আবদুল মুকিত

অন্য ব্যবহারের জন্য, দেখুন আবদুল মুকিত (দ্ব্যর্থতা নিরসন)

আবদুল মুকিত
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

আবদুল মুকিত (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবদুল মুকিতের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায়। তার বাবার নাম আবদুল ওয়াদুদ এবং মায়ের নাম শামছুন নাহার। তার স্ত্রীর নাম নাজমা মুকিত। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।

কর্মজীবন

আবদুল মুকিত ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসে (পিআইএ) কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে অবতরণের সময় একবার তার বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। তিনি আহত হন। সুস্থ হয়ে অবশিষ্ট প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে শেষ করেন। কিন্তু তাকে যুদ্ধবিমান চালনার দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। তখন তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। পরে পিআইএতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি চট্টগ্রামে সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। জুন মাসের মাঝামাঝি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় যান। সেখানে নানা কাজে সম্পৃক্ত হন। পরে বিমান উইংয়ে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে তিনটি বিমান নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিমান উইং। বিমানযোদ্ধারা মাত্র এক মাসের প্রস্তুতিতেই যুদ্ধযাত্রার জন্য তৈরি হন। তাদের সামরিক বা বেসামরিক বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। তার পরও তারা আবার নতুন করে প্রশিক্ষণ নেন। আবদুল মুকিতের সামরিক ও বেসামরিক দুই ধরনেরই বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। তিনিও প্রশিক্ষণ নেন। এই প্রশিক্ষণ ছিল রাতের আঁধারে আধুনিক দিকদর্শনযন্ত্র ছাড়া বিমান চালনা, রাডার ফাঁকি দিয়ে মাত্র ২০০ ফুট উচ্চতায় উড়ে যাওয়া, শত্রুবিমানের আক্রমণ মোকাবিলা, রকেট নিক্ষেপ, বোমা ফেলা, মেশিনগান দিয়ে গুলি করা ইত্যাদি। প্রশিক্ষণ হয় ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের পরিত্যক্ত এক বিমানঘাঁটিকে কেন্দ্র করে। ঘন বৃক্ষরাজিতে পূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় উঁচু পাহাড়ের চূড়া পরিষ্কার করে তার ওপর সাদা প্যারাস্যুট বিছিয়ে টার্গেট তৈরি করা হয়। সেখানে তারা বোমাবর্ষণের প্রশিক্ষণ নেন। আবদুল মুকিতসহ অন্যরা স্বল্প প্রশিক্ষণেই বিশেষত রাতের বেলা অভিযান পরিচালনার সব কৌশল সফলতার সঙ্গে রপ্ত করেন। মুক্তিবাহিনীর তিনটি বিমানের একটি ছিল ডিসি-৩ বা ডাকোটা বিমান, দ্বিতীয়টি অটার বিমান, তৃতীয়টি অ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার। প্রতিটির জন্য তিনজন করে মনোনীত হন। আবদুল মুকিত, আবদুল খালেক ও আবদুস সাত্তারকে নির্বাচন করা হয় ডাকোটার জন্য। বেসামরিক কাজে ব্যবহূত তিনটি বিমানই বেশ পুরোনো ছিল। সেগুলো তখন যুদ্ধের উপযোগী করা হয়। ডাকোটাকে পাঁচ হাজার পাউন্ড বোমা বহনক্ষম করে বোম্বার বা বোমাবর্ষণকারী বিমানে রূপান্তর করা হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সিদ্ধান্ত হয় যে আবদুল মুকিতরা ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে আক্রমণ চালাবেন। তারিখ নির্ধারিত হয় ২৮ নভেম্বর। পরে সেই তারিখ পিছিয়ে ৩ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক। নভেম্বরের শেষে হঠাৎ তাদের অভিযান বাতিল করা হয়। ডাকোটা বিমানে অকটেন ১০০ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হয়। এতে ইঞ্জিনের পেছন দিয়ে যে ধোঁয়া বের হয়, তাতে অগ্নস্ফুিলিঙ্গের সৃষ্টি করে। রাতের বেলায় অনেক দূর থেকে তা দৃষ্টিগোচর হয়। এ জন্য বিমানটি শত্রুর সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তাই সেটি দিয়ে সামরিক অভিযান বাতিল করা হয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে আবদুল মুকিত ও তার দুই সহযোদ্ধা অধীর অপেক্ষায় ছিলেন অভিযানে যাওয়ার জন্য। ঢাকায় দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনার জন্য আবদুল মুকিত উদগ্রীব ছিলেন। প্রায় ‘নিশ্চিত মৃত্যুর’ এই অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ অভিযান তিনি পরিচালনা করতে পারেননি। পরে ডাকোটা মুক্তিবাহিনীর পরিবহন বিমান হিসেবে ব্যবহূত হয়। দুর্গম ঘাঁটিতে চলাচল ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের কাজে সেটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া মুক্তিবাহিনীর প্রধান এম এ জি ওসমানী ও উপপ্রধান এ কে খন্দকার ওই বিমানে আলাদাভাবে কয়েকবার বিভিন্ন রণাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করেন। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৫-০৯-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৭৬। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.