ময়ুখ চৌধুরী

ময়ুখ চৌধুরী (আনোয়ারুল আজিম জন্ম: অক্টোবর ২২, ১৯৫০) একজন বাংলাদেশী কবি, সমালোচক, প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক।[1][2][3] তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কাব্য এবং গবেষণাগ্রন্থ। ১৯৮০-এর দশক থেকে সাহিত্যকর্মে নিজস্ব কাব্যস্বরের জন্য তিনি বোদ্ধামহলের দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[3][4] তাকে বাংলা কবিতার তিরিশ দশকের ব্যক্তিবাদী ধারার উত্তরাধিকারী মনে করা হয়।[5] তার কাব্যচর্চায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ও সময়কালের অভিছাপ প্রকটিত।[4][6]

ময়ুখ চৌধুরী
১৯৯১ সালে ময়ুখ
জন্ম
আনোয়ারুল আজিম

(1950-10-22) ২২ অক্টোবর ১৯৫০
দক্ষিণ নালাপাড়া, চট্টগ্রাম, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)
জাতীয়তা
শিক্ষাপিএইচডি
যেখানের শিক্ষার্থী
পেশা
  • কবি
  • সমালোচক
  • গবেষক
  • অধ্যাপক
কার্যকাল১৯৭০বর্তমান
আদি নিবাসফেনী
দাম্পত্য সঙ্গীতাসলিমা শিরীণ
পুরস্কারচট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)
লিখন কর্মজীবন
ছদ্মনামময়ুখ চৌধুরী
ধরনকবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিনিচে দেখুন

ছাপালেখার তেইশ বছর পর তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ কালো বরফের প্রতিবেশী প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে[5][7][8] এবং সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ পলাতক পেণ্ডুলাম প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে।[5][9][10][11] সম্পাদনা করেছেন "প্রতীতি" ও "কবিতা" শিরোনামের দুটি সাহিত্যকাগজ।[4] তিনি চার দশক ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।[4] সাহিত্য অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।[4]

প্রাথমিক জীবন

চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রবর্তিত ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার ১৯৯১ অনুষ্ঠানে (ডান থেকে বামে) কবি ময়ুখ চৌধুরী, আল মাহমুদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, শিল্পী সবিহ্ উল আলম, চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র সভাপতি আমীরুল ইসলাম এবং ছড়াকার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন।

ময়ুখ ১৯৫০ সালের ২২ অক্টোবর[12][13] চট্টগ্রামের দক্ষিণ নালাপাড়া জন্মগ্রহণ করেন,[7] এবং তার ছেলেবেলা কাটে চট্টগ্রামের দক্ষিণে কর্ণফুলীর পাড়ে।[1] তার মূল নাম আনোয়ারুল আজিম।[3]

সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে[14] ম্যাট্রিকুলেশন বা প্রবেশিকা (বর্তমানে মাধ্যমিক বা এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর লেখালেখি করবেন বলে কলা বিভাগে অধ্যয়ন করেন।[14] এরপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এবং ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[1][12] এরপর ১৯৭৮-৮৩ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[1][3][4][12]

কর্মজীবন

ময়ুখ চৌধুরী কর্মজীবনে অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে চার দশক ধরে অধ্যাপনা করছেন।[1][3]

ব্যক্তিগত জীবন

ময়ুখ চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কবি তাসলিমা শিরীণকে বিয়ে করেন।[1][3][12]

সাহিত্যজীবন

১৯৬৫ সালে ময়ুখ চৌধুরীর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়।[1][15] তিন বছর পর ১৯৬৮ সালে সম্পাদনা করেন সাহিত্য কাগজ ‘প্রতীতি’; এই কাগজের প্রচ্ছদ শিল্পীও ছিলেন তিনি নিজে। এরপর ১৯৭০ সালে ‘কবিতা’ নামে আরেকটি একটি কবিতাপত্র প্রকাশ করেন।[15] ১৯৭৩ সালে শিশির দত্ত সম্পাদিত "স্বনির্বাচিত" কাগজে প্রথম লেখা ছাপা হয়[8][13] এবং দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম প্রবন্ধ। এছাড়াও তিনি ছদ্মনামে প্রত্রিকায় গল্প ছেপেছেন। সত্তরের দশকে "প্রতীতি" নামে একটি লিটলম্যগাজিনও প্রকাশ করেছেন তিনি।[14]

