ব্রহ্মপুত্র নদ
ব্রহ্মপুত্র নদ বা ব্রহ্মপুত্র নদী এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মপুত্রের অর্থ হচ্ছে "ব্রহ্মার পুত্র। ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব নাম ছিল লৌহিত্য।[2] নদীটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন অসমীয়ায়: লুইত , ব্ৰহ্মপুত্ৰ নৈ , ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদ , সংস্কৃত: ब्रह्मपुत्र, IAST: Brahmaputra; তিব্বতি: ཡར་ཀླུངས་གཙང་པོ་, ওয়াইলি: yar klung gtsang po ; সরলীকৃত চীনা: 布拉马普特拉河; প্রথাগত চীনা: 布拉馬普特拉河; ফিনিন: Bùlāmǎpǔtèlā Hé
ব্রহ্মপুত্র নদ | |
দেশসমূহ | চীন, ভারত, বাংলাদেশ |
---|---|
রাজ্যসমূহ | আসাম, অরুণাচল প্রদেশ |
Autonomous Region | তিব্বত |
উপনদী | |
- বাঁদিকে | দিবাং নদী, লোহিত নদী, ধানসিঁড়ি নদী |
- ডানদিকে | কামেং নদী, রায়ডাক নদী, জলঢাকা নদী, তিস্তা নদী |
নগর | গুয়াহাটি,তেজপুর,শিলঘাট |
উৎস | শিমায়াঙ-দাঙ হিমবাহ [1] |
- অবস্থান | হিমালয়, চীন |
- উচ্চতা | ৫,২১০ মিটার (১৭,০৯৩ ফিট) |
- স্থানাঙ্ক | ৩০°২৩′ উত্তর ৮২°০′ পূর্ব |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
- অবস্থান | গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ, বাংলাদেশ |
- উচ্চতা | ০ ফিট (০ মিটার) |
- স্থানাঙ্ক | ২৫°১৩′২৪″ উত্তর ৮৯°৪১′৪১″ পূর্ব |
দৈর্ঘ্য | ২,৮৫০ কিলোমিটার (১,৭৭০ মাইল) [1] |
অববাহিকা | ৬,৫১,৩৩৪ বর্গকিলোমিটার (২,৫১,৫০০ বর্গমাইল) |
প্রবাহ | |
- গড় | ১৯,৩০০ m³/s (৬,৮১,৬০০ ft³/s) |
- সর্বোচ্চ | ১,০০,০০০ m³/s (৩৫,৩১,৫০০ ft³/s) |
![]() গঙ্গা (হলুদ), ব্রহ্মপুত্র (গোলাপি) ও মেঘনা (সবুজ) নদীর অববাহিকা। গঙ্গা (হলুদ), ব্রহ্মপুত্র (গোলাপি) ও মেঘনা (সবুজ) নদীর অববাহিকা।
|






ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের নিকট জিমা ইয়ংজং হিমবাহে, যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত।[3] জাঙপো নামে তিব্বতে পুর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে এটি অরুণাচল প্রদেশে ভারতে প্রবেশ করে যখন এর নাম হয়ে যায় সিয়ং। তারপর আসামের উপর দিয়ে দিহাঙ নামে বয়ে যাবার সময় এতে দিবং এবং লোহিত নামে আরো দুটি বড় নদী যোগ দেয় এবং তখন সমতলে এসে চওড়া হয়ে এর নাম হয় ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্র হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বত ও আসামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ময়মনসিংহের দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পড়েছে।
১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদীর তলদেশ উঠিত হবার কারনে এর দিক পরিবর্তিত হয়ে যায়।১৭৮৭ সালের আগে এটি ময়মনসিংহের উপর দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে বয়ে যেত।পরবর্তিতে এর নতুন শাখা নদীর সৃষ্টি হয়।যা যমুনা নামে পরিচিত।উৎপত্তিস্থলকে এর দৈর্ঘ্য ২৮৫০ কিলোমিটার। ব্রহ্মপুত্র নদীর সর্বাধিক প্রস্থ ১০৪২৬ মিটার (বাহাদুরাবাদ)। এটিই বাংলাদেশের নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা হচ্ছে যমুনা। এক কালের প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদ বর্তমানে (২০১১) শীর্ণকায়।
কিংবদন্তি
ব্রহ্মপুত্রর উৎপত্তি সম্বন্ধে কালিকা পুরাণে একটি আখ্যান আছে ৷ অসমের পূর্বদিকে মিসিমি পর্ব্বতের অগ্রভাগে ব্রহ্মকুণ্ড নামে একটি কুণ্ড আছে৷ এটি হিন্দুদের অতি পবিত্র তীর্থ৷ এই ব্রহ্মকুণ্ডতেই পরশুরাম পাপের থেকে উদ্ধার পান, অর্থাৎ এখানেই তার হাত থেকে কুঠারটি খসে পড়ায় তিনি এর মহিমা দেখে এর জল অন্যের উপকারার্থে এর পারটি কাটিয়ে দেন ৷ ফলত এর জল দেশ-দেশান্তরে যায় ৷ এইভাবে ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎপত্তি হয় ৷
উৎপত্তি এবং গতিপথ
