়ে ব্যবহৃত হয়।

ধাতু নিষ্কাশন

ফ্লোরিনের একটি খনিজ ক্রায়োলাইট ব্যবহার করে বক্সাইট খনিজ থেকে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা হয়।

জৈব যৌগ উৎপাদন

হাইড্রোজেন ফ্লোরাইডবোরন ট্রাইফ্লোরাইড কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি ত্বরান্বিত করে, যেগুলির সাহায্যে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামকে পেট্রোল ও অন্যান্য পদার্থে রূপান্তরিত করা হয়। এছাড়া হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড বহু জৈব ফ্লোরিন যৌগ (ফ্লোরোকার্বন) বানাতে ব্যবহৃত হয়।

বিদ্যুৎশিল্প

বর্তনী বিচ্ছিনকারক (সার্কিট ব্রেকার) যন্ত্রাংশে ফ্লোরিন ও সালফারের (গন্ধক) একটি যৌগ থাকে যেটি জরুরী অবস্থায় বিদ্যুতের প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে। এছাড়া ফ্লোরিন স্বল্প পরিমাণে সালফার হেক্সাফ্লোরাইড যৌগটি প্রস্তুতকরণে ব্যবহার করা হয়; এই গ্যাসটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশসমূহে অন্তরক পদার্থ হিসেবে মূল্যবান।

তৈজসপত্র

চিনামাটির বাসনকোসনের কিছু কিছু উজ্জ্বল বহিস্থ প্রলেপের ভেতরে ফ্লোরিনের যৌগ ব্যবহার করা হয়।

দাঁত ও চিকিৎসা

দাঁতের ক্ষয়রোধের লক্ষ্যে দাঁতের মাজন (টুথপেস্ট) ও খাবার পানিতে একাধিক ফ্লোরিন যৌগ যোগ করা হয়। কীটনাশকজীবাণুনাশক হিসেবে ও বাসাবাড়িতে সরবরাহকৃত পানিতে সোডিয়াম ফ্লোরাইড স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করা হয়, যা দাঁতের এনামেলের সুরক্ষার জন্য ভাল। অক্সিসাইট নামের একটি ফ্লোরিন-সমৃদ্ধ তরল সুঁচের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করালে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত দেহকলার কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেয় এবং সেগুলির নিরাময়ে সাহায্য করে।

প্লাস্টিকশিল্প

প্লাস্টিকের বোতলের শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াতে গলে যাওয়া প্লাস্টিককে উচ্চচাপযুক্ত বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে একটি ছাঁচে ফেলা হয়। যদি সাধারণ বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তে নাইট্রোজেন ও ফ্লোরিন গ্যাসের একটি মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়, তাহলে ফ্লোরিন প্লাস্টিকের অভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠতলের সাথে বিক্রিয়া করে। প্লাস্টিককে এভাবে মজবুত ও দুর্ভেদ্য করার ফলে বেশির ভাগ দ্রাবকই আর প্লাস্টিক ভেদ করতে পারে না। ফলে এই বোতলগুলি এমন অনেক তরল পদার্থ জমিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়, যেগুলি সাধারণ প্লাস্টিকের ধারকপাত্রের দেয়াল ভেদ করে বাষ্পীভূত হয়ে যেতে পারে।

রুন্ধন ও পানি নিরোধন
টেফলন রান্নার পাত্র

ফ্লোরিনের আরেকটি যৌগ পলিটেট্রাফ্লোরোইথিলিন (পিটিএফই বা "টেফলন" বাণিজ্যিক মার্কা) ব্যাপকভাবে পিচ্ছিল (ইংরেজি "নন-স্টিক") রান্নার পাত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই যৌগটি পিচ্ছিল বলে রান্নার সময় পুড়ে যাওয়া খাবার পাত্রের গায়ে আটকে যেতে পারে না। পিটিএফই-এর সরু তন্তু দিয়ে হালকা জলনিরোধী বস্ত্রও প্রস্তুত করা হয়। একই পিটিএফই যৌগটিকে মার্কিন মহাশূন্য বিষয়ক সংস্থা নাসা মহাশূন্যচারীদের "স্যুট" বা বিশেষ পোশাক বানাতে ব্যবহার করে, কেননা এটি উত্তাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা দান করে।

