ইদ্রিস

ইদ্রিস যিনি মুসলমানদের নিকট হযরত ইদ্রিস (আঃ) নামে পরিচিত, ইসলামী ইতিহাস অনুসারে মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত দ্বিতীয় নবী। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুসারে তিনি ইসলামের প্রথম নবী আদম -এর পর স্রষ্টার নিকট হতে নবীত্ব লাভ করেন। তাঁর জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে তিনি ইরাকের বাবেলে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কারো মতে তিনি মিশরে জন্মগ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, বাইবেলে উল্লেখিত 'ইনোখ' (Enoch) ব্যক্তিটি তিনিই।[1][2]

ইদ্রিস (নবী)
ইদ্রিস নবীর একটি আলোকিত হস্তলিখিত সংস্করণ থেকে স্বর্গের এবং জাহান্নাম পরিদর্শন একটি কল্পিত চিত্রকর্ম
নবী, অতীন্দ্রিয়, দার্শনিক এর নবী
সম্মানিতইসলাম
বিতর্কইদ্রিসকে প্রায়ই ইনোক এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়; কিন্তু অন্যান্য মুসলিমরা দুটি ভিন্ন নবী হিসাবে দুই পরিসংখ্যান লক্ষ্য করা যায়
যাকে প্রভাবিত করেছেননবী, অতীন্দ্রিয়, দার্শনিক এর নবী

ইসলামী ভাষ্য মতে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ মিরাজের রাতে চতুর্থ আসমানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ধারণা করা হয়, তিনিই সর্বপ্রথম কলম এবং কাপড় সেলাই করার বিদ্যা আবিস্কার করেন। বলা হয়, জ্যোতির্বিজ্ঞান,অঙ্কশাস্ত্র এবং অস্ত্রের ব্যবহারও তিনিই সর্বপ্রথম আবিস্কার করেন।

নাম ও বংশপরিচিতি

ইদ্রীস এর নাম ও বংশ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে বিরাট মতভেদ আছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে ইসহাকের মতে, তিনি হলেন ইসলামের নবী নূহ এর দাদা। তাঁর আসল নাম হলো আখনূখ। ইদ্রীস তাঁর উপাধি। কিংবা আরবি ভাষায় তাঁর নাম ইদ্রীস আর হিব্রু ও সুরইয়ানী ভাষায় তাঁর নাম হলো আখনূখ। ইবনে ইসহাক তাঁর বংশধারা বর্ণনা করেনঃ আখনূখ (ইদ্রীস) ইবনে ইয়ারুদ ইবনে মাহলাইল। এভাবে তাঁর বংশধারা আদম এর পুত্র শীষ এর সাথে মিলিত হয়। আরেকদল ঐতিহাসিকের মতে, ইদ্রীস ইসরাইল বংশীয় নবী। আর ইদ্রীস ও ইলয়াস একই ব্যক্তির নাম ও উপাধি।

সংক্ষিপ্ত জীবনী

তাঁর জীবন সম্পর্কে যতোটুকু জানা যায়, তা হলো- ছোটবয়সে তিনি শীষএর ছাত্র ছিলেন। বড় হওয়ার পর আল্লাহ তাকেঁ নুবুওয়্যত দান করেন। তখন তিনি আদম এর ওপরে অবতীর্ণ শরীয়ত ত্যাগ করতে মন্দলোকদের নিষেধ করেন। অল্পকিছু লোক তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সৎপথে ফিরে আসলো। আর অধিকাংশ মানুষই তাঁর বিরোধিতা করলো। তাই তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে দেশ ছেড়ে যেতে মনস্থ করলেন। কিন্তু তাঁর অনুসারীরা মাতৃভূমি ছাড়তে গড়িমসি করে বললো, বাবেলের মতো দেশ ছেড়ে গেলে এমন দেশ আর কোথায় পাব? উত্তরে তিনি বললেন, যদি আমরা আল্লহর জন্য হিজরত করি তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে এরচে' উত্তম প্রতিদান দেবেন। এরপর তিনি নিজের অনুসারীদেরসহ দেশ ছেড়ে রওয়ানা হলেন এবং একসময় মিশরের নীলনদের তীরে এসে পৌঁছলেন। এ জায়গা দেখে তারা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং এখানেই বসবাস করতে লাগলেন। তিনি সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধে ব্রতি হন। কথিত আছে, তাঁর যুগে ৭২টি ভাষা ছিল এবং এর সবকটি ভাষাই পারতেন।

কুরআনে ইদ্রীস এর আলোচনা

কুরআনে শুধু দুই জায়গাতে ইদ্রীস এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা মারইয়াম এবং সূরা আম্বিয়াতে। এ সকল জায়গায় তাঁর সম্পর্কে কুরআনের ভাষ্য হলোঃ

হাদিসে ইদ্রীস এর আলোচনা

বুখারী ও মুসলিম শরিফের মেরাজের হাদিসে ইদ্রীস সম্পর্কে শুধু এতটুকু বলা হয়েছে যে, তিনি একজন নবী ছিলেন এবং মেরাজের রাতে মুহাম্মাদ (সঃ)এর সাথে চতুর্থ আসমানে তাঁর সাক্ষাত হয়েছিল।[5] [6]

মৃত্যু

ইদ্রীস এর বয়স সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী ইদ্রীস ৩৬৫ বছর জীবিত থাকেন।[7] তবে আরেক বর্ণনানুযায়ী তিনি ৮২ বছর জীবিত থাকেন। তাঁর মৃত্যুবরণ করা সম্পর্কেও মতভিন্নতা রয়েছে। কারো কারো মতে তিনি মৃত্যুবরণ করেননি। বরং আল্লাহ তাকে চতুর্থ আসমানে তুলে নিয়েছেন। তবে বেহেস্তে থেকে যাওয়ার কাহিনী গুলো ইসরাঈলী বর্ণনা।

তথ্যসূত্র

  1. Erder, Yoram, “Idrīs”, in: Encyclopaedia of the Qurʾān, General Editor: Jane Dammen McAuliffe, Georgetown University, Washington DC.
  2. P. S. Alexander, "Jewish tradition in early Islam: The case of Enoch/Idrīs," in G. R. Hawting, J. A. Mojaddedi and A. Samely (eds.), Studies in Islamic and Middle Eastern texts and traditions in memory of Norman Calder ( jss Supp. 12), Oxford 2000, 11-29
  3. কুরআন 19:56-57
  4. কুরআন 21:85-86
  5. সহিহ বুখারী ৩৩৪২, iHadis.com
  6. সহিহ মুসলিম ৩০০, iHadis.com
  • কাছাছুল কোরআন। মাওলানা হিফজুর রহমান রচিত, মাওলানা নুরুর রহমান অনুবাদিত এবং এমদাদিয়া লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত। প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৭৮-৮৯।
  • উইকিপিডিয়া (আরবি, উর্দূ ও ইংরেজি সংস্করণ)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.