প্রদোষ

প্রদোষ বা প্রদোষম্‌ হল হিন্দু দেবতা শিবের একটি বিশেষ পূজানুষ্ঠান। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি মাসের শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।[1] এটিকে প্রদোষ ব্রত বলা হয়। হিন্দুরা সূর্যাস্তের আগের ও পরের দেড় ঘণ্টা সময়কে বিশেষ পবিত্র মনে করেন। প্রদোষ ব্রতে সারা দিন উপবাস করে ওই বিশেষ সময়ে শিবের পূজা করা হয়।[2] পূজক রুদ্রাক্ষবিভূতি ধারণ করে অভিষেক, চন্দন, বিল্বপত্র, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য দিয়ে শিবের পূজা করেন।

নাম ব্যুৎপত্তি

পঞ্জিকায় "প্রদোষ" কথাটি একটি বিশেষ তিথির নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রদোষ কল্পদোশার পুত্র। তার নীশিত ও ব্যুষ্ঠ নামে দুই ভাই ছিল। এই তিনটি নামের অর্থ যথাক্রমে রাত্রির সূচনা, মধ্যভাগ ও অন্ত।[3] প্রত্যেক পক্ষের দ্বাদশীর শেষ ও ত্রয়োদশীর সূচনার অংশটিকে "প্রদোষ" বলা হয়।[4][5] দক্ষিণ ভারতের সব শিবমন্দিরে প্রদোষে শিবের বাহন নন্দীর পূজা হয়। এই সময় নন্দীর পিঠে আরোহী শিব-পার্বতীর উৎসব মূর্তিগুলি নিয়ে মন্দির চত্বরে শোভাযাত্রা বের হয়।[6]

কিংবদন্তি

বৃষভবাহন বা নন্দীর পিঠে অধিষ্ঠিত শিব-পার্বতীর মূর্তি

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দেবতারা অসুরদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রদোষকালে শিবের কাছে গিয়েছিলেন।[7] এক ত্রয়োদশী তিথিতে তারা কৈলাশ পর্বতে যান। শিবের বাহন নন্দী তাদের সহায়তা করেন। শিব অসুর বধ করে দেবতাদের সাহায্য করেন। সেই থেকে মন্দিরে ত্রয়োদশীতে নন্দী-সহ শিবের পূজার রীতি চালু হয়।[8]

শনি প্রদোষ

প্রদোষ তিথিটি শনিবার পড়লে সেটিকে একটি বিশেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।[9] ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনীতে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরে শনি প্রদোষ বিশেষভাবে উদ্‌যাপিত হয়।[9]

কিংবদন্তি অনুসারে, উজ্জয়িনীর রাজা চন্দ্রসেন ছিলেন শিবভক্ত। তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক মণি পেয়েছিলেন। চন্দ্রসেনের শত্রু রাজা রিপুদমন ও রাজা সিংহাদিত্য এই মণির লোভে উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন।[10] এই সময় চন্দ্রসেন শিবপূজা করছিলেন। শ্রীখর নামে এক কৃষকপুত্র রাজার মুখের শিবের নাম শুনে তার কাছে আসেন। কিন্তু রাজরক্ষীরা তাকে সরিয়ে দেন। শহরের বাইরে শিপ্রা নদীর তীরে শ্রীখর শিবের নাম করতে থাকেন। বৃধি নামে এক পুরোহিত সেই খবর জানতে পেরে নিজের পুত্রগণের অনুরোধে শিপ্রা নদীর তীরে শিবের নাম করতে যান। এই সময় শত্রু রাজারা উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন। এই সময়টি ছিল শনিবার ও ত্রয়োদশী তিথি।[10] ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত অদৃশ্য অসুর দূষণের সাহায্যে তারা উজ্জয়িনী লুণ্ঠন করে শিবভক্তদের আক্রমণ করেন। ভক্তদের আকূতি শুনে শিব মহাকালের রূপে উপস্থিত হন এবং চন্দ্রসেনের শত্রুদের ধ্বংস করেন।[11] শ্রীখর ও বৃধির অনুরোধে শিব উজ্জয়িনীতে রাজ্যের প্রধান দেবতারূপে অবস্থান করতে সম্মত হন। সেই থেকে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে শিব ও পার্বতী উজ্জয়িনীতে অবস্থান করছেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, শনি প্রদোষ ব্রত করলে শিবভক্তেরা মৃত্যুভয় ও রোগব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পান এবং প্রচুর ধনসম্পত্তি লাভ করেন।[12]

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  • Aiya V., Nagam (১৯০৬)। The Travancore state manual, Volume 2। Travancore Government Press। পৃষ্ঠা 103। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৯, ২০১১
  • Bhargava K., Gopal , Bhatt C., Shankarlal (২০০৬)। Land and people of Indian states and union territories. 25. Tamil Nadu। Delhi: Kalpaz Publication। পৃষ্ঠা 454। আইএসবিএন 81-7835-356-3।
  • Srinivasan (১৯৮৮)। hinduism for all। Mumbai: Giri Trading Agency Private Limited। পৃষ্ঠা 87।
  • Jagannathan, Maithily (২০০৫)। South Indian Hindu festivals and traditions। New Delhi: Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 67। আইএসবিএন 81-7017-415-5।
  • Samarth, Shree Swami; Kendra, Vishwa Kalyan (২০০৯)। Guru Charitra। New Delhi: Sterling Publishers Pvt. Ltd.। পৃষ্ঠা 41–43। আইএসবিএন 978-81-207-3348-0।
  • Sehgal, Sunil (১৯৯৯), Encyclopaedia of Hinduism: H-Q, Volume 3, New Delhi: Sarup & Sons, আইএসবিএন 81-7625-064-3.
  • Subramuniyaswami, Satguru Sivaya (২০০৩), Dancing With Siva : Hinduism's Contemporary Catechism, Himalayan Academy, আইএসবিএন 0-945497-89-X.
  • Garrett, John (১৮৭১)। A Classical Dictionary of India: Illustrative of the Mythology, Philosophy, Literature, Antiquities, Arts, Manners, Customs, &c. of the Hindus। Higginbotham and Co.।.

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.