বজলু মিয়া

শহীদ বজলু মিয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]

বজলু মিয়া
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ বজলু মিয়ার জন্ম কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের বানাশোয়া গ্রামে। তার বাবার নাম ওসমান আলী এবং মায়ের নাম কুলসুম আকতার। তার স্ত্রীর নাম অপলা খাতুন। তাদের এক মেয়ে।

কর্মজীবন

বজলু মিয়া চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। ২৫ মার্চের কয়েক দিন আগে তার ছুটি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু চাকরিতে যোগ দেননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দেন। প্রতিরোধ যুদ্ধের পর প্রথমে ৪ নম্বর সেক্টরে, পরে ২ নম্বর সেক্টরের নির্ভয়পুর সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত হয়। এরপর মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী রাজধানী ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যৌথ বাহিনী মুদাফফরগঞ্জ-বরুড়া-দাউদকান্দি রুট ধরে ১৩ ডিসেম্বর দাউদকান্দি পৌঁছায়। এরপর বজলু মিয়াসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা মেঘনা নদী অতিক্রম করে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পারে সমবেত হন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন মেহবুবুর রহমান (বীর উত্তম)। শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পারে কুড়িপাড়ায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা। এর অবস্থান ডেমরা-নারায়ণগঞ্জের মাঝামাঝি। ১৫ ডিসেম্বর কুড়িপাড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল হওয়ার আগে কুড়িপাড়া মুক্ত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বজলু মিয়াসহ দু-তিনজন এবং মিত্রবাহিনীর কয়েকজন সদস্য প্রাণ হারান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যে দল কুড়িপাড়ায় ছিল, তারা ছিল অত্যন্ত দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। অনমনীয় ছিল তাদের মনোভাব। সাহসিকতার সঙ্গে তারা যৌথ বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে। মিত্রবাহিনীর ব্যাপক আর্টিলারির গোলাবর্ষণেও কোনোভাবে কাবু করা যায়নি। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেও তারা মাটি কামড়ে পড়ে ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেদ করার জন্য যৌথ বাহিনী পরে তাদের যুদ্ধকৌশল পাল্টায়। এতে যথেষ্ট সফলতা অর্জিত হয়। নতুন যুদ্ধকৌশল অনুযায়ী প্রথমে মুক্তিবাহিনীর দল কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও সাহসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এই সুযোগে মিত্রবাহিনী সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। এরপর পাকিস্তানিদের সকল প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। জীবিতদের বেশির ভাগ আত্মসমর্পণ করে। কয়েকজন পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় কুড়িপাড়া। এই যুদ্ধে বজলু মিয়া ও তার কয়েকজন সহযোদ্ধা অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। কিন্তু স্বাধীনতার লাল সূর্য দেখার সৌভাগ্য বজলু মিয়ার হয়নি। যুদ্ধের একপর্যায়ে তিনি নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার মধ্যে ঢুকে পড়ে আক্রমণ চালান। এতে হতাহত হয় তিন-চারজন পাকিস্তানি সেনা। প্রতিরোধরত পাকিস্তানি সেনারা তার সাহসিকতায় হকচকিত হয়ে পড়ে। অবশ্য তারা নিজেদের দ্রুতই সামলিয়ে নেয় এবং তাকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। একঝাঁক গুলি ছুটে আসে তার দিকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। নিমেষে বেরিয়ে যায় তার জীবনপ্রদীপ। যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা বজলু মিয়াকে সমাহিত করেন কুড়িপাড়াতেই। তখন তার সমাধি চিহ্নিত ছিল। কিন্তু সেই সমাধি সংরক্ষণ না করায় স্বাধীনতার পর বিলীন হয়ে গেছে।

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.