বিসমাথ

বিসমাথ (ইংরেজি: Bismuth) পর্যায় সারণীর ৮৩তম মৌলিক পদার্থ। বিসমাথের রাসায়নিক প্রতীক Bi ও পারমাণবিক ভর ২০৮.৯৮।

৮৩ সীসাবিসমাথপোলোনিয়াম
Sb

Bi

Uup
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
নাম, প্রতীক, পারমাণবিক সংখ্যা বিসমাথ, Bi, ৮৩
রাসায়নিক শ্রেণীধাতু বা অর্ধধাতু[1]
গ্রুপ, পর্যায়, ব্লক ১৫, , p
ভৌত রূপলালাভ সাদা
পারমাণবিক ভর২০৮.৯৮০৪০(১) g/mol
ইলেক্ট্রন বিন্যাস[Xe] 4f14 5d10 6s2 6p3
প্রতি শক্তিস্তরে ইলেকট্রন সংখ্যা২, ৮, ১৮, ৩২, ১৮, ৫
ভৌত বৈশিষ্ট্য
দশাকঠিন
ঘনত্ব (সাধারণ তাপ ও চাপে)৯.৭৮ g/cm³
গলনাংকে তরল ঘনত্ব১০.০৫ গ্রাম/সেমি³
গলনাঙ্ক৫৪৪.৭ K
(২৭১.৫ °C, ৫২০.৭ °F)
স্ফুটনাঙ্ক১৮৩৭ K
(১৫৬৪ °C, ২৮৪৭ °F)
গলনের লীন তাপ১১.৩০ kJ/mol
বাষ্পীভবনের লীন তাপ১৫১ kJ/mol
তাপধারণ ক্ষমতা(২৫ °সে) ২৫.৫২ জুল/(মোল·কে)
বাষ্প চাপ
P/প্যাসকেল১০১০০১ কে১০ কে১০০ কে
T/কেলভিন তাপমাত্রায়৯৪১১০৪১১১৬৫১৩২৫১৫৩৮১৮৩৫
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
কেলাসীয় গঠনরম্বোহেড্রাল
জারণ অবস্থা, ৫
(মৃদু অম্লীয় অক্সাইড)
তড়িৎ ঋণাত্মকতা২.০২ (পাউলিং স্কেল)
আয়নীকরণ শক্তি
(বিস্তারিত)
প্রথম: ৭০৩ কিলোজুল/মোল
দ্বিতীয়: ১৬১০ কিলোজুল/মোল
তৃতীয়: ২৪৬৬ কিলোজুল/মোল
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ১৬০ pm
Atomic radius (calc.)১৪৩ pm
Covalent radius১৪৬ pm
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
Magnetic orderingডায়াচৌম্বক পদার্থ
Electrical resistivity(20 °C) ১.২৯ µΩ·m
তাপ পরিবাহিতা(300 K) ৭.৯৭ W/(m·K)
Thermal expansion(25 °C) ১৩.৪ µm/(m·K)
Speed of sound (thin rod)(20 °C) ১৭৯০ m/s
ইয়ং এর গুণাঙ্ক৩২ GPa
Shear modulus১২ GPa
Bulk modulus৩১ GPa
Poisson ratio০.৩৩
Mohs hardness২.২৫
Brinell hardness৯৪.২ MPa
সি এ এস নিবন্ধন সংখ্যা৭৪৪০-৬৯-৯
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমস্থানিক
প্রধান নিবন্ধ: bismuthের সমস্থানিক
iso NA half-life DM DE (MeV) DP
207Bi কৃত্রিম ৩১.৫৫ বছর ε, β+ ২.৩৯৯ 207Pb
208Bi কৃত্রিম ৩,৬৮,০০০ ব. ε, β+ ২.৮৮০ 208Pb
209Bi ১০০% ১.৯ ×১০১৯ ব. α   205Tl
210Bi নগণ্য ৫.০১২ দিন β ১.৪২৬ 210Po
α ৫.৯৮২ 206Tl
210mBi কৃত্রিম ৩.০৪ ×১০ ব. IT ০.২৭১ 210Bi
α ৬.২৫৩ 206Tl
References

বিসমাথ পঞ্চযোজী অবস্থান্তর-পরবর্তী (post-transition) ধাতু। রাসায়নিকভাবে এর সাথে আর্সেনিকঅ্যান্টিমনির মিল আছে। প্রকৃতিতে এটি মুক্তভাবে পাওয়া যায়। তবে এর সালফাইড ও অক্সাইড আকরিকগুলো থেকেই এটি বাণিজ্যিকভাবে আহরণ করা হয়। ধাতুটির ঘনত্ব সীসার প্রায় ৮৬%। এটি দেখতে রূপার মত সাদা। এটি একটি ভঙ্গুর ধাতু। তবে বাতাসে রাখলে এর পৃষ্ঠতলের সাথে বাতাসের অক্সিজেনের বিক্রিয়া ঘটে এবং হালকা গোলাপী আভাযুক্ত অক্সাইডের প্রলেপ পড়ে। বিসমাথ অতি ক্ষীণ তেজস্ক্রিয়তা এবং প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত মৌলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডায়াচুম্বকত্ব ধর্ম প্রদর্শন করে। সবচেয়ে কম তাপ পরিবহনক্ষম ধাতুদের মধ্যে বিসমাথ অন্যতম।

ইতিহাস

প্রায় ১৪০০ খ্রীস্টাব্দ থেকেই বিসমাথ সম্পর্কে জানা থাকলেও একে প্রায়শই সীসা মনে করে ভুল করা হত। ফরাসী রসায়নবিদ ক্লদ ফ্রাঁসোয়া জিওফ্রয় ১৭৫৩ খ্রীস্টাব্দে প্রথম প্রমাণ করেন যে, বিসমাথ সীসার থেকে ভিন্ন একটি ধাতু।[2]

বিসমাথ নামটি সম্ভবত পুরনো জার্মান শব্দ 'weiss muth' (মানে 'white mass' বা 'সাদা পদার্থ') এর পরিবর্তিত রূপ 'bisemutum' থেকে এসেছে; ধাতুটি বাতাসে রাখলে এর উপর সাদা অক্সাইডের প্রলেপ পড়ে বলেই হয়তোবা এমন নামকরণ করা হয়েছে।[3]

বৈশিষ্ট্য

ভৌত ধর্ম

বিসমাথ স্ফটিকের অক্সাইড পৃষ্ঠতলে বিভিন্ন রঙের সমাহার
বিসমাথ স্ফটিকের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সোপানাকার গঠন (কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত; আয়তন ১ সে.মি.3

বিসমাথ একটি সাদা, রূপালী-গোলাপী রঙের ভঙ্গুর ধাতু, যার উপর প্রায়শই হলুদ থেকে নীল বিভিন্ন রঙের আভাযুক্ত অক্সাইডের আবরণ পড়ে। বিসমাথ কেলাসের অন্তঃস্থ প্রান্তের তুলনায় বহিঃস্থ প্রান্তের উচ্চতর বৃদ্ধির হারই এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সর্পিলাকার ও সোপানাকার আকৃতির কারণ। এর কেলাস পৃষ্ঠতলে গঠিত বিভিন্ন পুরুত্বের অক্সাইড স্তরে আপতিত বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর সাথে প্রতিফলিত আলোর ব্যতিচারের ফলে রংধনুর মত বিভিন্ন রঙের সৃষ্টি হয়। একে বাতাসে পুড়ালে নীল শিখাসহ জ্বলে এবং হলুদ অক্সাইডের ধোঁয়া উৎপন্ন করে।[4] পর্যায় সারণীতে এর প্রতিবেশী মৌল সীসা, অ্যান্টিমনি এবং পোলোনিয়ামের তুলনায় এটি অনেক কম বিষাক্ত (অন্যান্য ভারী ধাতুর তুলনায় যা একটি ব্যতিক্রম বটে)।

অন্য কোন ধাতু বিসমাথের তুলনায় প্রাকৃতিকভাবে বেশী ডায়াচুম্বকীয় হয় বলে জানা নেই।[5][6] ধাতুসমূহের মধ্যে এর তাপ পরিবাহিতা সর্বনিম্ন মানগুলোর একটি (ম্যাঙ্গানিজ এবং সম্ভবত নেপচুনিয়ামপ্লুটোনিয়ামের পরে) এবং হল সহগ সর্বোচ্চ।[7] এর বৈদ্যুতিক রোধকত্ব উচ্চমানের।[5] বিসমাথ একটি অবস্থান্তর-পরবর্তী ধাতু হওয়া সত্ত্বেও সাবস্ট্রেটের উপর পাতলা স্তরে স্তরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সঞ্চিত করলে এটি অর্ধপরিবাহী হিসেবে আচরণ করে।[8]

