ইন্দিরা গান্ধী

ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী (হিন্দি: इंदिरा प्रियदर्शिनी गांधी ইন্‌দিরা প্রিয়াদার্‌শিনি গান্‌ধি, নভেম্বর ১৯, ১৯১৭ - অক্টোবর ৩১, ১৯৮৪) ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের প্রথম ও আজ পর্যন্ত একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী। প্রভাবশালী নেহেরু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করায়, তিনি এক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেন। তার পিতামহ মতিলাল নেহেরু একজন প্রথম সারির কংগ্রেস নেতা ছিলেন। তার পিতা জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তার ছেলে রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪১ সালে অক্সফোর্ড থেকে ফিরে এসে ইন্দিরা গান্ধী পিতার সাথে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সাল থেকে অপেশাগত ভাবে জওহরলাল নেহেরুর অফিস সহকারীর কাজ করে আসছিলেন। ১৯৬৪ সালের জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পর ভারতের রাষ্ট্রপতি তাকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তখন ইন্দিরা লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মন্ত্রীসভায় তথ্য ও প্রচার মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

ইন্দিরা গান্ধী
इन्दिरा गाँधी
৩য় ভারতের প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৪ জানুয়ারি ১৯৮০  ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪
রাষ্ট্রপতিনীলম সঞ্জীব রেড্ডি
জৈল সিং
পূর্বসূরীচৌধুরী চরণ সিং
উত্তরসূরীরাজীব গান্ধী
কাজের মেয়াদ
২৪ জানুয়ারি ১৯৬৬  ২৪ মার্চ ১৯৭৭
রাষ্ট্রপতিসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ
জাকির হুসেইন
বরাহগিরি ভেঙ্কট গিরি
ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ
ডেপুটিমোরারজি দেসাই
পূর্বসূরীগুলজারিলাল নন্দা (ভারপ্রাপ্ত)
উত্তরসূরীমোরারজি দেসাই
বিদেশ মন্ত্রক
কাজের মেয়াদ
৯ মার্চ ১৯৮৪  ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪
পূর্বসূরীপি. ভি. নরসিমা রাও
উত্তরসূরীরাজীব গান্ধী
কাজের মেয়াদ
২২ আগস্ট ১৯৬৭  ১৪ মার্চ ১৯৬৯
পূর্বসূরীএম.সি. ছাগলা
উত্তরসূরীদিনেশ সিংহ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
কাজের মেয়াদ
১৪ জানুয়ারি ১৯৮০  ১৫ জানুয়ারি ১৯৮২
পূর্বসূরীচিতম্বরম শুভ্রমানিয়ম
উত্তরসূরীআর. ভেঙ্কটরমন
কাজের মেয়াদ
৩০ নভেম্বর ১৯৭৫  ২০ ডিসেম্বর ১৯৭৫
পূর্বসূরীস্বরণ সিংহ
উত্তরসূরীবংশী লাল
গৃহ মন্ত্রক
কাজের মেয়াদ
২৭ জুন ১৯৭০  ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩
পূর্বসূরীযসবন্তরাও চৌহান
উত্তরসূরীউমা শংকর দীক্ষিত
অর্থ মন্ত্রক
কাজের মেয়াদ
১৬ জুলাই ১৯৬৯  ২৭ জুন ১৯৭০
পূর্বসূরীমোরারজি দেসাই
উত্তরসূরীযসবন্তরাও চৌহান
তথ্য় ও সম্প্রচার মন্ত্রক
কাজের মেয়াদ
৯ জুন ১৯৬৪  ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৬
প্রধানমন্ত্রীলাল বাহাদুর শাস্ত্রী
পূর্বসূরীসত্য নারায়ণ সিনহা
উত্তরসূরীKodardas Kalidas Shah
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু
(১৯১৭-১১-১৯)১৯ নভেম্বর ১৯১৭
এলাহাবাদ, যুক্ত প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৩১ অক্টোবর ১৯৮৪(1984-10-31) (বয়স ৬৬)
নতুন দিল্লি,  ভারত
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
দাম্পত্য সঙ্গীফিরোজ গান্ধী
সম্পর্কSee নেহেরু-গান্ধী পরিবার
সন্তানরাজীব গান্ধী
সঞ্জয় গান্ধী
পিতামাতাজওহরলাল নেহ্‌রু
কমলা নেহেরু
প্রাক্তন শিক্ষার্থীবিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (অন্তর্হিত)
Somerville College, Oxford (অন্তর্হিত)
ধর্মহিন্দুধর্ম
পুরস্কার ভারতরত্ন (১৯৭১)
স্বাক্ষর

লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর হঠাৎ মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি কে কামারাজের এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ছিল।তিনি 'এশিয়ার সূর্য' নামেও পরিচিত ছিলেন।

