ভূদেব মুখোপাধ্যায়

ভূদেব মুখোপাধ্যায় (২২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৭ - ১৫ মে ১৮৯৪) একজন বিশিষ্ট লেখক এবং শিক্ষাবিদ।

ভূদেব মুখোপাধ্যায়
জন্ম২২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৭
মৃত্যু১৫ মে ১৮৯৪
পেশাশিক্ষাবিদ, লেখক

প্রাথমিক জীবন

ভূদেব মুখোপাধ্যায় প্রথমে সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনা করেন । তারপর তিনি হিন্দু কলেজে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি মাসিক ৪০ টাকা বৃত্তি পেতেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার সহপাঠী ছিলেন । তার পিতার নাম বিশ্বনাথ তর্কভূষণ। [1]

কর্মজীবন

১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হিন্দু কলেজ ত্যাগ করেন এবং কিছুদিন হিন্দু হিতার্থী বিদ্যালয়ে এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত চন্দননগর সেমিনারীতে শিক্ষকতা করেন। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা মাদ্রাসায় ইংরাজি বিভাগের দ্বিতীয় শিক্ষক হিসাবে সরকারী শিক্ষাবিভাগে যোগ দেন। ১৮৬৪ সালে তিনি বিদ্যালয়সমূহের অতিরিক্ত বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাজে যোগ দেন। এরপর তিনি বেঙ্গল এডুকেশন সার্ভিসের প্রথম শ্রেনীতে উন্নীত হন। এরপর তিনি হান্টার কমিশনের (এডুকেশন কমিশন) সদস্য হিসাবে ২৩ জুলাই ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। [1]

সাহিত্যকর্ম

১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার উপরে শিক্ষাদর্পণ নামে দু আনা দামের মাসিক পত্রিকা পরিচালনা করেন। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে চুঁচুড়া থেকে সরকারী পত্রিকা এডুকেশন গেজেট এবং এবং সাপ্তাহিক বার্তাবহ পত্রিকা সম্পাদনা করেন । তার বহু প্রবন্ধ ও বই সাপ্তাহিক বার্তাবহ পত্রিকাতেই প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী। তার রচিত স্বপ্নলব্ধ ভারতের ইতিহাস বইতে কাল্পনিক ঘটনার সাহায্যে তিনি ভারতের জাতীয় চরিত্রের দুর্বলতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করেন। তার রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস বইতে সফল স্বপ্ন এবং অঙ্গুরীয় বিনিময় নামে দুটি গল্প ছিল। এগুলি ছিল বাংলা ভাষায় লিখিত দ্বিতীয় উপন্যাসধর্মী রচনা। প্রথম উপন্যাসধর্মী রচনা ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নববাবুবিলাস (১৮৫২)। অঙ্গুরীয় বিনিময় গল্পটির কাহিনী কিছুটা ইতিহাস থেকে নেওয়া হলেও গল্পটিকে মৌলিক রচনার পর্যায়ে ফেলা যায়। বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাসের এখানেই সূত্রপাত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসে অঙ্গুরীয় বিনিময় গল্পের কিছুটা প্রভাব আছে। ভূদেব মুখোপাধ্যায় রচিত অন্যান্য বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পারিবারিক প্রবন্ধ, সামাজিক প্রবন্ধ, আচার প্রবন্ধ, বিবিধ প্রবন্ধ, পুষ্পাঞ্জলি, এবং বিদ্যালয় পাঠ্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ক্ষেত্রতত্ত্ব, পুরাবৃত্তসার, বাঙলার ইতিহাস, ইংল্যান্ডের ইতিহাস, রোমের ইতিহাস প্রভৃতি। [1][2]

হিন্দি ভাষার উন্নতির জন্য তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিলেন। স্কুল পরিদর্শক থাকাকালীন বিহারে বহু হিন্দি স্কুল স্থাপন, বাংলা বইয়ের হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ ও মূল হিন্দি বই লেখায় তিনি সচেষ্ট ছিলেন। তারই প্রস্তাবে বিহারের আদালতে ফারসির পরিবর্তে হিন্দি ব্যবহার শুরু হয়। সংস্কৃত ভাষার উন্নতির জন্য তিনি তার পিতার নামে বিশ্বনাথ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছিলেন এবং চতুষ্পাঠীর শিক্ষকদের বৃত্তিদান করতেন। এছাড়াও বিশ্বনাথ চতুষ্পাঠী এবং মায়ের নামে ব্রহ্মময়ী ভেষজালয় স্থাপন করেছিলেন। [1]

১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিআইই উপাধি পান। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য ছিলেন । [1]

তথ্যসূত্র

  1. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান প্রথম খন্ড সংশোধিত চতুর্থ সংস্করণ
  2. বাঙ্গালা সাহিত্যের কথা - শ্রী সুকুমার সেন - সপ্তম সংস্করন
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.