রাসায়নিক ধর্ম

স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বিসমাথ শুষ্ক ও আর্দ্র উভয় ধরনের বাতাসে স্থিতিশীল। লোহিততপ্ত অবস্থায় এটি পানির সাথে বিক্রিয়ায় বিসমাথ (৩) অক্সাইড উৎপন্ন করে।[9]

2 Bi + 3 H2O → Bi2O3 + 3 H2

এটি ফ্লুরিনের সাথে বিক্রিয়ায় ৫০০°সে. তাপমাত্রায় বিসমাথ (৫) ফ্লুরাইড এবং নিম্ন তাপমাত্রায় বিসমাথ (৩) ফ্লুরাইড উৎপন্ন করে (সাধারণত গলিত বিসমাথ থেকে); অন্যান্য হ্যালোজেেনের সাথে এটি শুধু বিসমাথ (৩) হ্যালাইড উৎপন্ন করে।[6][10][11] ট্রাই-হ্যালাইডগুলো ক্ষয়কারী এবং সহজেই বাতাসের আর্দ্রতার সংস্পর্শে অক্সিহ্যালাইড গঠন করে (সংকেত BiOX)।[9]

2 Bi + 3 X2 → 2 BiX3 (X = F, Cl, Br, I)

বিসমাথ গাঢ় সালফিউরিক এসিডে দ্রবীভূত হয়ে বিসমাথ (৩) সালফেট এবং সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে।[9]

6 H2SO4 + 2 Bi → 6 H2O + Bi2(SO4)3 + 3 SO2

এটি নাইট্রিক অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ায় বিসমাথ (৩) নাইট্র্রেট উৎপন্ন করে।

Bi + 6 HNO3 → 3 H2O + 3 NO2 + Bi(NO3)3

এটি হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মধ্যেও দ্রবীভূত হয় (তবে শুধুমাত্র অক্সিজেনের উপস্থিতিতে)।[9]

4 Bi + 3 O2 + 12 HCl → 4 BiCl3 + 6 H2O

মৃৎ-ক্ষার ধাতুর বিভিন্ন জটিল যৌগ সংশ্লেষণের জন্য এটি একটি ট্রান্সমেটালেটিং বিকারক (transmetalating agent) হিসাবে ব্যবহৃত হয়:

3 Ba + 2 BiPh3 → 3 BaPh2 + 2 Bi

সমস্থানিক

প্রকৃতিতে বিসমাথের মূলত দুইটি সমস্থানিক বা আইসোটোপ পাওয়া যায়: বিসমাথ-২০৯ (209Bi) ও বিসমাথ-২১০ (210Bi); দুটোই তেজস্ক্রিয় এবং দ্বিতীয়টি প্রকৃতিতে খুবই অল্প পরিমাণে বিরাজ করে। বিসমাথ-২০৯ কে চিরাচরিতভাবে সবচেয়ে ভারী স্থায়ী মৌল (বা সমস্থানিক) হিসেবে ভাবা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি অস্থায়ী বা তেজস্ক্রিয়, যার অর্ধায়ু ১.৯×১০১৯ বছর (যা মহাবিশ্বের র্বতমান বয়সের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশি); অন্যদিকে বিসমাথ-২১০ এর অর্ধায়ু মাত্র ৫.০১২ দিন।[12][13]

কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত সমস্থানিকসমূহের মধ্যে বিসমাথ-২১৩ (অর্ধায়ু ৩০.৪ লক্ষ বছর) বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।[13][14][15] এছাড়াও 207Bi (অর্ধায়ু ৩১.৫৫ বছর), 208Bi (অর্ধায়ু ৩.৬৮ লক্ষ বছর) ও 210mBi (অর্ধায়ু ৩০.৪ লক্ষ বছর) উল্লেখযোগ্য।[13] বিসমাথের সকল কৃত্রিম সমস্থানিকই তেজস্ক্রিয় এবং নিউক্লীয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী করতে হয়।

