বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার বোলপুর শহরে অবস্থিত। ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন।[1] ১৯৫১ সালে এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।[1] কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। দেশবিদেশ থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতে আসেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রাক্তনীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্কারবিজয়ী চিত্র-পরিচালক সত্যজিৎ রায়, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ।
![]() | |
লাতিন: Visva-Bharati University | |
নীতিবাক্য | যত্র বিশ্বং ভবেত্যকনীড়ম Where the world makes a home in a single nest |
---|---|
ধরন | কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় |
স্থাপিত | ২৩ ডিসেম্বর ১৯২১ |
আচার্য | ভারতের প্রধানমন্ত্রী |
উপাচার্য | বিদ্যুৎ চক্রবর্তী |
শিক্ষার্থী | ৬৫০০ |
অবস্থান | , , |
শিক্ষাঙ্গন | ২ (শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন) |
সংক্ষিপ্ত নাম | বিশ্বভারতী |
অধিভুক্তি | বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ভারত) |
ওয়েবসাইট | www.visva-bharati.ac.in |
ইতিহাস
উপাচার্য |
---|
সবুজকলি সেন, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী,২০১৮-বর্তমান। |
১৯০১ সালের ডিসেম্বরে (৭ পৌষ ১৩০৮ বঙ্গাব্দ) বোলপুরের নিকটস্থ শান্তিনিকেতন আশ্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "ব্রহ্মচর্যাশ্রম" নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।[1] এই বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ছিল প্রচলিত বৃত্তিমুখী অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষার পরিবর্তে ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পূর্ণাঙ্গ মনোবিকাশের সুযোগদান। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন ভারতের তপোবন বিদ্যালয় থেকে এই বিদ্যালয়ের আদর্শটি গ্রহণ করেন।[1] বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সানন্দ অনুমতি ও আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন।[1] বিদ্যালয়ের প্রথম পাঁচজন ছাত্রের অন্যতম ছিলেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর।[1]
১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এরপর ১৯২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর, (১৩২৮ বঙ্গাব্দের ৮ পৌষ) রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।[2]
প্রাঙ্গন
শান্তিনিকেতন গৃহ
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝের সময়ে ১৮৬৩ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরের কাছে একটি অনুর্বর জমি ক্রয় করে সেখানে একটি ব্রহ্মচর্যাশ্রম নির্মাণ করেন।এবং সেই জায়গার নাম দেন শান্তিনিকেতন।কালক্রমে পার্শ্ববর্তী পুরো এলাকার নাম হয় শান্তিনিকেতন।
ছাতিম তলা
পুরাতন ঘন্টা----
আম্রকুঞ্জ
২৮ জনুয়ারী ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হবার আগে ২১ জানুয়ারি, এখানে রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস আসেন। [3]
কলা ভবন
এই বিভাগে শিল্পসমন্ধীয় যাবতীয় গঠনমূলক কাজ ও সবরকমের চিত্র অঙ্কন শেখান হয়। [4]
শিল্প ভবন
এই বিভাগে চারু ও কারুশিল্প সম্বন্ধীয় সমস্ত গঠনমূলক কাজ শেখান হয়। [4]
সঙ্গীত ভবন
এই বিভাগে কণ্ঠ ও যন্ত্র সঙ্গীত, নৃত্য ও অভিনয় শেখানো হয়।[4]
পাঠ ভবন
