নেছারাবাদ উপজেলা

নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি)
উপজেলা
নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি)
নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি)
বাংলাদেশে নেছারাবাদ উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৪৪′৪১″ উত্তর ৯০°৬′৮″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগবরিশাল বিভাগ
জেলাপিরোজপুর জেলা
আয়তন
  মোট১৯৯.১৪ কিমি (৭৬.৮৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা [1]
  মোট২,১২,২৩২
  জনঘনত্ব১১০০/কিমি (২৮০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৭২%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
১০ ৭৯ ৮৭
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান

উত্তরে বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলা, পূর্বে ঝালকাঠি জেলা, দক্ষিণে কাউখালী উপজেলা ও পশ্চিমে নাজিরপুর উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

নেছারাবাদ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম নেছারাবাদ থানার আওতাধীন।

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

ইতিহাস

নেছারাবাদ উপজেলার পটভূমি:

পিরোজপুর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা বা থানা নেছারাবাদ। ১৭৯০ সালে পিরোজপুর থানার উত্তরাংশে কাউখালী গ্রাম সংলগ্নে কালীগঙ্গা নদীর তীরে কেওয়ারী গ্রামে কেওয়ারী নামে একটি থানা স্থাপিত হয়। কালের প্রবাহে কেওয়ারী গ্রাম কালীগঙ্গা নদীতে বিলীন হয়। পরবর্তীতে সময়ে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৯০৬ সালে কেওয়ারী থানা স্থানান্তরিত হয় এবং স্বরূপকাঠীতে উহা পূনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলা-বিহার উড়িষ্যার নবাব আলীবর্দী খানের কাছ থেকে এক সনদ গ্রহণের মধ্য থেকে বাংলা ১১৪৯ সালে (ইংরেজী ১৭৪২ সাল) রতনদি কালিকাপুর পরগনার সৃষ্টি হয়। এ পরগনাটিতপ্পে নাজিরপুরের অংশসহ অন্যান্য অঞ্চল নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে গঠিত হয়। জনৈক রত্নেশ্বরের পুত্র কৃষ্ণ রাম এ পরগনার সঙ্গে সংযুক্ত হন। নাজিরপুর এবং সেলিমাবাদ পরগনার বিচ্ছিন্ন অংশ থেকে এ পরগনার জন্ম।

স্বরূপকাঠী থানা সংশ্লিষ্ট অঞ্চল রতনদি কালিকাপুর পরগনার অর্ন্তগত ছিল। মূল জমিদার এপরগনার রাজস্ব যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারলে, এ জমিদারীর অংশ তিন জনে খরিদ করেন। তারা হলেন, স্বরূপ চন্দ্র গুহ, বৃন্দাবন চক্রবর্তী এবং চন্দ্রনাথ সেন। স্বরূপকাঠীর জমিদার স্বরূপ চন্দ্রগুহের পৈতৃক নিবাস এ অঞ্চলেই ছিল বলে লোকশ্রুতি আছে।

হীরালাল গুপ্তের স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় উদ্বৃত আছে যে, ১৮৮০সালের পূর্বে বরিশালে ১৭ জন উকিল এবং ব্যারিষ্টারের মধ্যে স্বরূপ চন্দ্রগুহ ছিলেন স্বনামধ্যন্য এবং বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। তিনি এতটা সম্মান এবং প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী ছিলেন যে, তার সঙ্গে আর কারো তুলনা হয় না। তিনিআরবি, ফার্সি, উর্দু প্রভৃতি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। তার অসাধারণ বক্তৃতা ক্ষমতা ছিল। তার ফার্সি ভাষায় বিশুদ্ধ উচ্চরণের সঙ্গে আইনের বক্তৃতা শোনবার জন্য প্রত্যহ আদালত গৃহে লোকে লোকারণ্য হত। স্বরূপ চন্দ্রগুহ ওকলাতি করে বহু অর্থ উপার্জন করেছিলেন এবং বহু অর্থ ব্যয়ে জমিদারীর অংশ ক্রয় করে, ‘‘রায় চৌধুরী’’ আখ্যা লাভ কনের। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে (বাংলা ১২৭৬বঙ্গাব্দে) বন্যায় দক্ষিণ শাহবাজপুরের গ্রামগুলো বিধ্বসতস্ত হওয়ায় স্বরূপচন্দ্র ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা বিনা সুদে দুর্গত জনগণের সাহায্যার্থে ঋণ দিয়েছিলেন। এ মহৎ ব্যক্তিত্বের নামে স্বরূপকাঠী থানার নামকরণ হয় বলে কথিত আছে। অন্যদিকে স্বরূপ চন্দ্র গুহের পুত্র গোবিন্দ চন্দ্র গুহের নাম অনুসারে স্বরূপকাঠীর সারেংকাঠী উইনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোবিন্দ গুহ কাঠীহয়। এরপর তাকে মুনিনাগ নামে আখ্যায়িত করা হয়। সেখানে এখনও স্বরূপ চন্দ্রগুহের বংশধরেরা বসবাস করছেন।