বিসমাথের যৌগসমূহ

বিসমাথ ত্রিযোজী এবং পঞ্চযোজী যৌগ গঠন করে; তবে ত্রিযোজী যৌগের সংখ্যাই বেশি। আর্সেনিকঅ্যান্টিমনির সাথে বিসমাথের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের অনেকটা মিল থাকলেও বিসমাথের যৌগসমূহ তুলনামূলকভাবে কম বিষাক্ত হয়।

অক্সাইড ও সালফাইড

বিসমাথ অক্সিক্লোরাইড (BiOCl) -এর গঠন (বিসমোক্লাইট খনিজ)। বিসমাথ পরমাণুগুলো ধূসর, আর অক্সিজেন লাল ও ক্লোরিন সবুজ।

উষ্ণ তাপমাত্রায় ধাতব বাষ্প অক্সিজেনের সাথে দ্রুত বিক্রিয়ায় হলুদ ত্রিযোজী Bi2O3 গঠন করে।[10][11] গলিত অবস্থায় (৭১০°সে. এর উপরে) এই অক্সাইড প্লাটিনামসহ যেকোন ধাতব অক্সাইডকে আক্রমণ করে।[6] ক্ষারের সাথে বিক্রিয়ায় এটি দুই ধরনের অক্সি-অ্যানায়ন গঠন করে: BiO2 (রৈখিক পলিমার শৃঙ্খল) ও BiO3। Li2BiO3 -এ BiO3 আয়ন প্রকৃতপক্ষে ঘনকীয় অক্টামারিক (otameric) আকৃতির (Bi8O2424), কিন্তু Na3BiO3 -এ সেটি টেট্রামারিক (tetrameric)।[16]

বিসমাথ (৫) অক্সাইড (Bi2O5) গাঢ় লাল রঙের ও অস্থায়ী, উত্তপ্ত করলে যা O2 গ্যাস নির্গত করে।[17] NaBiO3 একটি শক্তিশালী জারক[10]

বিসমাথ সালফাইড (Bi2S3) প্রাকৃতিকভাবে বিসমাথের আকরিকে পাওয়া যায়। গলিত বিসমাথ ও গন্ধকের সংমিশ্রণ থেকেও এটি উৎপন্ন করা যায়।

বিসমাথ অক্সিক্লোরাইড (BiOCl) এবং বিসমাথ অক্সিনাইট্রেট (BiONO3) বিসমাথাইল (৩) ক্যাটায়নের (BiO+) সাধারণ অ্যানায়নিক লবণ হিসেবে সমতুল্য পরিমাণে (stoichiometrically) বিদ্যমান থাকে (বিশেষ করে জলীয় দ্রবণে)। কিন্তু BiOCl -এর ক্ষেত্রে, এর কেলাসে Bi, O, এবং Cl পরমাণুগুলো নিজস্ব সমতলে থেকে একটির পর আরেকটি স্তরে সজ্জিত হয়ে এমন একটি কাঠামো গঠন করে যেখানে প্রতিটি অক্সিজেন পরমাণু সন্নিহিত সমতলের চারটি বিসমাথ পরমাণুর সাথে যুক্ত থাকে (ডানদিকের চিত্র দেখুন)। এই যৌগটি একটি রঞ্জক এবং প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়।[6]

হ্যালাইড

নিম্ন জারণ অবস্থায় বিসমাথের হ্যালাইডগুলো অস্বাভাবিক আকৃতি গ্রহণ করে। যাকে প্রথমে সাধারণ বিসমাথ (১) ক্লোরাইড (BiCl) হিসেবে ভাবা হত তা আসলে Bi95+ ক্যাটায়ন এবং BiCl52- ও Bi2Cl82- অ্যানায়নের একটি জটিল সংমিশ্রণ।[16][18] Bi95+ ক্যাটায়ন বিকৃত ত্রিখণ্ডিত ত্রিকোণাকার প্রিজম (tricapped trigonal prismatic) আকৃতির, যা Bi10Hf3Cl18 যৌগেও পাওয়া যায়। বিসমাথ Bi82+ ক্যাটায়ন হিসেবেও থাকতে পারে, যেমন Bi8(AlCl4)2 -এ।[18] বিসমাথ BiCl -এর মত একই রকমের ব্রোমাইডও গঠন করে। তবে বিসমাথের একটি সত্যিকার মনোআয়োডাইড (BiI) আছে, যা Bi4I4 এককের পলিমার শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত (বিসমাথের একই গঠনের মনোব্রোমাইডও বিদ্যমান)।[16] BiI -কে উত্তপ্ত করলে এটি ট্রাইআয়োডাইড (BiI3) ও মৌলিক বিসমাথে বিশ্লেষিত হয়। বিসমাথ +৩ জারণ অবস্থায় সব হ্যালোজেনের সাথে ট্রাইহ্যালাইড গঠন করে, যেমন BiF3, BiCl3, BiBr3BiI3। একমাত্র BiF3 ছাড়া অন্য সব ট্রাইহ্যালাইড আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়।[16]

