মোহাম্মদ রেজাউল হক
মোহাম্মদ রেজাউল হক (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]
মোহাম্মদ রেজাউল হক | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মোহাম্মদ রেজাউল হকের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্নী গ্রামে। তার বাবার নাম ছহির উদ্দিন এবং মায়ের নাম খাতুনারা বেগম। তার স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। তাদের দুই ছেলে।
কর্মজীবন
মো. রেজাউল হক চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। ২৫ মার্চ তিনি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়িতে মোতায়েন ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে রৌমারীতে যান। জুন-জুলাই মাসে তিনি কোদালকাটির খারুভাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অসংখ্য ছাত্র-যুবককে প্রশিক্ষণ দেন। কোদালকাটি ছাড়াও আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালে কোদালকাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট ছোট দল (প্লাটুন)। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মো. রেজাউল হক। ৪ আগস্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরাট দল সেখানে আক্রমণ চালায়। ৩২ বালুচ রেজিমেন্ট, ১০ টসি ব্যাটালিয়ন, ২৯ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, একটি ফিল্ড ব্যাটারি ও দুটি ৩ ইঞ্চি মর্টার ডিটাচমেন্টের সমন্বয়ে দলটি গঠিত ছিল। তারা ফুলছড়িঘাট ও চিলমারী থেকে বেশ কটি গানবোট, স্টিমার, স্টিলবডি লঞ্চ, বার্জ ও ফেরিবোট নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার অন্তর্গত কোদালকাটি। ৩ আগস্ট পর্যন্ত গোটা রৌমারী মুক্ত ছিল। এরপর পাকিস্তানিরা কোদালকাটিসহ কিছু এলাকা দখল করে। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তাদের প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি। এ সময় কৌশলগত কারণে মো. রেজাউল হকের দলসহ অন্যান্য দল পিছু হটে শংকর-মাধবপুর গ্রামের পূর্ব প্রান্তে সমবেত হয়। পরে তিনি তার দল নিয়ে অবস্থান নেন মদনেরচর ও কোমরভাঙ্গিচর এলাকায়। ১৩ আগস্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনী রৌমারী থানা সদর দখলের লক্ষ্যে কোদালকাটি থেকে রাজীবপুরের দিকে অগ্রসর হয়। তাদের একটি দল ব্যাপক গোলা-গুলি করে মো. রেজাউল হকের অবস্থানে উঠে পড়ার চেষ্টা করে। তখন সীমিত শক্তি নিয়েই তিনি পাল্টা আক্রমণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওই দলের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করেন। সেনাবাহিনী পরে আরও কয়েকবার তাদের অবস্থানে আক্রমণ করে। প্রতিবারই তারা সাহসিকতার সঙ্গে তা প্রতিহত করেন। অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে মুক্তিযোদ্ধারা কোদালকাটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। মূল আক্রমণে অংশগ্রহণকারী চারটি দলের একটি ছিল মো. রেজাউল হকের দল। তাদের সহযোগিতা করে মুক্তিবাহিনীর আরও কয়েকটি দল। আক্রমণের সময় নির্ধারিত হয় ২ অক্টোবর। আগের দিন রেজাউল হক তার দল নিয়ে সাজাই-শংকর মাধবপুর গ্রামের গ্রাম্য হাঁটাপথের দক্ষিণে ভেরামারী গ্রামে অবস্থান নেন। তার অবস্থানের বাঁয়ে ছিল ব্রহ্মপুত্র নদের মূল স্রোতধারা (চ্যানেল)। পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ২ অক্টোবর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সব অবস্থানে একযোগে আক্রমণ শুরু করে। প্রথমেই তাদের মুখোমুখি হন মো. রেজাউল হক। ব্যাপক মর্টার ফায়ারের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা তার অবস্থানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি ও তার সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। তবে বেশিক্ষণ পারেননি। প্রবল আক্রমণের মুখে তাদের কিছুটা পশ্চাদপসরণ করতে হয়। পরে মো. রেজাউল হক তার দলকে পুনঃ সংগঠিত করে আবার আক্রমণ চালান। তার দল ও অন্যান্য দল একের পর এক পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। সারা দিন বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ চলে। এতে হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর তারা আহত ও নিহত সেনাদের নিয়ে পিছু হটে নিজেদের ক্যাম্পে সমবেত হয়। পরদিন সকালে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেছে।