কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ

কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ (জন্ম: ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪) যিনি কে এম সফিউল্লাহ নামেই বেশি পরিচিত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার। তিনি ৩নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার এবং এস ফোর্সের প্রধান হিসেবে হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।[1] তিনি সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি।[2] সফিউল্লাহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান ছিলেন ।

কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ
জন্ম২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪
পেশামুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

কে এম সফিউল্লাহর জন্ম ১৯৩৪ সালের ২সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে। তার বাবার নাম কাজী আব্দুল হামিদ এবং মায়ের নাম রজ্জব বানু।[3] ৩ ভাই ৬ বোনের মধ্যে সফিউল্লাহ ছিলেন ৬ষ্ঠ৷ মুড়াপাড়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন৷ এরপরে মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে ভর্তি হন৷ ১৯৫৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার আগেই তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন৷ কমিশন লাভ করেন ১৯৫৫ সালে৷ ১৯৬৮ সালে সেনা স্টাফ কলেজ (পাকিস্তান) থেকে পিএসসি পাস করেন৷[4]

কর্মজীবন

১৯৭০ সালে মেজর পদে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন কে এম সফিউল্লাহ৷ ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান কে এম সফিউল্লাহকে ডেকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিতে বলেন, তখন দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান অধিনায়কের দায়িত্বে এম এ জি ওসমানী (অক্রিয় জেনারেল) ছিলেন। সফিউল্লাহর পদবী তখন লেফট্যানেন্ট কর্নেল ছিলো (যুদ্ধের সময় পদোন্নতিপ্রাপ্ত), তিনি সেনাপ্রধান হতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিতে হয় এবং তাকে পূর্ণ কর্নেল পদে উন্নীত করা হয়৷ ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি ব্রিগেডিয়ার এবং একই বছরের ১০ অক্টোবর তিনি মেজর জেনারেল পদবী লাভ করেন, তার সঙ্গে জিয়াউর রহমানও পদোন্নতি পেয়ে উপ সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সফিউল্লাহ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন আর ইংল্যান্ড১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন।[5]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯ মার্চে ঢাকা ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাব জয়দেবপুরে আসেন ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে ৷ কিন্তু তিনি ব্যার্থ হন। সে সময় কে এম সফিউল্লাহ ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন ৷ ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব ফিরে যাবার পর কে এম সফিউল্লাহর নেতৃত্বে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করে৷ ৩টি ব্যাটেলিয়ান নিয়ে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে সিলেটের তেলিয়া লাগয় মাতৃমার পর সেক্টর ও এস ফোর্স গঠন করে যুদ্ধ শুরু করেন ৷ ২৯ মার্চ ঢাকা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন৷ কে এম সফিউল্লাহর নেতৃত্বে প্রথমে সেক্টর ও পরে এস ফোর্স গঠন করে প্রথমে সিলেটসহ বিরাট একটি অংশ মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলা হয়৷ একদিকে সিলেট আর একদিকে আশুগঞ্জ, ভৈরব আর মাধবপুর শত্রুমুক্ত করেন তারা৷ তার নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, ভৈরব, লালপুর, আজবপুর, সরাইল, শাহবাজপুর, মাধবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মিপুর শত্রুমুক্ত হয়ে যায়৷ [6][7]

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক আমার দেশ"। ৩০ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১২
  2. "দৈনিক আমার কাগজ"
  3. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"www.prothom-alo.com
  4. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪২। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
  5. নিউজ২৪*৭ ডট কম
  6. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ (দলিলপত্র: নবম খন্ড)। তথ্য মন্ত্রনালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৯৮৪। পৃষ্ঠা ২২১।
  7. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৪৩। আইএসবিএন 9789849025375।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.