ক্লোরিন
ক্লোরিন এক রাসায়নিক মৌল যার প্রতীক Cl এবং পারমানবিক সংখ্যা ১৭। পর্যায় সারণিতে এর অবস্থান হ্যালোজেন পরমাণু ফ্লোরিন আর ব্রোমিনের মাঝে,এবং বৈশিস্ট্যেও ক্লোরিন এদের মাঝামাঝি। ক্লোরিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় হলুদ-সবুজ বর্নের গ্যাস রূপে থাকে। এটি একটি খুবই শক্তিশালী জারক পদার্থ । জগতের সকল পদার্থের মাঝে ক্লোরিনের সবচেয়ে বেশি ইলেক্ট্রন আসক্তি রয়েছে এছাড়াও এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ তড়িত ঋণাত্বকতা সম্মপন্ন মৌল। তড়িত ঋণাত্নকতার পলিঙ্গি সারিতে ক্লোরিনের আগে অবস্থান করছে পর্যায়ক্রমে অক্সিজেন এবং ফ্লোরিন।
ক্লোরিনের সবচেয়ে পরিচিত পদার্থ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড, যা আমরা খাবার লবণ হিসেবে চিনি, যা প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। প্রায় 1630 শতাব্দীতে এক রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লোরিন গ্যাস সর্বপ্রথম আবিস্কৃত হয়েছিল, তবে তখন তা গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু হিসেবে পরিচিতি পায়নি। Carl Wilhelm Scheele 1774 সনে ক্লোরিন গ্যাসকে এক নতুন অনুর অক্সাইড হিসেবে বর্ণণা করেন। 1809 সনে রসায়নবিদগণ ক্লোরিন গ্যাসকে এক মৌলিক পদার্থ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। Sir Humphry Davy 1810 সনে গ্রীক থেকে গ্যাসটির নাম প্রদান করেন "ক্লোরিন", যার অর্থ গাড়ো সবুজ৷ গ্যাসটির রঙ সবুজাভ হওয়ায় এরূপ নামকরণ করা হয়৷ উচ্চ সক্রিয় মৌল হওয়ায় প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরিন আয়নিক ক্লোরাইড যৌগ রূপে পাওয়া যায়, যার একটি হলো খাদ্য লবণ। হ্যালোজেন হিসেবে ফ্লোরিনের পরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্লোরিনই পাওয়া যায়। এমনকি প্রকৃতিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যৌগের মাঝে ক্লোরিনের অবস্থান 21 তম। সমুদ্রের পানিতে পাওয়া ক্লোরিনই মূলত মাটিতে জমা হয়।
বাণিজ্যিকভাবে ক্লোরিন মৌল ব্রাইন (সোডিয়াম ক্লোরাইডের গাড়ো জলীয় দ্রবণ) থেকে ইলেক্ট্রোলাইসিসের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। উচ্চ জারণ মান থাকার কারণে ক্লোরিন ব্লিচ এবং ডিসইনফেক্টেন্ট (এমন পদার্থ যা দেহের বাইরে ক্ষতিকর রোগ সৃস্টিকারী জীবনু ধ্বংস করে) তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ক্লোরিন বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের প্রোডাক্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যার দুই তৃতীয়াংশই হল জৈব রাসায়নিক পদার্থ, যেমন polyvinyl chloride. এছাড়াও ক্লোরিন বিভিন্ন প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। একটি common disinfectant হিসেবে ক্লোরিন মৌল এবং ক্লোরিং উৎপন্নকারী পদার্থ সুইমিংপুলে ব্যাবহার করা হয় পানিকে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে। তবে উচ্চ ঘনত্বের ক্লোরিন পরমাণু সকল জীবের জন্য খুবই বিপদজনক এবং বিষাক্ত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাসায়নিক (chemical walefare agent) হিসেবে প্রথম গ্যাস ক্লোরিন ব্যবহৃত হয়েছিল। ক্লোরিং আয়ন হিসেবে সকল জীবের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়ন ছাড়া ক্লোরিন পদার্থ জীবের মাখে প্রায় বিরল। কৃত্রিম উপায়ে যেসব জৈব ক্লোরিন তৈরি করা হয় তা নিস্ক্রিয় অথবা toxic হয়ে থাকে। ক্লোরিন যুক্ত জৈব পদার্থ, যেমন ক্লোরো ফ্লোরো কার্বণ ওজন স্তর ক্ষয়ের একটি মূল কারণ। আমাদের শরীরে ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ ক্লোরিন মৌল তৈরি হয় নিউট্রোফিলে ক্লোরাইডের জারণে হাইপোক্লোরাইট তৈরির ক্ষেত্রে।
