ফিফা বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ
ফিফা বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ (ইংরেজি: FIFA World Cup hosts) হচ্ছে ফিফার সদস্যভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট একটি দেশ কর্তৃক ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। শুরুর দিকে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের লক্ষ্যে ফিফার কংগ্রেসে সভা আহ্বান করতে হতো। স্বাগতিক দেশ নির্ধারণে বেশ বিতর্কের পরিবেশ সৃষ্টিসহ দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপের মধ্যে প্রায় তিন সপ্তাহের ভ্রমণও করতে হতো। ঐ সময়ে এ দু'টি মহাদেশই ফুটবলের প্রবল পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল। ফিফা কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, উরুগুয়েতে বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসবে। উরুগুয়ে ব্যতীত ইতালি, সুইডেন, নেদারল্যান্ড এবং স্পেন - ইউরোপের এ চারটি দেশ নিলাম ডাক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিল।[1]

ইতিহাস
প্রথম বিশ্বকাপের পর ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮ সালে অনুষ্ঠিত দু'টি বিশ্বকাপই ইউরোপে অনুষ্ঠিত হয়। তন্মধ্যে ১৯৩৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপটি ছিল বেশ বিতর্কিত। আমেরিকার দেশগুলো ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে দু'টি মহাদেশের মধ্যে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাবনা রেখেছিল। তাদের প্রস্তাবনা না মানার প্রেক্ষাপটে আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে ফুটবল দল এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি।[2]
২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ভবিষ্যতে দেশসমূহের অংশগ্রহণ না করা কিংবা বিতর্ক থেকে দূরে থাকার উদ্দেশ্যে ফিফা আমেরিকা এবং ইউরোপে পালাক্রমে স্বাগতিক দেশ নির্ধারণ করে; যা ২০০২ সালের বিশ্বকাপের পূর্ব পর্যন্ত চলমান ছিল। এ পদ্ধতিতে স্বাগতিক দেশ নির্ধারণের লক্ষ্যে ফিফা নির্বাহী কমিটি গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের আয়োজন করে। বর্তমানে এ সিদ্ধান্তটি খসড়া আকারে ২০১৮ সালের পাশাপাশি সাত বছর পূর্বেই ২০২২ সালের প্রতিযোগিতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখে।
একমাত্র মেক্সিকো, ইতালি, ফ্রান্স এবং জার্মানি দুইবার করে বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশের মর্যাদার অধিকারী হয়েছে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের পর ব্রাজিলও এর সাথে যু্ক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেক্সিকো সিটির এস্তাদিও অ্যাজটেকা হচ্ছে একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে দু'টি ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের পর রিও ডি জেনেইরোতে অবস্থিত মারকানা স্টেডিয়ামও এ গৌরবের অধিকারী হবে। এ স্টেডিয়ামটিতে ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপের উরুগুয়ে বনাম ব্রাজিলের মধ্যকার সর্বশেষ খেলাটি ভিন্নতর ক্রীড়া পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
স্বাগতিক দেশ
আয়োজনের সাল | আয়োজক দেশ(সমূহ) |
---|---|
১৯৩০ | ![]() |
১৯৩৪ | ![]() |
১৯৩৮ | ![]() |
১৯৪২ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে স্থগিত |
১৯৪৬ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে স্থগিত |
১৯৫০ | ![]() |
১৯৫৪ | ![]() |
১৯৫৮ | ![]() |
১৯৬২ | ![]() |
১৯৬৬ | ![]() |
১৯৭০ | ![]() |
১৯৭৪ | ![]() |
১৯৭৮ | ![]() |
১৯৮২ | ![]() |
১৯৮৬ | ![]() |
১৯৯০ | ![]() |
১৯৯৪ | ![]() |
১৯৯৮ | ![]() |
২০০২ | ![]() ![]() |
২০০৬ | ![]() |
২০১০ | ![]() |
২০১৪ | ![]() |
২০১৮ | ![]() |
২০২২ | ![]() |
ভোট পর্ব
১৯৩০ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
ফলাফল:
১৯৪২ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিস্তার ঘটায় ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল স্থগিত হয়ে যায়। ফলে, স্বাগতিক দেশ নির্ধারণের জন্য কোন ভোটের প্রয়োজন পড়েনি।
