হুদ (নবী)

হুদ (আরবি: هود) একজন নবীর নাম যার সম্পর্কে ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ কোরআন কিছু বর্ণনা রয়েছে। কোরআন-এর ১১তম সূরা হুদ তার নামে নির্দেশ করা হলেও এই সূরাটিতে তার সম্পর্কে সামান্য কিছু বর্ণনা রয়েছে।[1] আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে নূহ (আঃ)-এর পরেই হূদ (আঃ)-এর জাতি আদ ছিল।

নবী হুদ
নবী, পয়গম্বর
জন্মআ'দ্ব
সম্মানিতইসলাম
বিতর্কহুদ এবং এবার - পরিচয় নির্ণয় ইসলামের একটি বিতর্কের বিষয়

বংশ পরিচয়

হূদ (আঃ) ছিলেন নূহ (আঃ)-এরই বংশধর। আদ জাতিছামূদ জাতি ছিল নূহ (আঃ)-এর পরবর্তী বংশধর এবং নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধস্তন পুরুষ। ইরামপুত্র ‘আদ-এর বংশধরগণ ‘আদ ঊলা’ বা প্রথম ‘আদ এবং অপর পুত্রের সন্তান ছামূদ-এর বংশধরগণ ‘আদ ছানী বা দ্বিতীয় ‘আদ বলে খ্যাত।[2] ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রই ইরাম-এর দু’টি শাখা। সেকারণ ‘ইরাম’ কথাটি ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এজন্য কুরআনে কোথাও ‘আদ ঊলা’ (নাজম ৫০) এবং কোথাও ‘ইরাম যাতিল ‘ইমাদ’ (ফজর ৭) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।

আদ সম্প্রদায়ের ১৩টি পরিবার বা গোত্র ছিল। আম্মান থেকে শুরু করে হাযারামাউত ও ইয়েমেন পর্যন্ত তাদের বসতি ছিল।[3] উল্লেখ্য যে, নূহের প্লাবনের পরে এরাই সর্বপ্রথম মূর্তিপূজা শুরু করে।

ঘটনা

হুদ (আঃ) এর জাতির নাম ছিল আ'দ। এটি আরবের প্রাথমিক যুগের একটি জাতি। বনি আদ গোত্রকে "আমালিকা" গোত্রও বলা হয়। খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক দুই হাজার বছর আগে ইয়েমেনের হাজরামাউত অঞ্চলে তাদের বসবাস ছিল বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। দীর্ঘাকৃতি, দৈহিক শক্তি ও পাথর ছেদনশিল্পে তাদের বিশেষ খ্যাতি ছিল। কালক্রমে তারা কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও মূর্তি পূজার লিপ্ত হয়ে পড়ে। দৈহিক শক্তির কারণেও তারা বিভিন্ন অত্যাচার ও উচ্ছৃঙ্খলতায় লিপ্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ হুদ (আঃ)-কে তাদের উদ্দেশ্যে পাঠান, আল্লাহর শোকর গোজার ও সৎ কাজের আহবান দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাদের সামান্য কিছু ছাড়া বাকি সবাই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করল। এ অবস্থায় আল্লাহর শাস্তি তাদের ওপর নেমে আসতে লাগল। প্রথমে তারা দীর্ঘস্থায়ী খরার কবলে পড়ল। হুদ (আঃ) তাদের বললেন, এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু অত্যাচারী এ জাতির ওপর তাঁর উপদেশের কোনো আসর হলো না। তারা কুফর, শিরক ও উচ্ছৃঙ্খলতার পথেই এগিয়ে চলল। পরিশেষে তাদের প্রতি প্রচণ্ড ঝড়ঝঞ্ঝা পাঠানো হলো। এই শাস্তি একাধারে আট দিন তাদের ওপর প্রবাহিত হলো এবং এভাবে সেই আ'দ জাতি ধ্বংস হয়ে গেল। এ জাতির ধ্বংসের ঘটনা কোরআন মজিদের আরো অনেক সুরায় আলোচিত হয়েছে।[4]

আপতিত গজব

আদ-এর অমার্জনীয় পাপের ফলে প্রাথমিক গজব হিসাবে তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। তাদের শস্যক্ষেত সমূহ শুষ্ক বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়। বাগ-বাগিচা জ্বলে-পুড়ে যায়। এতেও তারা শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেনি। কিন্তু অবশেষে তারা বাধ্য হয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে। তখন আসমানে সাদা, কালো ও লাল মেঘ দেখা দেয় এবং গায়েবী আওয়ায আসে যে, "তোমরা কোনটি পছন্দ করো?" লোকেরা বলল কালো মেঘ। তখন কালো মেঘ এলো। লোকেরা তাকে স্বাগত জানিয়ে বলল, "এটি আমাদের বৃষ্টি দেবে"। জবাবে বলা হয়,

ফলে অবশেষে পরদিন ভোরে আল্লাহর চূড়ান্ত গযব নেমে আসে। সাত রাত্রি ও আট দিন ব্যাপী অনবরত ঝড়-তুফান বইতে থাকে। মেঘের বিকট গর্জন ও বজ্রাঘাতে বাড়ী-ঘর সব ধ্বসে যায়, প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে গাছ-পালা সব উপড়ে যায়, মানুষ ও জীবজন্তু শূন্যে উত্থিত হয়ে সজোরে যমীনে পতিত হয়।[7][8]

তথ্যসূত্র

  1. কুরআন 11:50–60
  2. ইবনু কাছীর, সূরা আ‘রাফ ৬৫, ৭৩।
  3. কুরতুবী, আ‘রাফ ৬৫।
  4. আ'দ গোত্র ও তাদের হুদ নবীর প্রসঙ্গ অবতারণা, লেখকঃ মাওলানা হোসেন আলী; প্রকাশিত হয়েছেঃ ৩০শে জুলাই ২০১২।
  5. সূরা আল আহক্বাফ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ আগস্ট ২০১৭ তারিখে, আয়াত ২৪-২৫, মারেফুল কোরআন।
  6. ইবনু কাছীর, সূরা আ‘রাফ ৭১।
  7. সূরা আল ক্বামার ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ আগস্ট ২০১৭ তারিখে, আয়াত ১৮-২১, মারেফুল কোরআন।
  8. সূরা আল হাক্বক্বাহ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ আগস্ট ২০১৭ তারিখে, আয়াত ৬-৮, মারেফুল কোরআন।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.