খন্দকার নুরুল আলম

খন্দকার নুরুল আলম (জন্ম: ১৭ আগস্ট, ১৯৩৯ - মৃত্যু: ২২ জানুয়ারি, ২০১৬)[1] একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী সঙ্গীত পরিচালকসুরকার[2] তিনি কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রবেশ করলেও জনপ্রিয়তা লাভ করেন সঙ্গীত পরিচালনায়। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে পরিচালনা করেছেন ছয়শতাধিক গান। [3] চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনবার বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[4] এছাড়াও সঙ্গীতে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন।[5]

খন্দকার নুরুল আলম
জন্ম
খন্দকার নুরুল আলম

(১৯৩৯-০৮-১৭)১৭ আগস্ট ১৯৩৯
মৃত্যু২২ জানুয়ারি ২০১৬(2016-01-22) (বয়স ৭৬)
মৃত্যুর কারণনিউমোনিয়া ও ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স
সমাধিবুদ্ধিজীবী কবরস্থান, মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
শিক্ষাদর্শন
যেখানের শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাসঙ্গীত পরিচালক, সুরকার, রেকর্ড প্রযোজক
কার্যকাল১৯৫৯২০০৫
পিতা-মাতা
  • নেসারউদ্দিন খন্দকার (বাবা)
  • ফাতেমা খাতুন (মা)

প্রাথমিক জীবন

খন্দকার নুরুল আলম ১৯৩৯ সালের ১৭ আগস্ট ভারতের আসামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নেসারউদ্দিন খন্দকার ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও মা ফাতেমা খাতুন। তার ছেলেবেলা কাটে আসামের গোয়ালপাড়ায়। ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ১৯৫৪ সালে ঢাকায় এসে ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। এরপর অধ্যয়ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে। এখানে পড়াকালীন তার সুর ও সঙ্গীতে আগ্রহ জন্মে এবং তার সঙ্গীত প্রতিভার কথা ছড়িয়ে পড়ে।[6]

কর্মজীবন

খন্দকার নুরুল আলম তার কর্মজীবনের শুরু থেকে আছেন বাংলাদেশ বেতারের সাথে। ১৯৫৯ সালে বেতার আয়োজিত "নব মঞ্জুরী" নামক অনুষ্ঠান প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন। এতে অংশগ্রহণ করেন সাবিনা ইয়াসমিন, শাহনাজ রহমতুল্লাহর মত শিশুশিল্পীরা।[7] পরের বছর ১৯৬০ সালে তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি হিজ মাস্টার্স ভয়েসে যোগ দেন। সেখান থেকে তৎকালীন নামকরা কণ্ঠশিল্পীদের গান বের হয়। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুচনালগ্ন থেকেই আছেন। তার পরিচালিত "সুরবিতান" অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল।[8]

নুরুল আলম চলচ্চিত্রাঙ্গনে আসেন অগ্নিপরীক্ষা চলচ্চিত্রে "জীবন নদীর জোয়ার ভাটা" গানে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। তার চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা শুরু হয় উর্দু চলচ্চিত্র দিয়ে। তার প্রথম সুরকৃত চলচ্চিত্র ইস ধরতি পার। এছাড়া উর্দু উজালা চলচ্চিত্রের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন। বাংলা চলচ্চিত্রে সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন ১৯৬৮ সালে অন্তরঙ্গযে আগুনে পুড়ি দিয়ে। যে আগুনে পুড়ি চলচ্চিত্রের "চোখ যে মনের কথা বলে" গানটি সে সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে।[9]

চলচ্চিত্রের গান ছাড়াও নুরুল আলম আধুনিক গান, ফোক গান, দেশের গান, ও বিখ্যাত কিছু কবিতায় সুরারোপ করেছেন। এছাড়া তিনি জাতীয় ক্রীড়া সঙ্গীত, স্কাউট মার্চ সঙ্গীত, আনসার-ভিডিপি দলের সঙ্গীত, রোটারি ক্লাবের বাংলা ও ইংরেজি উভয় গানের সুর করেন। গীত রচনা এবং গানের স্বরলিপি ও স্টাফ নোটেশন করার কাজও করেছেন নুরুল আলম।[10]

পারিবারিক জীবন

খন্দকার নুরুল আলম ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের কিশোয়ার সুলতানার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান। মেয়ে আমানি খন্দকার ও ছেলে আবীর খন্দকার।[11]

সুরকৃত চলচ্চিত্রের তালিকা

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • একুশে পদক - ২০০৮
  • জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
    • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - চন্দ্রনাথ (১৯৮৪)
    • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - শুভদা (১৯৮৬)
    • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১)
  • বাচসাস পুরস্কার
    • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - দেবদাস (১৯৮২)
    • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - চন্দ্রনাথ (১৯৮৪)
    • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - শুভদা (১৯৮৬)
  • চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার
  • হসবাংকা আন্তর্জাতিক পুরস্কার - ১৯৮৬
  • শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পুরস্কার
  • রাজা হোসেন খান স্মৃতি পদক - ১৯৯৪
  • সরগম ললিতকলা পদক - ২০০৩
  • ডেইলি স্টার সেলিব্রেটিং লাইফ
    • বিজয়ী: আজীবন সম্মাননা - ২০১১

মৃত্যু

খন্দকার নুরুল আলম মৃত্যুর আগে বেশ কিছু দিন নিউমোনিয়া ও ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স রোগে ভোগছিলেন।[12] রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়।[13] তিনি ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি পরলোক গমন করেন। জানাজা শেষে তাকে মিরপুরস্থ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।[14]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "চলে গেলেন খন্দকার নুরুল আলম"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। জানুয়ারি ২২, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  2. "খন্দকার নুরুল আলম"আমেরিকা পিঙ্ক। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  3. "চলে গেলেন খন্দকার নুরুল আলম"সুপ্রভাত বাংলাদেশ। ঢাকা, বাংলাদেশ। জানুয়ারি ২২, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  4. "Composer Khandaker Nurul Alam dies [মারা গেছেন সুরকার খন্দকার নুরুল আলম]"নিউ এইজ। ২৩ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  5. "Nine named for Ekushey Award"বাংলাদেশ নিউজ। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  6. আবিদ আনোয়ার (৩০ জানুয়ারি ২০১৬)। "KHANDAKER NURUL ALAM [খন্দকার নুরুল আলম]"দ্য ডেইলি স্টার। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  7. "Singer, composer Khandker Nurul Alam passes away [চলে গেলেন সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার খন্দকার নুরুল আলম]"বিডিনিউজ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২২ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  8. "চলে গেলেন সুরস্রষ্টা খন্দকার নুরুল আলম"কালের কণ্ঠ অনলাইন। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২২ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  9. রওশন আরা বিউটি (২৮ জানুয়ারি ২০১৬)। "খন্দকার নুরুল আলম"দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  10. "সঙ্গীতজ্ঞ খন্দকার নূরুল আলম আর নেই"দৈনিক সমকাল। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২২ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  11. "সুরকার খন্দকার নুরুল আলমের চিরবিদায়"বিডিনিউজ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২২ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  12. "Music maestro Khandaker Nurul Alam no more [সঙ্গীতজ্ঞ খন্দকার নুরুল আলম আর নেই]"ডেইলি সান। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৩ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  13. "সুরকার খন্দকার নুরুল আলম আর নেই"চ্যানেল আই। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২২ জানুয়ারি ২০১৬। ৬ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬
  14. "চলে গেলেন সুরকার খন্দকার নুরুল আলম"দৈনিক মানবকণ্ঠ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৩ জানুয়ারি ২০১৬। ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.