সামিনা চৌধুরী

সামিনা চৌধুরী (২৮ আগস্ট ১৯৬৬ ) একজন বাংলাদেশী জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী।[1] তিনি বেশিরভাগই আধুনিক ও শাস্ত্রীয় গান গেয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য গানগুলির মধ্যে রয়েছে - জন্ম থেকেই জ্বলছি মাগো, আমার বুকের মধ্যখানে, আমার দুই চোখে দুই নদী, একবার যদি কেউ, কবিতা পড়ার প্রহর, ফুল পথে ফুল ঝরে ।[2] তিনি ২০০৫ সালে এনটিভিতে প্রচারিত ক্লোজআপ ওয়ান সঙ্গীত প্রতিভা প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।[3] এছাড়াও তিনি চ্যানেল আই এর "ক্ষুদে গান রাজ" , এনটিভির "ক্লোজআপ ওয়ান", মাছরাঙ্গা টেলিভিশন এর "ভালবাসি বাংলাদেশ" এর বিচারক সহ আরও অন্যান্য কিছু রিয়্যালিটি শো অনুষ্ঠানের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সামিনা চৌধুরী বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে কাজ করেছেন। তার অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি, সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসাবে জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০০৬), শ্রেষ্ঠ মহিলা কণ্ঠশিল্পী হিসাবে বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৪) এবং শ্রেষ্ঠ গায়িকা (২০০৫) এর জন্য মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেছেন।[2] তার বাবা বিখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মাহমুদুন্নবী এবং বোন বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ফাহমিদা নবী

সামিনা চৌধুরী
প্রাথমিক তথ্য
জন্ম (1966-08-28) ২৮ আগস্ট ১৯৬৬
দিনাজপুর,  বাংলাদেশ
উদ্ভববাংলাদেশ
ধরনমডার্ণ, ক্লাসিক্যাল, রবীন্দ্র সঙ্গীত
পেশাসঙ্গীত শিল্পী
বাদ্যযন্ত্রসমূহকণ্ঠ, কিবোর্ড, হারমোনিয়াম
কার্যকাল১৯৮১-বর্তমান

প্রাথমিক জীবন

চৌধুরী মাহমুদুন নবী ও রশিদা চৌধুরী দম্পতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সামিনা চৌধুরী।[4] ছোটবেলায় তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢাকার অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তার পরিবারে তার বাবার পাশাপাশি তার বোন বোন ফাহমিদা নবী , এবং ভাই পঞ্চম ও সঙ্গীতজ্ঞ।[5] তার বাবার প্রেরনায় তিনি একটি প্লেব্যাকে সমসাময়িক গায়ক হিসাবে উন্নতি লাভ করেন। তিনি নতুন কুঁড়ি গানের অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং ১৯৭৭ সালে এই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করেন।[6]

কর্ম জীবন

নন্দিত ও অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের শিল্পী সামিনা চৌধুরীর সংগীত জীবনের শুরুটা খুব ছােট বেলায়। মূলত বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ির মাধ্যমে তার সংগীত জীবনের পথ চলা শুরু।[7] ১৯৭৭ সালে, ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ুয়া ছােট্ট একটি মেয়ে সামিনা চৌধুরী। সেই বয়সেই নতুন কুঁড়ির সংগীত প্রতিযােগীতায় দেশাত্ববােধক গানে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। ছােট বেলার সেই অর্জন এখনাে তার প্রেরণার উৎস বলে মনে করেন। ১৯৮১ সালে প্রথম প্লেব্যাকের মাধ্যমে সামিনা চৌধুরীর সংগীত জীবনের গল্পটা শুরু।[8] ১৯৮১ সালে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার প্রথম গান জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো যা "জন্ম থেকে জ্বলছি" চলচ্চিত্রের জন্য গেয়েছিলেন। সেই থেকে একের পর এক সফলতা তার মুঠোবন্দি হয়েছে, তার গাওয়া গানগুলাে পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তার সংগীতে অবদান বাংলা গানকে সমৃদ্ধ এবং যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। এর পরে তিনি অডিও জগতে আরও কিছু গান গেয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি "সাত ভাই চম্পা" চলচ্চিত্রের জন্য সাত ভাই চম্পা জাগো রে শিরোনামে গান গেয়েছেন। তারপর তিনি প্লেব্যাক গায়ক থেকে একটি বিচ্ছেদ গ্রহণ করেন এবং স্টুডিও অ্যালবামের উপর মনোনিবেশ করেন এবং কিছু বিখ্যাত গান সংগীত জগতে যুক্ত করেছেন, যেমনঃ কবিতা পোড়ার প্রহর এসেছে, একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, ঐ ঝিনুক ফোঁটা সাগর বেলায় ইত্যাদি।[9] পরবর্তীতে অ্যান্ড্রু কিশোরের সাথে জুগল হিসাবে "তোমার গরুর গাড়িতে আমি যাবো না" গানের মাধ্যমে আবার প্লেব্যাকে ফিরে আসেন। আমার বুকের মধ্যখানে, দূর দ্বীপবাসিনী, হও যদি ঐ নীলাকাশ, হৃদয়ে লিখেছি তোমারি নাম, আমার মাঝে নেই এখন আমি তার অন্যতম দর্শক প্রিয় গান। ২০০৯ সালে তিনি রবীন্দ্র সংগীতের অ্যালবাম বের করেন। তিনি নিঃস্বার্থ ভালবাসা চলচ্চিত্রে দুইটি গান গেয়েছেন, "যমুনার জল" এবং "স্বপ্ন স্বপ্ন"।[9]

