আম্মান

আম্মান (ইংরেজি: /ɑːˈmɑːn/; আরবি: عمّان) হল জর্দানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এটি জর্দানের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা, যা উত্তর-মধ্য জর্দানে অবস্থিত। আম্মান আম্মান গভর্নরেটের প্রশাসনিক রাজধানীও বটে। এ শহরের মোট আয়তন প্রায় ১,৬৮০ বর্গকিলোমিটার (৬৪৮.৭ বর্গমাইল) এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৪,০০৭,৫২৬ জন। আজ, আম্মান হল সবচেয়ে উদার এবং পশ্চিমা ধারার আরব শহর। এটি এ অঞ্চলের একটি পর্যটন সমৃদ্ধ নগরীর, যার ফলে আরব ও ইউরোপীয় পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে।

আম্মান
عمّان
শহর
আম্মান শহর, ডান থেকে বাম এবং উপরে থেকে নীচে: আম্মানের আকাশে আধিপত্য বিস্তারকারি আবদালী প্রকল্প, আম্মান সিটাদেলের উপর হারকিউলিসের মন্দির, কিং আবদুল্লাহ প্রথম মসজিদ এবং রাঘদান ফ্ল্যাগপোল, আবদৌন সেতু, উমাইয়াদ প্রাসাদ, অটোমান হেজাজ রেলওয়ে স্টেশন এবং রোমান থিয়েটার
চিত্র:Ammanlogo.png
সীলমোহর
ডাকনাম:
  • 'The White Pigeon'
  • 'The City of Stairs'
[1][2]
আম্মান
স্থানাঙ্ক: ৩১°৫৬′৫৯″ উত্তর ৩৫°৫৫′৫৮″ পূর্ব
দেশ জর্দান
গভর্নরেটরাজধানী গভর্নরেট
প্রতিষ্ঠাখ্রিস্টপূর্ব ৭২৫০
পৌরসংস্থা১৯০৯
সরকার
  মেয়রইউসুফ সাওয়ারবেহ
আয়তন
  মোট১৬৮০ কিমি (৬৫০ বর্গমাইল)
সর্বোচ্চ উচ্চতা১১০০ মিটার (৩৬০০ ফুট)
সর্বনিন্ম উচ্চতা৭০০ মিটার (২৩০০ ফুট)
জনসংখ্যা (2014)
  মোট৪০,০৭,৫২৬
  জনঘনত্ব২৩৮০/কিমি (৬২০০/বর্গমাইল)
বিশেষণআম্মানী
সময় অঞ্চলইইটি (ইউটিসি+২)
  গ্রীষ্মকালীন (দিসস)ইইএসটি (ইউটিসি+৩)
পোস্ট কোড11110-17198
এলাকা কোড+962(6)
ওয়েবসাইটGreater Amman Municipality

ভূগোল

আম্মান পূর্ব তীরে মালভূমিতে অবস্থিত, যা একটি উচ্চভূমি যা তিনটি প্রধান ওয়াদি (উপত্যকা) দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যা এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মূলত, শহরটি সাতটি পাহাড়ের উপর নির্মিত হয়েছে। আম্মানের ভূখণ্ড তার পাহাড় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নাম তারা পাহাড় বা পর্বতগুলির নামানুসারে নামকরণ করে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এ এলাকার উচ্চতা ৭০০ থেকে ১১০০ মিটার (২৩০০ থেকে ৩৬০০ ফুট)। আল-সালত এবং আল-জারকা যথাক্রমে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত, মাদাবা পশ্চিমে অবস্থিত, এবং আল-কারাক এবং মায়ান আম্মানের দক্ষিণপশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। আম্মানের একমাত্র অবশিষ্ট ঝর্ণা এখন জারকা নদীর পানি সরবরাহ করে।

আম্মানে যে গাছগুলি পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে আলেপ্পো পাইন, ভূমধ্যসাগরীয় সাইপ্রেস এবং ফিনেসিয়ান জুনিপার।