ইতিহাসঃ ক্লোরাইডের সবচেয়ে পরিচিত পদার্থ, সোডিয়াম ক্লোরাইড সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ প্রত্নতত্ত্ববিদগণ রকসল্ট খ্রিস্টপূর্ব 3000 সাল এবং ব্রাইন প্রায় খ্রিস্টপূর্ব 6000 সালে ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন। ক্লোরিন পদার্থ সর্বপ্রথম আলাদা করা হয় প্রায় 1200 শতাব্দীতে একুয়া রিজিয়া এর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে৷ একুয়া রিজিয়া সোনানে গলিয়ে দিতে পারত,যেহেতু একুয়া রিজিয়ার সাথে সোনার বিক্রিয়ায় ক্লোরিন গ্যাস উতপন্ন হয়৷ যদিও তখন ক্লোরিন গ্যাসকে স্বতন্ত্র পদার্থের মর্যাদা দেয়া হয়নি। প্রায় 1630 শতাব্দীতে ফ্লেমিশ রসায়নবিদ এবং চিকিৎসক জন ব্যাপিস্ট ভন হেলমন্ট সর্বপ্রথম ক্লোরিনকে গ্যাস হিসেবে চিহ্নিত করেন৷ সুইডিশ রসায়নবিদ কার্ল উইলিউয়াম স্কিল ( scheele) সর্বপ্রথম ক্লোরিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন 1774 সালে। scheele ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইডের সাথে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিক্রিয়ায় ক্লোরিন উৎপন্ন করেন। (reaction)
scheele ক্লোরিনের বিভিন্ন বৈশিস্ট পর্যবেক্ষণ করেন, যেমন লিটমাসের ওপর বিরঞ্জন প্রভাব, পোকামাকড়ের মৃত্যু, হলুদাভ সবুজ রঙ আর একুয়া রিজিয়া এর মতো গন্ধ। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন "dephalogisticated muriatic acid air), (যেহেতু এটি গ্যাস, আর তখন গ্যাসকে airs বলা হতো, আর হাইড্রোক্লোরিক এসিডকে তখন মুরিয়াটিক এসিড বলা হত, আর এটি তিনি হাইড্রোক্লোরিক এসিড থেকে উতপন্ন করেছিলেন। তবে তিনি ক্লোরিনকে পদার্থ হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যার্থ হন।
ততকালীনসময়ে প্রচলিত ধারণা ছিল সকল এসিড অক্সিজেন ধারন করে (oxygen এর ডাচ অথবা জার্মান নাম অনুবাদ করলে পাওয়া যায় এসিড পদার্থ)। তাই অনেক রসায়নবিদ, এমনকি ক্লড বার্তগেলটও ধারণা করেন বিজ্ঞানী সিলের (dippmnd) হয়ত অক্সিজেনের কোন মৌল, আর muruaticum undiscovered element.
1809 খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী জোসেফ লুইস গে লুসাক এবং লুইয়া জ্যকোস থেনার্ড (dipapdkj) কে চারকোলের সঙ্গে বিক্রিয়া করিয়ে বিশ্লেষণ করার চেস্টা করেন (mitajjdh) যৌগটি পাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা ব্যার্থ হন এবং এ জন্য তারা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন যেখানে তারা (bfjfjhfjdj) কে একটি পদার্থ হওয়ার সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তবে তারা সন্তুষ্ট ছিলেন না।৷
1810 সালে স্যার হাম্ফ্রি ড্যাভি একই experiment আবার চালান। এবং সিদ্ধান্ত নেন এই বস্তুটি একটি মৌল, কোন যৌগ নয়৷ তিনি সেই বছরের 15 নভেম্বর রয়েল সোসাইটিতে এই পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন। তিনি এই নতুন মৌলের নাম দেন ক্লোরিন, গ্রীক নাম (ব্দব্দব) থেকে, যার অর্থ হলুদাভ সবুজ। হ্যালোজেন, যার অর্থ লবণ producer originally ক্লোরিনের জন্য ব্যাবহৃত হয়েছিল 1811 সালে (bjjdjdjfj) দ্বারা৷ পরবর্তীতে (ভধদ্ভদব্বদব্দভদ্ভ) এর suggestion এ 1826 সালে হ্যালোজেন নামটি সাধারণভাবে ক্লোরিন পরিবারের সকল মৌলের (ক্লোরিন, ফ্লোরিন, ব্রোমিন, আয়োডিন) জন্য ব্যাবহৃত হয়৷ 1823 খ্রিষ্টাব্দে মাইকেল ফ্যারাডে সর্বপ্রথম ক্লোরিন তরলে পরিণত করেন এবং ব্যাখা করেন সলিড ক্লোরিন হিসেবে যা পরিচিত ছিল তা হলো ক্লোরিন হাইড্রেট।
ফরাসী রসায়নবিদ ক্লড বার্থেলল সর্বপ্রথম কাপড় bleach করার জন্য ক্লোরিন গ্যাস ব্যাবহার করেন 1785 সনে৷ বিজ্ঞানী বার্থেলট 1789 সনে javel শহরে তার ল্যাবরেটরিতে ক্লোরিন গ্যাসকে সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবণের মধ্য দিয়ে পরিচালনা করে সর্বপ্রথম সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট আবিস্কার করেন, যা ই আধুনিক ব্লিচ তৈরি করার পথ দেখিয়ে দিয়েছিল। যে তরলটি তৈরি হয়েছিল তার নাম ছিল (Eau de javel)( জাভেলের পানি) যা ছিল সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের একটি দূর্বল দ্রবণ । তবে এই পদ্ধতি খুব বেশি ফলপ্রসূ ছিল না, অন্যদিকে অন্যভাবে তৈরির পদ্ধতি ছিল। স্কটিশ কেমিস্ট চার্লস টেনান্ট সর্বপ্রথম ক্যলসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের দ্রবণ তৈরি করেন, পরবর্তীতে সলিড ক্যলসিয়াম হাইপোক্লোরাইট অর্থাত ব্লিচিং পাউডার আবিস্কার করেন। এই যৌগগুলো সামান্য পরিমাণে ক্লোরিন মৌল তৈরি করে এবং সোডিয়াম গা