কবি নজরুল সরকারি কলেজ

কবি নজরুল সরকারি কলেজ (এছাড়াও কেএনজিসি হিসাবে উল্লেখ করা হয়) সরকারি কবি নজরুল কলেজ হিসেবেও পরিচিত, হলো বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[2] এই প্রতিষ্ঠানটি ১৮৭৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৯৯২ সাল থেকে এর বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। এই কলেজটি ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।[3]

কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা
কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা
নীতিবাক্যশিক্ষাই আলো
ধরনসরকারি
স্থাপিত১৮৭৪
প্রতিষ্ঠাতাহাজী মুহাম্মদ মহসিন - বাংলা এর ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চতাম্পন্ন জনহিতৈষীবৃন্দের মধ্যে একজন
অধিভুক্তিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা), ঢাকা শিক্ষা বোর্ড (কলেজ শাখা)
অধ্যক্ষঅধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার
প্রশাসনিক কর্মকর্তা
১৪৮ (প্রথম শ্রেণী - ০৩, দ্বিতীয় শ্রেণী - ৭৮, ৩য় শ্রেণী - ২৭, ৪র্থ শ্রেণী - ৪০)
শিক্ষার্থী৩৩,০০০+ [1]
স্নাতকবিএ, বিবিএ, বিএসসি, বিএসএস
স্নাতকোত্তরএমএ, এমবিএ, এমএসসি, এমএসএস
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকবি নজরুল সরকারি কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (কেএনজিসিএ)
অবস্থান
ঢাকা
শিক্ষাঙ্গনশহুরে, ১৮ একর
সংক্ষিপ্ত নামKNGC
ক্রীড়ারাগবি, ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল, পিংপং, দাবা, হকি, ব্যাডমিন্টন
ওয়েবসাইটhttp://kabinazrulcollege.gov.bd

প্রতিষ্ঠার পটভূমি

হাজী মুহাম্মাদ মহসীন ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় ১৮৭৪ সালে ঢাকায় কলকাতা মাদ্রাসার আদলে মোহসীনিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরে এটি ঢাকা মাদ্রাসা নামে প্রসিদ্ধ হয়। এটি ছিল পূর্ববাংলার মুসলমানদের জন্য প্রথম সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ মাদ্রাসার প্রথম সুপারিনটেন্ডেন্ট ছিলেন পন্ডিত ও ভাষাবিদ বাহারুল উলুম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী। ১৯১৫ সাল পর্যন্ত হাজী মুহম্মদ মোহসীন ফান্ড থেকে এই মাদ্রাসার ব্যয় নির্বাহ করা হয়। উক্ত সালে এটি উচ্চ মাদ্রাসায় রূপান্তরিত হয়।

১৯১৬ সালে মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগটি পৃথক হয়ে ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুল নাম ধারণ করে। ১৯২৩ সালে মাদ্রাসা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রূপান্তরিত হয় এবং ১৯৬৮ সালে কলেজের নামকরণ হয় কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজ। আবার নাম পরিবর্তন করে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামের অংশ ইসলাম শব্দটি বিলুপ্ত করে নতুন নামকরণ হয় কবি নজরুল সরকারি কলেজ । ১৯৭৮ সালে কলেজে সহশিক্ষার প্রচলন হয়। কলেজে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। কলেজের গ্রন্থাগারটি ৪০,০০০+ বইয়ে সমৃদ্ধ। কলেজের একটি আবাসিক ছাত্রাবাস রয়েছে। ফরাশগঞ্জের মোহিনীমোহন দাস লেনে কলেজ ছাত্রাবাসটি অবস্থিত। এটি স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ ছাত্র শামসুল আলমের নামে নামকরণ করা হয় শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাস।

বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

১৯৭৯ সালে কলেজটিতে বিজ্ঞান, মানবিকবাণিজ্য শাখায় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা চালু হয়। ১৯৮৫ সালে কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে প্রথম স্নাতক (সম্মান) কোর্স খোলা হয়। ১৯৯৩ সালে কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ১ম পর্ব মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। কলেজটিতে ১৯৮২ সালে বিএনসিসি কন্টিনজেন্ট এবং রোভার স্কাউট ব্যবস্থা চালু হয়। ২০০৪ সালে এই কলেজে বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও ভূগোলসহ মোট ১২টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৯৭ সালে হিসাববিজ্ঞানে ১ম পর্ব মাস্টার্স এবং হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও ইংরেজি বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলা হয়। ২০০৬ সালে বাংলায় ১ম পর্ব স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। বর্তমানে কলেজে মোট ২৪টি বিষয়ে অনার্স, ৫টি বিষয়ে ১ম পর্ব মাস্টার্স এবং ৪টি বিষয়ে শেষ পর্ব মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।

