সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম
সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম যা সরকারি বাণিজ্য কলেজ বা, শুধুমাত্র কমার্স কলেজ নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় শহর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত একটি কলেজ। এটি বাণিজ্য বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো।
![]() সরকারি কমার্স কলেজ চট্টগ্রামের লোগো কলেজের লোগো | |
নীতিবাক্য | প্রবেশ করো জ্ঞান অন্বেষণে |
---|---|
ধরন | সরকারি কলেজ |
স্থাপিত | ১৯৪৭ |
মূল প্রতিষ্ঠান | গভর্নমেন্ট কমার্সিয়াল ইন্সটিটিউট (অংশবিশেষ) |
অধিভুক্তি | চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় |
অধ্যক্ষ | প্রফেসর সাগরকান্তি দে |
শিক্ষায়তনিক কর্মকর্তা | ৩৩+ জন |
প্রশাসনিক কর্মকর্তা | ৪৯+ জন |
শিক্ষার্থী | আনুমানিক ৭,৫০০ |
অবস্থান | , ২২.৩২৬০৩৩° উত্তর ৯১.৮১৭২৮৬° পূর্ব |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে আয়তন ৫.১৬ একর |
ভাষা | বাংলা, ইংরেজি |
রঙসমূহ | সাদা, কালো, সবুজ |
ক্রীড়া | ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন |
ওয়েবসাইট | সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম |
ইতিহাস
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলকাতার 'দি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট'-এর এক চতুর্থাংশ হিস্যা পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হলে সেটির দায়িত্ব প্রফেসর আবদুস সামাদ-কে দেওয়া হয়। তিনি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে অবশেষে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামকে বেছে নেন। কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের ভাগে পাওয়া টাইপ রাইটার, বই, ফাইল এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে তিনি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। চট্টগ্রামে এসে প্রফেসর সামাদ কোথায় এটি স্থাপন করা যায় তাই নিয়ে পড়লেন দোটানায়। কারণ, মনমতো কোনো জায়গা পাওয়া যাচ্ছিলো না। প্রফেসর আবদুস সামাদের পূর্ব পরিচিত ও তৎকালীন চট্টগ্রাম কলেজ-এর অধ্যক্ষ আবু হেনার সাথে এই বিষয়ে আলাপ করতে গেলে তিনি এটিকে তাঁর কলেজের একটি বিভাগ করার প্রস্তাব দেন। এটিকে শুধুমাত্র একটি বিভাগ না করে সম্পূর্ণ আলাদা একটি ইন্সটিটিউট করাই ছিল অধ্যক্ষ সামাদের উদ্দেশ্য। তাই এই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে প্রফেসর সামাদ এর বিকল্প খুঁজতে থাকেন। অবশেষে কোতোয়ালী থানাধীন বর্তমান জি.পি.ও. (জেনারেল পোস্ট অফিস) এর সামনে শুকতারা বিল্ডিং এর দুই তলার পুরোটাই অস্থায়ীভাবে ভাড়া নিয়ে শুরু হয় 'চট্টগ্রাম কলেজ অব কমার্স' তথা বর্তমান সরকারি কমার্স কলেজের যাত্রা।
সদ্য ভাগ হওয়া দেশের বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের নানাবিধ চাহিদা মেটাতে বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজসমূহ সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য বিশেষায়িত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে ফাইনাল ডে কোর্স (বর্তমান এইস.এস.সি.) ও বি.কম ক্লাস চালু হয় ১৯৪৭ এর সেপ্টেম্বর মাসে। প্রিন্সিপাল সামাদ ছাত্রদের_কে বাণিজ্য বিষয়ক শিক্ষা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন।
সরকারিকরণ
১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটি নিজ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছিলো। পরবর্তীতে এটি সরকারি স্বীকৃতি পায় এবং 'চট্টগ্রাম কলেজ অব কমার্স' থেকে 'গভর্নমেন্ট কলেজ অব কমার্স, চিটাগাং'-এ রূপান্তরিত হয়।
অধ্যক্ষ সামাদের চেষ্টায় কলেজটি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে এবং একটি বিশেষায়িত কলেজ রূপে চালু হয়।
জিপিও থেকে নাহার ভবনে স্থানান্তর
ছাত্র সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং শুকতারা বিল্ডিংয়ে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯৫৪ সালে স্ট্রান্ড রোডস্থ, বাংলাবাজারে অবস্থিত তৎকালীন চট্টগ্রামের সবচাইতে বড় অট্টালিকা নাহার বিল্ডিংয়ে কমার্স কলেজ স্থানান্তরিত হয়। সরকারি কমার্স কলেজ ১৯৫৪-১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এখানে চালু ছিল।