জলবায়ু

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের নিকটবর্তী পাহাড়ে আম্মানের অবস্থান হ‌ওয়ায় এটি অর্ধ-শুকনো জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাসের আওতায় পড়েছে। গ্রীষ্মকাল হালকা গরম এবং বাতাসযুক্ত, তবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে এক বা দুটি তাপপ্রবাহ হতে পারে। বসন্তকাল সংক্ষিপ্ত এবং উষ্ণ হয়, যেখানে তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ২৮° ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬৩° ডিগ্রি ফারেনহাইট)। বসন্তকাল সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে শুরু হয় এবং প্রায় এক মাস স্থায়ী হয়। শীতকাল সাধারণত নভেম্বর মাসের শেষদিকে শুরু হয় এবং মার্চ মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তাপমাত্রা সাধারণত ১৭° ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬৩° ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর কাছাকাছি বা এর নিচে থাকে, বছরের মাঝে মাঝে একবার বা দুইবার তুষারপাত হয়। আম্মানের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৩০০ মিলিমিটার (১২ ইঞ্চি) এবং বছরের অধিকাংশ সময় খরা থাকে, যেখানে বেশিরভাগ বৃষ্টি হয় অক্টোরব থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে। প্রতি বছর কমপক্ষে ১২০ দিনের বেশি সময় ভারী কুয়াশা থাকাটা স্বাভাবিক। শহরে বিভিন্ন উচ্চতার পার্থক্য আবহাওয়ার পরিবেশ পরিস্থিতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে; একই সময়ে আম্মানের পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলে (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা ১০০০ মিটার (৩,৩০০ ফুট)) বরফ জমে থাকতে পারে আবার নগরীর কেন্দ্রে (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা ৭৭৬ মিটার (২,৫৪৬ ফুট)) বৃষ্টি হতে পারে।

স্থানীয় সরকার

আম্মান ৪১ সদস্য বিশিষ্ট সিটি কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা পাঁচ বছরের জন্য জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। সকল জর্দানীয় নাগরিক, যারা বয়স ১৮ বছরের বেশি তারা পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। যাহোক, সিটি মেয়রের জন্য নির্বাচন হয় না, মেয়রকে বাদশা সরাসরি নিয়োগ করে থাকেন।[3] ১৯০৯ সালে ইসমাইল বাবুক কর্তৃক আম্মান সিটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, তিনি ছিলেন এর প্রথম মেয়র এবং ১৯১৪ সালে আম্মানের প্রথম সিটি ডিস্ট্রিক্ট সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছিল।[4]

জনসংখ্যা

২০১৫ সালে আম্মানের জনসংখ্যা ৪,০০৭,৫২৬ জনে পৌঁছেছে, শহরটিতে জর্দানের পুরো জনসংখ্যার প্রায় ৪২% বসবাস করে। শহরের মোট ভূমি ১,৬৮০ বর্গ কিলোমিটার (৬৪৮ বর্গমাইল), যাতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ২,৩৮০ জন (প্রতি বর্গমাইলে ৬২০০ জন)। বিংশ শতাব্দীতে অভিবাসী এবং শরণার্থীদের ধারাবাহিক ঢেউয়ের সাথে আম্মানের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮৯০ সালে আম্মানে প্রায় ১,০০০ জনসংখ্যা ছিল, যা থেকে মূলত অভিবাসনের ফলে ১৯৯০ সালে প্রায় ১,০০,০০০ জন বাসিন্দা হয়ে উঠে, তবে শহরের অধিক জন্মহারের কারণেও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আম্মান অনেক বছর ধরে পরিত্যক্ত ছিল যতক্ষণ না কার্কাসিয়ান ১৯শ শতাব্দীতে এখানে বসতি স্থাপন করে। আজ, প্রায় ৪০,০০০ কার্কাসিয়ান আম্মান এবং এর আশেপাশে বাস করে। ১৯১৪ সালে আম্মান হিজাজ রেলওয়ের একটি বড় কেন্দ্রস্থল হওয়ার পরে, আল-সালত থেকে বহু মুসলমান ও খ্রিস্টান ব্যবসায়ী পরিবার এ শহরে চলে এসেছিল। আম্মানের বাসিন্দাদের একটি বিশাল অংশের ফিলিস্তিনি শিকড় রয়েছে (শহুরে বা গ্রামীণ উৎপত্তি), এবং এই শহরে দুটি প্রধান জনসংখ্যার গোষ্ঠী আজ ফিলিস্থিনি বা জর্দানি বংশোদ্ভূত আরব। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা প্রায় ২% শতাংশ এর নিচে। ফিলিস্তিনি বা জর্দানি বংশোদ্ভূত মানুষের অনুপাত সম্পর্কে কোন সরকারি পরিসংখ্যান নাই।