প্রাথমিক জীবন

তিনি তার শক্তির পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশের সাহস প্রথম জীবনেই সঞ্চয় করেছিলেন৷ তিনি নভেম্বর মাসে এলাহবাদে জন্মগ্রহণ করেন। নেহেরু পরিবার সবসময়ই জড়িত ছিল রাজনীতিতে৷ যার কারণে ছোটবেলা থেকেই বাপ-দাদার রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়েন ইন্দিরা গান্ধী৷ ভারতবর্ষ তখনো ব্রিটিশদের দখলে৷ ব্রিটিশদের ভারত দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি৷ ইন্দিরার বয়স যখন মাত্র চার তখনই তার বাবা এবং তার দাদা কারাবন্দি হন৷ কারণ তারা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী৷ ইন্দিরা গুটিয়ে যান নিজের মধ্যে৷ একা থাকতেন, বেশির ভাগ সময়ই একা কাটাতেন৷ বলা প্রয়োজন, মহাত্মা গান্ধী ইন্দিরার রাজনৈতিক জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিলেন৷ ১৯৩৬ সালে ইন্দিরার মা কমলা নেহেরু পরলোক গমন করেন৷ ইন্দিরা হয়ে পড়েন ভীষণভাবে একা৷ ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার সময়ই ইন্দিরার পরিচয় হয় ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে৷ ১৯৩৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন৷ ১৯৪২ সালে তিনি বিয়ে করেন সাংবাদিক ফিরোজ গান্ধীকে৷ বিয়ের কিছুদিন পরই তারা কারাবন্দী হন৷ এলাহবাদের নৈনি কারাগারে তারা ৮ মাস বন্দী থাকেন৷ ইন্দিরা গান্ধী দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তারা হলেন সঞ্জয় এবং রাজীব৷

কংগ্রেস সভাপতি

১৯৩৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন৷

ভারতের প্রধানমন্ত্রী

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ব্রিটিশ শাসন থেকে৷ সে বছরই ইন্দিরার বাবা জওহরলাল নেহেরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন৷ তখন থেকেই ইন্দিরা প্রায় ছায়ার মত বাবার পাশে পাশে থাকতেন৷

১৯৫৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন৷ নেহেরু-কন্যা রূপে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ইন্দিরার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

১৯৬৬ সালে প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বচিত হন৷ ১৯৭১ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে ইন্দিরা গান্ধী দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ একটানা ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইন্দিরা গান্ধী৷ এই পর্যায়ে রাজন্য ভাতা বিলোপ, ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের মত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচী রূপায়ন করেন৷ ১৯৭১এ তৃৃতীয় ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে ভারত তার বলিষ্ঠ নেতৃৃত্বে জয়লাভ করে৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷ ১৯৭৫ সালে তিনি দেশে শান্তি এবং শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ জরুরি আইন জারী করেন৷ এ জন্য সমালোচিত হন ইন্দিরা গান্ধী৷ এরপর ১৯৮০ সালে চতুর্থবারের মত নির্বাচনে বিজয়ী এবং প্রধান মন্ত্রী হন৷ ১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধীর আদেশে শিখদের পবিত্র ধর্মাশালা স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনা হানা দেয় (যা অপারেশন ব্লু স্টার নামে পরিচিত ছিল)। তার খেসারত ইন্দিরা গান্ধী দেন সে বছরই(১৯৮৪ সাল) ৩১শে অক্টোবর৷ তার নিজের দেহরক্ষীর হাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷

ব্যক্তিগত জীবন

সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর ভারত শাসন করেছেন ইন্দিরা গান্ধী৷ তুখোর রাজনীতিবিদ ইন্দিরা গান্ধী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ভারতে৷ ২৫ বছর পর ভারত তথা বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গণ স্মরণ করছে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে৷ ইন্দিরা গান্ধীর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর কোন নারী এখনো আসেননি৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে ইন্দিরা সবুজ বিপ্লব, পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ (১৯৭১),অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন,সুস্পষ্ট বিদেশনীতি নির্ধারণ এবং একাধিক প্রকল্পর রূপায়ণ করেন। তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান এবং আরেক পুত্র রাজিব গান্ধী এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা যান। দুই পুত্র বধু মানেকা গান্ধীসোনিয়া গান্ধী বেঁচে আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে ইন্দিরা গান্ধী অত্যন্ত শৌখিন মানুষ ছিলেন।

মৃত্যু

১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধীর আদেশে শিখদের পবিত্র ধর্মাশালা স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনা হানা দেয়৷ তার খেসারত ইন্দিরা গান্ধী দেন সে বছরই ৩১ অক্টোবর৷ তার নিজের দেহরক্ষীরাই তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়৷

নেহেরু পরিবার, মাঝে মতিলাল নেহেরু তার ডান দিকে ইন্দিরা গান্ধী
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের সাথে ইন্দিরা গান্ধী

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.