এম হারুন-অর-রশিদ
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
এম হারুন-অর-রশিদের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট গ্রামে। তার বাবার নাম মাহামুদুল হক এবং মায়ের নাম জরিনা বেগম। তার স্ত্রীর নাম লায়লা নাজনীন। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।
কর্মজীবন
এম হারুন-অর-রশিদ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শাফায়াত জামিলের (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলের বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। এতে তার ভূমিকা ছিল অনন্য।
২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন । ১৬ জুন ২০০২ জেনারেল হাসান মশহুদ তার স্থলাভিষিক্ত হন । অবসর গ্রহণের পর হারুন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
প্রাথমিক ভাবে প্রতিরোধযুদ্ধের পর মে মাসের মাঝামাঝি আখাউড়া-মুকুন্দপুর রেলপথে হারুন-অর-রশিদ কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রসদবাহী ট্রেনে অ্যাম্বুশ করেন। আগে খবর পেয়ে রেলপথের এক স্থানে বিস্ফোরক স্থাপন করে সহযোদ্ধাদের নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। ট্রেনটি আসামাত্র সুইচ টিপে বিস্ফোরণ ঘটান। এতে রেলবগি ও রেলপথের একাংশের ব্যাপক ক্ষতি এবং কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এম হারুন-অর-রশিদ পরবর্তী সময়ে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। তার যুদ্ধ এলাকা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়ার একাংশ। এ এলাকায় অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২০ নভেম্বর কসবার চন্দ্রপুরের যুদ্ধে তিনি তার দল নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার উত্তরে কালাছড়া চা-বাগান এলাকায় ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঘাঁটি। ৩ আগস্ট রাতে মুক্তিবাহিনীর দুটি দল এখানে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে সার্বিক নেতৃত্ব দেন এম হারুন-অর-রশিদ। পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল কালাছড়া চা-বাগানে অবস্থান করছে এমন খবর পেয়ে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য লোক নিয়োগ করেন তিনি। তাদের আক্রমণের জন্য নিয়মমাফিক এক ব্যাটালিয়ন শক্তি প্রয়োজন ছিল কিন্তু সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা দল ছিলো না। কিন্তু এম হারুন-অর-রশিদ সাহস করে প্রস্তুতি নেন। এ সময়ে তার অধীনে দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একটি কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় শহীদ হাবিলদার হালিমকে অন্যটির দায়িত্ব তিনি নিজেই নেন। তবে দুই কোম্পানির সার্বিক নেতৃত্বই তার হাতে ছিল। একদিন রাতে তারা দুটি দলে ভাগ হয়ে পাকিস্তানি অবস্থানে আঘাত হানেন। তবে হাবিলদার হালিম এ যুদ্ধে শহীদ হয়ে যাওয়ায় সে দলটি আর সামনে অগ্রসর হতে পারেননি। পরে এম হারুন-অর-রশিদ তার কোম্পানি নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ করেন। তার দলের আক্রমণে পাকিস্তানি অনেক সেনা হতাহত হয়। কিছু পাকিস্তানি সেনা বাংকারে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাংকারে গ্রেনেড চার্জ করে তাদের হত্যা করেন। পরবর্তীতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের পর্যুদস্ত করে স্থানটি দখল করেন মুক্তিযোদ্ধারা। কালাছড়া থেকে একটি এলএমজিসহ প্রায় ১০০ অস্ত্র এবং ২৭ জন পাকিস্তানি সেনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের দুজন শহীদ ও সাতজন আহত হন। এর পর থেকে কালাছড়া সব সময় মুক্ত ছিল।