মৈত্রী এক্সপ্রেস

মৈত্রী এক্সপ্রেস বা ঢাকা-কলকাতা এক্সপ্রেস একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন যাত্রীবাহী ট্রেন যা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় যাতায়াত করে। এটিই একমাত্র ট্রেন যা এই দুই দেশের মধ্যে চলাচল করে। এটি চালু হয় ৫২ বৎসর পর।[1] মৈত্রী শব্দের অর্থ হল বন্ধুত্ব। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল, বাংলা পহেলা বৈশাখের দিন থেকে দ্বি-সাপ্তাহিক এই ট্রেন পরিসেবা চালু করা হয়।[2][3] ট্রেনের বগি ও ইঞ্জিন হিসেবে বাংলাদেশের সীমার মধ্যে বাংলাদেশের বগি ও ইঞ্জিন ও ভারতের সীমায় ভারতের বগি ও ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। এর ফলে যাত্রীদের সীমান্তে ট্রেন পরিবর্তন করতে হয়।

মৈত্রী এক্সপ্রেস
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে মৈত্রী এক্সপ্রেস
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
প্রথম পরিষেবা১৪ এপ্রিল ২০০৮
বর্তমান পরিচালকবাংলাদেশ রেলওয়ে, ভারতীয় রেলওয়ে
যাত্রাপথ
শুরুঢাকা
শেষকলকাতা
যাত্রাপথের সেবা
আসন বিন্যাসহ্যাঁ

বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়ে, ওখানেই অভিবাসন সম্পন্ন হয়, যদিও ভিসা সংগ্রহ করতে হয় ভারতীয় দূতাবাস থেকে আগে থেকেই। উপযুক্ত এবং সঠিক কাগজপত্র সহকারে ঢাকার কমলাপুর কাউন্টারে উপস্থিত হয়ে টিকিট কেনা যায়।[4]

পটভূমি

Kolkata Station, where the train departs.

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের জন্য বঙ্গ প্রদেশের রেল যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাকে বিভক্ত করা হয় ভারতীয় রাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব বাংলার পাকিস্তানের প্রদেশ (পরে ১৯৫৬ সালে যার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান হয়) এর মধ্যে| অবিভক্ত ভারতের ওপর ব্রিটিশ শাসনের সময়, নিয়মিত রাত ব্যাপী ট্রেন চলাচল করত কলকাতা, গোয়ালন্দ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মধ্যে| ইস্ট বেঙ্গল মেল, ইস্ট বেঙ্গল এক্সপ্রেস এবং বরিশাল এক্সপ্রেস - এই তিনটি ট্রেন, ১৯৬৫ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে নিজেদের পরিসেবা অব্যাহত রেখেছিল যতক্ষণ না ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চারিদিকে ছড়িয়ে সব যাত্রীবাহী ট্রেন লিঙ্ক এর অবসান ঘটায়|[5] ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ফল স্বরূপ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয় জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসাবে| উপরে উল্লিখিত ট্রেন গুলোর মধ্যে প্রথম দুটো ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস এর মতন একই রুট এ, গেদে এবং দর্শনা হয়ে চলাচল করত এবং বরিশাল এক্সপ্রেস, বনগাঁযশোর এর মাধ্যমে চলাচল করত|

সীমিত মালবাহী সেবা কয়েক বছরের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচল করে, কিন্তু যাত্রী পরিষেবা শুধুমাত্র ২০০৮ সালে পুনর্জাগরিত হয়, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি এবং ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির ঢাকা ভ্রমনের পর| ২০০৭ সালের জুলাই মাসের ৮ তারিখ প্রথম ট্রেন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বহন করে, একটি পরীক্ষা চালানোর মধ্যমে কোলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলে|[6]

২০০৮ এর অভিষেক

১৪ই এপ্রিল, ২০০৮ এ পয়লা বৈশাখ এর উপলক্ষে এই ট্রেন টি পুনরায় চালু করা হয় তূর্যনিনাদ এর সাথে| প্রথম ট্রেন টি চিত্পুর এর কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়ার সময় বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন যেমন তখনকার ভারতীয় রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন রঞ্জন দাশমুন্সী, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার লিয়াকত আলী চৌধুরী| ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতা থেকে ঢাকা গামী উদ্বোধনী ট্রেন এর জন্য সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন| ওদিকে অন্য আরেকটি ট্রেন ঢাকা থেক যাত্রী নিয়ে একই সময়ে যাত্রা শুরু করে কলকাতার উদ্দেশ্যে কিন্তু তার উদ্বোধনী যাত্রায় ৩৬০ জনের বসার উপযোগী গাড়ী, কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ সহ মাত্র ৬৫ জন যাত্রী বহন করে| ভারতীয় রেল কর্মকর্তারা বলেন যে ট্রেন তাড়াতাড়ি চালু করা হয়েছিল এবং যখন এই তথ্য চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে তখন একটি বড় প্রতিক্রিয়া হবে এবং যাত্রী সংখ্যাতেও বৃদ্ধি ঘটবে|

রুট

মৈত্রী এক্সপ্রেস
০ কিমি কলকাতা
১১৪ কিমি গেদে
ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্ত
১৩০ কিমি দর্শনা
৩৭৫ কিমি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট

মৈত্রী এক্সপ্রেস কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে সঞ্চালিত হওয়া একমাত্র ট্রেন।| এটা উভয় দিক থেকেই সপ্তাহে ৫ দিন চলাচল কর।| ট্রেনটি কলকাতা থেকে ঢাকা পৌঁছাতে প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার দুরত্ব ভ্রমণ কর। এই ট্রেনটির অভিবাসন পরীক্ষণের জন্য দুটিই স্টপেজের আছে: ভারতের দিক থেকে গেদে তে এবং বাংলাদেশ এর দিক থেকে দর্শনা ত। পুরো দুরত্ব টা পূর্ণ করতে ১০-১১ ঘন্টা সময় লাগ।| যেহেতু বাংলাদেশ এর রেল পথ টি অবৈদ্যুতিক সেহেতু সম্পূর্ণ রাস্তা টি ব্রডগেজ ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয।| বাংলাদেশে দর্শনা তে এই ট্রেন এর কর্মীদল এবং ইঞ্জিন এর বদল হয। এই যাত্রাপথে দুটি প্রধান নদী পারাপারের আছে - গঙ্গার উপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও যমুনা নদীর উপর যমুনা বহুমুখী সেতু, যে দুটোই বাংলাদেশে অবস্থি।|

ট্রেনের সময়সূচী[7]

দিনযাত্রা স্টেশনগন্তব্য স্টেশনট্রেন নাম্বাররেক
শুক্রবারঢাকাকলকাতা৩১০৭বাংলাদেশ
শনিবারকলকাতাঢাকা৩১০৮বাংলাদেশ
রবিবারকলকাতাঢাকা১৩১০৯ভারতীয়
সোমবারঢাকাকলকাতা১৩১১০ভারতীয়
মঙ্গলবারকলকাতাঢাকা১৩১০৯ভারতীয়
বুধবারঢাকাকলকাতা১৩১১০ভারতীয়
বৃহস্পতিবার----------------

কূটনীতি

কলকাতা-ঢাকা ট্রেন সার্ভিস উন্নয়নের ব্যাপারটি ভারতের রাজধানী দিল্লির সাথে পাকিস্তানে লাহোরের সংযোগ স্থাপন করে যা সমঝোতা এক্সপ্রেস, তার সাথে সদৃশ। উভয় ট্রেন ই চালু করা হয় দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনরায় জীবত করার উদ্দেশ্যে যেটা ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুটো ট্রেন ই ব্যবহার করা হয়েছে, মৈত্রী এক্সপ্রেস এর ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শুভেচ্ছা ও সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে এবং সমঝোতা এক্সপ্রেস এর ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তান এর মধ্যে শুভেচ্ছা ও সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে।[8]

চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেস ৫০% দখল হয়ে চলাচল করে। এর পিছনে মূল কারণ হলো এটার সীমিত চলাচল (সপ্তাহে দুই দিন) এবং এর প্রান্তিক স্টেশন গুলো দুটোই কলকাতা এবং ঢাকা সহরের বাইরে হওয়ার জন্য। এর পিছনে অন্য আরেকটি মূল কারণ হলো উভয় বাংলাদেশ রেল ও ভারতীয় রেল দ্বারা ট্রেনের সেবা প্রচার এর অভাব যার জন্য যাত্রীরা বেশির ভাগ রাস্তা পথ ধরে যাতায়াত করে যেটা আরো চাপের এবং আরো বেশি সময় সাপেক্ষ।

বুকিং

এই ট্রেন এর জন্য আই.আর.সি.টি.সি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন বুকিং পাওয়া যায় না। এই ট্রেন এর টিকিট শুধুমাত্র নিচে উল্লিখিত বুকিং কাউন্টারে স্থানীয় মুদ্রায় উপলব্ধ। এটার রিটার্ন টিকিট পাওয়া যায় না। ভিসার জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে এটি "রেল-গেদে দ্বারা" (ভারতীয় ভিসার জন্য) বা "রেল-দর্শনা দ্বারা" (বাংলাদেশী ভিসার জন্য) হিসাবে এন্ট্রি পোর্ট উল্লেখ করার জন্য অপরিহার্য। টিকিট শুধুমাত্র ভিসা ইস্যু হওয়ার পর জারি করা হয়, এবং বুকিং এর সময় পাসপোর্ট দেখানো বাধ্যতামূলক। যদি সব যাত্রী টিকেট বুকিং করার সময় উপস্থিত না থাকে তাহলে একটি অনুমোদন চিঠির প্রয়োজন।

ঢাকা তে টিকিট শুধুমাত্র কমলাপুর মুখ্য সংরক্ষণ কাউন্টার থেকে পাওয়া যায়। কলকাতায় টিকিট ডালহৌসি স্কোয়ার এর ফেয়ারলি প্লেস এ আন্তর্জাতিক টিকেট বুকিং কাউন্টার থেকে এবং কলকাতা স্টেশন থেকে ক্রয় করা যেতে পারে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. http://articles.timesofindia.indiatimes.com/2008-04-14/india/27746168_1_kolkata-and-dhaka-passenger-train-services-kolkata-dhaka-moitree-express
  2. http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/7345724.stm
  3. http://news.bbc.co.uk/media/avdb/news/world/video/166000/bb/166080_16x9_bb.asx?ad=1&ct=50
  4. মৈত্রী এক্সপ্রেস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে, বাংলাদেশ রেলওয়ে (railway.gov.bd)। পরিদর্শনের তারিখ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২।
  5. "Kolkata-Dhaka Moitree Express flagged off"। The Times of India। ১৪ এপ্রিল ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-১৭
  6. "First India-Bangladesh train link"। BBC News (BBC)। ১৭ এপ্রিল ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-১৭
  7. http://www.railway.gov.bd/site/page/b849c03e-7d46-49c7-a3bc-f3011cc1b8f0/Maitree-Express-Train-
  8. "Calcutta Dhaka Train"। India Rail Info।

টেমপ্লেট:Railway lines in Eastern India

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.