১৯৫৮ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো এবং সুইডেন প্রতিযোগিতায় স্বাগতিক দেশ হবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করে।[3] সুয়েডীয় প্রতিনিধি দল অন্যান্য দেশসমূহের সাথে আলোচনা করে ১৯৫০ সালের ফিফা বিশ্বকাপে আয়োজিত ফিফা কংগ্রেসে তাদের দেশে প্রতিযোগিতা আয়োজনের কথা ব্যক্ত করে।[3] ২৩ জুন, ১৯৫০ সালে অন্য কোন দলের তরফে বাঁধা না পাওয়ায় সুইডেনকে প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।[4]
ফলাফল:
১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপ
৬ জুলাই, ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের লন্ডনে অনুষ্ঠিত ফিফার কংগ্রেসে পরপর তিনটি আসরের জন্যে তিনটি স্বাগতিক দেশের নাম নির্ধারণ করা হয়। স্পেন এবং জার্মানি ১৯৭৪ এবং ১৯৮২ সালের স্বাগতিক দেশের জন্যে একে-অপরের বিরুদ্ধে ডাকে অংশ নেয়ার প্রেক্ষাপটে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে উভয়েই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় জার্মানিতে ১৯৭৪ এবং স্পেনে ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১৯৭০ সালের ফিফা বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশের মর্যাদা লাভের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৮ সালের স্বাগতিক দেশ হিসেবে মেক্সিকো প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে।
১৯৭৪ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
ফলাফল:
পশ্চিম জার্মানি১৯৮২ সালের স্বাগতিক দেশের প্রার্থীতা বিনিময়ে প্রত্যাহার স্পেন
১৯৭৮ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
ফলাফল:
আর্জেন্টিনা১৯৭০ ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন করায় প্রত্যাহার মেক্সিকো
১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
ফলাফল:
স্পেন১৯৭৪ সালের স্বাগতিক দেশের প্রার্থীতা বিনিময়ে প্রত্যাহার পশ্চিম জার্মানি
১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
৯ জুন, ১৯৭৪ সালে স্টকহোমে ফিফা নির্বাহী পরিষদ একমাত্র কলম্বিয়ার নিলামে অংশগ্রহণ করাকে বৈধভাবে স্বাগতিক দেশের অধিকারী হিসেবে ঘোষণা করে।
ফলাফল:
কিন্তু, কলম্বিয়া তাদের দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে ৫ নভেম্বর, ১৯৮২ সালে স্বাগতিক দেশ থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদন জানায়। চার বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে ফিফা পুণরায় স্বাগতিক দেশের জন্যে ডাক প্রক্রিয়া আয়োজন করে। এতে তিনটি দেশ অংশ নেয়।
জুরিখে অনুষ্ঠিত ২০ মে, ১৯৮৩ সালের ফিফা নির্বাহী পরিষদে অজানাসংখ্যক ভোটের ব্যবধানে মেক্সিকো স্বাগতিক দেশের মর্যাদা পায়।
ফলাফল:
মেক্সিকো, অজানাসংখ্যক ভোট- (টাই)
কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র: ০ ভোট
বিতর্ক
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে যৌথভাবে ২০০২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ প্রথমবারের মতো এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু, এ দুটি দেশ পৃথকভাবে ডাক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিল। ভোট গ্রহণের অল্প পূর্বে উভয় দেশ যুগ্মভাবে বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশের জন্যে ফিফার নিকট আবেদন করে। বিবদমান প্রতিপক্ষ এবং দূরত্বসহ সাংগঠনিক এবং নৈতিক দিকগত সমস্যা থাকা স্বত্ত্বেও ফিফা তাতে সাড়া দেয়। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের যুগ্মভাবে স্বাগতিক দেশের অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে বলে ঘোষণা করে। ২০০৪ সালে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে যুগ্মভাবে এ ডাক প্রক্রিয়াকে তারা স্বীকার করছে না।[5]
২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
ফলাফল:
দেশ | ভোট | ||
---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | |
![]() |
১০ | ১১ | ১২ |
![]() |
৬ | ১১ | ১১ |
![]() |
৫ | ২ | |
![]() |
২ | ||
![]() |
প্রত্যাহার | ||
সর্বমোট ভোট | ২৩ | ২৪ | ২৩ |
২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
ফলাফল:
দেশ | ভোট | ||
---|---|---|---|
১ | |||
![]() |
১৪ | ||
![]() |
১০ | ||
![]() |
|||
সর্বমোট ভোট | ২৪ |
দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৪ ভোট মরক্কো, ১০ ভোট মিশর, ০ ভোট৮ মে, ২০০৪ সালে যৌথভাবে ডাক প্রক্রিয়াকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করা প্রত্যাহার লিবিয়া৮ মে, ২০০৪ সালে যৌথভাবে ডাক প্রক্রিয়াকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করা প্রত্যাহার তিউনিসিয়া
২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
ফিফা পর্যায়ক্রমিকভাবে মহাদেশভিত্তিক ২০১৪ সালের স্বাগতিক দেশের জন্যে দক্ষিণ আমেরিকাকে পূর্ব নির্ধারিত করেছিল। ফিফা পূর্বেই পর্যায়ক্রমিকভিত্তিতে স্বাগতিক দেশ নির্ধারণের জন্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।[6] কিন্তু ২০১৪ সালের পর এ সিদ্ধান্ত বলবৎ হবে না বলে ঘোষণা করে।
কলম্বিয়া ২০১৪ সালের জন্যে স্বাগতিক দেশ হবার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল[7] কিন্তু প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে।[8] কোরিয়া-জাপানের সফলভাবে বিশ্বকাপ সমাপণের পর চিলি এবং আর্জেন্টিনাও যৌথভাবে স্বাগতিক দেশ হবার জন্যে কিছুটা আগ্রহ প্রকাশ করেছিল; কিন্তু যৌথ ডাক প্রক্রিয়া অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা বাতিল হয়ে যায়। ব্রাজিলও স্বাগতিক দেশ হবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করে। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ফেডারেশন কনমেবল ব্রাজিলকে স্বাগতিক হবার জন্যে সমর্থন ব্যক্ত করে।[9] ফলে ব্রাজিল একমাত্র দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে কনমেবলের মাধ্যমে ডিসেম্বর, ২০০৬ সালে ডাক প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সমাপণের জন্যে প্রস্তাবনা পাঠায়। ঐ সময়ে কলম্বিয়া, চিলি এবং আর্জেন্টিনা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে ফেলে। ভেনেজুয়েলা ডাকে অংশগ্রহণ করেনি।
এরফলে ব্রাজিল প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষবিহীন অবস্থায় ডাক প্রক্রিয়ায় জয়লাভ করে। ৩০ অক্টোবর, ২০০৭ সালে ফিফা নির্বাহী পরিষদ স্বাগতিক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের নাম ঘোষণা করে।[10]
ফলাফল:
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
ফলাফল:
দেশ | ভোট | |
---|---|---|
১ | ২ | |
![]() |
৯ | ১৩ |
![]() ![]() |
৭ | ৭ |
![]() ![]() |
৪ | ২ |
![]() |
২ | |
সর্বমোট ভোট | ২২ | ২২ |
২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ
নিলাম ডাক:
অস্ট্রেলিয়াপ্রত্যাহার ইন্দোনেশিয়া জাপান দক্ষিণ কোরিয়া কাতার যুক্তরাষ্ট্র
ফলাফল:
দেশ | ভোট | |||
---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | |
![]() |
১১ | ১০ | ১১ | ১৪ |
![]() |
৩ | ৫ | ৬ | ৮ |
![]() |
৪ | ৫ | ৬ | |
![]() |
৩ | ২ | ||
![]() |
১ | |||
সর্বমোট ভোট | ২২ | ২২ | ২২ | ২২ |
তথ্যসূত্র
- "History of 1930 World Cup". BBC Sport. April 11, 2002. Retrieved 13 April 2006.
- France 1938, FIFA World Cup site. Retrieved on April 13, 2006.
- Norlin, pp.24–25
- "FIFA World Cup: host announcement decision" (PDF)। FIFA। ১২ মার্চ ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১১।
- Host nation of 2010 FIFA World Cup - South Africa, FIFA Media Release, May 15, 2004. Retrieved on January 8, 2006.
- "Games win inspires bid to host 2018 World Cup" by John Goodbody, The Times, November 16, 2005. Retrieved on January 8, 2006.
- BBC News, Colombia bids for 2014 World Cup, 17 July 2006
- FIFA, Brazil confirms bid - Colombia withdraws, 13 April 2007
- Brazil set to host World Cup, BBC. Retrieved on April 11, 2006.
- "Clear declaration to defend the autonomy of sport" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। FIFA। ২০০৬-১২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-০৬।