বিসমাথ (৩) ক্লোরাইড ইথার দ্রবণে হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সাথে সংযুক্ত হয়ে HBiCl4 অম্ল উৎপন্ন করে।[9]

বিসমাথ +৫ জারণ অবস্থা সচরাচর পাওয়া যায় না। এমনই একটি যৌগ BiF5, যা কিনা একটি শক্তিশালী জারক এবং ফ্লুরিন দাতা। এটি শক্তিশালী ফ্লুরাইড গ্রাহকও, যেমন জেনন টেট্রাফ্লুরাইডের সাথে বিক্রিয়ায় এটি XeF3+ ক্যাটায়ন উৎপন্ন করে:[9]

BiF
5
+ XeF
4
XeF+
3
BiF
6

বিসমুথিন ও বিসমুথাইড

অ্যান্টিমনির মতই বিসমাথ কোন স্থিতিশীল হাইড্রাইড গঠন করে না। বিসমাথ হাইড্রাইড বা বিসমুথিন (BiH3) কক্ষ তাপমাত্রায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙে যায়; শুধুমাত্র -৬০°সে. -এর নীচে একে স্থিতিশীল অবস্থায় পাওয়া যায়।[16] অন্যদিকে বিসমুথাইড হল বিসমাথ ও অন্যান্য ধাতুর মধ্যেকার আন্তধাতব যৌগ।

জলীয় জটিল যৌগ

জলীয় দ্রবণে (উচ্চ অম্লীয় অবস্থায়) Bi3+ পানির অণুর সাথে জটিল আয়ন Bi(H2O)83+ গঠন করে।[19] pH>0 -এ বিভিন্ন পলিমার প্রজাতি বিদ্যমান থাকে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল অষ্টতলকীয় জটিল [Bi6O4(OH)4]6+[20]

প্রাচুর্য ও উৎপাদন

বিসমাইট খনিজ

পৃথিবীর ভূত্বকে বিসমাথের প্রাচুর্য সোনার চেয়ে দ্বিগুণ। বিসমুথাইড এবং বিসমাইট হল বিসমাথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আকরিক।[5] অস্ট্রেলিয়া, বলিভিয়া ও চীনে বিসমাথ মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।[6][21]

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বিভিন্ন খনি থেকে বিসমাথের বৈশ্বিক উৎপাদন ছিল ১৩,৬০০ টন, যার মধ্যে চীন (৭,৬০০ টন), ভিয়েতনাম (৪,৯৫০ টন) ও মেক্সিকো (৯৪৮ টন) -এর অবস্থান সর্বাগ্রে।[22] ২০১০ সালে আকরিক শোধনাগার থেকে উৎপাদন ছিল ১৬,০০০ টন, যার মধ্যে চীনে উৎপাদিত ১৩,০০০ টন, মেক্সিকোতে ৮৫০ টন ও বেলজিয়ামে ৮০০ টন।[23]

শোধন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে বিসমাথ অপরিশোধিত সীসার টুকরার মধ্যে উপস্থিত থাকে (যাতে বিসমাথের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত হতে পারে), যতক্ষণ পর্যন্ত না তা ক্রল-বেটার্টন প্রক্রিয়া বা তড়িৎবিশ্লেষণীয় বেটস প্রক্রিয়ায় আলাদা করা হয়। শোধন প্রক্রিয়ার সময় বিসমাথ অনেকটাই তামার মত আচরণ করে।[24] উভয় প্রক্রিয়ায় অপরিশোধিত বিসমাথে অন্যান্য ধাতু (যেমন, সীসা) যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। এর গলিত মিশ্রণের উপর দিয়ে ক্লোরিন গ্যাস চালনা করলে তা বিসমাথ ব্যতিত অন্যান্য ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে তাদের ক্লোরাইডে রূপান্তরিত করে। পরবর্তীতে অন্যান্য বিশুদ্ধিকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে (যেমন, ফ্লাক্স প্রয়োগের মাধ্যমে) অপদ্রব্য অপসারণকরত অত্যন্ত বিশুদ্ধ বিসমাথ ধাতু (>৯৯%) উৎপাদন করা যায়।