শীতায়ন

২০শ শতকের মধ্যভাগে ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি) নামের একটি গন্ধহীন যৌগ উদ্ভাবন করা হয়, যেটি দাহ্য, ক্ষয়কারী বা বিষাক্ত নয়। এটি সহজেই গলে যায় ও স্বল্প তাপমাত্রায় ফুটতে শুরু করে। একারণে শীতকযন্ত্র বা রেফ্রিজারেটরে দুর্গন্ধযুক্ত ও বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিবর্তে শীতক পদার্থ হিসেবে ও অ্যারোসল নিক্ষেপক হিসেবে সিএফসি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে বিজ্ঞানীরা অনুধাবন করেন যে এটি বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ফুটো হবার কারণ। তাই ১৯৭৭ সালের পর থেকে এর ব্যবহার কমে যায় ও অনেক দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।

টীকা

  1. Richard Toon (০১ সেপ্টেম্বর ২০১১), The discovery of fluorine, The Royal Society of Chemistry এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য) অনুযায়ী নোবেল সমিতি লেখে যে "...in recognition of the great services rendered by him in his investigation and isolation of the element fluorine. The whole world has admired the great experimental skill with which you have studied that savage beast among the elements."

তথ্যসূত্র

  1. Wieser, Michael E.; Coplen, Tyler B. (২০১০)। "Atomic weights of the elements 2009 (IUPAC Technical Report)"। Pure and Applied Chemistry83: 359–396। doi:10.1351/PAC-REP-10-09-14
  2. Aigueperse et al. 2005, "Fluorine", p. 1।
  3. Dean 1999, পৃ. 523।
  4. Aigueperse et al. 2005, "Fluorine", p. 2।
  5. Jarry, Roger L.; Miller, Henry C. (১৯৫৬)। "The Density of Liquid Fluorine between 67 and 103°K."। Journal of the American Chemical Society78: 1552। doi:10.1021/ja01589a012
  6. Cengel, Yunus A.; Boles, Michael A. (২০০২)। Thermodynamics: An Engineering Approach (Fourth সংস্করণ)। McGraw-Hill। পৃষ্ঠা 824। আইএসবিএন 0-07-238332-1।
  7. Dean 1999, পৃ. 942।
  8. Compressed Gas Association (১৯৯৯)। Handbook of compressed gases। Springer। পৃষ্ঠা 365। আইএসবিএন 9780412782305।
  9. Allred, A. L. (১৯৬১)। "Electronegativity values from thermochemical data"। Journal of Inorganic and Nuclear Chemistry17 (3–4): 215–221। doi:10.1016/0022-1902(61)80142-5
  10. Robinson, Edward A.; Johnson, Samuel A.; Tang, Ting-Hua; Gillespie, Ronald J. (১৯৯৭)। "Reinterpretation of the Lengths of Bonds to Fluorine in Terms of an Almost Ionic Model"। Inorganic Chemistry36 (14): 3022। doi:10.1021/ic961315b। PMID 11669953
  11. Bondi, A. (১৯৬৪)। "Van der Waals Volumes and Radii"Journal of Physical Chemistry68 (3): 441–51। doi:10.1021/j100785a001
  12. Young, David A. (১৯৭৫)। Phase Diagrams of the Elements (প্রতিবেদন)। Springer। পৃষ্ঠা 10।
  13. Yaws ও Braker 2001, পৃ. 385।
  14. Mackay, Kenneth Malcolm; Mackay, Rosemary Ann; Henderson, W. (২০০২)। Introduction to modern inorganic chemistry (6th সংস্করণ)। CRC Press। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 0748764208। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৬-১৫
  15. Chiste, V. (২০০৬)। "F-18" (PDF)Table de radionucleides। France: Laboratoire National Henri Becquerel। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১১ অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.