অনুষদ ও বিভাগ

কবি নজরুল সরকারি কলেজে মোট ৩টি অনুষদে পাঠদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। সেগুলো হল:

কলা এবং মানবিক অনুষদ

  • বাংলা বিভাগ
  • ইংরেজী বিভাগ
  • অর্থনীতি বিভাগ
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
  • ইতিহাস বিভাগ
  • ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
  • দর্শনশাস্ত্র বিভাগ
  • সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
  • আরবি সাহিত্য বিভাগ
  • আরবি বিভাগ

বিজ্ঞান অনুষদ

  • পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
  • রসায়ন বিভাগ
  • উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
  • প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ
  • পরিসংখ্যান বিভাগ
  • গণিত বিভাগ
  • ভূগোল বিভাগ
  • মনোবিজ্ঞান বিভাগ

বাণিজ্য অনুষদ

  • হিসাববিজ্ঞান বিভাগ
  • ব্যবস্থাপনা বিভাগ
  • মার্কেটিং বিভাগ
  • ফিন্যান্স বিভাগ

গ্রন্থাগার

এই কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি লাইব্রেরী রয়েছে। লাইব্রেরীটি কলেজ প্রাঙ্গনে ৩ নং ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। লাইব্রেরিতে ৪০,০০০+ টি বই ও ২০০০+ টি জার্নাল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রতিদিনের বেশ কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ার জন্য পত্রিকা কর্নার। লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরী কার্ড সংগ্রহ করতে হয়। লাইব্রেরী থেকে বই বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। লাইব্রেরীর সময়সূচী: সকাল ৮.৩০ টা থেকে বিকাল ৩.৩০ টা।

চিকিৎসা ব্যবস্থা

ছাত্রীদের চিকিৎসা প্রদানে কলেজ প্রাঙ্গনে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। এটি শুধুমাত্র কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত।

ছাত্রাবাস

কলেজের মোট হলের পরিমাণ ১টি। যা শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য। মেয়েদের জন্য কোন হলের ব্যবস্থা নেই।

  • শহীদ শামসুল আলম হল

সহ শিক্ষা কার্যক্রম

লেখাপড়ার পাশাপাশি কবি নজরুল সরকারি কলেজে শিক্ষা-সহায়ক কার্যক্রমকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এ কারণে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় ভালো ফল অর্জনের পাশাপাশি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এ কলেজের ছাত্ররা বরাবরই ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে আসছে।

ক্লাবসমূহ

কবি নজরুল সরকারি কলেজে বর্তমানে (২০২০) বেশ কয়েকটি ক্লাব রয়েছে। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ এখানে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করলেও ছাত্ররাই এসব ক্লাবের প্রাণ। সারা বছর জুড়ে এই ক্লাবগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন ও কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কলেজের ছাত্রদের উৎকর্ষ সাধনে কাজ করে যাচ্ছে। এইসব ক্লাবের আয়োজিত কিছু কিছু অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান হিসাবে মর্যাদা লাভ করেছে। দেশের বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ এ কার্যক্রমগুলোকে ভিন্নমাত্রা দান করে।

ক্লাবসমূহ হলো:

  • কবি নজরুল সরকারি কলেজ বিজ্ঞান ক্লাব
  • কবি নজরুল সরকারি কলেজ ডিবেটিং ক্লাব
  • কবি নজরুল সরকারি কলেজ চেস ক্লাব
  • কবি নজরুল সড়করি কলেজ ইংলিশ ক্লাব
  • কবি নজরুল সরকারি কলেজ সাংবাদিক সমিতি

কৃতি শিক্ষার্থী

গ্যালারী

তথ্যসূত্র

  1. College History
  2. "http://www.kabinazrulcollege.gov.bd/"। ১৬ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১৪ |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  3. "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলো ঢাকার সাত কলেজ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-২৮

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.