ব্যবহারিক প্রয়োগ

বিসমাথের অল্প কিছু বাণিজ্যিক প্রয়োগ রয়েছে (অন্যান্য কাঁচামালের সাথে বিসমাথ সাধারণত স্বল্প পরিমাণে ব্যবহৃত হয়)। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১০ সালে ৮৮৪ টন বিসমাথ ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে ৬৩% রাসায়নিকে (ফার্মাসিউটিক্যালস, রঞ্জক, প্রসাধনী ইত্যাদি); ২৬% ঢালাই এবং গ্যালভানাইজিং (galvanizing) -এর metallurgical additives হিসেবে; ৭% বিসমাথ সঙ্কর ধাতু, সোল্ডার (solders) এবং গোলাবারুদ তৈরীতে; এবং ৪% গবেষণা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।[23][25]

১৯৯০ এর দশকের শুরুতে গবেষকরা বিসমাথকে বিভিন্ন প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সীসার অবিষাক্ত বিকল্প হিসাবে মূল্যায়ন করতে শুরু করেন। ইদানিং বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে পানীয় জল সরবরাহের বিভিন্ন সরঞ্জাম (যেমন, ভাল্‌ভ) তৈরীতে সীসার বিকল্প হিসেবে বিসমাথের ব্যবহার শুরু হয়েছে (যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে "সীসামুক্ত" ম্যান্ডেট পালনের লক্ষ্যে), যা এর মোটামুটি একটি বড় প্রয়োগ।

বিষাক্ততা ও পরিবেশগত প্রভাব

বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো ইঙ্গিত করে যে বিসমাথের কিছু যৌগ অন্যান্য ভারী ধাতুর (যেমন, সীসা, আর্সেনিক, অ্যান্টিমনি ইত্যাদি) তুলনায় মানুষের জন্য কম বিষাক্ত (সম্ভবত, বিসমাথ লবণের তুলনামূলক কম দ্রবণীয়তার কারণে)।[26][27] মানবশরীরে এর জৈবিক অর্ধায়ু ৫ দিন পর্যন্ত হতে পারে (পুরো শরীর বিবেচনায়)। তবে বিসমাথ যৌগ দ্বারা চিকিৎসা করা হয়েছে এমন মানুষের কিডনিতে এটি বহু বছর ধরে জমা থাকতে পারে।[28]

বিসমাথের মাধ্যমে মানবশরীরে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে এবং কিছু প্রতিবেদন অনুসারে সাম্প্রতিককালে তুলনামূলকভাবে সাধারণ হয়ে পড়েছে।[27][29] সীসার মতই বিসমাথ বিষক্রিয়ায় মাড়ির উপর কালো আবরণ পড়তে পারে, যা বিসমাথ লাইন নামে পরিচিত।[6][30][31] ডাইমারক্যাপ্রল নামক ওষুধের মাধ্যমে এর বিষক্রিয়ার চিকিৎসা করা যেতে পারে, তবে তার সুফল বিশেষ স্পষ্ট নয়।[32][33]

বিসমাথের পরিবেশগত প্রভাব সুস্পষ্ট নয়। অন্যান্য ভারী ধাতুর তুলনায় এর জৈবিক প্রক্রিয়ায় সঞ্চিত হওয়ার (bioaccumulate) সম্ভাবনা কম বলে মনে হয়; এবং এটি বর্তমানে একটি সক্রিয় গবেষণার বিষয়।[34][35]

দূষিত মাটিতে বিসমাথের জৈব-প্রতিকারের (bioremediation) জন্য Marasmius oreades নামক ছত্রাক ব্যবহার করা যেতে পারে।[36]