সামিনা চৌধুরী সংগীত জীবনের শুরু থেকেই গানের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনেক বেশী সচেতন। গানের গুনগত মানের উৎকতায় সামিনা চৌধুরীর গানগুলাে হয়েছে শ্রোতাপ্রিয়। নকল সুরের গানের ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই ছিলেন প্রতিবাদ মুখর।

সামিনা চৌধুরী "জুলিয়াস সিজার" এবং "এই সেই" রেডিও নাটকে অংশ নিয়েছেন। তিনি সংবাদ পাঠিকা হিসাবেও কাজ করেছেন। [9]

ডিস্কোগ্রাফি

স্টুডিও অ্যালবাম

তিনি অসংখ্য অ্যালবামে গান গেয়েছেন। তার মধ্যে কিছু হল-

সালঅ্যালবামের নামসহ-শিল্পীসংগীত পরিচালকগানের কোঠাব্যানারটীকা
ফুল পথে ফুল ঝরেপ্রথম অ্যালবাম
১৯৮৭শৈশবের দিনগুলি -সারগামপ্রথম একক অ্যালবাম
সাত ভাই চম্পা
পাগল মন
দুরপরি
কবিতা পড়ার প্রহর
রাতের কবিতা
এই বুঝি তুমি এলে
দুই চোখে দুই নদী
১৯৯৯আমায় ডেকো না-লাকি আখন্দএকক অ্যালবাম[10]
২০১৩চলো বাঁচিরাগিব চট্টোপাধ্যায়নাকিব খান, পিলু খান, ইন্দ্রজিৎ দে & তমাল চক্রবর্তীজুলফিকার রাসেললেজার ভিশন
২০১৪পুষ্প বৃষ্টিবাপ্পা মজুমদারমোঃ আবদুল বারিমোঃ আবদুল বারি২০১৪ সালের ভালবাসা দিবসে মুক্তি পায়
সখি-বাপ্পা মজুমদার & ইবরার টিপুরবীন্দ্র এবং নজরুল সংগীতের উপরে[11]
২০১৫একটা বন্ধু চাইরাগিব চট্টোপাধ্যায়ইন্দ্রজিৎ দে & তমাল চক্রবর্তীজুলফিকার রাসেললেজার ভিশন[12]

উল্লেখযোগ্য গান

  • জন্ম থেকেই জ্বলছি মাগো
  • আমার দুই চোখে
  • আমার বুকের মধ্যখানে
  • ফুল পথে ফুল ঝরে
  • একবার যদি কেউ
  • আমার মাঝে নেই
  • কবিতা পড়ার প্রহর
  • আমি অনুতপ্ত
  • একবার যদি কেউ

