মাজহারুল হক

মাজহারুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৮৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]

মাজহারুল হক
মৃত্যু১৯৮৩
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মাজহারুল হকের পৈতৃক বাড়ি রংপুর জেলার সদর উপজেলার মাহিগঞ্জে। তার বাবার নাম আফসার আলী খান এবং মায়ের নাম খাদিজা বেগম। তার স্ত্রীর নাম সাফিয়া বেগম। তাদের চার ছেলে ও দুই মেয়ে।

কর্মজীবন

মাজহারুল হক চাকরি করতেন ইপিআরে১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রংপুর ইপিআর উইংয়ের (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন) অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন। নাগেশ্বরী, পাটেশ্বরীসহ আরও কয়েক স্থানে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষ দিক। সীমান্ত এলাকা থেকে একদল মুক্তিযোদ্ধা রাতের অন্ধকারে সমবেত হন রায়গঞ্জে। তাদের লক্ষ্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করা। তারা দুটি দলে বিভক্ত। একটি দলের নেতৃত্বে মাজহারুল হক। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে একটি সেতুর পাশে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন পাকিস্তানি সেনাদের জন্য। অপর দল মূল আক্রমণকারী। মূল আক্রমণকারী দল রায়গঞ্জে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে। গোলাগুলি চলার একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহী একটি গাড়ি উপস্থিত হয় মাজহারুল হকের অবস্থানে। তখন তারা ওই গাড়িতে আক্রমণ চালান। তাদের অস্ত্রের গুলি ও নিক্ষিপ্ত গ্রেনেডের আঘাতে গাড়ি ধ্বংস এবং বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। মাজহারুল হকদের এই আক্রমণ ছিল ভূরুঙ্গামারীতে চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতির অংশ। কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত ভুরুঙ্গামারীর ওই ঘটনার পর ১১ নভেম্বর রাতে তারা ভূরুঙ্গামারীর এক দিক খোলা রেখে তিন দিক দিয়ে একযোগে আক্রমণ চালান। তাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ১২ নভেম্বর সকাল আনুমানিক আটটায় মিত্র বাহিনীর বিমান ভুরুঙ্গামারীর পাশে পাটেশ্বরী রেলস্টেশনের পাকিস্তানি প্রতিরক্ষায় বিমান হামলা চালায়। ধ্বংস হয়ে যায় সেনাবাহিনীর পাটেশ্বরীর প্রতিরক্ষা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেলস্টেশন। হতাহত হয় অনেক শত্রুসেনা। পাটেশ্বরী থেকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে শুরু করে। তখন মাজহারুল হক তার দল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। জীবিত সেনারা পালিয়ে যায় ভুরঙ্গামারী সদরে। মুক্তিযোদ্ধারা ভুরুঙ্গামারীর পূর্বদিকে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানিদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। মাজহারুল হকও তার দল নিয়ে আক্রমণ করেন। ১৩ নভেম্বর সারা দিন সেখানে যুদ্ধ হয়। সন্ধ্যার পর রাতেও দুই পক্ষে গোলাগুলি চলে। শেষ রাতে পাকিস্তানিদের দিক থেকে গোলাগুলি স্তিমিত হয়ে যায়। ১৪ নভেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ভুরুঙ্গামারীতে ঢুকে পড়েন। তখন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী বিপুলসংখ্যক ইপিসিএএফ গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় পালিয়ে যাচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ঘেরাও করেন। তারা আত্মসমর্পণ করে। এরপর মাজহারুল হকসহ মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যান জয়মনিরহাটের দিকে। তাদের আক্রমণে এখানে থাকা পাকিস্তানি সেনারা রায়গঞ্জে পালিয়ে যায়। ১৬ নভেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা রায়গঞ্জে আক্রমণ শুরু করেন। দুই দিন একটানা যুদ্ধের পরও পাকিস্তানিরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা ১৯ নভেম্বর ফুলকুমার নদ অতিক্রম করে তিন দিক দিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধের পর শেষ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের দিক থেকে গুলি বন্ধ হয়ে যায়। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাজহারুল হকসহ মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে পড়েন রায়গঞ্জে। মুক্ত হয় গোটা ভুরুঙ্গামারী।

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.