তথ্যসূত্র

  1. Gribanov, E. N.; Markov, O. I.; Khripunov, Yu V. (২০১১)। "When does bismuth become a semimetal?"Nanotechnologies in Russia (ইংরেজি ভাষায়)। 6 (9-10): 593। doi:10.1134/S1995078011050089আইএসএসএন 1995-0780
  2. "Bismuth - Element information, properties and uses | Periodic Table"www.rsc.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৪
  3. "It's Elemental - The Element Bismuth"education.jlab.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৪
  4. Krebs, Robert (২০০৬)। The History and Use of Our Earth's Chemical Elements: A Reference Guide। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা ২২১। আইএসবিএন 978-0-313-33438-2।
  5. Hammond (২০০৪)। The Elements, in Handbook of Chemistry and Physics (৮১তম সংস্করণ)। CRC Press। পৃষ্ঠা ৪–১। আইএসবিএন 0-8493-0485-7।
  6. Krüger, Joachim; Winkler, Peter; Lüderitz, Eberhard; Lück, Manfred; Wolf, Hans Uwe (২০০৩)। "Bismuth, Bismuth Alloys, and Bismuth Compounds"। Ullmann's Encyclopedia of Industrial Chemistry। Wiley-VCH। পৃষ্ঠা ১৭১–১৮৯। doi:10.1002/14356007.a04_171
  7. Jones, H. (১৯৩৬)। "The Theory of the Galvomagnetic Effects in Bismuth"। Proceedings of the Royal Society A: Mathematical, Physical and Engineering Sciences। 155 (886): 653। doi:10.1098/rspa.1936.0126জেস্টোর 96773বিবকোড:1936RSPSA.155..653J
  8. Hoffman, C.; Meyer, J.; Bartoli, F.; Di Venere, A.; Yi, X.; Hou, C.; Wang, H.; Ketterson, J.; Wong, G. (১৯৯৩)। "Semimetal-to-semiconductor transition in bismuth thin films"। Phys. Rev. B.। 48 (15): 11431। doi:10.1103/PhysRevB.48.11431বিবকোড:1993PhRvB..4811431H
  9. Suzuki, Hitomi (২০০১)। Organobismuth Chemistry। Elsevier। পৃষ্ঠা ১–২০। আইএসবিএন 978-0-444-20528-5।
  10. Greenwood, N. N. & Earnshaw, A. (১৯৯৭)। Chemistry of the Elements। Oxford: Butterworth-Heinemann। পৃষ্ঠা ৫৫৯–৫৬১। আইএসবিএন 0-7506-3365-4।
  11. Wiberg, Egon; Holleman, A. F.; Wiberg, Nils (২০০১)। Inorganic chemistry। Academic Press। পৃষ্ঠা ৭৬৯–৭৭০। আইএসবিএন 0-12-352651-5।
  12. Marcillac, Pierre de; Noël Coron; Gérard Dambier; Jacques Leblanc & Jean-Pierre Moalic (২০০৩)। "Experimental detection of α-particles from the radioactive decay of natural bismuth"। Nature। 422 (6934): 876–878। doi:10.1038/nature01541। PMID 12712201বিবকোড:2003Natur.422..876D
  13. National Nuclear Data Center। "Nudat 2.1 database"www.nndc.bnl.gov। Brookhaven National Laboratory। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৫
  14. S., Imam (২০০১)। "Advancements in cancer therapy with alpha-emitters: a review"। International Journal of Radiation Oncology Biology Physics51: 271। doi:10.1016/S0360-3016(01)01585-1
  15. Acton, Ashton (২০১১)। Issues in Cancer Epidemiology and Research। পৃষ্ঠা ৫২০। আইএসবিএন 978-1-4649-6352-0।
  16. Godfrey, S. M; McAuliffe, C. A.; Mackie, A. G.; Pritchard, R. G. (১৯৯৮)। Chemistry of arsenic, antimony, and bismuth। Springer। পৃষ্ঠা ৬৭–৮৪। আইএসবিএন 0-7514-0389-X।
  17. Eagleson, Mary; Thomas, Scott (১৯৯৪)। Concise encyclopedia chemistry। Walter de Gruyter। পৃষ্ঠা ১৩৬। আইএসবিএন 3-11-011451-8।
  18. Gillespie, R. J.; Passmore, J. (১৯৭৫)। Emeléus, H. J.; Sharp A. G., সম্পাদকগণ। Advances in Inorganic Chemistry and Radiochemistry। Academic Press। পৃষ্ঠা ৭৭–৭৮। আইএসবিএন 0-12-023617-6।
  19. Persson, Ingmar (২০১০)। "Hydrated metal ions in aqueous solution: How regular are their structures?"। Pure and Applied Chemistry। 82 (10): 1901–1917। doi:10.1351/PAC-CON-09-10-22
