নন্দী
নন্দী(সংস্কৃত: नन्दि) হিন্দু দেবতা শিবের বাহন। তবে তিনি শিবের বাহন হয়েছেন পরে। প্রথমে তিনি ছিলেন এক স্বতন্ত্র দেবতা। পশুপতির পাশাপাশি তারও পুজো হত। এক সময় তিনি হলেন শিবের দুই দ্বাররক্ষীর এক জন, অন্য জন মহাকাল। এই কারণেই অনেক শিবমন্দিরের সামনে নন্দীর মূর্তি থাকে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে। তবে সে মূর্তি সচরাচর বৃষ বা ষাঁড়ের। যদিও পুরাণে নন্দীর এই রূপটি বিরল। কূর্মপুরাণে বলা হয়েছে, মহাদেবের এই প্রধান অনুচরটি করালদর্শন, বামন, বিকটাকার, মুণ্ডিতমস্তক, ক্ষুদ্রবাহু, মহাবল। ষণ্ডরাজকে পাওয়া যায় মন্দির-ভাস্কর্যে, অষ্টম শতাব্দী থেকে। কী ভাবে নন্দী এই রূপ প্রাপ্ত হলেন, সে বিষয়ে কোনও স্থির মত নেই।


নন্দীর জন্ম নিয়ে নানা গল্প আছে। কোনও গল্পে তিনি এক মুনির ছেলে, কোথাও বা বিষ্ণুর সন্তান। তবে প্রায় সব কাহিনিতেই তিনি শিবের সহচর। অনেক সময়েই তাকে দেখানো হয়েছে শিবের অনুচর ‘গণ’বাহিনীর এক নায়ক হিসেবে, যে ‘গণ’র অধিপতি হলেন গণেশ বা গণপতি। গণরা থাকে কৈলাসে, তবে মাঝে মাঝেই তারা শ্মশানে ঘোরে। সাধারণত তারা কারও ক্ষতি করে না, তবে কুপিত হলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, যেমন দক্ষযজ্ঞের সময়। এমন প্রলয় মুহূর্তে নন্দীও ক্ষেপে উঠে সব লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারেন, সেটা ভাবাই যায়।[1]
শিবের পূজার সময় এর পূজাও করতে হয়। বর্তমানে অধিকাংশ শিবমন্দিরেই শিবমূর্তির ডান পাশে শিবের দিকে তাকিয়ে থাকা একটি ষাঁড়ের মূর্তিতে নন্দীকে স্থাপন করা হয়।
রামায়ণেও নন্দীর উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণ মতে, কৈলাসে শিবের সাথে রাবণ দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে রাবণের সাথে নন্দীর দেখা হয়। নন্দীর মুখাবয়ব নিয়ে রাবণ ব্যাঙ্গ করাতে নন্দী রাবণকে তার মুখাবয়বসদৃশ প্রাণীর দ্বারা ধ্বংস হবার অভিশাপ দেয়। পরবর্তীতে নন্দীর মুখাবয়বসদৃশ বানরকুলের হাতে রাবণের লঙ্কা আক্রান্ত ও ধ্বংস হয়।
নন্দীর আলাদাভাবে কোন পূজা প্রচলিত না থাকলেও শিবরাত্রির দিন এরও বিশেষপূজা হয়ে থাকে। শিবপূজা শেষে নন্দীর কানে কানে প্রার্থনা জানিয়ে দেওয়ার এক বিশেষ রীতি রয়েছে। ধারণা করা হয়, নন্দী শিবের কাছে পূজারীর প্রার্থনা পৌঁছিয়ে দেবেন।
বিভিন্ন শিবমন্দিরে নন্দী হিসেবে সাদা ষাঁড় পালন করা হয়ে থাকে।
পাদটীকা
- শিবপুরাণ
- রামায়ণ
- "আনন্দবাজার পত্রিকা - উৎসব"। archives.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৫।