হাইড্রোজেন

হাইড্রোজেন বা উদজান সবচেয়ে হালকা মৌলিক পদার্থ। এটি পর্যায় সারণীর প্রথম উপাদান মৌল। এর পারমাণবিক সংখ্যা ১ ও প্রতীক H। প্রাচীন গ্রিক শব্দ ύδρο- হুদ্রো- অর্থ "জল" বা "পানি" ("উদ-") ও γενης গেনেস অর্থ "উৎপাদক" ("জনক") থেকে এর হুদ্রোগেন (ইংরেজিতে হাইড্রোজেন) নামকরণ। অনেক পুরাতন বাংলা বইতে একে উদজান বলা হয়েছে। আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে হাইড্রোজেন রংহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন, অধাতব এবং খুবই দাহ্য দ্বিপরমাণুক গ্যাস (H2)। হাইড্রোজেনের ৩টি আইসোটোপ রয়েছে - ১.প্রোটিয়াম ২.ডিউটেরিয়াম ৩.ট্রিটিয়াম। হাইড্রোজেন পরমাণুতে ১টি মাত্র ইলেকট্রন থাকে, যা নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘোরে ।

হাইড্রোজেন   H
Spectral lines of hydrogen
পরিচয়
নাম, প্রতীকহাইড্রোজেন, H
উচ্চারণ/ˈhdr[অসমর্থিত ইনপুট: 'ɵ'][অসমর্থিত ইনপুট: 'ɨ']n/[1] HYE-dro-jin
উপস্থিতিColorless gas with purple glow in its plasma state
পর্যায় সারণীতে হাইড্রোজেন
-

H

Li
- ← হাইড্রোজেনহিলিয়াম
পারমাণবিক সংখ্যা1
আদর্শ পারমাণবিক ভর1.00794(7)
মৌলের শ্রেণীঅধাতু
শ্রেণী, পর্যায়, ব্লকgroup 1, পর্যায় , s-ব্লক
ইলেকট্রন বিন্যাস1s1
per shell: 1
ভৌত বৈশিষ্ট্য
বর্ণবর্ণহীন
দশাগ্যাস
গলনাঙ্ক14.01 কে (-259.14 °সে, -434.45 °ফা)
স্ফুটনাঙ্ক20.28 K (-252.87 °সে, -423.17 °ফা)
ঘনত্ব0.08988 গ্রা/লি (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa)
তরলের ঘনত্বm.p.: 0.07 (0.0763 solid)[2] g·cm−৩
b.p.: 0.07099 g·cm−৩
ত্রৈধ বিন্দু13.8033 কে, 7.042 kPa
পরম বিন্দু32.97 কে, 1.293 MPa
ফিউশনের এনথালপি(H2) 0.117 kJ·mol−১
বাষ্পীভবনের এনথালপি(H2) 0.904 kJ·mol−১
তাপ ধারকত্ব(H2) 28.836 J·mol−১·K−১
বাষ্প চাপ
P (Pa) ১০ ১০০  k ১০ k ১০ k
at T (K) 15 20
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
জারণ অবস্থা1, -1 amphoteric oxide
তড়িৎ-চুম্বকত্ব2.20 (পলিং স্কেল)
সমযোজী ব্যাসার্ধ31±5 pm
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ120 pm
বিবিধ
কেলাসের গঠন hexagonal
শব্দের দ্রুতি(gas, 27 °C) 1310 m·s−১
তাপীয় পরিবাহিতা0.1805 W·m−১·K−১
চুম্বকত্বdiamagnetic[3]
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা1333-74-0
ইতিহাস
আবিষ্কারহেনরি ক্যাভেন্ডিস[4][5] (1766)
নামকরণ করেনঅ্যান্টিনো ল্যাভেসিয়ার[6] (1783)
সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ
iso NA অর্ধায়ু DM DE (MeV) DP
1H 99.985% H 0টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
2H 0.015% H 1টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
3H trace 12.32 y β 0.01861 3He

