আক্কেলপুর উপজেলা
আক্কেলপুর উপজেলা বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
আক্কেলপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
![]() ![]() আক্কেলপুর | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৮′ উত্তর ৮৮°৫৯′ পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | জয়পুরহাট জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ১৩৯.৪৭ কিমি২ (৫৩.৮৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (2011)[1] | |
• মোট | ১,২৮,৯৫২ |
• জনঘনত্ব | ৯২০/কিমি২ (২৪০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৩৮ ১৩ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
প্রশাসনিক তথ্য
আয়তন
আক্কেলপুর উপজেলার মোট আয়তন প্রায় ১৩৯.৪৭ বর্গ কিমি (৫৩.৮৫ বর্গমাইল)।
অবস্থান
আক্কেলপুর উপজেলা রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলার উত্তরে জয়পুরহাট সদর ও ক্ষেতলাল উপজেলা, পুর্বে ক্ষেতলাল উপজেলা ও বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলা, দক্ষিণে বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলা, পশ্চিমে নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদর উপজেলা ও বদলগাছী উপজেলা অবস্থিত।[2]
ইতিহাস
জনশ্রুতি আছে, এই এলাকায় আক্কেল কাজী নামক একজন সম্পদশালী ব্যক্তি বাস করতেন। তার নাম অণুসারে এ স্থানের নাম হয়েছে আক্কেলপুর। অন্যদিকে কথিত আছে যে, সাবেক 'ইকুরকুরি' মৌজায় সপ্তদশ শতাব্দীতে হজরত শাহ মখদুম (রহঃ) নামক একজন ধর্মীয় সাধক সুদূর পারস্য থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য এখানে আসেন। তিনি অণুভব করেন যে এখানকার লোকজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান। ফারসি আক্কেলমান্দ শব্দের অর্থ বুদ্ধিমান। পরবর্তী সময়ে আক্কেলমান্দ হতেই আক্কেলপুর নামকরণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকেই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় আক্কেলপুর ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বিশেষ করে সব্জির জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বকাল পর্যন্ত আক্কেলপুরে প্রধান পরিচয় ছিল বগুড়া জেলার একটি রেলস্টেশন হিসেব। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে সাবেক বগুড়া জেলার আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া থানার কিছু অংশ নিয়ে প্রথমে আক্কেলপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় আক্কেলপুর রেলগেটের নিকট স্থানীয় ব্যবসায়ী ফজর উদ্দিন আকন্দ সাহেবের ভাড়া বাসায় প্রথমে পুলিশ স্টেশন চালু হয়। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আক্কেলপুর সদরকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের আওতায় জয়পুরহাট জেলার উপজেলায় উন্নীত করা হয়। সে সময় তুলসীগঙ্গা নদীর পশ্চিম পাড়ের প্রায় ৯ একর জায়গা জুড়ে এর প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়।
ভাষা ও সংষ্কৃতি
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এদেশে প্রাচীনকাল থেকেই বসবাস করে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির মানুষ। সমভূমি, পাহাড়পর্বত গাত্রে, নদী অববাহিকায় বিভিন্ন গোত্রের বিচিত্র মানুষের বাস। ফলে তাদের সংষ্কৃতিও আলাদা এবং ভাষাবৈচিত্র্যও দৃশ্যমান।
অনুরূপভাবে, জয়পুরহাট জেলায় প্রায় ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার জন আদিবাসী তাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংষ্কৃতি বৈশিষ্ট্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। যাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে আক্কেলপুর উপজেলায়। এবং স্বভাবতই, তাদের ভাষাও বাংলা ভাষা থেকে আলাদা এবং সংষ্কৃতিও ভিন্ন। তবে তাদের মধ্যে বাংলা ভাষারও প্রচলন দেখা যায়।
এছাড়া, আক্কেলপুর উপজেলার সাধারণ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষই প্রকৃত বাঙালি এবং তাদের ভাষাও বাংলা (রাষ্ট্রীয় ভাষা)। তাদের সংষ্কৃতিও সাধারণ বাঙালির প্রতিরূপ।
প্রশাসনিক এলাকা
ইউনিয়নের নামের তালিকা :
- আক্কেলপুর পৌরসভা
- রুকিন্দীপুর
- সোনামুখী
- গোপীনাথপুর
- রায়কালী
- তিলকপুর।[3]
জনসংখ্যার উপাত্ত
আক্কেলপুর উপজেলার মোট জনসংখ্যা: ১,২৮,৯৫২ জন এদের মধ্যে মোট ভোটার সংখ্যা: ৯২,০৯৯ জন।
- ১. পুরুষ ভোটার- ৪৪,৬৭১ জন;
- ২. মহিলা ভোটার- ৪৭,৪২৮ জন।
স্বাস্থ্য
১। হাসপাতালঃ ১ (এক) টি (৫০ শয্যা বিশিষ্ট)।
২। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রঃ ২ (দুই) টি (জামালগঞ্জ ও সোনামুখী)।
৩। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রঃ ৩ (তিন) টি (গোপিনাথপুর, রায়কালী, তিলকপুর)।
৪। কমিউনিটি ক্লিনিকঃ ২১ (একুশ) টি।
৫। ই.পি.আই আউট রিচঃ ১২০ (একশত কুড়ি) টি।
৬। বেসরকারী ক্লিনিকঃ ৩ (তিন) টি।[5]
শিক্ষা
শিক্ষাক্ষেত্রে আক্কেলপুর উপজেলা উন্নতি লাভ করছে। বর্তমানে পি.ই.সি, জে.এস.সি, নিম্ন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক ইত্যাদি সমমানের পরীক্ষায় আক্কেলপুর উপজেলার শিক্ষার্থীদের অর্জন প্রশংষনীয়। এছাড়াও এই উপজেলায় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেক বেসরকারি স্কুলও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আক্কেলপুর সদর উপজেলার কিছু শীর্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয় , উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের তালিকা নিম্নরূপ :
প্রাথমিক বিদ্যালয়
১. আক্কেলপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ২. আক্কেলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩. বিহারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪. হাস্তাবসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৫. সোনামুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
বেসরকারি বিদ্যালয়
১. উপজেলা রেজি: কেজি স্কুল; ২. হাইটেক পৌর কিন্ডার গার্টেন স্কুল; ৩. শাপলা কিন্ডার গার্টেন স্কুল; ৪. সান সাইন কিন্ডার গার্টেন স্কুল; ৫. কবি আতাউর রহমান বিদ্যানিকেতন;
উচ্চ বিদ্যালয়
১. আক্কেলপুর এফ.ইউ. মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়; ২. আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়; ৩. সোনামুখি উচ্চ বিদ্যালয়; ৪. তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়; ৫. জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়;
কলেজ
১. আক্কেলপুর মুজিবুর রহমান কলেজ; ২. আক্কেলপুর বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ; ৩. তিলকপুর বাচ্চা হাজী কলেজ;
উপরোক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ আক্কেলপুর উপজেলার শিক্ষাক্ষেত্রে সুনাম অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এছাড়াও গ্রামপর্যায়ে আরও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের ভুমিকাও অপরীসিম শিক্ষা ব্যবস্থাকে অগ্রসরের লক্ষ্যে।
কৃষি
অর্থনীতি
যোগাযোগ ব্যবস্থা
কৃতি ব্যক্তিত্ব