আগ্রাবাদে মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
১৯৫৭ সালের ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার এস. এম. হাসান, সিএসপি আগ্রাবাদে বর্তমান মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এখানে, ১৯৫৭ সালের শেষ দিকে সরকারি কমার্স কলেজ নাহার বিল্ডিং অর্থাৎ বাংলাবাজার থেকে স্থায়ীভাবে এসে তার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করে।
অবস্থান
কলেজটি চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকার, মোগলটুলী, কমার্স কলেজ রোডে অবস্থিত।
৫.১৬ একর জায়গা নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যস্ততম আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার পূর্ব প্রান্তে মনোরম পরিবেশে অবস্তিত চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ ব্যবসায় শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের মাত্র দুটো সরকারি কমার্স কলেজের মধ্যে এটি সবচেয়ে প্রাচীন। ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দে ভারত বিভাজনের পর এ কলেজের প্রতিষ্ঠা।

অনুষদ সমূহ
- স্নাতক (সম্মান)
- হিসাববিজ্ঞান
- ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং
- ব্যবস্থাপনা
- মার্কেটিং
- ইংরেজি
- বাংলা
- অর্থনীতি
- স্নাতক (পাস)
- বি.বি.এস (পাস)
- মাস্টার্স ১ম পর্ব : হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা
- মাস্টার্স শেষ পর্ব : হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা
সহ-শিক্ষা কার্যক্রম
শুধু শ্রেণি শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, সহশিক্ষা কার্যক্রমেও এ কলেজের সুনাম রয়েছে। একাধিকবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক লাভ করেছে সরকারি কমার্স কলেজ। বেতার, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এ কলেজের শিক্ষার্থীদের সদর্প পদচারণা রয়েছে। কলেজের বিতর্ক সংগঠন (সিসিডিএস), বি.এন.সি.সি, রেড ক্রিসেন্ট ও রোভার স্কাউট অনেক বেশি সমৃদ্ধ। বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে এ কলেজের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের তালিকা-
- বাংলাদেশ স্কাউটস, সরকারি কমার্স কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ;
- সিসিডিএস (কমার্স কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি) (বিতর্ক সংগঠন);
- বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, যুব রেড ক্রিসেন্ট - সরকারি কমার্স কলেজ ইউনিট;
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বি.এন.সি.সি.)
কৃতিত্ব
এ কলেজের শিক্ষার্থীরা মেধা তালিকায় প্রথম ২০ টি আসন অর্জনসহ ১৯৯৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০২ সালের বি.কম (পাস) পরীক্ষার রেজাল্টের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ কলেজ বিবেচিত হয়। এইচ.এস.সি পর্যায়েও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে বরাবরই ১ম স্থান অর্জন করে আসছে। বিবিএস (পাস), অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণীর রেজাল্ট আরো প্রশংসনীয়। এছাড়াও ২০১৮ সালে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠানে বিজয়ী হয় কমার্স কলেজ ডিবেটিং সোশ্যাটি-সিসিডিএস।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- আ হ ম মোস্তফা কামাল (সাবেক আইসিসি সভাপতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ)
- সাইফুজ্জামান চৌধুরী (বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ)
- সামশুল হক চৌধুরী (বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ)
- এম এ মালেক (স্বাধীন বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকা দৈনিক আজাদীর প্রকাশক ও সম্পাদক)
- ওয়াসিকা আয়েশা খান (বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ)
- নিজাম উদ্দিন হাজারী (বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ)
- আশেক উল্লাহ রফিক (বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ)
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |