মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুধর্ম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুধর্ম একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। আমেরিকান হিন্দুরা সেদেশের জনসংখ্যার প্রায় ০.৫%।[1] এদের অধিকাংশই ভারতীয় আমেরিকান, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ক্যারিবিয়ান ও অন্যান্য এশীয় দেশ থেকে আগত অভিবাসী এবং তাদের বংশধরেরা। এছাড়া খুব অল্প সংখ্যক কিছু ধর্মান্তরিত হিন্দুও আছেন।
দেশ অনুযায়ী হিন্দুধর্ম |
---|
![]() ![]() |
আফ্রিকা
|
এশিয়া
|
ক্যারিবিয়ান
|
ইউরোপ
|
উত্তর আমেরিকা
|
ওশেনিয়া
|
দক্ষিণ আমেরিকা
|
পূর্ণাঙ্গ তালিকা |
উনিশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের আসা-যাওয়া থাকলেও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশানালিটি সার্ভিসেস (এনআইএস) অ্যাক্ট অফ ১৯৬৫ পাস হওয়ার আগে সেদেশে হিন্দুদের উপস্থিতি নগন্যই ছিল।
সম্প্রতি, হিন্দু-আমেরিকানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়গুলির চেয়ে উচ্চতর আর্থসামাজিক স্তরে বসবাস করে। তাদের আয়ের মাত্রা সর্বোচ্চ ও শিক্ষাগত যোগ্যতাও অনেক উচ্চস্তরের।[2][3] হিন্দুধর্মের বিভিন্ন ধারণা―যেমন কর্মবাদ, পুনর্জন্মবাদ ও যোগসাধনা―এখন মূলধারার মার্কিন জনসাধারণের কাছে সুপরিচিত।[4] ২৪% আমেরিকান হিন্দুধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী।[5]
জনপরিসংখ্যান
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট-এর রিপোর্ট[6] অনুযায়ী সেদেশের মোট হিন্দুর সংখ্যা ১.৫ মিলিয়ন; যা মার্কিন জনসংখ্যার প্রায় ০.৫%। অন্য একটি সূত্রের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের জনসংখ্যা ২.৪ মিলিয়ন।[7] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু-জনসংখ্যা বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম। এশীয় আমেরিকানদের ১০% হিন্দু ধর্মাবলম্বী।[8]
আমেরিকান হিন্দুদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পারিবারিক আয় উচ্চস্তরের। ৪৮% আমেরিকান হিন্দুরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে। বিবাহ বিচ্ছেদের হারও এদের মধ্যে কম।[9][10] পিউ রিসার্চ সেন্টারের ফোরাম-এর ধর্ম ও নাগরিক জীবন সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্রের মতে, ৪৮% আমেরিকান হিন্দুর পারিবারিক আয় ১০০,০০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি। ৭০% অন্তত ৭৫,০০০ মার্কিন ডলার আয় করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মসম্প্রদায়গুলির মধ্যে সর্বোচ্চ।[2][3]
ইতিহাস

স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে শিকাগোর ওয়ার্ল্ড’স পার্লামেন্ট অফ রিলিজিয়ন-এ ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি দুই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন এবং শিকাগো, ডেট্রয়েট, বস্টন ও নিউ ইয়র্কে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ১৯০২ সালে স্বামী রামতীর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনিও দুই বছর সেদেশে থেকে বেদান্ত দর্শন প্রচার করেন।[11] ১৯২০ সালে পরমহংস যোগানন্দ বস্টনে আয়োজিত ইন্টারন্যাশানাল কংগ্রেস অফ রিলিজিয়াস লিবারালস-এ ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন।
১৯৬৫ সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু অভিনিবেশকারীর সংখ্যা ছিল নগণ্য। প্রথম দিকে পর্যটক, ছাত্র ও ব্যবসায়ীরাই আসত। ১৯০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনের বেলিংহামের দাঙ্গা প্রমাণ করে যে সেকালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় ও হিন্দুরা নিরাপদ ছিলেন না। তা সত্ত্বেও নানা পেশার মানুষ সেদেশে থেকে কাজ করতেন। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশানালিটি সার্ভিসেস (এনআইএস) অ্যাক্ট অফ ১৯৬৫ পাস হওয়ার পর হিন্দু অভিনিবেশকারীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দরজা খুলে যায়।
১৯৬০-এর দশকেই মার্কিন কাউন্টার-কালচার আন্দোলনের জেরে স্বামী প্রভুপাদ প্রতিষ্ঠিত ইসকন সহ অন্যান্য নব্য-হিন্দু আন্দোলনগুলি বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করে। অন্যান্য প্রভাবশালী ভারতীয় হিন্দু ধর্মপ্রচারকেরা হলেন চিন্ময় ও মহর্ষি মহেশ যোগী।

