নববাবুবিলাস

নববাবুবিলাস ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি ব্যঙ্গকৌতুক নকশা। প্রকাশকাল ১৮২৫। প্রমথনাথ শর্মণ ছদ্মনামে প্রকাশিত। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়আশুতোষ ভট্টাচার্য এটিকে ‘প্রথম বাংলা উপন্যাস’-এর মর্যাদা দিলেও, অধিকাংশ সমালোচক এটির উল্লেখ করেছেন একটি কৌতুক নকশা হিসাবেই। [1] পরে নববিবিবিলাস নামে ভবানীচরণ এই গ্রন্থের একটি দ্বিতীয় পর্বও রচনা করেন।

নববাবুবিলাস-এর মূল উপজীব্য উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতার উচ্চবিত্তসমাজের বহুসমালোচিত বাবু সংস্কৃতির অন্ধকার দিকটি। এটিই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত প্রথম বাংলা কথাসাহিত্য। গ্রন্থটি চারটি ‘খণ্ড’-এ বিভক্ত – ‘অঙ্কুর খণ্ড’, ‘পল্লবখণ্ড’, ‘কুসুমখণ্ড’ ও ‘ফল খণ্ড’। গ্রন্থের সূত্রপাত মঙ্গলকাব্যের ধাঁচে রচিত ‘বন্দনা’, ‘গণপতি বন্দনা’ ও ‘সরস্বতী বন্দনা’ দিয়ে। এরপর ‘অঙ্কুর খণ্ড অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের অঙ্কুর’ অধ্যায়ে সেকালের উচ্ছৃঙ্খল যুবসমাজের ও ঔপনিবেশিক শিক্ষাপ্রণালীর প্রতি কৌতুক কটাক্ষ নিক্ষেপ করা হয়েছে। ‘পল্লবখণ্ড অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের পল্লব’ অধ্যায়ে নব্যবাবুদের কুসঙ্গে পড়ার চিত্র, ‘কুসুমখণ্ড’-এ বাবুর নব্যবাবু নামধারণ, বেশ্যাগমন ও বিলাসব্যসন এবং ‘ফল খণ্ড অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের ফল’ অধ্যায়ে বাবুপত্নীর বিরহ, খেদোক্তি ও অন্তিমে করুণ পরিণতির বর্ণনা বিধৃত হয়েছে।

ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে,“‘বাবুর উপাখ্যান’ বা ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যঙ্গ আখ্যানগুলি অর্ধশিক্ষিত ধনী সন্তানদের কুৎসিত আমোদ-প্রমোদের কথা সাধুভাষায় বলা হলেও উদ্দেশ্যটি তত সাধু ছিল না। বাইরের দিক থেকে এসব নকশায় রঙ্গকৌতুক, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও গল্পের আমেজ থাকলেও ভিতরে ছিল ‘পর্নো’ (porno)-কেচ্ছা-কেলেংকারি। সমাজের কুরীতি দেখিয়ে সভ্যভব্য মানসিকতা সৃষ্টি, এই জন্যই ভবানীচরণ ও অন্যান্য নকশাকারেরা কলম ধরেছিলেন; কিন্তু রোগের চেয়ে ঔষধই হয়েছিল প্রাণঘাতী।” [2] যাই হোক, উনিশ শতকের কলকাতার বাবু কালচারের একটি উলঙ্গ রূপ চিত্রিত করে বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ইতিহাসে এই গ্রন্থটি এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে।

তথ্যসূত্র

  • রসরচনাসমগ্র, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সনৎকুমার গুপ্ত সম্পাদিত, নবপত্র প্রকাশন, কলকাতা, ১৯৮৭
  • বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, অষ্টম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০৭
  • দিশা সাহিত্য, জুলাই-সেপ্টেম্বর সংখ্যা, ২০০৮

পাদটীকা

  1. দিশা সাহিত্য, জুলাই-সেপ্টেম্বর সংখ্যা, ২০০৮, পৃ.১১
  2. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, অষ্টম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০৭, পৃ.১৩১
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.