মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
মো. নজরুল ইসলাম (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1] তিনি ৯ম ও ১০ম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং তৃতীয় হাসিনা মন্ত্রীসভার পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী।
মো. নজরুল ইসলাম | |
---|---|
![]() | |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মো. নজরুল ইসলামের জন্ম পাবনা জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চরবাতিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম কেরামত আলী এবং মায়ের নাম লুৎফন নেছা। তার স্ত্রীর নাম রওনক জাহান। তার এক ছেলে, দুই মেয়ে। [2]
কর্মজীবন
পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন মো. নজরুল ইসলাম। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধকালে পাবনা জেলার কাশিনাথপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এরপর ভারতে যান। পরে মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অপারেশন জ্যাকপটের অধীনে মংলা বন্দর অপারেশনসহ আরও কয়েকটি অপারেশনে তিনি অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে হার্ডিঞ্জ রেলসেতু ছিলো ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই রেলসেতু ইস্পাত কাঠামোর তৈরি। পাবনার পাকশী ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে পদ্মা নদীর ওপর এই সেতু। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের জন্য তখন এই রেলসেতু ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকালে হার্ডিঞ্জ সেতু রক্ষার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাতের বেলায় নদীর দুই পাড়ে শক্তিশালী সার্চলাইট জ্বালিয়ে রাখত। নদীতে কচুরিপানা ভেসে গেলেও তা দেখা যেত সে আলোতে। এ ছাড়া কয়েকটি গানবোট সার্বক্ষণিক টহল দিত। সেতুর দুই পাশে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প। প্রথমবার মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দল সেতুতে অপারেশন করতে ব্যর্থ হয়। যাওয়ার পথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। পরে নৌকমান্ডো আহসানউল্লাহর (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে আরেক দলকে এ জন্য ভারত থেকে পাঠানো হয়। এ দলে ছিলেন মো. নজরুল ইসলাম। তারাও প্রথমবার ব্যর্থ হন। এরপর তারা দুর্যোগপূর্ণ একটি দিনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কয়েক দিন পরই শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। অপারেশনের জন্য তারা সেদিনকেই বেছে নেন। ওই দিন সমুদ্র এলাকায় নয় নম্বর বিপদসংকেত ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছিল। সমুদ্র উপকূলে নয় নম্বর বিপদসংকেত। এমন একটি দুর্যোগপূর্ণ সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডোরা। এর আগে তারা অপারেশন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নৌকমান্ডো নজরুল ইসলামসহ তার দলনেতা অপারেশনের জন্য বেছে নিলেন এই দিনকেই। গোপন ঘাঁটিতে বিকেল থেকে শুরু হলো প্রস্তুতি। সন্ধ্যায় তারা খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলেন নদীর ধারে। তারপর নেমে পড়লেন নদীতে। টার্গেটের আশপাশে কড়া পাহারা। নদীর দুই পাড়ে শক্তিশালী সার্চলাইট জ্বালানো। অন্যদিকে নদীতে প্রবল স্রোত। সবকিছু উপেক্ষা করে নজরুল ইসলাম ও তার সহযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকলেন রেলসেতুর নির্দিষ্ট পিলার লক্ষ করে। অনেক কষ্টে পৌঁছালেন সেখানে। তারপর পিলার বেয়ে ওপরে উঠে পড়লেন। সেতুর দুই পাশে লোহার ফেন্সিং। তাতে ডেটোনেটর ফিট করতে থাকলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সমাধা হলো তাদের কাজ। তারপর সেফটি ফিউজ অন করে ঝাঁপ দিলেন নদীতে। স্রোতের অনুকূলে ডুব দিয়ে ডুব দিয়ে চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে। ১৫-২০ মিনিট পরই ঘটল বিস্ফোরণ। সেতুর ওপর ভেঙে পড়ল লোহার বিরাট রেলিং। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পাকিস্তানিদের কঠোর প্রহরার মধ্যে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে তারা অপারেশন করেন। সেতুর মূল কাঠামো ধ্বংস করা তাদের লক্ষ্য ছিল না। রেল যোগাযোগ ব্যাহত করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। সেদিন তারা সফলতার সঙ্গে তা করতে সক্ষম হন। [3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ:০৪-১১-২০১১
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।