একটি খুনের স্বপ্ন
একটি খুনের স্বপ্ন বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ রচিত একটি উপন্যাস। ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে[1] (ফাল্গুন, ১৪০০ বঙ্গাব্দ) একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলাদেশের আগামী প্রকাশনী, ঢাকা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এটি হুমায়ুন আজাদ রচিত শেষ উপন্যাস। ১৯৬০-এর দশকের এক যুবকের প্রেমের মর্মান্তিক যন্ত্রণার অসামান্য উপন্যাস হুমায়ুন আজাদের একটি খুনের স্বপ্ন এবং তিনি এই উপন্যাস উৎসর্গ করেছেন "১৯৬৪-১৯৬৮" পর্যন্ত কাটানো তার অতীত-সময়কালকে।[2]
![]() প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ | |
লেখক | হুমায়ুন আজাদ |
---|---|
মূল শিরোনাম | একটি খুনের স্বপ্ন |
প্রচ্ছদ শিল্পী | সমর মজুমদার |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
বিষয় | প্রেম |
ধরন | উপন্যাস |
প্রকাশিত | ফেব্রুয়ারি ২০০৪ |
প্রকাশক | আগামী প্রকাশনী |
মিডিয়া ধরন | ছাপা (শক্তমলাট) |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১১২ (প্রথম প্রকাশ) |
আইএসবিএন | 984-7-000-60773-4 |
ওসিএলসি | 55684555 |
পূর্ববর্তী বই | পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪) |
বিষয়বস্তু
ষাটের দশকের প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা উপন্যাসটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণের ভালোবাসার কাহিনী নিয়ে। সুফিয়া নাম্নী এক সমবয়সী তরুণীর প্রতি নায়কের ব্যাপক মানসিক আকর্ষণ তরুণটিকে অনেক শান্তিও দেয় আবার অশান্তিও দেয়; তরুণটি তরুণীটির সঙ্গে অনেক চমৎকার এবং স্মরণীয় সময় কাটায় কিন্তু বেশকয়েকবার যখন সে সুফিয়াকে কাছে পেতে চেয়েও পায়না তখন অনেক মানসিক কষ্টে ভোগে। উপন্যাসটির শেষের দিকে নায়কের মামাতো ভাই তোফাজ্জলের বাসায় তোফাজ্জল এবং সুফিয়াকে নগ্ন অবস্থায় আবিষ্কার করে নায়ক;
নায়ক প্রেমিকের ভাষায়ঃ
“ | আমি নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকে প্রথমে অন্ধ হয়ে যাই, তারপর আমার চোখে আলো জ্বলে ওঠে, অন্ধকার থেকেও যা উজ্জ্বল, মহাবিশ্ব ভেঙে পড়ার পর দেখা যাবে যে-আলো, আমি তাদের কাছে এগিয়ে যাই; বিকট সিল মাছের মত কালো নগ্ন তোফাজ্জল ভাইয়ের আবর্জনাস্তূপের মতো দেহের উপর একটি পা রেখে নগ্ন সুফিয়া ঘুমিয়ে আছে, সিলটি পড়ে আছে লাশের মত সুফিয়ার মুখটি পূর্ণিমার চাঁদের মত জ্বলছে, সরস্বতী ও অসুর জড়িয়ে আছে একে অন্যকে, দুজনেই গভীর ঘুমে নিমজ্জিত, হয়তো একাধিক সঙ্গমে তারা ক্লান্ত সুখনিদ্রায় লুপ্ত হয়ে আছে, জেগে উঠে আবার সঙ্গম করবে পশু ও সুন্দরী | ” |
নায়ক তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে পরপুরুষের সঙ্গে নগ্ন দেখে রাগের মাথায় নায়িকার মুখে তালা ছুড়ে মারে এবং নায়িকা আর তোফাজ্জলের ঘুম ভেঙে যায়; নায়ক তারপরেও অবচেতন মনে সুফিয়াকে ভালোবাসতে থাকে এবং মুখে-মাথায় আঘাত পাওয়ার জন্য তাকে হাসাপাতালে নিতে চায় কিন্তু সুফিয়া যেতে চায়না। নায়ক যাকে খুনের স্বপ্ন দেখে সে উপন্যাসের প্রধান নায়িকা সুফিয়াই কারণ সে অন্য একজনের সঙ্গে নগ্ন হয়ে ঘুমায়, তবে নায়ক কাকে খুন করতে হবে সেটা সে নিজেও জানেনা, শুধু খুন করার ইচ্ছে তার চিন্তা-চেতনায় আসে।
উপন্যাসটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন এনএসএফ (ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন) সহ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা সংক্ষেপে এপসু) এর কথাও উঠে এসেছে। এছাড়াও উপন্যাসটিতে ষাটের দশকের উর্দু চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নীলুর কথা, ঢাকার তৎকালীন 'নাজ' চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ এবং নভেরার ভাস্কর্যর কথার উল্লেখ রয়েছে।
চরিত্র
- সুফিয়া - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, উপন্যাসের প্রধান নায়িকা; একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তরুণ তার প্রতি একধরনের একতরফা প্রেমে পাগল থাকে যে উপন্যাসের প্রধান নায়ক এবং উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনাকারী (উপন্যাসের প্রধান নায়কের নাম কখনোই লেখক উল্লেখ করেননি)
- তোফাজ্জল - উপন্যাসের নায়কের মামাতো ভাই যার সঙ্গে সুফিয়া দৈহিক মিলন করে নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকে যেটা দেখে নায়কের মন একেবারে ভেঙে যায়
- সাবিহা সরদার - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী যে সুফিয়া এবং নায়কের পরিচিত
- শমশের আলি - সাবিহার প্রেমিক, এনএসএফের (ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন) সদস্য
- আহমদউল্লাহ - বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
- রহিমা - এক তরুণী যে উপন্যাসের প্রধান নায়কের সঙ্গে একবার রমনা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে
- নিজাম - নায়কের বন্ধু, এনএসএফের সদস্য
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম (২০১২)। "আজাদ, হুমায়ুন"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওসিএলসি 883871743।
- আজাদ, হুমায়ুন (ফেব্রুয়ারি ২০০৪)। একটি খুনের স্বপ্ন। আগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৫।