ইউনুস

ইউনুস (আ:) (হিব্রু ভাষায়: יוֹנָה, আধুনিক হিব্রু: Yona, তিবেরিয়ান: jon'ɔh, "dove"; আরবি:يونس, ইউনুস আথবা يونان, ইউনান; লাতিন: Ionas) কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবী। যাকে 'নীনাওয়া' বাসীদেরকে হিদায়াতের জন্য আল্লাহ প্রেরণ করেন।

হযরত ইউনুস (আঃ)
ইজরাঈলের একজন রাজা ও ইসলামের একজন বাণীবাহক বা নবী
রাজত্বকাল?
ইউনুস
নবী
জন্ম৯৩ শতক খ্রি:পূর্ব
মৃত্যু৮ম শতক খ্রি:পূর্ব
সম্মানিতইহুদীধর্ম
ইসলাম
খ্রীষ্টধর্ম
প্রধান মঠনবী ইউনুস এর সমাধি, মসুল, ইরাম
উৎসবসেপ্টেম্বর ২১ – রোমান ক্যাথলিক ধর্ম
জুলাই ৩১

কোরআনে ইউনুস (আ:)এর আলোচনা

কোরআনে ছয়টি সূরায় মোট ১৮ বার ইউনুস (আ:)এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সূরাগুলো হলো- আনআ'ম, ইউনুস, আস ছাফ্‌ফাত, আল আম্বিয়া, এবং আল ক্বলম। এর মাঝে প্রথম চারটি সূরায় তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শেষের দু'টি সূরায় তাঁর গুণপ্রকাশক শব্দ 'যুন্নুন' (আরবি: ذو النون) এবং 'সাহিবুল হূত' (আরবি: صاحب الحوت) উল্লেখ করা হয়েছে। আর সূরা আন-নিসাসূরা-আনআ‍‌'মে পয়গম্বরদের তালিকার মাঝে শুধু তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে; অন্য কোন আলোচনা করা হয়নি। এছাড়া বাকী চারটি সূরায় তাঁর ঘটনার ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে এ সম্পর্কিত একটি ছক দেয়া হলো:[1]

ইউনুসের রাশিয়ান অর্থডক্স আইকন
ক্রমিক সংখ্যাসূরাআয়াত নংউল্লেখের সংখ্যা
আন নিসা১৬৩
আল আনআম৮৭
ইউনুস৯৮
আল আম্বিয়া৮৭,৮৮
আস ছাফ্‌ফাত১৩৯-১৪৮১০
আল ক্বলম৪৮-৫০

কোরআনে ইউনূস (আ:)এর ঘটনা উল্লেখ করে সূরা আস-ছাফফাতে বলা হয়েছে:

আর ইউনুসও ছিলেন পয়গম্বরগণের একজন। যখন পালিয়ে তিনি বোঝাই নৌকায় গিয়ে পৌঁছেছিলেন। অতঃপর লটারী (সুরতি) করালে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেন। অতঃপর একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলল, তখন তিনি অপরাধী গণ্য হয়েছিলেন। যদি তিনি আল্লাহর তসবীহ পাঠ না করতেন, তবে তাঁকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত। অতঃপর আমি তাঁকে এক বিস্তীর্ণ-বিজন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম, তখন তিনি ছিলেন রুগ্ন। আমি তাঁর উপর এক লতাবিশিষ্ট বৃক্ষ উদগত করলাম। এবং তাঁকে, লক্ষ বা ততোধিক লোকের প্রতি প্রেরণ করলাম। তারা বিশ্বাস স্থাপন করল অতঃপর আমি তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবনোপভোগ করতে দিলাম।[2]

নাম ও বংশপরিচয়

ইউনূস (আ:)এর বংশ সম্পর্কে শুধু এটুকুই জানা যায় যে, তাঁর পিতার নাম ছিল 'মাত্তা'।বুখারী শরীফের একটি হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে এ কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। বাইবেলে ইউনূস (আ:)এর নাম 'ইউনাহ' এবং তাঁর পিতার নাম 'আমতা' বলা হয়েছে। তবে ইউনূস ইবনে মাত্তাহ এবং ইউনাহ ইবনে আমতার মাঝে ব্যক্তি হিসেবে কোন পার্থক্য নেই। এটা আরবি ও হিব্রু ভাষার উচ্চারণের পার্থক্য।[3]

