শাহনাজ রহমতুল্লাহ

শাহনাজ রহমতুল্লাহ (জন্ম: শাহনাজ বেগম, ২ জানুয়ারি ১৯৫২ - ২৩ মার্চ ২০১৯)[1] ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সংগীত শিল্পী।[2] তিনি দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।[3] তার উল্লেখযোগ্য গানসমূহের মধ্যে রয়েছে এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে, একতারা তুই দেশের কথা বলরে‌ এবার বল্, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, আমায় যদি প্রশ্ন করে, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়[4] প্রথমোক্ত তিনটি গান বিবিসির একটি জরিপে সর্বকালের সেরা বিশটি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পায়।

শাহনাজ রহমতুল্লাহ
জন্ম
শাহনাজ বেগম

(১৯৫২-০১-০২)২ জানুয়ারি ১৯৫২
মৃত্যু২৩ মার্চ ২০১৯(2019-03-23) (বয়স ৬৭)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাসংগীত শিল্পী
কার্যকাল১৯৬২ - ২০১২
আত্মীয়জাফর ইকবাল (ভাই), আনোয়ার পারভেজ (ভাই)
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯০)
একুশে পদক (১৯৯২)

১৯৯২ সালে তিনি একুশে পদক এবং ১৯৯০ সালে ছুটির ফাঁদে চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

প্রারম্ভিক জীবন

শাহনাজ বেগম ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।[5] তার পিতার নাম এম ফজলুল হক ও মাতার নাম আসিয়া হক। শাহনাজের ভাই আনোয়ার পারভেজ সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক এবং আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ও গায়ক। তিনি গান শিখেছেন গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে।[6]

কর্মজীবন

১৯৬৩ সালে ১০ বছর বয়সে ‘নতুন সুর’ নামক চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেওয়ার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে প্রথম টেলিভিশনে তার গাওয়া গান প্রচারিত হয়। তিনি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলাউদ্দিন আলী, খান আতা প্রমুখের সুরে গান গেয়েছেন। পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচী টিভিসহ উর্দু ছবিতেও গান করেছেন।

দেশাত্মবোধক গান

মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্দী খালেদা জিয়াকে উদ্ধারে বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার কারণে, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তিনি সরকারী ঘণিষ্টতা লাভ করেন। জিয়াউর রহমানের প্রিয় গান, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ গানে কণ্ঠ দেন তিনি। এছাড়াও এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে, একতারা তুই দেশের কথা বলরে‌ এবার বল্ ইত্যাদি জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান তিনি গেয়েছিলেন।

অ্যালবাম

শাহনাজ রহমতুল্লাহর চারটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।[7] অ্যালবামগুলো হল,

  • বারটি বছর পরে,
  • শুধু কি আমার ভুল

চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠ

  • গুনাই (১৯৬৬)
  • ডাক বাবু (১৯৬৬)
  • বেহুলা (১৯৬৬)
  • নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৬)
  • সাইফুল মুল্‌ক্‌ বদিউজ্জামাল (১৯৬৭)
  • নয়নতারা (১৯৬৭)
  • আনোয়ারা (১৯৬৭)
  • রাখাল বন্ধু (১৯৬৮)
  • সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮)
  • বাঁশরী (১৯৬৮)
  • সুয়োরানী দুয়োরানী (১৯৬৮)
  • পীচ ঢালা পথ (১৯৬৮)
  • এতটুকু আশা (১৯৬৮)
  • পরশমণি (১৯৬৮)
  • মুক্তি (১৯৬৯)
  • ভানুমতি (১৯৬৯)
  • পাতালপুরীর রাজকন্যা (১৯৬৯)
  • আলিঙ্গন (১৯৬৯)
  • নীল আকাশের নীচে (১৯৬৯)
  • বিজলী (১৯৭০)
  • মধুমিলন (১৯৭০)
  • আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী (১৯৭০)
  • কত যে মিনতি (১৯৭০)
  • রং বদলায় (১৯৭০)
  • বিনিময় (১৯৭০)
  • অধিকার (১৯৭০)
  • স্মৃতিটুকু থাক (১৯৭১)
  • জয় বাংলা (১৯৭২)
  • গান গেয়ে পরিচয় (১৯৭২)
  • বাহরাম বাদশাহ (১৯৭২)
  • অশ্রু দিয়ে লেখা (১৯৭২)
  • প্রতিশোধ (১৯৭২)
  • ঘুড্ডি (১৯৮০)
  • ছুটির ফাঁদে (১৯৯০)

জনপ্রিয় গান

শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানসমূহের মধ্যে রয়েছে,

  • একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়
  • প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
  • এক নদী রক্ত পেরিয়ে
  • আমার দেশের মাটির গন্ধে
  • একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল
  • আমায় যদি প্রশ্ন করে
  • কে যেন সোনার কাঠি
  • মানিক সে তো মানিক নয়
  • যদি চোখের দৃষ্টি
  • সাগরের তীর থেকে
  • খোলা জানালা
  • পারি না ভুলে যেতে
  • ফুলের কানে ভ্রমর এসে
  • আমি তো আমার গল্প বলেছি
  • আরও কিছু দাও না
  • একটি কুসুম তুলে নিয়েছি
  • ক্ষণিকের ভালো লাগা মনেতে দোলা দিয়ে
  • এই জীবনের মঞ্চে মোরা কেউবা কাঁদি কেউবা হাসি

ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু

শাহনাজ রহমতুল্লাহ ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৩ সালে আবুল বাশার রহমতুল্লাহর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির এক কন্যা ও এক পুত্র রয়েছে, তারা হলেন নাহিদ রহমতউল্লাহ এবং একেএম সায়েফ রহমতউল্লাহ।[3][8]

রহমতুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের ২৩শে মার্চ ঢাকার বারিধারায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।[1]

পুরস্কার

তথ্যসূত্র

  1. "না ফেরার দেশে শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ"সারাবাংলা। ২৩ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৯
  2. "Citibank pays tribute to Shahnaz Rahmatullah" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। জানুয়ারি ১৯, ২০০৮।
  3. "Shahnaz Rahmatullah at 'Bela Obela Sarabela'"। Priyo। ২০১২-০৯-০৮। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  4. "Shahnaz Rahmatullah honoured"। Dhaka Tribune। সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৩।
  5. "অন্য এক শাহনাজ রহমতুল্লাহ"অর্থসূচক। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৯
  6. মঈনুদ্দীন, অভি (২ জানুয়ারি ২০১৮)। "আর কোনো দিনই গাইব না-শাহনাজ রহমতুল্লাহ"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৯
  7. "চলে গেলেন শাহনাজ রহমত উল্লাহ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৯
  8. নাশিদ কামাল (২০১৮-০২-২৪)। "An afternoon with Shahnaz Rahmatullah" [শাহনাজ রহমতুল্লাহর সঙ্গে এক বিকেলে]দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-০৩
  9. "একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ"। বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৭
  10. রাশেদ শাওন (১৪ আগস্ট ২০১২)। চার দশকে আমাদের সেরা চলচ্চিত্রগুলো। bdnews24.com। ২০১৩-০১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-২৪

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.