আঙ্কারা

আংকারা (তুর্কি ভাষায়: Ankara) পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্র তুরস্কের রাজধানী শহর। নগর কেন্দ্রে ৪,৫৮৭,৫৮৮ জন (২০১৪ সালে) এবং এর প্রদেশে ৫,১৫০,০৭২ জন (২০১৫ সালে) জনসংখ্যা নিয়ে এটি তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে (সাবেক রাজকীয় রাজধানী ইস্তানবুলের পরেই) পরিণত হয়েছে, এটি ২০শ শতাব্দীতে জনসংখ্যায় ইজমিরকে ছাড়িয়ে গেছে।

আঙ্কারা
মহানগরী এলাকা
ঘড়ির কাঁটার দিক, শীর্ষ থেকে: সিতাজি ব্যবসায় জেলা, আনটকাবীর, জেনালিক পার্ক, কাজিলা স্কয়ার, কোটকেপ মসজিদ, আতাকুল টাওয়ার
ডাকনাম: তুরস্কের হৃদয়
আঙ্কারা
আঙ্কারা
আঙ্কারা
তুরস্কের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ৩৯°৫৬′ উত্তর ৩২°৫২′ পূর্ব
দেশতুরস্ক
অঞ্চলমধ্য আনাতোলিয়া
প্রদেশআঙ্কারা
রাজধানী শহরচানকায়া(প্রকৃত পক্ষে; তুর্কি মহানগরের কোনও সরকরি রাজধানী শহর নেই)
সরকার
  মেয়রমনসুর যাভাস (সিএইচপি)
  গভর্নরএরকান টোপাসা
আয়তন
  মোট২৪৫২১ কিমি (৯৪৬৮ বর্গমাইল)
উচ্চতা৯৩৮ মিটার (৩০৭৭ ফুট)
জনসংখ্যা (2017)
  মোট৫৪,৪৫,০২৬[1]
সময় অঞ্চলFET (ইউটিসি+3)
পোস্ট কোড06xxx
এলাকা কোড312
লাইসেন্স প্লেট06
GDP PPP[2]US$ ১০৫ বিলিয়ন
এইচডিআই (২০১৭)0.845[3]very high
ওয়েবসাইটwww.ankara.bel.tr
www.ankara.gov.tr

১৯২০ সালের ২৩ শে এপ্রিল তুরস্কের গ্রান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বিলিতে আঙ্কারা রাজধানী শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের সময় তুরস্কের স্বাধীনতার যুদ্ধ চলাকালে আতার্তুকের সদরদপ্তরে পরিণত হয়েছিল। ওসমানী সাম্রাজের পতনের পর ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে আঙ্কারা ইস্তানবুলের পদানুবর্তীতে নতুন তুর্কি রাজধানীর মর্যাদা পায়। এখানকার অধিবাসীদের অধিকাংশই সরকারি কাজে নিয়োজিত, সরকার এখানকার একজন বিশিষ্ট্য নিয়োগকর্তা, কিন্তু আঙ্কারা তুরস্কের সড়কপথ এবং রেলওয়ে নেটওয়ার্কের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও শিল্প নগরী। আংকারা শহর দীর্ঘ লোমবিশিষ্ট ছাগলের জন্য বিখ্যাত ছিল যা অ্যাঙ্গোরা ছাগল নামে পরিচিত। তাছারা এটি দীর্ঘ লোমবিশিষ্ট বিড়াল বা খরগোস এবং নাসপতি, মধু, আঙ্গুরের জন্য বিখ্যাত।

আঙ্কারা ঐতিহাসিক কেন্দ্র শিলাময় পর্বতের উপর অবস্থিত , যা আঙ্কারা Çayı, Sakarya (Sangarius) নদীর একটি উপনদী তীরে বাঁদিকে অবস্থিত উপর ১৫০ মিটার (৪৯২ ফুট) সমভূমির উপর অবস্থিত।

ইতিহাস

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজের পরাজয়ের পর, অটোমানের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল (আধুনিক ইস্তানবুল) এবং আনাতোলিয়ার বেশিরভাগ অংশ মিত্রদের দখলে ছিল, তুরস্কের কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়ার মূল অংশটি ছেড়ে বাকী অংশ আর্মেনিয়া, ফ্রান্স, গ্রীস, ইতালি এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এর প্রতিবাদ হিসেবে, তুর্কি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা মোস্তফা কামাল আতাতর্ক ১৯২০ সালে অ্যাঙ্গোরায় তার প্রতিরোধ আন্দোলনের সদর দফতর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তুর্কির স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ের পর লাউসান চুক্তি (১৯২৩) দ্বারা সেভ্রে চুক্তির রহিত হয়, তুর্কি জাতীয়তাবাদীরা ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর অটোমান সাম্রাজ্যকে তুর্কি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে। এর কিছু দিন আগে, ১৯২৩ সালের ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাঙ্গোরা থেকে কনস্টান্টিনোপলে তুরস্কের নতুন রাজধানী স্থানান্তরিত করে এবং রিপাবলিকান কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছিলেন যে শহরের নাম আঙ্কারা।[4]

