ধলাই সীমান্ত চৌকির যুদ্ধ

ধলাইয়ের যুদ্ধঃ মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার চারদিকে চা বাগান ঘেরা একটি সীমান্ত চৌকি ছিল ধলাই। ২৪ অক্টোবর শেষ রাত থেকে ২৮ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নেতৃত্বে একটি দল পাক সেনাদের উপর চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমন চালায়। ব্যাপক গোলাবর্ষনে পাক সেনাদের ক্যাম্পে আগুন ধরে যায়। প্রচন্ড গুলিবর্ষন ও পাকবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। রক্তক্ষয়ী এই প্রচন্ড যুদ্ধই ধলাই সীমান্ত চৌকির যুদ্ধ বা ধলাইয়ের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য হামিদুর রহমান (বীরশ্রেষ্ঠ) শহিদ হন।[1][2]

ধলাই সীমান্ত চৌকির যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
তারিখ২৪ অক্টোবর - ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১
অবস্থানকমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট
যুধ্যমান পক্ষ

বাংলাদেশ


মুক্তিবাহিনী

 পাকিস্তান


পাকিস্তান সেনাবাহিনী
জড়িত ইউনিট
১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্ট
শক্তি
১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, অকুতোভয় ১২৫ মুক্তিযোদ্ধা মেশিন গান (পোস্ট) ও বিক্ষিপ্ত মাইন

প্রেক্ষাপট

১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের জোরদার যুদ্ধ শুরু হয়। আর পাকিস্তান সরকার যখন এ যুদ্ধকে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করে তখন থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশাল একটা বাহিনী এসে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। ফলে গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের ১১ টি সেক্টরের মধ্যে ৪ নং সেক্টর ছিল মেজর জেনারেল সি আর দত্তের অধীনে। সেটির একটি সাব সেক্টর হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর এবং এর উত্তর-পশ্চিমে চারদিকে চা বাগান ঘেরা সীমান্ত চৌকি ছিল ধলাই।

যুদ্ধের বিবরণ

১৯৭১ সালের ২৪ অক্টোবর শেষ রাত থেকে ২৮ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত কমলগঞ্জের ধলাই সীমান্তে ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) ফাঁড়ির সামনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলে। ধলাই সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের এ প্লাটুনের এসল্ট অফিসার ছিলেন মেজর (অব.) কাইয়ুম চৌধুরী আর সিপাহি হামিদুর রহমান ছিলেন মেজর কাইয়ুম চৌধুরীর রানার। টানা চার দিনেও পাকিস্তানি বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটাতে ব্যর্থ হয়। এমতাবস্থায়, সিপাহি হামিদুর রহমান স্বেচ্ছায় ধলাই ইপিআর ক্যাম্পে এসে গ্রেনেড মেরে পাকিস্তান বাহিনীকে ধ্বংস করার কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।[2]

নূতন উদ্দামে সব প্রস্তুতি নিয়ে ২৮ অক্টোবর ভোর রাতে লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নেতৃত্বে একটি দল পাক সেনাদের উপর চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমন চালায়। ব্যাপক গোলাবর্ষনে পাক সেনাদের ক্যাম্পে আগুন ধরে যায়। প্রচন্ড গুলিবর্ষন ও পাকবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। সিপাহী হামিদুর রহমান সাহসিকতার সাথে সীমান্ত চৌকি দখলের উদ্দেশ্যে মৃত্যুকে তুচ্ছ ভেবে ২৮ অক্টোবর ঘন কুয়াশা ও প্রবল গুলিবর্ষণের মধ্যে ভোর ৪টায় প্রায় আধা কিলোমিটার পথ গ্রেনেড হাতে ক্রলিং করে ধলাই ইপিআর ক্যাম্পে পাকিস্তানি শক্তিশালী অবস্থানের ওপর গেনেড হামলা চালান এবং মেশিনগান নিয়ে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে শত্রু পক্ষের ৫০ গজের মধ্যে ঢুকে পড়েন, গর্জে উঠে তার হাতের মেশিনগান। গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ফিরে যাওয়ার পথে পাকসেনাদের একটি গুলি এসে বুকে লাগে সিপাহি হামিদুর রহমানের, সে অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুই জন পাকিস্তানী সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন। এভাবে আক্রণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যমে এগিয়ে যান, এবং শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। কিন্তু হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, পরবর্তীতে সহযোদ্ধারা এসে খুঁজে বের করলেন বীর সিপাহি হামিদুর রহমানের লাশ, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ত্রিপুরার আমবাসায় নিয়ে তাকে দাফন করা হয়। [1][2][3][4]

ফলাফল

শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি মুক্তিযোদ্ধারা দখল করতে সমর্থ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান দেশের বীরত্বের জন্য প্রদত্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক, বীরশ্রেষ্ঠ পদক লাভ করেন।

তথ্যসূত্র

  1. "কমলগঞ্জে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ৪৫ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত"পাতা কুঁড়ির দেশ। অক্টোবর ২৯, ২০১৬।
  2. "বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের রক্তে সিক্ত কমলগঞ্জের ধলই সীমান্ত"সিলেটের সকাল। ২৮ অক্টোবর ২০১৫।
  3. "৭১ এর আজকের এই দিনে শহীদ হোন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানে"বাংলা নিউজ ২৪। ২৮ অক্টোবর ২০১০।
  4. "বীর হামিদুরের ঘরে ফেরা"। ছুটির দিনে (প্রথম আলো)। মাহফুজ আনাম। ১৫ ডিসেম্বর ২০০৭। পৃষ্ঠা ৪–৬।

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.