২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তাঁর সম্মানে মার্কিন কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনের শুরুতে সংস্কৃত ভাষায় (হিন্দি ও ইংরেজি সহ) প্রার্থনা পাঠ করা হয়। পাঠ করেছিলেন ভেঙ্কটাচালপতি সমুদ্রালা। ওহিওর কংগ্রেসম্যান শেরোড ব্রাউনের উদ্যোগে এই সংস্কৃত প্রার্থনা পাঠ করা হয়েছিল।[12] ২০০৭ সালের ১২ জুলাই মার্কিন সেনেটে নেভাডার হিন্দু চ্যাপলেইন রাজান জেড অন্য একটি হিন্দু প্রার্থনা পাঠ করেন।[13] এই নিয়ে কিছু বিতর্কও হয়।[14] ২০০৯ সালের দীপাবলি উৎসবে বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন।
হিন্দু মন্দির
বেদান্ত সোসাইটি ১৯০৬ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের ব্যবহারোপযোগী কিছু উপাসনালয় স্থাপন করেছিল। তবে সেগুলি ঠিক শাস্ত্রবিহিত মন্দির ছিল না। সেদেশের সবচেয়ে পুরনো প্রথাগত হিন্দু মন্দির হল মহাবল্লভ গণপতি দেবস্থানম। নিউ ইয়র্ক সিটির ফ্লাসিং-এর হিন্দু টেম্পল সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকার মালিকানাধীন এই মন্দিরটি স্থাপিত হয় ১৯৭৭ সালের ৪ জুলাই। বর্তমানে মন্দিরটি সংস্কার করে আরও বড়ো করা হয়েছে।[15]
হিন্দু টেম্পল সোসাইটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার মালিকানাধীন কালাবাসাসের ম্যালিবু হিন্দু মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। এটি ১৯৮১ সালে স্থাপিত।
টেক্সাসের সবচেয়ে পুরনো মন্দির হল শ্রীরাসেশ্বরী রাধারানি মন্দির। এটি অস্টিনের রাধামাধব ধামে অবস্থিত।[16] মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃপালু মহারাজ। এটি পাশ্চাত্যের অন্যতম বড়ো[17] এবং উত্তর আমেরিকায় বৃহত্তম হিন্দু মন্দির।[18][19][20]

মিশিগানের পন্টিয়াকের পরাশক্তি মন্দির একটি শাক্ত মন্দির।[21] এটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত।[22]
হিন্দুধর্ম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
![]() |
বিদ্যালয়
|
শাস্ত্র
|
উপাসনা
|
গুরু, সন্ত, দার্শনিক
|
অন্যান্য বিষয়
|
|



পাদটীকা
- Religious Landscape Survey, Pew Forum on Religion & Public Life, February 2008, © 2008 Pew Research Center
- "Hindu-Americans Rank Top in Education, Income"। অক্টোবর ১৬, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসে ১, ২০১২।
- "Hindu-Americans Rank Top in Education, Income"। সংগ্রহের তারিখ ডিসে ১, ২০১২।
- "Americans turn to Hindu beliefs"। সংগ্রহের তারিখ ডিসে ১, ২০১২।
- "We Are All Hindus Now"। ডিসেম্বর ১৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসে ১, ২০১২।
- http://www.state.gov/g/drl/rls/irf/ International Religious Freedom Report 2004
- "Asian Americans: A Mosaic of Faiths"। The Pew Forum on Religion & Public Life। Pew Research Center। ১৯ জুলাই ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১২।
- "Study Shows, Hindus Have Lowest Divorce Rate and Highest Education Level in America"। The Chakra। জুন ১৩, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ মে ২৮, ২০১২।
- "US Hindus have higher education and lowest divorce rate"। The Global Indian। অক্টোবর ৬, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৮, ২০১২।
- Arora, R.K. (1978), Swami Ram Tirath, his life and works, page 56, Rajesh Publications, New Delhi, India
- For the first time, a Hindu priest will pray before US Congress, rediff.com, 14 September 2000.
- "California Senate opened with Hindu prayer for first time"। Asian Tribune। ২০০৭-০৮-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২৪।
- Boorstein, Michelle (২০০৭-০৭-২৭)। "Hindu Groups Ask '08 Hopefuls to Criticize Protest"। The Washington Post।
- Official website of the Flushing temple.
- India today international. Volume 1, Issues 1–8. Living Media International. 2002.
- Vedic Foundation Inaugurated at Barsana Dham, Austin ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ আগস্ট ২০১১ তারিখে. Retrieved Dec 15th, 2011.
- Ciment, J. 2001. Encyclopedia of American Immigration. Michigan: M.E. Sharpe
- Hylton, H. & Rosie, C. 2006. Insiders' Guide to Austin. Globe Pequot Press.
- Mugno, M. & Rafferty, R.R. 1998. Texas Monthly Guidebook to Texas. Gulf Pub. Co.
- "Parashakthi (Eternal Mother) Temple"। ২৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৩।
- "Honoring the eternal Divine Mother"। India Abroad। ২০১১-১২-৩০।
আরও পড়ুন
- Bhatia, Sunill. (2007). American Karma: Race, Culture, and Identity in the Indian Diaspora. আইএসবিএন ০-৮১৪৭-৯৯৫৯-০.
বহিঃসংযোগ
- The Council of Hindu Temples of North America (CHTNA)
- Hindu Youth Network
- Hindu Temples in USA
- Vivekananda Vedanta Society-Chicago
- State-wise list of Hindu Temples in USA with photos and addresses
- South Asian Pioneers in California, 1899–1965
- Parashakthi Eternal Mother Temple
টেমপ্লেট:North America in topic টেমপ্লেট:Demographics of the United States