নারায়ণোপনিষদ্
নারায়ণোপনিষদ্ (সংস্কৃত: नारायण उपनिषत्) হল একটি অপ্রধান উপনিষদ্। মুক্তিকোপনিষদ্ গ্রন্থে রাম ও হনুমানের কথোপকথনের আকারে তালিকাভুক্ত ১০৮টি উপনিষদের মধ্যে এই উপনিষদের স্থান ১৮শ। হেনরি টমাস কোলব্রুকের ১৯শ শতাব্দীর প্রথম ভাগের সংকলন গ্রন্থে এই উপনিষদ্টির স্থান ৩৩তম।[1] এই গ্রন্থটি হিন্দুধর্মের বৈদিক যুগের গ্রন্থ নয়। এটি রচিত হয়েছিল মধ্যযুগে। তবে এই গ্রন্থের রচয়িতার নাম ও কালপঞ্জি সঠিক জানা যায় না। নারায়ণোপনিষদ্ সংস্কৃত ভাষায় রচিত এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত।[2] এটি ১৪টি বৈষ্ণব উপনিষদের অন্যতম।[3] নারায়ণের (বিষ্ণু) প্রতি ভক্তি এই গ্রন্থের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়।[4]
নারায়ণ | |
---|---|
![]() | |
দেবনাগরী | नारायण |
IAST | Nārāyaṇa |
নামের অর্থ | পরম জ্যোতি নারায়ণ |
উপনিষদের ধরন | বৈষ্ণব |
যে বেদের সঙ্গে সংযুক্ত | কৃষ্ণ যজুর্বেদ |
অধ্যায়ের সংখ্যা | ৫ |
পল ডুসেনের মতে, এই উপনিষদ্টি সেই সকল উপনিষদ্গুলির অন্যতম যেগুলিকে “কাল্ট অফ ফর্মুলা” হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই জাতীয় উপনিষদে বস্তু ও দর্শনের থেকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির দিকে ধ্যান স্থান পরিবর্তন করে।[5] নারায়ণোপনিষদ্ গ্রন্থের পদ্ধতিটি হল, ‘ওঁ নমো নারায়ণায়’ মন্ত্রটি মোক্ষ লাভের পথ। এই মন্ত্রের মাধ্যমে বিষ্ণুর সাজুয্য প্রাপ্ত হওয়া যায়।[6] এই গ্রন্থটিকে অন্যতম মন্ত্র উপনিষদ্ মনে করা হয়।[2]
নারায়ণোপনিষদ্ গ্রন্থটির মতে, “সকল দেবদেবী, সকল ঋষি ও সকল জীব নারায়ণ থেকে জাত হয় এবং নারায়ণেই বিলীন হয়।” ডুসেন মনে করেন, সম্ভবত বিভিন্ন যুগের ধর্মগ্রন্থ থেকে পংক্তি চয়ন করে এই গ্রন্থটি সংকলিত হয়েছে।[5]
বিষয়বস্তু
নারায়ণোপনিষদ্ একটি ক্ষুদ্রায়তন উপনিষদ্। এই উপনিষদ্ পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত।[5]
অধ্যায় ১: সকল কিছু নারায়ণে জাত, নারায়ণেই লীন
উপনিষদের প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, নারায়ণ প্রাণ (আত্মা, শ্বাস), ইন্দ্রিয় ও মন (চিৎ ও চৈতন্য) সৃষ্টি করেছেন। তিনি বায়ু, জ্যোতি, অপ, অগ্নি, খ ও পৃথিবী – ব্রহ্মাণ্ডের এই উপাদানগুলিও সৃষ্টি করেছেন।[7] তাঁর থেকেই জন্মগ্রহণ করেছেন ব্রহ্ম, রুদ্র, প্রজাপতি, দ্বাদশ আদিত্য, ইন্দ্র, অষ্ট বসু, কাব্যের ছন্দ, সকল ঋষি ও সকল জীব। সকলেই নারায়ণ থেকে জাত হন এবং শেষে নারায়ণেই বিলীন হয়ে যান।[5][6]
অধ্যায় ১: নারায়ণ হলেন এক ঈশ্বর
দ্বিতীয় অধ্যায়ে ঘোষণা করা হয়েছে যে, নারায়ণ হলেন অদ্বিতীয়, চিরন্তন ঈশ্বর। তিনি এবং ব্রহ্ম, শিব, শক্র, কাল, সগুণ, নির্গুণ, অন্তস্থ, বহিঃস্থ, সকল ব্রহ্মাণ্ড, অতীয় ও ভবিষ্যৎ সকলই এক।[2][5]
অধ্যায় ৩, ৪ ও ৫: নারায়ণ পদ্ধতি
তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, নারায়ণোপনিষদ্ পাঠ করা হল ভয়হীন জীবনের পথ, অমরত্ব অর্জন এবং ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তি। এই গ্রন্থের মতে, পাঠ্য মন্ত্রটি হল ‘ওঁ নমো নারায়ণায়’। এই মন্ত্রটি ১-২-৫ অক্ষরবিশিষ্ট। এই মন্ত্র পাঠ করলে দীর্ঘ জীবন প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং সকল জাগতিক ও আধ্যাত্মিক কামনা পূর্ণ হয়।[5]
পঞ্চম অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, যিনি ‘ওঁ নমো নারায়ণায়’ পদ্ধতিতে পূজা করেন, তিনি বিষ্ণুর স্বর্গে গমন করেন এবং জন্ম ও সংসার থেকে মুক্ত হন। যিনি এই উপনিষদ্ পাঠ করেন, তিনি সকল পাপ থেকে মুক্ত হন এবং নারায়ণের সাজুয্য প্রাপ্ত হন।[6] এই গ্রন্থে আরও বলা হয়েছে,
নারায়ণ অন্তরের আনন্দ, ব্রহ্ম, পুরুষ, অ, উ ও ম- এই তিন পবিত্র অক্ষর দ্বারা গঠিত ওঙ্কারের সঙ্গে ব্যক্তির মধ্যে বিলীন হন।
নারায়ণোপনিষদ্ ৫.১
— পল ডুসেনের অনুবাদ অবলম্বনে[5]
তথ্যসূত্র
- Paul Deussen (Translator), Sixty Upanisads of the Veda, Vol 2, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৯১, pages 558–565
- K. Narayanasvami Aiyar, Thirty Minor Upanishads, University of Toronto Archives, OCLC 248723242, pp. viii, 128–129
- Tinoco, পৃ. 87।
- Farquhar 1920, পৃ. 364।
- Paul Deussen (Translator), Sixty Upanisads of the Veda, Vol. 2, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৯১ (2010 Reprint), pp. 803–805
- Kennedy 1831, পৃ. 442।
- ॥ नारायणोपनिषत् ॥ Sanskrit text of Narayana Upanishad, SanskritDocuments Archives (2009), Quote: खं वायुर्ज्योतिरापः पृथिवी विश्वस्य धारिणी ।
গ্রন্থপঞ্জি
- Farquhar, John Nicol (১৯২০)। An outline of the religious literature of India। H. Milford, Oxford university press। আইএসবিএন 81-208-2086-X।
- Kennedy, Vans (১৮৩১)। Researches Into the Nature and Affinity of Ancient and Hindu Mythology। Longmans, Rees, Orme, Brown, and Green।
- Tinoco, Carlos Alberto। Upanishads। IBRASA। আইএসবিএন 978-85-348-0040-2।