ধর্মপ্রচারের স্থান

ইরাকের সুপ্রসিদ্ধ জনপদ 'নীনাওয়া'এর অধিবাসীদের হিদায়াতের জন্য তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল। নীনাওয়া আশূরী রাজ্যের রাজধানী এবং মাওসেল এলাকার কেন্দ্রীয় শহর ছিল। কোরআনে এই শহরের জনসংখ্যা এক লক্ষাধিক বলা হয়েছে।[4]

ইউনূস (আ:)এর ঘটনা

২৮ বছর বয়সে ইউনূস (আ:) নুবূয়্যত লাভ করেন এবং নীনাওয়াবাসী দাওয়াত দিতে আদিষ্ট হন। দীর্ঘদিন দাওয়াত দেয়ার পরও তারা ইমান না আনায় তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে নীনাওয়াবাসীর জন্য গজবের দোয়া করেন এবং ওই শহর ত্যাগ করেন।ফোরাত (ইউফ্রেটিস)নদীর তীরে পৌঁছার পর তিনি নৌকায় আরোহণ করেন। মাঝনদীতে যাওয়ার পর নৌকা ঝড়ে আক্রান্ত হয়। সে যুগের কুসংস্কার অণুযায়ী নৌকার আরোহীরা মনে করলো, নিশ্চয় এই নৌকায় কোন পলাতক দাস আছে। এটা শুনে ইউনূস (আ:)এর চৈতন্যদয় হলো যে, তিনি শহর ছাড়ার ব্যাপারে আল্লাহর অণুমতির অপেক্ষা করেননি। তিনি নিজের দোষ স্বীকার করলেন। কিন্তু নৌকার আরোহীরা তাঁর সততায় মুগ্ধ হলো এবং তাকে নৌকা থেকে ফেলে দিতে সম্মত হলো না। শেষপর্যন্ত তারা লটারী করলো এবং সেখানেও ইউনূস (আ:)এর নামই উঠলো। ফলে বাধ্য হয়ে তারা ইউনুস (আ:)কে নদীতে ফেলে দিল।এ সময় এক বিরাট মাছ তাকে গিলে ফেলে। কারো কারো মতে, সেটা ছিল তিমি মাছ। তিমির পেটের অন্ধকারের মাঝে তিনি আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ফলে আল্লাহর আদেশে মাছটি তাকেঁ তীরে এসে উগড়ে দিল। কোরআনরে বর্ণনামতে, দীর্ঘদিন মাছের পেটে থাকার কারণে তিনি অসুস্থ এবং দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই আল্লাহ আপন অণুগ্রহে সেখানে লাউগাছ উৎপন্ন করেন। সুস্থ হওয়ার পর তাকেঁ আবার নীনাওয়াবাসীদের কাছেই পাঠানো হয় এবং নীনাওয়াবাসী ইমান আনে।[5]

তথ্যসূত্র

  1. কাছাছুল কোরআন। হিফজুর রহমান রচিত,মাওলানা নূরুর রহমান অনূদিত এবং এমদাদিয়া লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত। তৃতীয় খন্ড। পৃষ্ঠা নং-১০০
  2. আলতাফসীর ডট কম
  3. কাছাছুল কোরআন। হিফজুর রহমান রচিত,মাওলানা নূরুর রহমান অনূদিত এবং এমদাদিয়া লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত। তৃতীয় খন্ড। পৃষ্ঠা নং:১০৫-১০৬
  4. কাছাছুল কোরআন। হিফজুর রহমান রচিত,মাওলানা নূরুর রহমান অনূদিত এবং এমদাদিয়া লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত। তৃতীয় খন্ড। পৃষ্ঠা নং-১০৭
  5. কাছাছুল কোরআন। হিফজুর রহমান রচিত,মাওলানা নূরুর রহমান অনূদিত এবং এমদাদিয়া লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত। তৃতীয় খন্ড। পৃষ্ঠা নং:১০০-১০৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.