গবেষণা

ময়ুখ চৌধুরী বাংলা সাহিত্য এবং কবিতা বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রকাব্য এবং ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের তত্ত্বাবধানে কবি শামসুর রাহমান বিষয়ে গবেষণা করেন।[1] কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল রবীন্দ্রনাথের পোয়েটিক ওরিয়েন্টেশন[7]

গ্রন্থতালিকা

ময়ুখ চৌধুরীর এযাবৎ দশটি কাব্যগ্রন্থ, একটি কাব্যসংকলন, একটি উপন্যাস, একটি গবেষণা সহ প্রায় পনেরোর অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

কাব্য

শিরোনামবছরপ্রকাশনাটীকা
কালো বরফের প্রতিবেশী ১৯৮৯ অ্যাডর্ন পাবলিকেশন [1][2][3]
অর্ধেক রয়েছি জলে, অর্ধেক জালে ১৯৯৯ [1][2][3]
তোমার জানলায় আমি জেগে আছি চন্দ্রমল্লিকা ২০০০ [2][3]
প্যারিসের নীলরুটি ২০০১ [1][2][3]
আমার আসতে একটু দেরি হতে পারে ২০০২ [2][3]
পলাতক পেণ্ডুলাম ২০১৫ [10]
ক্যাঙ্গারুর বুকপকেট ২০১৬ দিব্য প্রকাশ [7]
পিরামিড সংসার ২০১৭ বাতিঘর
চরণেরা হেটে যাচ্ছে মুণ্ডুহীন অ্যাডর্ন পাবলিকেশন [7]
জারুলতলার কাব্য ২০১৮ বাতিঘর

কাব্যসংকলন

  • ডান হাতের পাঁচটি আঙুল (২০১৬)[16]

উপন্যাস

  • খসড়া সম্পর্ক[1]

গবেষণা

সম্পাদনা

  • অসভ্য শব্দ (১৯৭৩)[3][7]

সাহিত্যপত্র

  • প্রতীতি (১৯৬৮)[7]
  • কবিতা (১৯৭০)[7]

পুরস্কার ও সম্মাননা

২০১৫ সালে তিনি কবিতায় অবদানের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কার[12][18][19] এবং একই বছর সাহিত্য অসামান্য অবদানের জন্য আবদুল করিম খান স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন।[20]

বছর পুরস্কার বিভাগ প্রদানকারী টীকা
অরণি সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য বুলবুল খান মাহবুব [21]
২০১৫ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কার কবিতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন [18][19][22][23][24][25][26][27]
আবদুল করিম খান স্মৃতি পুরস্কার সাহিত্যে অসামান্য অবদান [20]

