কাশী বিশ্বনাথ মন্দির

হিন্দু পুরাণে এই মন্দিরটির উল্লেখ পাওয়া যায়। মন্দিরটি শৈবধর্মের প্রধান কেন্দ্রগুলির অন্যতম। অতীতে বহুবার এই মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের পাশে জ্ঞানবাপী মসজিদ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। আদি মন্দিরটি এই মসজিদের জায়গাটিতেই অবস্থিত ছিল।[2] বর্তমান মন্দিরটি ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহিল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দেন।[3] ১৯৮৩ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মন্দিরটি পরিচালনা করে আসছেন।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
काशी विश्वनाथ मंदिर
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, ১৯১৫
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাবারাণসী
অবস্থান
অবস্থানবারাণসী
রাজ্যউত্তরপ্রদেশ
দেশভারত
স্থাপত্য
ধরনমন্দির
সৃষ্টিকারীমহারানি অহিল্যাবাই হোলকর
ওয়েবসাইট
shrikashivishwanath.org
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির (দেবনাগরী: काशी विश्‍वनाथ मंदिर) ভারতের একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির। এটি উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসীতে অবস্থিত। মন্দিরটি গঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির "জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির" নামে পরিচিত শিবের বারোটি পবিত্রতম মন্দিরের অন্যতম। মন্দিরের প্রধান দেবতা শিব "বিশ্বনাথ" বা "বিশ্বেশ্বর" নামে পূজিত হন। বারাণসী শহরের অপর নাম "কাশী" এই কারণে মন্দিরটি "কাশী বিশ্বনাথ মন্দির" নামে পরিচিত। মন্দিরের ১৫.৫ মিটার উঁচু চূড়াটি সোনায় মোড়া। তাই মন্দিরটিকে স্বর্ণমন্দিরও বলা হয়ে থাকে।[1]

কিংবদন্তি

শিবপুরাণ অনুসারে, একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও রক্ষাকর্তা বিষ্ণু তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে বিবাদে রত হন।[4] তাদের পরীক্ষা করার জন্য শিব ত্রিভুবনকে ভেদ করে জ্যোতির্লিঙ্গ নামে এক বিশাল অন্তহীন আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা এই লিঙ্গের উৎস অনুসন্ধান করতে যান। ব্রহ্মা যান উপর দিকে এবং বিষ্ণু নামেন নিচের দিকে। কিন্তু তারা কেউই এই লিঙ্গের উৎসটি খুঁজে পাননা। ব্রহ্মা মিথ্যা বলেন যে তিনি উৎসটি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু বিষ্ণু তার পরাজয় স্বীকার করে নেন। শিব তখন একটি দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়ে মিথ্যা বলার জন্য ব্রহ্মাকে শাপ দেন যে অনুষ্ঠানে তার কোনো স্থান হবে না। অন্যদিকে সত্য কথা বলার জন্য তিনি বিষ্ণুকে আশীর্বাদ ক্করে বলেন যে সৃষ্টির অন্তিমকাল পর্যন্ত তিনি পূজিত হবেন। জ্যোতির্লিঙ্গ হল সেই অখণ্ড সর্বোচ্চ সত্যের প্রতীক, যার অংশ শিব নিজে। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলিতে শিব স্বয়ং অগ্নিময় আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।[5][6] শিবের ৬৪টি রূপভেদ রয়েছে। তবে এগুলির সঙ্গে জ্যোতির্লিঙ্গকে এক করা হয় না। প্রত্যেক জ্যোতির্লিঙ্গের নির্দিষ্ট নাম আছে – এগুলি শিবের এক এক রূপ।[7] প্রতিটি মন্দিরেই শিবলিঙ্গ শিবের অনন্ত প্রকৃতির প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব করে।[7][8][9] বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির হল গুজরাতের সোমনাথ, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন, মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর, মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর, হিমালয়ের কেদারনাথ, মহারাষ্ট্রের ভীমশংকর, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বিশ্বনাথ, মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বর, ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ, গুজরাতের দ্বারকায় নাগেশ্বর, তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের রামেশ্বর এবং মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদের ঘৃষ্ণেরশ্বর[4][10]