শিক্ষাসত্র
বিদ্যা ভবন
এখানে প্রাচীন, আধুনিক ও অন্যান্য ভাষা, সাহিত্য ও দর্শন যথা সংস্কৃত, পালি, বাংলা, হিন্দী, উর্দু ভাষা অধ্যয়ন এবং বৈদিক, বৌদ্ধ ও [[গুপ্ত সাম্রাজ্য|গুপ্ত সময়কালʼ; আরবি, পারসি ইত্যাদি বিদেশী ভাষা এবং এই সম্বন্ধীয় গবেষকদের বিষয়ে।[4]
শিক্ষা ভবন
এই বিভাগে সাধারণ জ্ঞান ও শিক্ষা প্রদান করা হয় যা সমস্ত ছাত্রছাত্রীর জন্য আবশ্যিক।[4] প্রধাণত বিজ্ঞান পড়ানো হয়ে থাকে। যেমন- পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতবিদ্যা ইত্যাদি।
চীনা ভবন
এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষানবিশদের চীনা ভাষাগুলি ও সাহিত্য, চীনা সংস্কৃতি ও চীনা সভ্যতা ইত্যাদি ও চীনা ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় সংস্কৃতি, সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য পড়ান হয়।[4] রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন ছিল সাম্প্রতিক শতাব্দীতে ভারত ও চীনের মধ্যে যে প্রাচীন সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার গভীর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল তাকে পুনরুদ্ধার করতে শান্তিনিকেতন ভিত্তি হোক।[5] তাঁর এই বিশ্বাসকে স্বতন্ত্রভাবে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করেন "টান ইউন শান" যিনি বিশ্বভারতীতে "টান সাহেব" বলে পরিচিত ছিলেন। পড়াশুনা শেষ করে শিক্ষকতা করাকালীন টান সাহেবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে প্রথমবার দেখা হয়। দুজন সমমনস্ক মানুষ ছিলেন। টান রবীন্দ্রনাথের আহবানে ১৯২৭ সালের জুলাই মাসে ভারতে আসেন। ১৯২৮ সালে তিনি জোড়াসাঁকো হয়ে পাঠভবনের তৎকালীন প্রিন্সিপাল সত্যজীবন পালের সঙ্গে শান্তিনিকেতন আসেন।[5] কয়েকদিনের মধ্যেই সেখানে ৫জন ছাত্র নিয়ে পড়ানো শুরু করেন যারা পরে জ্ঞানীগুণী মানুষ রূপে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ১৯২৬ সালে "চেন নাই অই ইয়ের" সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন যিনি একজন গুণী মানুষ ছিলেন এবং টানের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে এসে টান এবং রবীন্দ্রনাথের ইন্দো চীন সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের জন্য একটি প্রমুখ আন্তর্জাতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে সর্বদা সাহায্য করেছিলেন। সাংস্কৃতিক সৌহার্দের মিলন, চীনা ভবনের প্রিন্ট, টান নিজে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরামর্শ করে বানিয়েছিলেন। ১৯৩১ সালে, তিন বছর শান্তিনিকেতনে পড়ানোর পর এই ইন্দো-চীন সৌহার্দের ভাবনাকে প্রচার ও জনপ্রিয় করতে, টান চীনে ফিরত যান। প্রায় দুবছর সেখানে বিভিন্ন বক্তৃতা ও লেখার মাধ্যমে সেখানকার মানুষদের জাগরূক করেন ও ১৯৩৩ সালে নানকিনে ইন্দো-চীন সাংস্কৃতিক সমিতি খোলেন। সেই বছর তিনি ও তাঁর কিছু জ্ঞানীগুণী বন্ধু প্রায় ৫০হাজার বই ও প্রচুর অর্থ শান্তিনিকেতনে দান করেন। সেখানকার কিছু প্রকাশকরা সবরকম চীনা জ্ঞানে সমৃদ্ধ বইও দান করেন। ১৪ এপ্রিল ১৯৩৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে চীনা ভবনের উদ্বোধন হয়।[5] শান্তিনেকতন টান সাহেবকে ১৯৭৯ সালে "দেশিকোত্তম" উপাধিতে ভূষিত করে। [5]। ২০১৭ সালে চীনা ভবনের প্রধান অভিজিত ব্যানার্জী।[6] সম্প্রতি চীনা ভবন চারটি সহানুভূতিশীল স্মারক (এম ও ইউ) সই করেছে দুই দেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছোট ছোট শিক্ষা আদানপ্রদান জাতীয় প্রকল্পের জন্য।
হিন্দী ভবন
