কলিসন্তরণোপনিষদ্
কলিসন্তরণোপনিষদ্ (সংস্কৃত: कलिसन्तरणोपनिषद्, IAST: Kali-Saṇṭāraṇa Upaniṣad) বা কলি-সন্তরণ উপনিষদ্ হল হিন্দুধর্মের একটি অপ্রধান উপনিষদ্।এই গ্রন্থের সাথে বৈদিক কোন গ্রন্থের কোন সম্পর্ক নেই। সাধারনত ধারনা করা হয় মধ্যযুগে বৈষ্ণব কিছু পণ্ডিত দ্বারা এই বই লিখিত।
কলিসন্তরণোপনিষদ্ | |
---|---|
![]() কলিসন্তরণোপনিষদ্ গ্রন্থে উল্লিখিত ষোড়শোক্ষরী ‘মহামন্ত্র | |
দেবনাগরী | कलिसन्तरण |
নামের অর্থ | কলিযুগের কুপ্রভাব অপসারণ |
যে বেদের সঙ্গে সংযুক্ত | কোন সম্পর্ক নেই[1] |
শ্লোকসংখ্যা | ২ |
মূল দর্শন | বৈষ্ণব[2]
|
এই উপনিষদ্টি সম্ভবত ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে রচিত হয়। খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মগুরু চৈতন্য মহাপ্রভু এটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।[3] এই ছোটো গ্রন্থটিতে দুটি মাত্র শ্লোক আছে। এগুলিকে বলা হয় ‘মহামন্ত্র’। মন্ত্রে ‘হরে’ বা দেবী রাধার নাম আটবার উচ্চারিত হয়েছে। সেই সঙ্গে অপর দুই হিন্দু দেবতা কৃষ্ণ ও রামের নাম চারবার করে উচ্চারিত হয়েছে। এই গ্রন্থের মতে, এই মন্ত্রটি সজোরে উচ্চারণ করলে কলিযুগের সকল কুপ্রভাব কেটে যায়।
নামকরণ
হিন্দু বিশ্বতত্ত্ব অনুসারে, চার যুগের মধ্যে বর্তমান যুগটি হল কলিযুগ বা কলি (সংস্কৃত:कलि)। [4] ‘সন্তরণ’ শব্দের অর্থ ‘সাঁতার কাটা’।[5] গ্রন্থটির নামের অর্থ তাই, যে জ্ঞানের দ্বারা বর্তমান যুগকে সাঁতরে পার হওয়া যায়।
ইতিহাস
এই গ্রন্থটি একটি বৈষ্ণব উপনিষদ্।[6] ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে এই গ্রন্থের রচনা সম্পূর্ণ হয়।[7] ‘মহামন্ত্র’ নামে পরিচিত দুটি শ্লোক নিয়ে এই উপনিষদ্টি গঠিত।[2][8] কলিসন্তরণোপনিষদ্ হল আধুনিক যুগে রচিত একমাত্র গ্রন্থ যাতে কোনও বহুপ্রচলিত মন্ত্র রয়েছে।[7] খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীতে ভক্তি আন্দোলনের নেতা চৈতন্য মহাপ্রভু এই উপনিষদ্টি জনপ্রিয় করে তোলেন।[9]
বৈষ্ণব নাম-ব্যুৎপত্তি অনুসারে ‘হরে’ শব্দটি ‘হরা’ (অর্থাৎ, যা হরণ করে) শদটির দ্যোতক। এটির মূর্তিরূপ হলেন কৃষ্ণের শক্তি (‘নাদশক্তি’) রাধা। কলি-সন্তরণ মন্ত্রে রাধার নাম আটবার উচ্চারিত হয়েছে। এটি দিব্যপ্রেমের কথা মনে করিয়ে দেয়।[7] হিন্দুধর্মের গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে এই মন্ত্রটি বিশেষ জনপ্রিয়।[10] গৌড়ীয় বৈষ্ণব প্রথা অনুসারে, মন্ত্রটি জোরে জোরে পাঠ করা হয়। কারণ, এই সম্প্রদায়ের অনুগামীরা মনে করেন, মন্ত্রের শব্দ উচ্চারণকারী ও শ্রোতাকে মুক্তি দান করবে।[3]
মুক্তিকোপনিষদ্ গ্রন্থে ১০৮টি উপনিষদের তালিকায় এই উপনিষদ্টির ক্রমসংখ্যা ১০৩।[8] কোলব্রুক উত্তর ভারতে জনপ্রিয় ৫২টি উপনিষদের যে সংকলন প্রকাশ করেছিলেন তাতে এই উপনিষদ্টি নেই। নারায়ণ বিবলিওথিকা ইন্ডিকা সংকলনে দক্ষিণ ভারতে জনপ্রিয় যে উপনিষদ্গুলি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, তাতেও এই উপনিষদ্টি পাওয়া যায় না।[11]
তথ্যসূত্র
- Deussen, Bedekar এবং Palsule 1997, পৃ. 556–57।
- Aiyar, K. Narayanasvami। "Kali Santarana Upanishad"। Vedanta Spiritual Library। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৬।
- Bryant 2013, পৃ. 42-43।
- kali ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে, Sanskrit English Dictionary, Koeln University, Germany (2011)
- santarana, Sanskrit English Dictionary, Koeln University, Germany (2011)
- Nair 2008, পৃ. 580।
- Bryant 2013, পৃ. 42।
- Warrier, A G Krishna (১৯৫৪)। "Vaishnava Upanishads"। Vedanta Spiritual Library। Theosophical Publishing House।
- Alanna Kaivalya (2014), Sacred Sound: Discovering the Myth and Meaning of Mantra and Kirtan, New World, আইএসবিএন ৯৭৮-১৬০৮৬৮২৪৩০, pages 153-154
- Bryant 2013, পৃ. 35–36, 42।
- Deussen, Bedekar এবং Palsule 1997, পৃ. 561–564।
গ্রন্থপঞ্জি
- Bryant, Edwin Francis (২০০৭)। Krishna: A Sourcebook। Oxford University Press, Incorporated। আইএসবিএন 978-0-19-803400-1।
- Bryant, Edwin Francis, Maria Ekstrand (২০১৩)। The Hare Krishna Movement: The Postcharismatic Fate of a Religious Transplant। Columbia University Press। আইএসবিএন 978-0-231-50843-8।
- Deussen, Paul; Bedekar, V.M.; Palsule, G.B. (১৯৯৭)। Sixty Upanishads of the Veda। Motilal Banarsidass Publ.। আইএসবিএন 978-81-208-1467-7।
- Nair, Shantha N. (২০০৮)। Echoes of Ancient Indian Wisdom। Pustak Mahal। আইএসবিএন 978-81-223-1020-7।
আরও পড়ুন
- A sound recording of the Maha-mantra in Kali Santarana Upanishad, Universitat Pompeu Fabra, (Barcelona, Spain), 18 seconds
- Translated by K. Narayanasvami Aiyar
- Kali Santarana Upanishad,Translation and commentary by Swami Gaurangapada
- Kalisantaranaopanishad, Telugu Rendition
- Kalisantaranaopanishad, Sanskrit Rendition