শিক্ষা

জর্দানের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুসন্ধান আম্মান হল সবচেয়ে বেশি স্বাক্ষরতার হার সমৃদ্ধ এলাকা। এখানকার স্বাক্ষরতার হার ৯৫.২%, যার মধ্যে প্রায় ৯৭.৩% পুরুষ এবং প্রায় ৯৩.১% হল নারী।[5] আম্মানে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জর্দান বিশ্ববিদ্যালয় শহরের সবচেয়ে বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।[6] আম্মানে প্রায় ৪৪৮ টি প্রাইভেট স্কুল রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি হল: আম্মান বেকাকারেট স্কুল, আম্মান একাডেমি, আম্মান ন্যাশনাল স্কুল, মর্ডাণ আমেরিকান স্কুল, ন্যাশনাল স্কুল অফ চৌয়েইফাত, আম্মান আমেরিকান কম্যুনিটি স্কুলন্যাশনাল অর্থডক্স স্কুল, এগুলোতে প্রায় ৯০,০০০ ছাত্রছাত্রী অধ্যায়ন করছে।[7]

আরও দেখুন: জর্দানের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তালিকা
  • আল আহলিয়া আম্মান বিশ্ববিদ্যালয়
  • আল ইসরা বিশ্ববিদ্যালয়
  • জর্দান আল জায়তুনাহ বিশ্ববিদ্যালয়
  • আম্মান আরব বিশ্ববিদ্যালয়
  • অ্যাপ্লাইড সাইন্স ইউনিভার্সিটি
  • আরব একাডেমি ফর ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সাইন্স
  • আরব উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
  • কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়: আম্মান শাখা
  • জার্মান-জর্দানীয় বিশ্ববিদ্যালয়: আম্মান শাখা
  • জর্দান একাডেমি ফর মেরিটাইম স্টাডিজ
  • জর্দান একাডেমি অব মিউজিক
  • জর্দান ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং স্টাডিজ
  • জর্দান মিডিয়া ইনস্টিটিউট
  • মিডল ইস্ট ইউনিভার্সিটি
  • পেত্রা বিশ্ববিদ্যালয়
  • ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
  • প্রিন্সেস সুমায়া ইউনিভার্সিটি ফল টেকনোলজি
  • রাণী নুর সিভিল এ্যাভিয়েশন টেকনিক্যাল কলেজ
  • ওয়াল্ড ইসলামিক সাইন্স অ্যান্ড এডুকেশন ইউনিভার্সিটি
  • জর্দান বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্যসূত্র

  1. Trent Holden, Anna Metcalfe (২০০৯)। The Cities Book: A Journey Through the Best Cities in the World। Lonely Planet Publications। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-০১
  2. "Amman's Street Food"BeAmman.com। BeAmman.com। ২০১৫-০৯-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-২৬
  3. "About GAM"। Greater Amman Municipality। ২০১৫-১০-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-২৩
  4. "GAM council"। Greater Amman Municipality। ২০১৫-১০-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-২৩
  5. "Jordan marks Int'l Literacy Day today"The Jordan Times। The Jordan News। ২০১৩-০৯-০৭। ২০১৫-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-০২
  6. "JU In Brief"। ২০১২-০৭-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  7. "كشف بأسماء المدارس الخاصة في عمان" (আরবি ভাষায়)। ২০১৫-০৯-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-২৩

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.