সোডিয়াম

সোডিয়াম বা ন্যাট্রিয়াম একটি মৌলিক পদার্থ যার প্রতীক Na এবং পারমাণবিক সংখ্যা ১১। এটি পর্যায় সারণীর তৃতীয় পর্যায়ে, প্রথম শ্রেণীতে অবস্থিত। যার কারণে এটি ক্ষার ধাতু হিসাবে পরিগণিত। তীব্র সক্রিয়তার কারণে একে প্রকৃতিতে আলাদাভাবে পাওয়া যায় না, সোডালাইট, ফেল্সপার, রকসল্ট ইত্যাদি খনিজ রূপে পাওয়া যায়। মহাবিশ্বে এর উৎপত্তি হয় নক্ষত্রে, ৬০০ মেগাকেলভিন তাপমাত্রায় কার্বন দহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যখন দুটি কার্বন পরমানুর মধ্যে ফিউশান ঘটে।

সোডিয়াম   ১১Na
Spectral lines of sodium
পরিচয়
নাম, প্রতীকসোডিয়াম, Na
উচ্চারণ/ˈsdiəm/ SOH-dee-əm
উপস্থিতিধাতব রূপালী সাদা
পর্যায় সারণীতে সোডিয়াম
Li

Na

K
নিয়নসোডিয়ামম্যাগনেসিয়াম
পারমাণবিক সংখ্যা11
আদর্শ পারমাণবিক ভর22.98976928(2)
মৌলের শ্রেণীক্ষার ধাতু
শ্রেণী, পর্যায়, ব্লক, পর্যায় , s-ব্লক
ইলেকট্রন বিন্যাস[Ne] 3s1
per shell: 2,8,1
ভৌত বৈশিষ্ট্য
দশাকঠিন
গলনাঙ্ক370.87 কে (97.72 °সে, 207.9 °ফা)
স্ফুটনাঙ্ক1156 K (883 °সে, 1621 °ফা)
ঘনত্ব (ক.তা.-র কাছে)0.968 g·cm−৩ (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa)
তরলের ঘনত্বm.p.: 0.927 g·cm−৩
পরম বিন্দু(extrapolated)
2573 কে, 35 MPa
ফিউশনের এনথালপি2.60 kJ·mol−১
বাষ্পীভবনের এনথালপি97.42 kJ·mol−১
তাপ ধারকত্ব28.230 J·mol−১·K−১
বাষ্প চাপ
P (Pa) ১০ ১০০  k ১০ k ১০ k
at T (K) 554 617 697 802 946 1153
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
জারণ অবস্থা+1, 0, -1 strongly basic oxide
তড়িৎ-চুম্বকত্ব0.93 (পলিং স্কেল)
আয়নীকরণ বিভব
(আরও)
পারমাণবিক ব্যাসার্ধempirical: 186 pm
সমযোজী ব্যাসার্ধ166±9 pm
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ227 pm
বিবিধ
কেলাসের গঠন body-centered cubic (bcc)
শব্দের দ্রুতিপাতলা রডে: 3200 m·s−১ (at 20 °সে)
তাপীয় প্রসারাঙ্ক71 µm·m−১·K−১ (২৫ °সে-এ)
তাপীয় পরিবাহিতা142 W·m−১·K−১
তড়িৎ রোধকত্ব ও পরিবাহিতা২০ °সে-এ: 47.7 n Ω·m
চুম্বকত্বparamagnetic
ইয়ংয়ের গুণাঙ্ক10 GPa
কৃন্তন গুণাঙ্ক3.3 GPa
আয়তন গুণাঙ্ক6.3 GPa
(মোজ) কাঠিন্য0.5
ব্রিনেল কাঠিন্য0.69 MPa
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা7440-23-5
সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ
iso NA অর্ধায়ু DM DE (MeV) DP
22Na trace 2.602 y β+→γ 0.5454 22Ne*
1.27453(2)[1] 22Ne
ε→γ - 22Ne*
1.27453(2) 22Ne
β+ 1.8200 22Ne
23Na 100% Na 12টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়