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে মণিকর্ণিকা ঘাট শাক্তদের পবিত্র তীর্থ অন্যতম শক্তিপীঠ। শৈব সাহিত্যে দক্ষযজ্ঞের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা শক্তিপীঠের উৎস-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক আখ্যান।[11] কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন।[12][13]

ইতিহাস

স্কন্দ পুরাণের কাশীখণ্ডে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ১১৯৪ সালে মহম্মদ ঘোরি বারাণসীর অন্যান্য মন্দিরগুলির সঙ্গে এই মন্দিরটিও ধ্বংস করে দেন। এরপরেই আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। এরপর কুতুবুদ্দিন আইবক মন্দিরটি ধ্বংস করেন।[14] আইবকের মৃত্যুর পর মন্দিরটি আবার নির্মিত হয়। ১৩৫১ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলক মন্দিরটি আবার ধ্বংস করেন।[2] ১৫৮৫ সালে আকবরের রাজস্বমন্ত্রী টোডরমল আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।[15] এরপর ১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেব পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করান। এই মসজিদটি আজও মন্দিরের পাশে অবস্থিত।[16] মসজিদের পিছনে পুরনো মন্দিরের কিছু ধ্বংসাবশেষ আজও দেখা যায়। বর্তমান মন্দিরটি ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহিল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দিয়েছিলেন।[3] ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহ মন্দিরের চূড়াটি ১০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন।[17]

মন্দির

মন্দির চত্বরটি অনেকগুলি ছোটো ছোটো মন্দির নিয়ে গঠিত। এই মন্দিরগুলি গঙ্গার তীরে "বিশ্বনাথ গলি" নামে একটি গলিতে অবস্থিত। প্রধান মন্দিরের মধ্যে একটি ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ সেন্টিমিটার পরিধির শিবলিঙ্গ রুপোর বেদির উপর স্থাপিত।[1] ছোটো মন্দিরগুলির নাম কালভৈরব, দণ্ডপাণি, অবিমুক্তেশ্বর, বিষ্ণু, বিনায়ক, শনীশ্বর, বিরূপাক্ষ ও বিরূপাক্ষ গৌরী মন্দির। মন্দিরের মধ্যে জ্ঞানবাপী নামে একটি ছোটো কুয়ো আছে। কথিত আছে, মুসলমান আক্রমণের সময় প্রধান পুরোহিত স্বয়ং জ্যোতির্লিঙ্গটি রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সেটি নিয়ে এই কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিলেন।

গুরুত্ব

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী পবিত্রতম মন্দিরগুলির অন্যতম। আদি শঙ্করাচার্য, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, গোস্বামী তুলসীদাস, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, গুরু নানক প্রমুখ ধর্মনেতারা এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন।[16] হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গায় একটি ডুব দিয়ে এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব।

পাদটীকা

  1. "Cultural holidays - Kashi Vishwanath temple"
  2. Koenraad Elst (১৯৯০)। Ram Janmabhoomi vs. Babri Masjid, A Case Study in Hindu-Muslim Conflict
  3. "Shri Kashi Vishwanath Temple - A Brief history"। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১১
  4. R. 2003, pp. 92-95
  5. Eck 1999, p. 107
  6. See: Gwynne 2008, Section on Char Dham
  7. Lochtefeld 2002, pp. 324-325
  8. Harding 1998, pp. 158-158
  9. Vivekananda Vol. 4
  10. Chaturvedi 2006, pp. 58-72
  11. (Translator), F. Max Muller (জুন ১, ২০০৪)। The Upanishads, Vol I। Kessinger Publishing, LLC। আইএসবিএন 1419186418।
  12. (Translator), F. Max Muller (জুলাই ২৬, ২০০৪)। The Upanishads Part II: The Sacred Books of the East Part Fifteen। Kessinger Publishing, LLC। আইএসবিএন 1417930160।
  13. "Kottiyoor Devaswam Temple Administration Portal"http://kottiyoordevaswom.com/। Kottiyoor Devaswam। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ |কর্ম= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  14. The Sacred Complex of Kashi। Concept Public Publishing। First published 1979, reprinted 2005। পৃষ্ঠা 310। সংগ্রহের তারিখ 28 November 2010 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  15. "The Temple of Vishwanath"
  16. "History!Kashi Vishwanath temple"
  17. "The Kashi Vishwanath Temple"। ৭ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১১

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.