সব কিছু ভেঙে পড়ে

সব কিছু ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ রচিত উপন্যাস, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সালে[1] একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলাদেশের আগামী প্রকাশনী, ঢাকা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে আজাদ নারী-পুরুষের মধ্যেকার শারীরিক ও হৃদয়সম্পর্কের নানা আবর্তন এবং পরিণতি কাহিনীকারে প্রকাশ করেছে যা বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক হয়ে উঠতে পারে, এবং প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় প্রায়শই পরিলক্ষিত হতে পারে। গাঠনিক এবং বাচনভঙ্গির দিক বিবেচনায় এটি বাংলা সাহিত্যে একটি অধুনিক জীবনবাদী উপন্যাসের বহিঃপ্রকাশ।[2]

সব কিছু ভেঙে পড়ে
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকহুমায়ুন আজাদ
মূল শিরোনামসব কিছু ভেঙে পড়ে
প্রচ্ছদ শিল্পীসমর মজুমদার
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
বিষয়নারী-পুরুষের সম্পর্ক
ধরনউপন্যাস
প্রকাশিতফেব্রুয়ারি ১৯৯৫
একাদশ প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১১
প্রকাশকআগামী প্রকাশনী
মিডিয়া ধরনছাপা (শক্তমলাট)
পৃষ্ঠাসংখ্যা১৬৮ (প্রথম সংস্করণ)
১৪৪ (একাদশ সংস্করণ)
আইএসবিএন9789844012646
ওসিএলসি32891823
পূর্ববর্তী বইছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল (১৯৯৪) 
পরবর্তী বইমানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ (১৯৯৬) 

উপন্যাসটি মাহবুর চরিত্রের জীবনের ঘটনা প্রবাহ অনুসরণ করে, যিনি পেশায় সেতু প্রকৌশলী। কাঠামো নির্মাণ পেশার অভিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের পরষ্পরিক মিলবিন্যাস খুঁজে পান মাহবুব, ফলে জাগতিক বস্তুগত, অবস্তুগত এবং মনস্তাত্তিক বিষয়াদী তার কাছে সমার্থক হয়ে উঠতে শুরু করে। তার দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের সম্পর্ক একটি কাঠামো, যার কাজ ভার বহন করা এবং একসময় কাঠামোটি ভার বহন করতে না পারার ব্যর্থতায় ভেঙে পরে। আজাদ দেখিয়েছেন সম্পর্কের বাস্তবতা, যেখানে নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে এবং পরিণতিতে তাদের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

হুমায়ুন আজাদ উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছেন তাদের, যাদের তিনি(আমি) পান(পাই) নি, যারা তাকে(আমাকে) পান(পায়) নি।[3]

শিরোনাম

সব কিছু ভেঙে পড়ে নামকরণের সঙ্গে নাইজেরিয় লেখক চিনুয়া আচেবের ১৯৫৮ সালে রচিত থিংস ফল অ্যাপার্ট (ইংরেজি: Things Fall Apart) উপন্যাসের নামের সামঞ্জস্য পাওয়া যায়, উনিশ শতকের শেষের দিকে নাইজেরিয়ায় প্রাক এবং উত্তর উপনিবেশবাদ জীবনের প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটির নামকরণ করা হয়েছিল ডব্লিউ. বি. ইয়েটসের "দ্য সেকেন্ড কামিং" কবিতার একটি পঙ্‌ক্তি থেকে।[4]

চরিত্রসমূহ

  • মাহবুব মধ্যবয়সী একজন পুরুষ যিনি একজন সেতু প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন, তার নিজস্ব একটি কম্পানী আছে, মাহবুবের ছোটোবেলা থেকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা (যৌনতা) সহ মাহবুবের জীবনে কি প্রভাব আনে তাই এই উপন্যাসের মূল বিষয়
  • ফিরোজা মাহবুবের পত্নী যাকে মাহবুবের পরিণত বয়সে মূল সঙ্গী হিসেবে দেখানো হয়, মাহবুবের পত্নী অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও মাহবুব কিছু মনে করেনা
  • অর্চি উঠতি বয়সী এক মেয়ে যে মাহবুব এবং ফিরোজার একমাত্র সন্তান
  • রওশন মাহবুবের বিদ্যালয় জীবনের এক সহপাঠিনী যার সঙ্গে মাহবুবের সম্পর্ক প্রেম পর্যন্ত গড়ায়, মাহবুব এবং রওশন একে অপরকে নগ্নও দেখে
  • অনন্যা পরিণত বয়সে মাহবুবের সঙ্গে পরিচয় হয়, তার চেয়ে অনেক ছোটো এক মেয়ে, এই মেয়েটি একবার সড়ক দূর্ঘটনায় পড়লে মাহবুব তাকে তার গাড়িতে ওঠায় এইভাবেই তার সঙ্গে পরিচয় হয়

পটভূমি

উপন্যাসের প্রেক্ষাপট থেকে পারিবারিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ বাস্তবতার পষ্ট চিত্র উঠে আসার পাশাপাশি বাঙালির আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রকাশ পাওয়া যায়।[2]

প্রকাশনা

ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সালে[1] (ফাল্গুন, ১৪০১ বঙ্গাব্দ) ঢাকার একুশে গ্রন্থমেলায় আগামী প্রকাশনী থেকে উপন্যাসটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আগামী প্রকাশনীর অধীনেই ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রথম প্রকাশের সাতটি মুদ্রণ সংস্করণ প্রকাশ হয়। ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে উপন্যাসটির নবম, এবং নভেম্বর ২০০৮ সালে দশম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটির একাদশ এবং সর্বশেষ সংস্করণ।

আরো দেখুন

  • হুমায়ুন আজাদের গ্রন্থতালিকা

তথ্যসূত্র

  1. মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম (২০১২)। "আজাদ, হুমায়ুন"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীরবাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901। ওসিএলসি 883871743
  2. ড. জাহারাবী রিপন (আগস্ট ১১, ২০০৮)। "সব কিছু ভেঙে পড়ে : জীবনবাদী শিল্পদ্রষ্টা হুমায়ুন আজাদ"। মুন্সিগঞ্জ.কম। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৪, ২০১৭
  3. আজাদ, হুমায়ুন (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫)। সব কিছু ভেঙে পড়েআগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৫। আইএসবিএন 9789844012646।
  4. "Significance of the Title of the Novel 'Things Fall Apart' by Chinua Achebe" [চিনুয়া আচেবের উপন্যাস 'থিংস ফল অ্যাপার্ট'-এর শিরোনামের গুরুত্ব]literary-articles.com (ইংরেজি ভাষায়)। লিটারেরি আর্টিকেলস। নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৪, ২০১৭

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.