আবিষ্কার

অতীতে বিভিন্ন যৌগে সোডিয়ামের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা গেলেও অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত একে আলাদা মৌল হিসাবে বিশ্লিষ্ট করা যায় নি। সর্বপ্রথম স্যার হামফ্রে ডেভি ১৮০৭ সালে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সোডিয়াম ধাতুকে আলাদা করতে সক্ষম হন। ১৮০৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী লুডভিগ উইলেম গিলবার্ট একে ‘ন্যাট্রিনিয়াম’ নাম দেওয়ার প্রস্তাব করলেও পরবর্তীতে এর নতুন ল্যাটিন নাম ঠিক করা হয় ‘ন্যাট্রিয়াম’, যা মিশরীয় ন্যাট্রন শব্দ থেকে উদ্ভুত। ন্যাট্রন একধরনের প্রাকৃতি ক খনিজ লবণ যা মূলত সোডিয়াম কার্বনেট দিয়ে গঠিত। একসময় কারখানা এবং গৃহস্থালিতে এর প্রচুর ব্যবহার ছিল।

বৈশিষ্ট্য

ভৌত বৈশিষ্ট্য

প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপে সোডিয়াম একটি উজ্জ্বল রূপালী বর্ণের নরম সাদা ধাতু। এটা এতো নরম যে সাধারণ ছুরি দিয়ে একে কাটা যায়। অন্যান্য ধাতুর ন্যায় এটি ভাল বিদ্যুৎ পরিবাহীও বটে। তবে সোডিয়ামের বৈশিষ্ট্যগুলো চাপের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১.৫ মেগা বার চাপে সোডিয়ামের রং হয় কালো, ১.৯ মেগা বারে হয় লালচে ঈষদচ্ছ এবং সবশেষে ৩ মেগা বার চাপে তা পুরোপুরি স্বচ্ছ হয়ে যায় । সোডিয়াম বা এর যেকোনো যৌগ উত্তপ্ত অগ্নিশিখায় হলুদ রং ধারণ করে। যেকোনো অজানা নমুনায় সোডিয়ামের উপস্থিতি এভাবে প্রমাণিত হয়।

রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য

সোডিয়ামের সক্রিয়তা পটাশিয়াম থেকে কম, তবে লিথিয়াম থেকে বেশি। অন্যান্য গ্রুপ I মৌলের ন্যায় এটি কক্ষ তাপমাত্রায় ভীষণ সক্রিয়। এটি ঠাণ্ডা পানির সাথে অত্যন্ত তীব্রভাবে বিক্রিয়া করে। (এটা প্রকৃতপক্ষে একটি প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া, যাতে হাইড্রোজেনের অপসারণ হয়।) শুষ্ক বাতাসে সোডিয়াম পোড়ালে প্রধানত সোডিয়াম পার অক্সাইড (Na2O2) উৎপন্ন হয়। একইসাথে কিছু পরিমাণ সোডিয়াম অক্সাইডও (Na2O) উৎপন্ন হয়। সোডিয়ামের ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা খুবই বেশি। একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে এটি Na+ আয়নে পরিণত হয়। এর অক্সাইড ও হাইড্রোক্সাইড উভয়ই ক্ষারীয়। মুক্ত অবস্থায় রাখলে এটি বাতাসের জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) তৈরি করে। একইসাথে কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম কার্বনেট (Na2CO3) উৎপন্ন করে। এজন্য সবসময় সোডিয়ামকে কেরোসিন বা পেট্রোলের নিচে রাখা হয়।