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দিভবনের অন্তর্ভুক্তি হয়। হাজারীপ্রসাদ দ্বিবেদী ছিলেন হিন্দী ভবনের প্রথম অধ্যক্ষ।
রবীন্দ্র ভবন
দর্শন সদন
আনন্দ পাঠশালা
রতন কুঠি
নাট্ট্য ঘর
প্রশাসনিক ভবন
বিনয় ভবন
বিনয় ভবন ১৯৪৮ সালে কলা ও কারুশিল্প এবং সঙ্গীত শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীকালে ১৯৫১ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ হিসেবে গড়ে ওঠে।[7] বিনয় ভবন শিক্ষকদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষার অন্যান্য দিশার প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। বিনয় ভবন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ব্যবস্থার একত্রিকরণ পদ্ধতিকে গ্রহণ করে, যার মাধ্যমে বর্ণ বৈচিত্র্যময় সমুদায়কে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা ও সেবা প্রদান করা যায়। যদি শিক্ষা পরিবর্তনের মাধ্যম হয়, তাহলে পর্যাপ্তরূপে প্রশিক্ষণ কর্মীদের থাকার প্রয়োজন জরুরী। এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা যথা বি এড, এম এড, এম এ পি এইচ ডি ইত্যাদি করতে পারে।[7] এখানে শারীর শিক্ষায় -এ ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলার ব্যাপারে শিক্ষা নিতে পারে।
কেন্দ্রীয় পাঠাগার
পূর্বপল্লী অতিথি ভবন
আন্তর্জাতীক অতিথি ভবন
শান্তিনিকেতন ডাকঘর
জনসংযোগ কার্যালয়
কৃষি অর্থনৈতিক গবেষণা কেন্দ্র
পিয়ারসন স্মৃতি হাসপাতাল
প্রেস্কো পেভিলিওন
ভারতীয় স্টেট ব্যা্ক শান্তিনিকেতন,
মেলা প্রঙ্গন- পৌষ মেলা
১৮৯১ সালে মহর্ষির ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা নেওয়া এবং পরে উপাসনা গৃহ নির্মাণ এর মত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮৯৪ সালে শুরু হওয়া পৌষমেলায় বিক্রি হত শান্তিনিকেতন লাগোয়া কিছু গ্রাম এর মানুষ এর কিছু ঘরোয়া সামগ্রী যেমন, মাটির হাড়ি ,লোহার কড়াই ,পাথরের বাটি,কাচের চুরি ইত্যাদি।যার মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ। সময়ের সাথে সাথে মেলা যেমন কলেবরে বেড়েছে তেমনই হারিয়াছে তার সাবেক রং রূপ উদ্দেশ্য।
শিল্প সদন
শিক্ষা চর্চা
পল্লী শিক্ষা ভবন
বিশ্বভারতী আইন-১৯৮৪ অনুসারে ১৯৬৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর, স্থাপিত "পল্লী শিক্ষা সদন" বাড়িটির নতুন নামকরণ করে "পল্লী শিক্ষা ভবন" রাখা হয়।
বাংলাদেশ ভবন
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত প্রতিষ্ঠান
অনুষদ সমূহ
তথ্যসূত্র
- "বিশ্বভারতী", অমিয়কুমার সেন, ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৯৭৩, পৃ. ১১২-১৪
- "Bishwabharati"।
- Tapati Dasgupta (১৯৯৩)। Social Thought of Rabindranath Tagore: A Historical Analysis। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা ১৮৮–। আইএসবিএন 978-81-7017-302-1।
- Ram Nath Sharma; Rajendra Kumar Sharma (২০০৬)। Problems of Education in India। Atlantic Publishers & Dist। পৃষ্ঠা ৩৫৩–। আইএসবিএন 978-81-7156-612-9।
- K.C. Brahmachary (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। Foreigners Who Loved and Served India। Diamond Pocket Books Pvt Ltd। পৃষ্ঠা ২১৭–। আইএসবিএন 978-93-5083-396-4।
- "Cheena Bhavana to increase student exchange programmes"। 03 November 2017। সংগ্রহের তারিখ 16 মার্চ 2018। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - "VinayaBhavana"। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৮।