ভারতের উত্তরে অবস্থিত তিব্বত মালভূমির মানস সরোবর হ্রদ থেকে চাংপো নামে একটি নদী পূর্বমুখী হয়ে চীন ও মায়ানমারের মধ্যে কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণমুখে প্রথমে সিয়াং, তারপর দিহাং নামে অরুণাচল রাজ্যর মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে অসমে প্রবেশ করে ৷ দিহাঙের সাথে অরুণাচলের দিয়াং ও লোহিত নামে দুটি নদী সংযুক্ত হয়৷ এরপর থেকে এই সন্মিলিত জলভাগ ব্রহ্মপুত্র নাম লাভ করে৷ ব্রহ্মপুত্র অসমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয় এবং হুগলী ও পদ্মা নামে দুভাগে বিভক্ত হয়। তারপরে এটি বঙ্গোপসাগরে মেশে। ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার সঙ্গমস্থে বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন অবস্থিত ৷ [4]৷
আসাম এবং সংলগ্ন অঞ্চল


ইয়ারলুং সাঙপো (ব্রহ্মপুত্র) ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করে, যেখানে তাকে সিয়াং বলা হয়। এটি তিব্বতে এর মূল উচ্চতা ভূমি থেকে উৎপন্ন হয় এবং অবশেষে সমভূমিতে পৌঁছায়, যেখানে একে ডিহং বলা হয়। এটি প্রায় ৩৫ কিলোমিটার (২২ মাইল) দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়, এর পরে এটি আসাম উপত্যকার মাথায় ডিবাং নদী এবং লোহিত নদীর সাথে মিলিত হয়। লোহিতের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পরে নদীটি ব্রহ্মপুত্র এবং বুড়ুং-বুধুর নামে স্থানীয় বোডো উপজাতিদের নামে পরিচিত, এটি পরে আসাম রাজ্যে প্রবেশ করে এবং এখানে নদীটি খুব চওড়া হয় - আসামের কিছু অংশে ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) পর্যন্ত প্রশস্ত হয়।
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে, ব্রহ্মপুত্র তার বৃহত্তম উপনদীগুলির মধ্যে একটি তিস্তা নদীর (বা তিস্তা) সঙ্গে যুক্ত হয়। তিস্তার নীচে ব্রহ্মপুত্র দুটি বিভক্ত শাখায় বিভক্ত। পশ্চিম শাখা, যা নদীর প্রবাহের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে গঠিত, দক্ষিণে যমুনা (জোমুনা) নিম্ন গঙ্গার সাথে মিশে যাওয়ার কারণে প্রবাহ দক্ষিণে অব্যাহত রয়েছে, যাকে বলা হয় পদ্মা নদী। পূর্ব শাখা, অতিতে বৃহত্তর শাখা ছিল, তবে এখন অনেক ছোট, একে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র (ব্রোমোপুত্রো) বলা হয়। এটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঢাকার নিকটবর্তী মেঘনা নদীতে যোগ মিলিত হয়, এর পর পদ্মা এবং মেঘনা চাঁদপুরের কাছাকাছি গিয়ে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। নদীর এই চূড়ান্ত অংশটিকে মেঘনা বলা হয়।
বহ্মপুত্র ভারতের ধুবুরির পরে গারো পাহাড়ের চারদিকে দক্ষিণ বাঁক নিয়ে বাংলাদেশের সমভূমিতে প্রবেশ করে। বাংলাদেশের চিলমারী পার হয়ে প্রবাহিত হওয়ার পরে তিস্তা নদী ডান তীরে যুক্ত হয় এবং তারপরে যমুনা নদীর দক্ষিণে ২৪০ কিলোমিটার (১৫০ মাইল) পথ অতিক্রম করে। (গাইবান্দার দক্ষিণে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র মূলধারার বাম তীর ছেড়ে জামালপুর এবং ময়মনসিংহ পেরিয়ে ভৈরব বাজারের মেঘনা নদীতে যোগদানের জন্য প্রবাহিত হয়।) গঙ্গার সাথে মিলনের আগে যমুনা বড়াল, আত্রাইয়ের সম্মিলিত জল গ্রহণ করে এবং হুরসাগর নদী তার ডান তীরে এবং বাম তীরে বৃহত্তর ধলেশ্বরী নদী মিলিত হয়। ধলেশ্বরীর একটি শাখা বুড়িগঙ্গা ("পুরাতন গঙ্গা") বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং মুন্সিগঞ্জের ওপরে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়।
যমুনা গোয়ালন্দো ঘাটের উত্তরে গঙ্গার সাথে মিলিত হয়, এর পরে পদ্মা হিসাবে, তাদের সম্মিলিত জল প্রবাহ প্রায় ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দূরত্বে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপ জল প্রবাহের জন্য কয়েকটি ছোট ছোট শাখা ছড়িয়ে যাওয়ার পরে পদ্মার মূল প্রবাহটি চাঁদপুরের কাছে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয় এবং পরে মেঘনা মোহনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে এবং বদ্বীপে প্রবাহিত ছোট শাখা নদীগুলিও ব -দ্বীপ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপের বৃদ্ধি জলোচ্ছ্বাসের প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়।
গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র সহ অসংখ্য নদীর জলে পুষ্ট গঙ্গা ব-দ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম নদী ব-দ্বীপ। এর আয়তন ৫৯,৫৭০ বর্গকিলোমিটার (২৩,০০০ বর্গ মাইল)।[5]
অববাহিকার বৈশিষ্ট্য
ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকাটি ৬,৫১,৩৩৪ বর্গ কিলোমিটার এবং এটি একটি দীর্ঘ নদীর একটি ভাল উদাহরণ এবং বেশ কিছু আঁকাবাঁকা পথ তৈরি করে এবং প্রায়শই অস্থায়ী বালির চর তৈরি করে। যমুনা নদীতে উল্লেখযোগ্য টেকটোনিক ক্রিয়াকলাপের একটি অঞ্চল উন্নতি লাভ করেছে এবং এটি হিমালয়ের উৎস এবং বাংলার বদ্বীপের গঠনের সাথে জড়িত। বেশ কয়েকটি গবেষক অনুমান করেছেন যে বাংলাদেশের প্রধান নদী ব্যবস্থার অবস্থানের উপর অন্তর্নিহিত কাঠামোগত নিয়ন্ত্রণ।
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে অবস্থিত স্থান
- ১. উলিপুর পৌরসভা।
- ২. চিলমারী বন্দর।
- ৩. থানাহাট।
- ৪. রৌমারী।
- ৫. চর রাজিবপুর উপজেলা।
- ৬. বাহাদুরাবাদ ঘাট।
- ৭. ফুলছড়ি উপজেলা ও
- ৮. সাঘাটা বাজার।
- ৯. কাঁচকোল বাজার।
- ১০. ফকিরেরহাট বাজার।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে অবস্থিত স্থান
- ১. ইসলামপুর।
- ২. জামালপুর।
- ৩. ময়মনসিংহ।
- ৫. আওয়ালীকান্দা, বেলাব
- ৪. ভৈরব।
পদটীকা
- Brahmaputra River, Encyclopædia Britannica
- "ব্রহ্মপুত্র নদ - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৫।
- Yang Lina (২০১১-০৮-২২)। "Scientists pinpoint sources of four major international rivers"। Xinhua। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-০৬।
- http://www.indianetzone.com/29/origin_brahmaputra_river.htm
- Singh, Vijay P.; Sharma, Nayan; C. Shekhar; P. Ojha (২০০৪)। The Brahmaputra Basin Water Resources। Springer। পৃষ্ঠা 113। আইএসবিএন 978-1-4020-1737-7। ৮ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৫।
নোট
- সামাজিক বিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণী। বাংলাদেশের নদ-নদী। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা। পৃষ্ঠা ১৪৬।
তথ্যসূত্র
- This article incorporates text from a publication now in the public domain: Wood, James, সম্পাদক (১৯০৭)। "article name needed"। The Nuttall Encyclopædia। London and New York: Frederick Warne।
- Rahaman, M.M. & Varis, O. 2009. Integrated Water Management of the Brahmaputra Basin: Perspectives and Hope for Regional Development, Natural Resources Forum, Vol. 33, No. 1. pp. 60–75.
- Sarma, J N (২০০৫)। "Fluvial process and morphology of the Brahmaputra River in Assam, India"। Geomorphology। 70 (3–4): 226–256। doi:10.1016/j.geomorph.2005.02.007।
Ribhaba Bharali :- The Brahmaputra River Restoration Project.Published in Assamese Pratidin,Amar Assam in October 2012.
আরো পড়ুন
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে ব্রহ্মপুত্র নদ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
![]() |
Wikisource has the text of the 1911 Encyclopædia Britannica article Brahmaputra. |
- Bibliography on Water Resources and International Law. Peace Palace Library
- Rivers of Dhemaji and Dhakuakhana
- Background to Brahmaputra Flood Scenario
- The Mighty Brahmaputra
- Principal Rivers of Assam
- "The Brahmaputra", a detailed study of the river by renowned writer Arup Dutta. (Published by National Book Trust, New Delhi, India)
- Émilie Crémin. Entre mobilité et sédentarité : les Mising, « peuple du fleuve », face à l'endiguement du Brahmapoutre (Assam, Inde du Nord-Est). Milieux et Changements globaux. Université Paris 8 Vincennes Saint-Denis, 2014. Français. https://tel.archives-ouvertes.fr/tel-01139754