আইসোটোপ

এ পর্যন্ত সোডিয়ামের ২০টি আইসোটোপের কথা জানা গেছে। কিন্তু, তন্মধ্যে কেবল 23Na সুস্থায়ী। এছাড়া, 22Na এবং 24Na উল্লেখযোগ্য যাদের অর্ধজীবন যথাক্রমে ২.৬ বছর এবং ১৫ ঘন্টা। বাকী আইসোটোপগুলো অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং তাদের প্রত্যেকেরই অর্ধজীবন এক মিনিটের চেয়ে কম।

কয়েকটি সোডিয়াম যৌগ

সকল যৌগেই সোডিয়াম আয়নিক আয়নিক বন্ধন তৈরি করে। এজন্য এর বেশিরভাগ যৌগই পানিসহ অন্যান্য পোলার দ্রাবকে দ্রবণীয়। সোডিয়ামের বহু যৌগ আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও শিল্প কারখানায় লাগে।

সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)

খাবার লবণ হিসাবে পরিচিত সোডিয়াম ক্লোরাইডের আরেক নাম হ্যালাইট। সোডিয়ামের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় এই বিশুদ্ধ দানাদার পদার্থ তৈরী হয়। বর্তমানে মূলত সমুদ্রের পানির বাষ্পীভবন থেকে বিশ্বব্যাপী প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড উৎপাদন করা হয়। এর আণবিক ভর ৫৮.৫ এবং ১০০ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইডে স্বাভাবিকভাবে ৩৯.৩৪ গ্রাম সোডিয়াম এবং ৬০.৬৬ গ্রাম ক্লোরিন থাকে। এটি পানিগ্রাসী নয়, অর্থাৎ, পরিবেশ থেকে পানি শুষে নেয় না। তবে, সাধারণ খাবার লবণে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের মিশ্রণ থাকে যা পানিগ্রাসী। একারণেই বর্ষাকালে খাবার লবণ খোলা অবস্থায় রাখলে ভিজে যায়।

এর pH মাত্রা ৭। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যৌগ যেমন, সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড, সোডিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি প্রস্তুতি ছাড়াও পরিষ্কারক, প্রাকৃতিক খাদ্য সংরক্ষণকর এবং পানির খরতা দূরকারক হিসাবে বহুকাল ধরে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও, বর্তমানে ঔষধ শিল্পে, বস্ত্র ও অন্যান্য বিভিন্ন রঞ্জনশিল্পে এবং অগ্নি নির্বাপনের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসাবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH)

বিশ্বব্যাপী এটি কস্টিক সোডা নামেও পরিচিত। আরবীয় সাবান প্রস্তুতকারকেরা সর্বপ্রথম এই যৌগটি তৈরী করেন বলে ধারণা করা হয়। সোডিয়ামের সাথে পানির বিক্রিয়ায় উৎপন্ন এ যৌগটি একটি তীব্র ক্ষার যা এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে এটি লবণ ও পানি তৈরি করে। এছাড়া, এটি পানিতে অতি মাত্রায় দ্রবণীয় এবং বাতাসের সংস্পর্সে এসে কাবর্ন ডাই অক্সাইড ও জলীয়বাষ্প শোষণ করে। তীব্র ক্ষরকত্বের কারণেই এটি মানুষের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

বিশ্বে উৎপন্ন মোট সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের শতকরা ৫৬ ভাগ ব্যবহৃত হয় কাগজ, সাবান, ডিটারজেন্ট প্রভৃতি বিভিন্ন শিল্পে। এরমধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ ব্যবহৃত হয় কাগজশিল্পে, সেলুলোজ তন্তু থেকে লিগনিন অপসারণে। অন্যদিকে, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে এবং পরিষ্কারক হিসাবেও এটি বহুল ব্যবহৃত।

রাসায়নিক বিক্রিয়া

== ব্যবহার

তথ্যসূত্র

  1. Endt, P. M. ENDT, ,1 (1990) (12/1990)। "Energy levels of A = 21-44 nuclei (VII)"। Nuclear Physics A521: 1। doi:10.1016/0375-9474(90)90598-G অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.