আবিষ্কারের ইতিহাস

রুশ রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্ডেলিভ এক সময় হাইড্রোজেনকে পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্যমূলক মৌলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। বৈশিষ্ট্যমূলক বলতে পর্যায় সারণির হ্রস্ব পর্যায়ের মৌলকে বুঝিয়েছিলেন। হাইড্রোজেন প্রস্তুত করা খুব সহজ। সাধারণ পরীক্ষাগারে দস্তার উপর সালফিউরিক এসিড ঢেলে এটি প্রস্তুত করা যায়। তাই এটি আবিষ্কার করতে বিলম্ব হওয়ার কথা নয়। রসায়ন যখন বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি তখনও এটি তৈরির সকল উপাদান মানুষের জানা ছিল। যেমন, হাইড্রোক্লোরিক, সালফিউরিক ও নাইট্রিক এসিড এবং লোহা ও দস্তা সম্বন্ধে মানুষ অনেক আগে থেকেই জানত। কিমিয়াবিদ্যা|কিমিয়াবিদরা এগুলো নিয়ে গবেষণাও করতেন। কিন্তু ঠিক যেভাবে হাইড্রোজেন উৎপাদিত হবে তার জন্য একটি সুযোগের প্রয়োজন ছিল। ষোড়শ এবং অষ্টাদশ শতকের কিছু গবেষণার বিবরণ থেকে জানা যায় লোহার ছিল্কার উপর এসিড ঢেলে দিলে সেখান থেকে যে বাতাসের বুদ্বুদ বের হত তা তখনকার অনেকেই লক্ষ্য করেছিলেন। তারা একে বাতাসের একটি দাহ্য রূপ বলে মনে করতেন।

সতর্কভাবে যারা এটি লক্ষ্য করেছিলেন তাদের মধ্যে রুশ বিজ্ঞানী মিখাইল ভাসিলিয়েভিচ লোমোনোসোভ অন্যতম। ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দে "ধাতুর ঔজ্জ্বল্যের প্রতি" নামক গবেষণাপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, "লোহার মত বিশেষ ধাতুগুলো অম্লীয় অ্যালকোহলে দ্রবীভূত হওয়ার সময় ফ্লাস্কের মুখ দিয়ে জ্বলনশীল বাষ্প নির্গত হয়..."। তখনকার পরিভাষাতে অম্লীয় অ্যালকোহল বলতে এসিডকে বোঝানো হত। লোমোনোসোভ হাইড্রোজেনই লক্ষ্য করেছিলেন, কিন্তু তখনকার বিশ্বাসকে অনুসরণ করেই তিনি একে ফ্লোজিস্টন আখ্যা দেন। এসিডে ধাতু দ্রবীভূত হলে দাহ্য বাষ্প নির্গত হয় যা ফ্লোজিস্টন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি এবং এটি ফ্লোজিস্টন তত্ত্ব|ফ্লোজিস্টন তত্ত্বের সাথেও সুন্দর খাপ খেয়ে গিয়েছিল। রসায়নবিদরা কখন এই দাহ্য বাতাস পর্যবেক্ষণ শুরু করেন তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ১৭৬৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রকে এর স্বাভাবিক সূচনা হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। জে ব্ল্যাকের অনুপ্রেরণায় প্রকাশিত সেই প্রবন্ধটির নাম ছিল "কৃত্রিম বাতাস নিয়ে পরীক্ষাসমূহ"। এ সময় ইংরেজ বিজ্ঞানী হেনরি ক্যাভেন্ডিশ আবদ্ধ গ্যাস নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু করেন। আবদ্ধ বলতে বিভিন্ন যৌগে আবদ্ধ বোঝানো হচ্ছে, বিক্রিয়ার মাধ্যমে যৌগ থেকে তাদের মুক্ত করা যায়। দাহ্য বাতাসের বিষয়টি ক্যাভেন্ডিশ জানতেন এবং তিনিও সেখান থেকেই গবেষণা শুরু করেন। লোহা, দস্তা ও টিনের সাথে হাইড্রোক্লোরিক বা সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিভিন্ন সময় দাহ্য বাতাস প্রস্তুত করেন এবং সবগুলোর বৈশিষ্ট্যই এক বলে বুঝতে পারেন। তবে তিনিও এই গ্যাসগুলোকে ফ্রোজিস্টন বলে আখ্যায়িত করেন এবং সে তত্ত্বের অনুগামী থেকেই উৎপন্ন পদার্থের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেন। জে ব্ল্যাকের দাহ্য বাতাস ও ক্যাভেন্ডিশের বদ্ধ বাতাস, সবই আগে থেকে জানা ছিল। তবে তারা একটি সারমর্ম দাড় করাতে সক্ষম হন যা রসায়ন বিজ্ঞানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

