মোফাজ্জল হোসেন
মোফাজ্জল হোসেন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]
মোফাজ্জল হোসেন | |
---|---|
মৃত্যু | ২০০৬ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মোফাজ্জল হোসেনের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম তোফাজ্জল হোসেন এবং মায়ের নাম জোবেদা বেগম। তার স্ত্রীর নাম কোহিনুর বেগম। তাঁদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।
কর্মজীবন
মোফাজ্জল হোসেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ছুটিতে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ভারতে যাওয়ার কিছুদিন পর তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌ-দলে অন্তর্ভুক্ত হন এবং যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৭ সালে অবসর নেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
ভারতের হরিণা থেকে ১৯৭১ সালের ৮ আগস্ট মোফাজ্জল হোসেনসহ এক দল নৌ-মুক্তিযোদ্ধা রওনা হন চট্টগ্রামের উদ্দেশে। বিভিন্ন সময়ে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় চট্টগ্রাম শহরে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন দিশেহারা। গুপ্ত হামলা ঠেকাতে পাকিস্তানিরা শহরের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন সড়কে তল্লাশিকেন্দ্র বসায়। সেনারা রাস্তায় চলাচলরত বাঙালির যাঁকেই সন্দেহ হয়, তাকে আটকিয়ে তল্লাশি করে। এমন অবস্থায় মোফাজ্জল হোসেনসহ নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের কাছে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছেন। সমুদ্রবন্দরে দুঃসাহসী এক অপারেশন করতে তারা আসেন। ১৩ আগস্ট রেডিওর আকাশবাণী কেন্দ্রে পরিবেশিত হয় ‘আমি তোমায় শুনিয়েছিলাম যত গান’ শীর্ষক গান। এ গান শোনার পর দলনেতার নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা সবাই প্রস্তুত হন। পরদিন কর্নফুলী নদীর তীরে পৌঁছান মুক্তিযোদ্ধারা। পরবর্তীতে নৌ-মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা অপেক্ষায় থাকেন আকাশবাণী বেতারকেন্দ্রে আরেকটি গান শোনার জন্য। সেদিনই গানটি বাজার কথা থাকলেও গানটি সেদিন বাজেনি। পরবর্তীতে ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি’ শীর্ষক গানটি বাজে ১৫ আগস্ট। অবশেষে দলনেতা মোফাজ্জল হোসেন সিদ্ধান্ত নেন এবং সহযোদ্ধাদের জানান ওই রাতেই হবে অপারেশন। এরপর ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় যখন অন্ধকার নেমে আসে নৌ-মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন শিবিরে দ্রুত প্রস্তুত হন অপারেশনের জন্য। গাঢ় অন্ধকারে মোফাজ্জল হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা বিভক্ত হয়ে রওনা হন। গভীর রাতে কর্ণফুলী নদীর পানিতে নেমে সাঁতার কেটে দ্রুত এগিয়ে যান লক্ষ্যের দিকে। জাহাজসহ নানা জলযানে মাইন লাগিয়ে আবার ফিরে আসেন তীরে। গভীর রাতে কানফাটা আওয়াজে কেঁপে ওঠে গোটা নগর। একের পর এক বিস্ফোরণ হয়। বন্দরে থাকা পাকিস্তানিরা ছোটাছুটি শুরু করে। তখনও তারা জানে না কী ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৫ আগস্ট চট্টগ্রাম ছাড়াও খুলনাসহ আরও কয়েকটি নৌবন্দরে একযোগে কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। এতে পাকিস্তান সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। এ অপারেশনের সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’।