  20. Näslund, Jan; Persson, Ingmar; Sandström, Magnus (২০০০)। "Solvation of the Bismuth(III) Ion by Water, Dimethyl Sulfoxide, N,N'-Dimethylpropyleneurea, and N,N-Dimethylthioformamide. An EXAFS, Large-Angle X-ray Scattering, and Crystallographic Structural Study"। Inorganic Chemistry। 39 (18): 4012–4021। doi:10.1021/ic000022m
  21. Anthony, John W.; Bideaux, Richard A.; Bladh, Kenneth W.; Nichols, Monte C. (সম্পাদকগণ)। "Bismuth"। Handbook of Mineralogy (PDF)। I (Elements, Sulfides, Sulfosalts)। Chantilly, VA, US: Mineralogical Society of America। আইএসবিএন 0-9622097-0-8। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০৫
  22. Anderson, Schuyler C.। "2016 USGS Minerals Yearbook: Bismuth" (PDF)। United States Geological Survey। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৭-০১
  23. Carlin, James F., Jr.। "2010 USGS Minerals Yearbook: Bismuth" (PDF)। United States Geological Survey। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০৯
  24. Funsho K., Ojebuoboh (১৯৯২)। "Bismuth—Production, properties, and applications"। JOM44 (4): 46–49। doi:10.1007/BF03222821বিবকোড:1992JOM....44d..46O
  25. N., Pistofidis; Vourlias, G.; Konidaris, S.; Pavlidou, El.; Stergiou, A.; Stergioudis, G. (২০০৭)। "The effect of bismuth on the structure of zinc hot-dip galvanized coatings"। Materials Letters61 (4-5): 994। doi:10.1016/j.matlet.2006.06.029
  26. Kean, Sam (২০১১)। The Disappearing Spoon (and other true tales of madness, love, and the history of the world from the Periodic Table of Elements)। New York/ Boston: Back Bay Books। পৃষ্ঠা ১৫৮–১৬০। আইএসবিএন 978-0-316-051637।
  27. DiPalma, Joseph R. (২০০১)। "Bismuth Toxicity, Often Mild, Can Result in Severe Poisonings"Emergency Medicine News23 (3): 16। doi:10.1097/00132981-200104000-00012
  28. Fowler, B.A. & Sexton M.J.। Nordberg, Gunnar, সম্পাদক। Handbook on the toxicology of metals। Academic Press। পৃষ্ঠা 433 ff.। আইএসবিএন 978-0-12-369413-3।
  29. "Bismuth - (Bi) - Chemical properties, Health and Environmental effects"www.lenntech.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-৩০
  30. "bismuth line"TheFreeDictionary.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-৩০
  31. Ashley, Levantine; Almeyda, John (১৯৭৩)। "Drug induced changes in pigmentation"। British Journal of Dermatology89 (1): 105–12। doi:10.1111/j.1365-2133.1973.tb01932.x। PMID 4132858
  32. WHO Model Formulary 2008 (PDF)। World Health Organization। ২০০৯। পৃষ্ঠা ৬২। আইএসবিএন 9789241547659।
  33. "Dimercaprol Monograph for Professionals - Drugs.com"Drugs.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-৩০
  34. Boriova; ও অন্যান্য (২০১৫)। "Bismuth(III) Volatilization and Immobilization by Filamentous Fungus Aspergillus clavatus During Aerobic Incubation"Archives of Environmental Contamination and Toxicology68 (2): 405–411। doi:10.1007/s00244-014-0096-5
  35. Boriova; ও অন্যান্য (২০১৩)। "Bioaccumulation and biosorption of bismuth Bi (III) by filamentous fungus Aspergillus clavatus" (PDF)Student Scientific Conference PriF UK 2013. Proceedings of reviewed contributions https://inis.iaea.org/search/search.aspx?orig_q=RN:44078325-এর মাধ্যমে।
  36. Carmen Cristina Elekes; Gabriela busuioc। "The Mycoremediation of Metals Polluted Soils Using Wild Growing Species of Mushrooms" (PDF)Engineering Education

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.