দাহ্য বাতাস ও বদ্ধ বাতাস উভয়ে সাধারণ বাতাস থেকে এবং একে অন্যের থেকে পৃথক ছিল। দাহ্য বাতাস অবিশ্বাস্য রকমের হালকা ছিল। আর ক্যাভেন্ডিশ আবিষ্কৃত বদ্ধ বাতাসের ভর ছিল। একে ক্যাভেন্ডিশ ফ্লোজিস্টন বলেছিলেন, অথচ ফ্লোজিস্টনের কোন ধনাত্মক ভর থাকতে পারেনা। এখানেই নিজের পূর্বতন গবেষণার সাথে তিনি বিরোধে লিপ্ত হন। ক্যাভেন্ডিশই প্রথম সাধারণ বাতাসের ঘনত্ব "১" ধরে নিয়ে দাহ্য বাতাস ও বদ্ধ বাতাসের ঘনত্ব বের করেন যাদের মান এসেছিল যথাক্রমে ০.০৯১.৫৭। আবার দাহ্য বাতাস হারানোর পর ধাতুগুলোও কিছু ভর হারায়। সেক্ষেত্রে এটিও ফ্লোজিস্টন হতে পারেনা। পরস্পর বিরোধী এসব তত্ত্বের সমাধানের জন্য ক্যাভেন্ডিশ বলেন, ফ্লোজিস্টন ও পানির মিলনের মাধ্যমে দাহ্য বাতাস উৎপন্ন হয়। বোঝাই যায়, তার সেই দাহ্য বাতাস গঠন করতে গিয়ে পরিশেষে হাইড্রোজেন উৎপাদিত হয়। ক্যাভেন্ডিশ মূলত বদ্ধ বাতাসের সাথে দাহ্য বাতাসকে যুক্ত করেছিলেন। এসবই ১৭৬৬ সালের কাহিনী।

ধাতব হাইড্রোজেন

অতি উচ্চ চাপে হাইড্রোজেন ধাতুর মত আচরণ করে। বৃহস্পতি (Jupiter) ও শনি (Saturn) গ্রহের অভ্যন্তরে অনেক পরিমাণ ধাতব হাইড্রোজেন আছে বলে ধারণা করা হয়। তবে এই ব্যাপারে কোন তথ্য - প্রমাণ নেই ৷

আইসোটোপ প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত হাইড্রোজেনে তিনটি আইসোটোপ পাওয়া যায়।যথা:১)প্রোটিয়াম,২)ডিউটিরিয়াম,৩)ট্রিটিয়াম

তথ্যসূত্র

  1. Simpson, J.A.; Weiner, E.S.C. (১৯৮৯)। "Hydrogen"। Oxford English Dictionary7 (2nd সংস্করণ)। Clarendon Pressআইএসবিএন 0-19-861219-2।
  2. Wiberg, Egon; Wiberg, Nils; Holleman, Arnold Frederick (২০০১)। Inorganic chemistry। Academic Press। পৃষ্ঠা 240। আইএসবিএন 0123526515।
  3. "Magnetic susceptibility of the elements and inorganic compounds"। [[CRC Handbook of Chemistry and Physics]] (PDF) (81st সংস্করণ)। CRC Press ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  4. "Hydrogen"। Van Nostrand's Encyclopedia of Chemistry। Wylie-Interscience। ২০০৫। পৃষ্ঠা 797–799। আইএসবিএন 0-471-61525-0।
  5. Emsley, John (২০০১)। Nature's Building Blocks। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 183–191। আইএসবিএন 0-19-850341-5।
  6. Stwertka, Albert (১৯৯৬)। A Guide to the Elements। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 16–21। আইএসবিএন 0-19-508083-1।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.