মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (বীর প্রতীক)

মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]

মো. মোস্তফা কামাল
মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মো. মোস্তফা কামালের জন্ম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বাবার নাম বজলুর রহমান এবং মায়ের নাম আছমতের নেছা। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। [2]

কর্মজীবন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন মো. মোস্তফা কামাল। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। ২৫ মার্চের পর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় নানা প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশ নেন তিনি। পরে ভারতে পুনর্গঠিত হওয়ার পর ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাবসেক্টর এলাকার অধীন কুমিল্লা অঞ্চলে গেরিলাযুদ্ধ করেন। লাকসাম রেল জংশনের উত্তরে বাগমারা রেলসেতু ধ্বংস, মিয়াবাজার ও নোয়াবাজার অপারেশনে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখেন। বাগমারা রেলসেতু ধ্বংসের অপারেশনে পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণে মোস্তফা কামালের বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধা হতাহত হন। তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান। তাদের ওই অপারেশনের ফলে কয়েক দিনের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল আইনউদ্দিনের (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে কুমিল্লার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৭ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর দল কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে। তারা ২ নম্বর সেক্টরের নির্ভয়পুর সেক্টর থেকে যাত্রা শুরু করে পথে তেমন বাধার সম্মুখীন হননি। কুমিল্লা শহর পাকিস্তানি সেনামুক্ত হওয়ার পর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা সেনানিবাসের চারদিকে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। তখন তাদের সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও যোগ দেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের সদস্য ছিলেন মো. মোস্তফা কামাল। মুক্তিযোদ্ধারা আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে কুমিল্লা সেনানিবাসে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন মিত্রবাহিনীর হাইকমান্ড থেকে আইনউদ্দিনকে জানানো হয়, কুমিল্লা সেনানিবাস আক্রমণ করতে হবে না। মিত্রবাহিনী সেনানিবাসে ইস্টার্ন কমান্ডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার প্রচারপত্র বিলি করেছে, যাতে তারা আত্মসমর্পণ করে। এই নির্দেশের পর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ না করে সেনানিবাসের চারদিকে প্রতিরক্ষা অবস্থানে থাকে। এখন একটি প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন মো. মোস্তফা কামাল। ১৪ ডিসেম্বর দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় অনবধানতাবশত তার পকেটে থাকা একটি গ্রেনেডের পিন খুলে যায়। এতে বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নিয়ে বেঁচে গেলেও আত্মরক্ষার জন্য নিজের কাছে থাকা গ্রেনেডে তিনি মারা গেলেন। দেশের স্বাধীনতা তিনি দেখে যেতে পারেননি।[3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ:১৭-১০-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.