চলচ্চিত্রে গান

ক্রমচলচ্চিত্রের নাম (সাল)
০১ দ্য স্টোরি অব সামারা(২০১৫)
০২ আই লাভ ইউ প্রিয়া(২০১৫)
০৩ সীমারেখা(২০১৪)
০৪ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা(২০১৩)
০৫ অন্যরকম ভালোবাসা(২০১৩)
০৬ তবুও ভালোবাসি(২০১৩)
০৭ জিদ্দি বউ(২০১২)
০৮ দ্যা স্পিড(২০১২)
০৯ খোঁজ - দ্য সার্চ(২০১০)
১০ টাকার চেয়ে প্রেম বড়(২০১০)
১১ টপ হিরো(২০১০)
১২ মায়ের চোখ(২০১০)
১৩ বাপ বড় না শ্বশুর বড়(২০১০)
১৪ স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা(২০০৯)
১৫ মন যেখানে হৃদয়সেখানে(২০০৯)
১৬ তুমি আমার স্বামী(২০০৯)
১৭ জন্ম তোমার জন্য(২০০৯)
১৮ আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা(২০০৮)
১৯ ছোট বোন(২০০৮)
২০ চন্দ্রগ্রহণ(২০০৮)
২১ তোমাকেই খুজছি(২০০৮)
২২ তোমাকে বউ বানাবো(২০০৮)
২৩ সন্তান আমার অহংকার(২০০৮)
২৪ আমার জান আমার প্রাণ(২০০৮)
২৫ রক্ত পিপাসা(২০০৭)
২৬ তুমি আছো হৃদয়ে(২০০৭)
২৭ স্বামীর সংসার(২০০৭)
২৮ মা আমার স্বর্গ(২০০৭)
২৯ দারুচিনি দ্বীপ(২০০৭)
৩০ শত্রু শত্রু খেলা(২০০৭)
৩১ মেশিনম্যান(২০০৭)
৩২ আমি বাঁচতে চাই(২০০৭)
৩৩ রানীকুঠির বাকী ইতিহাস(২০০৬)
৩৪ হৃদয়ের কথা(২০০৬)
৩৫ তুমি আমার(১৯৯৪)
৩৬ সত্তা(নির্মানাধীন)
৩৭ ওয়ারিশ
৩৮ জলরং
৩৯ তবুও তুমি আমার

[13]

রিয়্যালিটি শো বিচারকার্য

২০১৭ সালে সামিনা চৌধুরী চ্যানেল আইতে অনুষ্ঠিত "সেরা কণ্ঠ" এর বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি চ্যানেল আই এর "ক্ষুদে গান রাজ" , এনটিভির "ক্লোজআপ ওয়ান", মাছরাঙ্গা টেলিভিশন এর "ভালবাসি বাংলাদেশ" সহ আরও অন্যান্য রিয়্যালিটি শো এর বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

টেলিভিশনের পর্দায়

অনুষ্ঠানের ধরনঅনুষ্ঠানের নামসম্প্রচার
নাটকমিড নাইট ব্লাক কফিএনটিভি[14]

রেডিও অনুষ্ঠানে

সামিনা চৌধুরী "জুলিয়াস সিজার" এবং "এই সেই" রেডিও নাটকে অংশ নিয়েছেন। তিনি সংবাদ পাঠিকা হিসাবেও কাজ করেছেন। [9]

পুরস্কার ও সম্মাননা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০৬ - শ্রেষ্ঠ মহিলা গায়িকা, রানী কুঠির বাকি ইতিহাস ছবির জন্য

বাচসাস পুরস্কার

১৯৮৪ সালে শ্রেষ্ঠ মহিলা কণ্ঠশিল্পী হিসাবে পরপর দুবার বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার

সাল গানের নাম বিভাগ ফলাফল
২০০১ সাত ভাই চম্পা শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী (নারী) মনোনীত
২০০৫ এই বুঝি তুমি এলে শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী (নারী) বিজয়ী
২০০৬ আমার মাঝে নেই শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী (নারী) বিজয়ী

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Deepita, Novera (2004-04-21). "Tête-à-tête – Samina Chowdhury: Prolific singer". The Daily Star. Retrieved 2011-02-04.
  2. "Through The Eyes of Samina Chowdhury"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-০২
  3. Afroz, Mahmuda। "Samina talks about our musical identity"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০২-০৪
  4. Rafi Hossain (২০১৪-০৭-০৫)। "Samina the Songbird"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-২৫
  5. Saurav Dey (২০১৩-০৬-০৩)। "All in the Family: Tête-à-tête with Fahmida Nabi and Samina Chowdhury"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-২১
  6. "Game-Changers"। Amader Kotha। ২০১৪-০৩-০৪। ২০১৫-০১-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-২১
  7. "নতুন কুঁড়ি থেকে নতুন করে আমরা"। www.banglanews24.com। ২০১৩-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-২১
  8. "কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী"বিবিসি নিউজ। বিবিসি নিউজ। ২০ মে ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-০৩
  9. Rafi Hossain (২০১৪-০৭-০৫)। "Samina Chowdhury: The nightingale of our hearts"The Daily Star
  10. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" লাকী আখন্দ। Priyo.com। ২০১৫-০৯-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-০৪
  11. "Samina Chowdhury coming with three new albums"। Reflection News। ২০১৩-১০-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-২১
  12. "Samina to release her album this Eid"The Daily Ittefaq। ২০১৫-০৫-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-২১
  13. http://www.bmdb.com.bd/person/289/
  14. "Samina to perform at CCCL on her birthday today"The Independent। ২০১৫-০৮-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-২১

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.