- মজিবুর রহমান আক্কেলপুরি-প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ,সাবেক এম এন এ বৃহত্তর বগুড়া
- দিলরুবা খানম - কন্ঠ শিল্পী;
- মনতাজুর রহমান আকবর - চলচ্চিত্র পরিচালক।
- ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা -সাবেক সংসদ সদস্য
- কবি আব্দুস সাত্তার মৃধা
উপজেলার প্রাচীন নিদর্শনাদি
গোপীনাথপুর মন্দির : জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলা সদর হতে মাত্র ৬/৭ কিঃ মিঃ পূর্বে

গোপীনাথপুরে এই মন্দিরটি অবস্থিত। এটি গোপীনাথ ঠাকুরের মন্দির নামে পরিচিত। যতদূর জানা যায় ভারতের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে প্রভুপাদ অদ্বৈত গোস্বামী সবসময় ঈশ্বরের ধ্যান করতেন। তার স্ত্রী সীতা দেবীও ছিলেন সতী-সাধ্বী নারী । একদিন ২৪ পরগণার যুবক নন্দ কুমার এবং নদীয়া জেলার আর এক যুবক যজ্ঞেশ্বর রায় প্রভুপাদ অদ্বৈত গোস্বামীর নিকটে এসে দীক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে অদ্বৈত গোস্বামী মহোদয় সব কথা শুনে তাদেরকে সীতাদেবীর কাছে পাঠান । সীতাদেবী ধ্যান যোগে জানতে পারেন যে, এই যুবকেরা পূর্ব জম্মে জয়া ও বিজয়া নামে দুই শখী ছিল। তখন সীতাদেবী যুবকদের মাথা ন্যাড়া করে স্নান করে আসতে বলেন । সীতাদেবীর নির্দেশ মত কাজ শেষ করে এলে তিনি তাদের দীক্ষা দেন। সীতাদেবী নন্দকুমারের নাম নন্দিনী এবং যজ্ঞেশ্বরের নাম জঙ্গলী রাখলেন। নন্দিনী প্রিয়া বরেন্দ্র এলাকায় বর্তমান জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের ১কিঃমিঃ উত্তরে গভীর জঙ্গলে নদীর ধারে একটি মন্দির স্থাপন করেন। জনশ্রুতি আছে যে, ১৫২০ হতে ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ নন্দিনী প্রিয়ার পূজা-পার্বণ ও অতিথি সেবার কথা শুনে খুশি হয়ে তাম্রফলকে লিখে পূর্ণগোপীনাথপুর ও গোপালপুর মৌজার সব সম্পত্তি দেবোত্তর হিসেবে প্রদান করেন । এরপর পুরানো গোপীনাথপুর মন্দিরটির সংস্কার করা হয়। পাল যুগের নির্মাণ কৌশল অণুসারে এ মন্দিরটির কাঠামো নির্মিত।
১৩০৪ বঙ্গাব্দের এক ভূমিকম্পে এ মন্দিরটি ভেঙ্গে পড়ে। ১৯২৮ হতে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বর্তমান মূল মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। এখনও পুরাতন কারুকার্যের কিছু নমুনা মূল ভবনে রয়েছে। মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুট। এখানে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আরতি এবং মধ্যাহ্নে আধামণ চালের অন্নভোগ দেওয়া হয় । প্রতিবছর দোল পূর্ণিমাতে এখানে মেলা বসে এবং দীর্ঘ ৩০ দিন ধরে এ মেলা চলে ।
ল্যাংগরপীরের মাজার : উপজেলা পৌরসভার ভিতরে সোনামুখী নামক স্থানে অবস্থিত। আক্কেলপুর মূল শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার।
আব্দুল্লাহ মক্কী'র মাজার : উপজেলা পৌরসভার অন্তভূর্ক্ত সোনামুখী নামক স্থানে তুলসীগঙ্গা নদীর তীরে হযরত আব্দুল্লাহ মক্কী (রাঃ) খ্যাতিমান ধমর্পরায়ণ সাধকের মাজার অবস্থিত। সম্প্রতি এখানে একটি ইসলামিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে।
বিবিধ
আরও দেখুন
তথ্যসুত্র
- "এক নজরে আক্কেলপুর উপজেলা"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন, ২০১৪। ২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "ভৌগোলিক পরিচিতি"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "ইউনিয়নের নামের তালিকা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - akkelpur.joypurhat.gov.bd/node/349929/এক-নজরে-আক্কেলপুর-উপজেলা
- akkelpur.joypurhat.gov.bd