ভূগোল

আঙ্কারায় গরম-গ্রীষ্মকালীন ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু (কোপেন সিএসএ) বিরাজমান যা একটি গরম-গ্রীষ্মকালীন ভূমধ্যসাগরীয় মহাদেশীয় জলবায়ু (কোপেন ডিএসএ) অত্যন্ত নিকটবর্তী। ট্রিওয়ার্থ জলবায়ু শ্রেণীর বিন্যাস অনুসারে, আঙ্কারা মধ্য অক্ষাংশ প্রতিরক্ষা জলবায়ুর (বিএসকে) অন্তর্গত। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা এবং অভ্যন্তরীণ অবস্থানের কারণে, আঙ্কারা শীতকালে ঠান্ডা ও কিছুটা তুষারাবৃত এবং গ্রীষ্মকালে গরম ও শুষ্ক থাকে। গ্রীষ্ম ও বসন্তকালে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। আঙ্কারা ইউএসডিএ হার্ডনেস জোন ৭বিতে অবস্থিত এবং এর বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৪০০ মিলিমিটারের (১৬ ইঞ্চি) তুলনায় বেশ কম, তবুও সারা বছর বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যায়। মাসিক গড় তাপমাত্রা জানুয়ারীতে ০.৩° ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩২.৫° ফারেনহাইট) থেকে জুলাই মাসে ২৩.৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭৪.৩° ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে এবং বার্ষিক গড় ১২.০২° ডিগ্রি সেলসিয়াস (৫৩.৬° ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে।

জনসংখ্যা

১৯২৭ সালে আঙ্কারার জনসংখ্যা ছিল ৭৫,০০০ জন। ২০১৩ সালে আঙ্কারা প্রদেশের জনসংখ্যা ছিল ৫,০৪৫,০৮৩ জন।

১৯২৩ সালে আঙ্কারা যখন তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী হয়ে ওঠে, তখন এটি ভবিষ্যতের ৫০০,০০০ বাসিন্দাদের জন্য একটি পরিকল্পিত শহর হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল। ১৯২০-এর দশক, ১৯৩০-এর দশক ও ১৯৪০-এর দশকে শহরটি একটি পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল গতিতে বৃদ্ধি পায়। তবে, ১৯৫০-এর দশকের পর থেকে, শহরটির জনসংখ্যা কল্পনা থেকেও অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল, কারণ বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য মানুষকে উন্নত জীবনযাত্রার সন্ধানে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। ফলস্বরূপ, জেসেকানডু নামে অনেক অবৈধ বাড়ি শহরের চারপাশে নির্মিত হয়েছে, যার ফলে আঙ্কারার অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরীর প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে, কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত আবাসন দ্রুত পর্যায় তৈরি সম্বব হয়নি। যদিও তা নির্ভুলভাবে নির্মিত হয়েছে, তাদের বেশিরভাগেরই বিদ্যুৎ, চলমান জল এবং আধুনিক গৃহস্থালী সুবিধা রয়েছে।

রাজনীতি

আঙ্কারা তিনটি দলের একটি ট্রিপল যুদ্ধক্ষেত্র, যা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি), বিরোধী কামালবাদী কেন্দ্র-বাম রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) এবং জাতীয়তাবাদী সুদূর-ডান ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি (এমএইচপি) এর মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে। আঙ্কারা প্রদেশটি ২৫ টি জেলায় বিভক্ত। আঙ্কারায় সিএইচপির প্রধান ও একমাত্র রাজনৈতিক ঘাটি কানকায়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত, যা শহরের সবচেয়ে জনবহুল জেলা। ২০০২ সাল থেকে কনকায়ায় সিএইচপি সর্বদা ৬০% থেকে ৭০% ভোট পেয়েছে, আঙ্কারার অন্যত্র এদের রাজনৈতিক সমর্থন খুব কম।

শিক্ষা

আঙ্কারায় তুরস্কের রাজধানী হ‌ওয়ায় বহু খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।

তথ্যসূত্র

  1. "Turkish Statistical Institute The Results of Address Based Population Registration System 2017"www.turkstat.gov.tr
  2. Berube, Alan; Trujillo, Jesus Leal; Ran, Tao; Parilla, Joseph (২২ জানুয়ারি ২০১৫)। "Global Metro Monitor"Brookings
  3. "Sub-national HDI - Area Database - Global Data Lab"hdi.globaldatalab.org
  4. Society (৪ মার্চ ২০১৪)। "Istanbul, not Constantinople"National Geographic Society (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.