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "আজ কবি ময়ুখ চৌধুরীর জন্মদিন"দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। অক্টোবর ২২, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪
  2. কমরুদ্দিন আহমদ (এপ্রিল ৬, ২০১২)। "ময়ুখ চৌধুরীর কবিতায় প্রসঙ্গ"দৈনিক আজাদী। চট্টগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৬, ২০১৫
  3. "ময়ুখ চৌধুরী"thereport24.com। দ্য রিপোর্ট। অক্টোবর ২২, ২০১৪। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৪, ২০১৫
  4. "ময়ুখ চৌধুরী একজন কবি"মাছরাঙ্গা টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৮
  5. ড. ফজলুল হক তুহিন (২৮ এপ্রিল ২০১৭)। "ময়ুখ চৌধুরীর কবিতা জীবনের বহুরৈখিক শিল্পভাষ্য"দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৮
  6. আরিফ চৌধুরী। "মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের কবিতা"দৈনিক ডেসটিনি। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৫
  7. পলাতক পেণ্ডুলামঢাকা: অ্যাডর্ন পাবলিকেশন। ফেব্রুয়ারি ২০১৫। পৃষ্ঠা ৬৪। আইএসবিএন 978-984-20-0468-1। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৫
  8. আহমেদ মাওলা (২৫ অক্টোবর ২০১৫)। "ময়ুখ চৌধুরী: তাঁর জন্মদিনে"দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৭
  9. "তের বছর পর ফিরে এলেন ময়ুখ চৌধুরী"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০১৫-০২-২২। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৮
  10. "যারা আনন্দ ছিনিয়ে আনতে চান, তারাই বই পড়েন"নতুন দিনচট্টগ্রাম। এপ্রিল ১০, ২০১৫। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১২, ২০১৫
  11. "'পলাতক পেণ্ডুলাম' নিয়ে ১৩ বছর পর ময়ুখ চৌধুরী"বাংলা ট্রিবিউন। ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৪, ২০১৫
  12. আমার চট্টগ্রাম প্রতিবেদক (২৭ অক্টোবর ২০১৬)। "গান, কবিতা, স্মৃতিচারণায় ময়ুখ চৌধুরীর জন্মদিন উদ্‌যাপন"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৮
  13. আহমেদ মাওলা (১৬ অক্টোবর ২০১৫)। "ময়ুখ চৌধুরীর কবিতা চিন্তার ঐশ্বর্যে ও স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৮
  14. "লিটল-মেঘচর্চা"চিহ্ন। শহীদ ইকবাল। জানুয়ারি ১, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৫
  15. মুশফিক হোসাইন (অক্টোবর ২৩, ২০১৫)। "ময়ুখ চৌধুরীর বেড়ে ওঠা"যুগান্তর। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
  16. আবদুল্লাহ আল মামুন। "বইমেলায় বাদাম-বুট যত বিক্রি হয়, তত হয় না বই"দৈনিক সমকাল। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৫, ২০১৬
  17. "উনিশ শতকের নবচেতনা ও বাংলাকাব্যের গতিপ্রকৃতি"amazon.com (ইংরেজি ভাষায়)। আমাজন.কম। ১৯৯৬। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৩, ২০১৫
  18. "চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একুশে সম্মাননা পাচ্ছেন ১১ জন"দৈনিক প্রথম আলো। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৬, ২০১৫
  19. "চসিকের একুশে সম্মাননা পেলেন ১১ বিশিষ্ট ব্যক্তি"দৈনিক সমকাল। ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৬, ২০১৫
  20. প্রতিনিধি (২০১৫-১২-১৩)। "Poetry festival ends in Tangail" (ইংরেজি ভাষায়)। টাঙ্গাইল: দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট
  21. এমরান হোসেন (১৭ নভেম্বর ২০১৭)। "অরণি পুরস্কার ২০১৬ ও ২০১৭ ঘোষণা"। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৮
  22. "১১ বিশিষ্ট নাগরিককে চসিকের একুশের স্মারক সম্মাননা"দৈনিক ইত্তেফাক। ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫। ২৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৬, ২০১৫
  23. চট্টগ্রাম ব্যুরো (ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫)। "১১ গুণীকে একুশে স্মারক সম্মাননা চসিকের"দৈনিক নয়া দিগন্ত। ঢাকা। ৫ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২, ২০১৫
  24. চট্টগ্রাম ব্যুরো (ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫)। আলতামাশ কবির, সম্পাদক। "একুশে স্মারক সম্মাননা পেলেন ১১ গুণী"দৈনিক সংবাদ। চট্টগ্রাম। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৪, ২০১৫
  25. "মহান ভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান"দৈনিক সংগ্রাম। চট্টগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৪, ২০১৫
  26. "একুশের অনুষ্ঠানমালা"দৈনিক পূর্বকোণ। ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫। ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৬, ২০১৫
  27. "চট্টগ্রামের তিন সাংবাদিক পাচ্ছেন চসিকের একুশে পদক"রাইজিংবিডি। চট্টগ্রাম। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৪, ২০১৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.