স্বরূপকাঠী ছিল গভীর জঙ্গল এবং জলাভূমিতে পূর্ণ। স্বরূপ দত্ত নামে জনৈক আবাদকারীজঙ্গল আবাদ করেন। তিনি জঙ্গল আবাদ করে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বরূপকাঠীরদত্ত পরিবারও তার বংশধর। তার নামে স্বরূপকাঠী হয়েছে বলে অন্য একটি জনশ্রুতি আছে।

অন্যভাবে কথিত আছে যে, এককালে সন্ধ্যা নদীর তীরে গাছপালা, বন বাদারে আবৃত গ্রামটির নয়নাভিরাম দৃশ্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। স্বরূপে তার পরিচিয়ের বিস্মৃতিএবং বিস্তর ঘটে। যার কারণে স্থানটির নাম হয় স্বরূপকাঁটি বা স্বরূপকাঠী। স্বরূপ অর্থ স্বীয় বা নিজ রূপ এবং কাঁটি বা কাঠি অর্থ একনর কন্ঠহার (সোনারকাটিঁ)। ১৯৮৫ সালে শর্ষিণার বিখ্যাত পীর, এ অঞ্চলের বুজর্গ অলি, মহান সাধক হজরত মাওলানা নেসার উদ্দিন(রঃ)-এর নামে স্বরূপকাঠী থানার নাম পরিবর্তন করে নেছারবাদ থানা রাখা হয়।

অর্থনীতি

কৃষি পণ্যের উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও কাঠ ব্যবসার জন্য স্বরূপকাঠীর নাম দেশব্যপী পরিচিত। কাঠ ব্যবসা এখানকার প্রধান ব্যবসা হলেও বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ শিল্প, বিভিন্ন কুটির শিল্পের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যপক প্রসার ঘটেছে। এছাড়া এখানে পেয়ারা, আমড়া এবং কাঁচা তরকারীর ভাল বাজার রয়েছে,এ এলাকায় প্রচুর পরিমানে মালবাহী ট্রলার রয়েছে।

প্রধান শস্য

পেয়ারা, আমড়া, সুপারি, নারিকেল, কলা, পান।

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নেছারাবাদ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,১১,০৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,০৩,৮২০ জন এবং মহিলা ১,০৭,২১২ জন। মোট পরিবার ৪৮,৪৯২টি।[2]

শিক্ষা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নেছারাবাদ উপজেলার সাক্ষরতার হার ৬৮.৬%।[2]

  1. মহাবিদ্যালয় ৯ টি
  2. মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯৭টি
  3. সরকারি প্রা: বিদ্যালয় ৯২টি
  4. রেজি: প্রাথ: বিদ্যালয় ৪৩টি
  5. আলিয়া মাদ্রাসা ৪১টি
  6. উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭টি
  7. কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ ২১টি
  8. কিন্টার গার্ডেন স্কুল ৩২টি
  9. হোমিও কলেজ ১টি
  10. কওমি মাদ্রাসা ৫টি

কৃতী ব্যক্তিত্ব

  • শাহ্ সূফী নেছারুদ্দীন আহমাদ - ছারছীনা দরবার শরীফের প্রথম পীর ও প্রতিষ্ঠাতা;
  • আবু জাফর ছালেহ - ছারছিনা দরবার শরীফের দ্বিতীয় পীর;
  • জুয়েল আইচ - জাদু শিল্পী, একুশে পদক প্রাপ্ত;
  • খান বাহাদুর হাশেম আলী খান - অভিভক্ত বাংলার মন্ত্রী রাজনীতিবিদ শিক্ষক আইনজীবি ও সমাজ সেবক;
  • শাহ আলম - এমপি
  • এনায়েত হোসেন খান - সাবেক এম পি।

চিকিৎসা

  • নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • হাসপাতাল- ৪ টি
  • ক্লিনিক- ১২টি
  • পরিবার পরিকল্পনা- ৪১ টি

দর্শনীয় স্থান

  • ছারছিনা দারুচ্ছুন্নাত
  • শাহ কামালের মাজার - সেহাংগল দরগাহ বাড়ি;
  • কৌড়িখাড়া ও রাগবাড়িতে রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ বাড়ি (আঠারো শতকের )
  • গায়েবী মসজিদ ও তিন গম্বুজ মসজিদ (বছরাকাঠী)
  • কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান
  • দীলবাজ খার মাজার ও অলৌকিক সাত রাস্তা (সেহাংগল)
  • খান বাহাদুর হাশেম আলী খান এর বাড়ি (সেহাংগল )
  • সাত ব্যাক্তির এক কবর (বরছাকাঠী)

শিল্প কারখানা

এ উপজেলায় ১২ টি জাহাজ নির্মান শিল্প রয়েছে।

বহিঃসংযোগ


  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে নেছারাবাদ উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৫
  2. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (PDF)web.archive.org। Wayback Machine। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.